নদিয়ার তেহট্ট মহকুমা হাসপাতালের সুপার নিগৃহীত হলেন তাঁরই হাসপাতালের এক শ্রেণির কর্মচারীর হাতে (‘হাসপাতালে মার সুপারকে, ধৃত ১’, ১২-২)। এই ঘটনার নিন্দার ভাষা নেই। চিকিৎসক সমাজের পক্ষেও এটা অত্যন্ত লজ্জাজনক। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
তবে এই ধরনের শোচনীয় ঘটনা কেন ঘটছে, তার বিশ্লেষণ হওয়া দরকার। না হলে এমন ঘটনা ঘটতেই থাকবে এবং হাসপাতালের কাজের পরিবেশ নষ্ট হবে। ঘটনার সূত্রপাত হয় যখন ওই হাসপাতালের জনৈক ডোম মৃতদেহ নিয়ে যেতে অস্বীকার করেন। ফলে সুপার সেই কাজটি অন্য এক জনকে দিয়ে করানোর চেষ্টা করেন এবং সপরিবার ওই কর্মীকে সরকারি আবাসন থেকে উচ্ছেদের নোটিস দেন। তাতেই শুরু হয় মনোমালিন্য, যা সুপার নিগ্রহ এবং হাসপাতাল ভাঙচুর পর্যন্ত গড়ায়।
এই পরিবেশ আজ বোধ হয় রাজ্যের সমস্ত হাসপাতালেই। খুবই অল্প সংখ্যক লোককে দিয়ে হাসপাতালের রকমারি কাজ করিয়ে নিতে হয়। বিশেষত কোভিড পরিস্থিতিতে কাজের চাপ বহু গুণ বেড়ে গিয়েছে। ডাক্তার থেকে শুরু করে সাফাইকর্মী, ডোম ইত্যাদি নানাবিধ কাজের লোকের ভয়ঙ্কর অভাব দেখা দেয়, আগে থেকেই যার বিরাট ঘাটতি ছিল। ফলে রোগী পরিষেবা যেমন ব্যাহত হয়েছে, তেমনই হাসপাতাল পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের উপর নেতা, প্রশাসক, জনগণ থেকে শুরু করে হাসপাতালের কর্মচারী, সব পক্ষের চাপ এসে পড়ছে।
সরকার কিছু স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগের নোটিস জারি করে। বিভিন্ন কাজের জন্য তাঁদের নিয়োগ করাও হয়। কিন্তু এখনও পর্যন্ত স্বেচ্ছাসেবকদের সামান্য ভাতার টাকা বহু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছয়নি। বিপদের সময় অতিরিক্ত কাজ করা সত্ত্বেও, বিপন্মুক্তির পরে তাঁদের অনেকেরই কাজ চলে যায়। ফলে সর্বত্রই এই ক্ষণস্থায়ী কর্মীদের মধ্যে বিপুল ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। তা ছাড়া, টাকার অভাবে আজ বহু অস্থায়ী কাজের ঠিকাদারেরও পাওনা মেটানো যায়নি। অদূর ভবিষ্যতে এই দেনা মেটানো যাবে কি না, তা নিয়েও বিস্তর সন্দেহ রয়েছে। কারণ ইতিমধ্যে চুরি-দুর্নীতিতে লোপাট হয়ে গিয়েছে কোভিড নিয়ন্ত্রণের কোটি কোটি টাকা!
রাজ্যের প্রায় সমস্ত হাসপাতালই আজ এক রকম বারুদের স্তূপের উপর দাঁড়িয়ে আছে। এরই মধ্যে বিপুল পরিমাণে ওষুধ ছাঁটাই হয়েছে। সরকারি হাসপাতালে ‘স্বাস্থ্যসাথী’ কার্ডকে বাধ্যতামূলক করে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ টাকার বেশির ভাগই ঘুর পথে চালান করে দেওয়া হয়েছে বিমা কোম্পানির মালিকের পকেটে। ফলে হাসপাতালের সমস্ত কাজের জন্যই কমানো হয়েছে অর্থবরাদ্দ। এতে সৃষ্টি হচ্ছে রোগী এবং কর্মী অসন্তোষ, যার প্রত্যক্ষ চাপ এসে পড়ছে স্বাস্থ্য প্রশাসক, ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের উপর।
সজল বিশ্বাস, সাধারণ সম্পাদক, সার্ভিস ডক্টরস ফোরাম
লোকালয়ে বাঘ
বার বার লোকালয়ের কাছে চলে আসছে বাঘ। আজ কুলতলি তো কাল গোসাবা। কিছু দিন আগে দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলতলির পেটুকুলচাঁদ সেতুর কাছে নদীর চরে বাঘের পায়ের ছাপ দেখে স্থানীয় মানুষরা বন দফতরে খবর দেন। দিনভর পাশের জঙ্গলে ঘাপটি মেরে বসে থাকা বাঘিনিটি রাত তিনটে নাগাদ বন দফতরের পাতা খাঁচায় ধরা পড়ে।
কিন্তু প্রশ্ন হল, কেন বার বার লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে বাঘ বা বাঘিনি? এক, ওদের পর্যাপ্ত খাবার না থাকার জন্য। দুই, বনে দূষণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার জন্য। এ ব্যাপারে সরকার ও বনবিভাগকে সচেতন হতে আবেদন জানাই।
সঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায়, চুঁচুড়া, হুগলি
বেহাল দূরভাষ
চলভাষের (মোবাইল) একচেটিয়া ব্যবহারে দূরভাষ (ল্যান্ডলাইন) এখন বিলুপ্তির পথে। চলভাষ অবসর কাটানো ও বিনোদনের অপরিহার্য অঙ্গ। অথচ, দীর্ঘ দিন জনসংযোগ ও তথ্য আদানপ্রদানের জরুরি মাধ্যম ছিল দূরভাষ। এখন প্রায় সব সরকারি-বেসরকারি অফিসে দূরভাষ উঠে গিয়েছে বা অচল হয়ে পড়ে আছে। জরুরি পরিষেবা যেমন, হাসপাতাল, পুলিশ ইত্যাদি কিছু ক্ষেত্রে হয়তো আছে। তবে তা সন্তোষজনক নয়।
অন্য দিকে, সাধারণ মানুষ এখন জীবন-জীবিকা ও সরকারি সুবিধা পাওয়ার জন্য বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দফতরে ছোটাছুটি করছেন। কারণ, মানুষের জীবন এখন কার্ড-নির্ভর। আধার, প্যান, ভোটার, রেশন, ব্যাঙ্কের কাগজপত্র ইত্যাদি আমাদের অস্তিত্বের দলিল। আর এগুলির নথিভুক্তকরণ, সংশোধন, সংযোজন, পরিবর্তন ইত্যাদির জন্য নিয়মিত বিভিন্ন দফতরে যাতায়াত করতে হয়। যেগুলো ঘরে বসে করা যেত, তা আর করা যাচ্ছে না। ফলে দফতরগুলিতে প্রচুর ভিড় হচ্ছে। বিশেষত, আমাদের মতো প্রবীণদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।
আমি এক জন অশীতিপর সরকারি পেনশনার। গত বছর হঠাৎ পেনশন বন্ধ হয়। অফিসের একটি সামান্য ভুল, যা ফোনের মাধ্যমেই সমাধান হয়ে যেত, দূরভাষ পরিষেবা না থাকায় আমাকে ৩০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে কলকাতায় পুরনো কর্মস্থলে গিয়ে ঠিক করতে হল। দ্বিতীয়ত, একাধিক বার আধার সংযোগের পর এবং রেশন তোলার পর হঠাৎ দশ আঙুলের ছাপ না মেলায় এক দিন রেশন বন্ধ হয়ে গেল। ডিলারের কাছে সদুত্তর মিলল না। সংশ্লিষ্ট দফতরেও দূরভাষ নেই। ফলে অনুসন্ধানের কোনও সুযোগ ছিল না। অতএব ২-৩ কিলোমিটার হেঁটে দফতরে যেতে হল।
ব্যাঙ্কের অবস্থাও ভয়াবহ। সাধারণ পরিষেবায় ভুলভ্রান্তির সীমা-পরিসীমা নেই। ডিজিটাল ব্যাঙ্কিং-এ হ্যাকিং-এর মাধ্যমে চোখের সামনে লক্ষ লক্ষ টাকা উধাও হয়ে যাচ্ছে। ব্যাঙ্কের বিধিবদ্ধ সর্তকীকরণ ‘সঙ্গে সঙ্গে ব্যাঙ্কে জানান’ মেনে জানানোর জন্য ফোন করলে দেখা যায় ব্যাঙ্কের দূরভাষ অচল। চলভাষ নম্বরও গ্রাহকলভ্য নয়। আজকের নথিসর্বস্ব যুগে জনস্বার্থে পরিষেবামূলক সব প্রতিষ্ঠানে ‘চলভাষ’ বা ‘দূরভাষ’-কেন্দ্রিক তথ্যকেন্দ্র রাখা উচিত। অথবা বিকল্প কোনও পন্থা উদ্ভাবন করা দরকার।
পরেশ মালিক, চন্দনদহ, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
দুর্ঘটনা এড়াতে
প্রায়ই সংবাদমাধ্যমে দেখতে পাই, কলকাতার বিভিন্ন উড়ালপুলে, বিশেষত ‘মা’ উড়ালপুলে ধারালো মাঞ্জা দেওয়া ঘুড়ির সুতোয় বহু বাইক আরোহী আহত হচ্ছেন। প্রশাসনের তরফ থেকে নানা সতর্কতামূলক ব্যবস্থা করা সত্ত্বেও এখনও দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে।
প্রসঙ্গত, আমদাবাদ শহরে বছরের একটা বিশেষ সময়ে ‘ঘুড়ি উৎসব’ পালন করা হয়। সেই সময়ে ঘুড়ির সুতোর অত্যাচার থেকে বাঁচার জন্য ওখানকার বাইক-আরোহীরা একটা শক্ত, লম্বা অ্যালুমিনিয়াম বা লোহার রডকে বেঁকিয়ে উল্টোনো ‘ইউ’ আকৃতির মতো করে বাইকের স্টিয়ারিংয়ের সঙ্গে লাগিয়ে নেন। কলকাতার বাইক আরোহীরাও এই কৌশল কাজে লাগালে দুর্ঘটনা এড়ানো যেতে পারে।
সমর গঙ্গোপাধ্যায়, কলকাতা-৪৮
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy