অরণ্যভূমি দখল করার উদ্দেশ্যে নতুন বিল সংসদে পেশ হয়েছে। —ফাইল চিত্র।
অনিতা অগ্নিহোত্রী ‘হিংসা, রাষ্ট্র, গণতান্ত্রিকতা’ (২৬-৭) প্রবন্ধে মণিপুরের হিংসার ঘটনার পিছনে যে কারণগুলির উপর আলোকপাত করেছেন, তার জন্য তাঁকে ধন্যবাদ। বিশেষ করে অরণ্য ও অরণ্যভূমি দখল করার জন্য প্রশাসন, সরকার আর ধনকুবেরদের নিবিড় সম্পর্কের অদৃশ্য রসায়ন তিনি দৃষ্টিগোচর করেছেন। অরণ্যভূমি দখল করার উদ্দেশ্যে নতুন বিল সংসদে পেশ হয়েছে। উন্নয়নের নামাবলিতে অরণ্যবাসীদের উচ্ছেদ করে প্রশাসন ও সরকারের অরণ্যভূমি দখল করার অদম্য প্রয়াসের জন্য এই বিল। আর সেই প্রয়াসে লুকিয়ে আছে ধনকুবেরদের মুনাফার লোভ। যে লোভে শুধু অরণ্য ধ্বংস হবে তা নয়, ধ্বংস হবে প্রকৃতির ভারসাম্য। বিপন্ন হবে মানুষ। তাতে নেতাদের কী আসে যায়? মণিপুরের ঘটনা সেই কথাই দেখাচ্ছে। প্রলোভনের ফাঁদে পড়ে সরকার ও তাঁর প্রশাসন কোথাও অন্ধ সেজে থাকে, আবার কোথাও মানুষকে অন্ধ করে রাখার জন্য বিষাক্ত বায়ু ছড়ায়। আর মানুষ সেই বিষাক্ত বায়ুর কোপে অন্ধ হয়ে পরস্পরের জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে। মণিপুরে ধনকুবেরদের প্রলোভনে সেই কাজটাই হচ্ছে।
স্বাধীনতা-পরবর্তী সময় থেকেই উন্নয়নের নামে মানুষ তার নিজভূমি থেকে উচ্ছেদ হয়ে চলেছেন। পূর্বতন যোজনা কমিশনের এক তথ্য অনুসারে, স্বাধীনতা-পরবর্তী ছ’দশকে নানা উন্নয়নের কাজে ছ’কোটি মানুষ বাস্তুহারা হয়েছেন। এঁদের কুড়ি ও চল্লিশ শতাংশ যথাক্রমে দলিত ও জনজাতি। যাঁদের কেবল এক তৃতীয়াংশকে পুনর্বাসন দেওয়া সম্ভব হয়েছে। তবে উন্নয়নের নামে অরণ্যভূমিজদের বাস্তুহারা হতে তখন দাঙ্গার কবলে পড়তে হয়নি। অথচ মণিপুরে অরণ্যভূমি দখল করার আগেই মানুষকে বাস্তুহারা হতে হচ্ছে দাঙ্গার কবলে পড়ে, যা আজকের সভ্যতা-সংস্কৃতির পৈশাচিক নিদর্শন। মণিপুরের ঘটনা কাদের বিষাক্ত নিঃশ্বাসের, পৃষ্ঠপোষকতার ফল? এ প্রশ্নের উত্তর আজ সকলের কাছে পরিষ্কার।
মণিপুরের ঘটনা প্রসঙ্গে সাম্প্রতিক বিরোধী জোটের অবস্থান নিয়ে একটি প্রশ্ন না করে পারা যায় না। বিরোধীদের অবস্থান শুধু কি সরকারকে বেকায়দায় ফেলার? না কি তাঁদের এই অবস্থান নতুন অরণ্য-বিলের আপসহীন বিরোধিতার প্রকৃত নিদর্শন হয়ে উঠবে? সময়ই বলবে সে কথা।
পাঠক মিত্র, কলকাতা-৩৪
রাজধর্ম?
মণিপুরের পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে কোন দিকে গড়াবে, এ নিয়ে অনিতা অগ্নিহোত্রী সংশয় প্রকাশ করেছেন সঙ্গত কারণেই। যে ভাবে মানসিক ও ভৌগোলিক বিভাজনের তরজা চলেছে দুই জনজাতির মধ্যে, তাতে মেইতেই ও কুকিদের পক্ষে সহাবস্থান প্রায় অসম্ভব। কুকিরা এখন তাদের স্বতন্ত্র সরকার ও রাজ্যের দাবি নিয়ে উঠেপড়ে লেগেছে। যদি ইতিহাসের ঢাকনা খুলে এই গুরুতর পরিস্থিতিকে অন্য কোনও দৃষ্টান্তের সঙ্গে তুলনা করতে হয়, তবে নব্বইয়ের দশকে ভূস্বর্গ থেকে কাশ্মীরি পণ্ডিতদের বিতাড়নের অনুষঙ্গ টেনে আনা যায়। পাকিস্তানপন্থী ইসলামি সন্ত্রাসীরা পণ্ডিত পরিবারগুলোকে উপত্যকায় তাদের ভিটেমাটি ছাড়তে বাধ্য করেছিল। সে সময়ে কাশ্মীরের দুর্বল সরকার ছিল নীরব দর্শক, পণ্ডিতদের আত্মরক্ষার কোনও উপায় ছিল না। কিন্তু এখানে কুকি আর মেইতেই— দু’টি সংঘর্ষরত গোষ্ঠীই সশস্ত্র।
মণিপুরের জাতিগত সংঘাতের ইতিহাস দীর্ঘকালের, ইংরেজ শাসক এই রাজ্যকে পাহাড় ও সমতলে বিভাজিত করেছিল, খ্রিস্টান প্রধান জনজাতি কুকি-জ়ো ও নাগারা পেয়েছিল পাহাড়ের অধিকার, হিন্দু মেইতেইরা সমতলের। জনসংখ্যার নিরিখে প্রায় ৫৩ শতাংশ মেইতেই গরিষ্ঠ, কিন্তু তাদের জমির ভাগ যৎসামান্য, আর সিংহভাগ প্রায় ৯০ শতাংশ পাহাড়ি জমি জনজাতিদের দখলে, মণিপুর হাই কোর্ট বিষয়টি বিবেচনার জন্য রাজ্য সরকারকে দায়িত্ব দেওয়া মাত্রই অশান্তির শুরু।
এমনতর জাতিগত বা প্রাদেশিক সংঘর্ষের উদাহরণ ২০০২-এর গুজরাত হিংসা, যা এক ধাক্কায় মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে জাতীয় রাজনীতির আঙিনায় প্রতিষ্ঠিত করে। যদিও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী রাজধর্ম পালনের আহ্বান জানিয়েছিলেন, তবে মোদী কিংবা বিজেপির জাতীয় নেতৃত্ব তাকে আমল দেননি। মণিপুরের ক্ষেত্রেও সেই তিনিই ‘রাজধর্ম’ পালনের পাশ কাটিয়ে আড়াই মাস পর অবশেষে মুখ খুলেছেন। কষ্টে নাকি তাঁর বুক ভেসে গিয়েছে। তবে বিরোধীদের এত সরব দাবির পরও সংসদে তিনি এ নিয়ে বলেছেন মাত্র ৩৬ সেকেন্ড! অথচ, সংসদের অভ্যন্তরে ১৪০ কোটি মানুষের প্রতিনিধিরা নিত্য অপেক্ষা করছেন তাঁর বক্তব্য শুনতে। ২১ বছর আগে গুজরাতে সহস্রাধিক মানুষের হত্যালীলার বর্বরতা যাঁকে টলাতে পারেনি, মণিপুরের দেড় শতাধিক মানুষের জীবন কেন তাঁকে নাড়া দেবে?
সৌমিত্র মুখোপাধ্যায়, কলকাতা-৮৪
অবহেলা কেন?
‘নৈতিক আস্থার প্রশ্ন’ (২৭-৭) সম্পাদকীয়টির পরিপ্রেক্ষিতে কিছু কথা। এ বারে সংসদে মণিপুরের অচলাবস্থা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর ভাষণের কেবল ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র একটি অংশে দুঃখপ্রকাশ করে দায় সেরেছেন। স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে অ-বিজেপি রাজ্যের নারী নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে কটাক্ষ করতেও ছাড়েননি। অর্থাৎ, দেশের সর্বময় কর্তা ‘সকলের প্রধানমন্ত্রী’ হয়ে উঠতে চাননি। আমরা ধরে নিতেই পারতাম যে, তিনি নীরবতাতেই স্বচ্ছন্দ বোধ করেন। কিন্তু যখন প্রতি মাসে নিয়ম মেনে ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে তাঁকে সরব হতে দেখি, তখন খানিকটা হোঁচট খেতে হয়।
প্রকাশ্যে নারীদের অবমাননা এবং সম্মানহানির ঘটনা ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’ স্লোগানের পরিপন্থীও বটে। ওই স্লোগান যে আসলে ফাঁকা আওয়াজ, তা বার বার প্রমাণিত। বিরোধী নেতা-নেত্রীদের সমালোচনা করবে শাসক দল, গণতন্ত্রে তা খুব স্বাভাবিক। তা বলে বিরোধী জোটকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে, অথবা সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর সঙ্গে তুলনা করা কি উচিত? মণিপুর বিষয়ে সংসদে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য পেশ করার জন্য বিরোধীদের দাবি কি সত্যিই অমূলক? নৈতিকতার দৃষ্টিতে কিন্তু তার সমর্থন মেলে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে বার বার ‘মৌনব্রত’ অবলম্বনের জন্য কটাক্ষ করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। তিনি নিজে কী করছেন?
এ দেশের নারীদের হিংসার আগুনে দগ্ধ হয়ে যাওয়া যদি ‘সামান্য ঘটনা’-য় পর্যবসিত হয়, তবে এই দেশের নারীসমাজ নিরাপত্তা সম্পর্কে কি সন্দিহান হয়ে পড়বে না?
রাজা বাগচী, গুপ্তিপাড়া, হুগলি
ভিড় ট্রেন
আমি শিয়ালদহ বনগাঁ শাখার নিয়মিত যাত্রী। বনগাঁ শাখায় প্রতিটি ট্রেনে যাত্রী-সংখ্যা মেন লাইনের ট্রেনের তুলনায় খুব বেশি। অতএব, ট্রেনে সব সময়ই ভিড় উপচে পড়ে। অথচ, এই লাইনে ট্রেনের সংখ্যা বাড়ে না। এমন কিছু ট্রেন চলে, যেগুলো সম্ভবত স্বাধীনতার পর থেকেই চলে আসছে। রক্ষণাবেক্ষণ খুবই খারাপ। ফ্যান কোনওটা চলে তো কোনওটা না। আমাদের প্রায় প্রতি দিনের অভ্যাস কলম, পেনসিল, চিরুনি দিয়ে ফ্যান ঘোরানো।
এই ট্রেনগুলোতে শিশু এবং বয়স্ক ব্যক্তিদের যে কী অবস্থা হয়, বলে বোঝানো মুশকিল। সন্ধ্যার দিকে এই লাইনের বেশির ভাগ ট্রেনই নিয়মিত পাঁচ-দশ মিনিট দেরিতে চলে। অন্য দিকে, বনগাঁ শাখার প্রায় সব ডাউন ট্রেনই সঠিক সময়ে দমদম ক্যান্টনমেন্টে পৌঁছে যায়, কিন্তু দমদম জংশনে ঢোকার ঠিক আগে সেই রহস্যময়ী সিগন্যাল, যেখানে সব ট্রেনকে ৫-১০ মিনিট দাঁড়াতেই হবে। কপাল মন্দ হলে ওটা ১৫ মিনিটও হয়ে যায়। বিগত ২৫-৩০ বছর ধরে একই সমস্যা দেখে আসছি।
আঞ্জয় মাঝি, কলকাতা-৭৩
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy