সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রক বলেছে, ইঞ্জিনিয়ারিং এ বার থেকে বাংলা ভাষায় পড়া যাবে। আমার প্রস্তাব, একই সঙ্গে চিকিৎসাশাস্ত্রের শিক্ষাব্যবস্থা কিছুটা স্থানীয় ভাষাভিত্তিক করা উচিত। রোগ ও রোগী হল চিকিৎসাশাস্ত্রের মেরুদণ্ড। চিকিৎসক এক জন রোগীর সঙ্গে কথা বলেন রোগীর ভাষায়। যে ভাষায় রোগীর ইতিহাস নেন, সে ভাষায় কিন্তু ইতিহাস লিপিবদ্ধ করেন না। সেটা লেখা হয় ইংরেজি ভাষায়। একই সঙ্গে চিকিৎসা সংক্রান্ত পরামর্শ দেন ইংরেজিতে। বিদেশি চিকিৎসাশাস্ত্রের বই বাংলা ভাষায় অনুবাদ করতে অনেক সময় লাগবে, কিন্তু রোগী ও রোগের ইতিহাস এবং চিকিৎসা সংক্রান্ত পরামর্শ সহজেই বাংলায় শুরু করা যায়। এটা এক জন বাংলাভাষী চিকিৎসক এক জন বাংলাভাষী রোগীর জন্য করতেই পারেন। যদি ভাষাগত পার্থক্য থাকে, সেখানে ইংরেজি ভাষায় লেখা হোক।
একই ভাবে, এক জন সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক যখন কোনও আঘাতের বিবরণ লিপিবদ্ধ করেন, সেটাও কিন্তু ইংরেজিতে। রোগী বলছেন বিশুদ্ধ বাংলা ভাষায়, কর্তব্যরত চিকিৎসক এক জন বাংলাভাষী, অথচ রোগীর বয়ান লেখা হচ্ছে অন্য ভাষায়। আর এই আঘাতের বিবরণ যদি আদালত পর্যন্ত গড়ায়, সেখানেও কিন্তু বিদেশি ভাষাতেই লিপিবদ্ধ হয়, যদিও কর্তব্যরত বিচারপতির মাতৃভাষা বাংলা। আমরা জানছি বাংলায়, বুঝছি বাংলায়, ভাবছি বাংলায়, কিন্তু রায় দিচ্ছি বা বিধান দিচ্ছি অন্য ভাষায়। রোগের ভাষা, রোগীর ভাষা আর চিকিৎসার ভাষা এক হলে অনেক চিকিৎসা বিভ্রাটই সহজে এড়ানো সম্ভব হবে।
শুধু তা-ই নয়, চিকিৎসক ও রোগীর পারস্পরিক দোষারোপের ঘটনার পিছনেও ভাষাবিভ্রাটের ভূমিকা কোনও অংশে কম নয়। অতএব, রোগীর ইতিহাস, চিকিৎসকের পরামর্শ, এবং হাসপাতালে আঘাতের বিবরণ— সবই বাংলা ভাষায় লেখা হোক।
সৌগত মাইতি
তমলুক, পূর্ব মেদিনীপুর
পাটশিল্পের দশা
‘পাটশিল্পের চিন্তা এখন বাংলাদেশের বস্তা’ (১৪-৭)প্রতিবেদনটি পড়ে বুঝতে পারলাম যে, এই রাজ্যের চটকলগুলোর যখন এমনিতেই শোচনীয় অবস্থা, তখন তার উপর ‘খাঁড়ার ঘা’ মারতে চলেছে বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা চটের বস্তা। নিজেদের দেশে এতগুলো চটকল থাকা সত্ত্বেও দেশে উৎপন্ন খাদ্যসামগ্রী ভর্তির জন্য প্রয়োজন মেটাতে এখন বাধ্য হয়ে অন্য দেশ থেকে চটের বস্তা আমদানি করা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের দেশে থাকা চটকল ও শ্রমিকদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে কেন্দ্রীয় সরকার এত দিনেও কোনও সদর্থক পদক্ষেপ না করার পাশাপাশি, এই শিল্পের পরিকাঠামো ব্যবস্থা উন্নতির দিকে দৃষ্টি না দেওয়ার ফলে দিনের পর দিন পাটশিল্প ধ্বংসের দিকে এগিয়ে গিয়েছে।
পাটের বেশির ভাগটাই উৎপাদিত হয় আমাদের রাজ্যে, চটকলও এ রাজ্যে সবচেয়ে বেশি। মোট চুয়ান্নটি চটকল রয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। কয়েক দিন আগে অবধি ষোলোটি চটকল বন্ধ হয়ে পড়েছিল। সম্প্রতি দু’-একটি চটকল ফের খুলছে বটে, তবুও বহু চটকল দীর্ঘ দিন ধরে বেহাল অবস্থায় তালাবন্দি হয়ে পড়ে রয়েছে। যার ফলে কাজ হারিয়েছেন পঞ্চাশ হাজারের বেশি শ্রমিক। যেগুলো খুলেছে, সেগুলো কোনও মতে টিমটিমিয়ে চলছে। অন্যান্য রাজ্যের চটকলগুলোর অবস্থাও খুব একটা ভাল নয়। কাঁচামাল এবং টাকার অভাবে শীঘ্রই পশ্চিমবঙ্গের আরও বেশ কয়েকটি মিল বন্ধ হয়ে যেতে পারে। নতুন পাটের পর্যাপ্ত জোগান না থাকলে, ও দামের সঙ্গে মানের সামঞ্জস্য বজায় না থাকলে চটশিল্পের মন্দ দশা এ বছরও খুব একটা
বদলাবে না।
গত বছরের আমপান ঝড়ের দাপটে পাট নষ্ট হওয়ায় কাঁচামালের অভাব দেখা দেয়। বহু পাটকল মালিক চড়া দাম দিয়ে খরিদ না করে এক প্রকার হাত গুটিয়ে নেন। ফলে, গত বছর করোনা আসার সময় থেকেই রাজ্যের চটকলগুলো এক প্রকার ধুঁকছে। এরই পাশাপাশি বেশ কিছু অসাধু পাট ব্যবসায়ী নিজেদের ভাঁড়ারে বেআইনি ভাবে পাট মজুত করছে। এই হিড়িক প্রায় প্রত্যেক বছরই লক্ষ করা যায়। যার ফলে কৃত্রিম ভাবে বাজারে পাটের জোগানে টান তৈরি হয়। কাঁচা পাটের অভাবে চটকলগুলি উৎপাদন বন্ধ করতে প্রায় বাধ্য হয়।
এর প্রভাব সরাসরি এসে পড়েছে শ্রমিকদের পরিবারের উপর। এমনিতেই করোনা ও লকডাউনের গ্রাসে পড়ে সকলের কার্যত টালমাটাল অবস্থা। এরই মধ্যে একের পর এক চটকল বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে বহু পরিবার রোজগারহীন হয়ে পড়েছে। বাজারে অনেক টাকা ধার হয়ে গিয়েছে, সময়মতো সেই ধার পরিশোধ করতে না পারায় নানা ধরনের হেনস্থার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। দাঁতে দাঁত চেপে কটু কথা সহ্য করতে হচ্ছে। মুখে শ্রমিকস্বার্থের কথা বললেও, শ্রমিকদের পরিবারের খোঁজখবর রাখেন ক’জন? কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকার যৌথ উদ্যোগ করে অবিলম্বে রাজ্যের চটকলগুলোর পরিকাঠামোগত উন্নতির কথা না ভাবলে খুব দ্রুত রাজ্য থেকে এই শিল্প হারিয়ে যাবে।
চলতি বছরে কিন্তু বেশ ভালই পাটের উৎপাদন হবে বলে শোনা যাচ্ছে। এখন দরকার শুধু উপযুক্ত নজরদারির ব্যবস্থা। অবৈধ মজুতদারির বিরুদ্ধে রাজ্য সরকারের অধীনস্থ স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের আরও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য আবেদন জানাই।
আমাদের রাজ্যের গর্ব এই চটকলগুলোর দিকে এ বার একটু মনোযোগ দেওয়া যায় না? উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিস্তীর্ণ এলাকায় বহু মানুষের জীবিকা নির্বাহের জন্য ভরসা বলতে একমাত্র চটকল। আমার পরিবারের বহু সদস্য চটকলে শ্রমিক হিসেবে কাজ করে পরিবার প্রতিপালন করেন। চল্লিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে তালা বন্ধ হয়ে জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে রয়েছে কাঁকিনাড়া পেপার মিল। জঙ্গল আগাছায় ভর্তি হয়ে গিয়েছে। এর মতো আরও বন্ধ হয়ে যাওয়া কলকারখানাগুলোকে পুনরায় চালু করার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা কি করা যায় না? এমনটা করা গেলে বহু স্থানীয় যুবক, বহু মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
‘ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল’ নামে হারিয়ে যাওয়া তকমা ফিরে আসুক। অবিলম্বে চটকলগুলোর পাশাপাশি অন্য ঝাঁপ ফেলা মিল এবং ফ্যাক্টরিগুলো খোলার কথা গুরুত্ব দিয়ে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার বিবেচনা করুক।
সৌরভ সাঁতরা
জগদ্দল, উত্তর ২৪ পরগনা
জ্বালানির খোঁজ
জঙ্গলমহলের অধিবাসীরা বনের জ্বালানির উপর নির্ভরশীল। বন থেকে শুকনো কাঠ, ঝাঁটি বা ছোট ছোট গাছ কেটে তাঁরা জ্বালানি সংগ্রহ করতেন। কেন্দ্রীয় সরকার গরিব মানুষদের জন্য রান্নার গ্যাস বিনামূল্যে দিয়েছিল বেশ কয়েক মাস। এর ফলে জঙ্গলে গাছ কাটার পরিমাণ কিছুটা হ্রাস পেয়েছিল। কিন্তু লকডাউনের জেরে সাধারণ মানুষ কর্মহীন। এক দিকে অর্থনৈতিক সঙ্কট ও অপর দিকে রান্নার গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ফলে মানুষ বাধ্য হয়ে রান্নার জ্বালানির জন্য ফের জঙ্গলের গাছ কাটছে। কাটা পড়েছে অপরিণত শাল গাছ। এই গাছগুলির বয়স সাধারণত ১৫ থেকে ২০ বছর, উচ্চতা ১২ থেকে ১৪ ফুট এবং ৭ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার পরিধি। এর প্রভাব পড়ছে এলাকার জলবায়ুর উপরে।
গাছগুলো কাটার জেরে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ফেরত যাচ্ছে। পরিণত শালগাছ একর প্রতি ১৬০-১৮০ মেট্রিক টন কার্বন ‘সিঙ্ক’ এবং ‘স্টক’ করতে পারে, যা অন্য গাছের থেকে দেড়-দু’গুণ বেশি। তা আবার ‘মাইক্রোক্লাইমেট’ পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শালগাছের ঘনত্ব ও আয়তন হ্রাসের কারণে প্রতি বছর গড়ে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে ০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও তিন মিলিমিটার করে বৃষ্টিপাত হ্রাস হচ্ছে। এ ছাড়াও অনিয়মিত এবং খামখেয়ালি বৃষ্টিপাতের প্রবণতাও দেখা দিচ্ছে। বন বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
প্রভাত কুমার শীট
মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy