‘বেলাগাম দাম, পোস্তেও তালিবান!’ (১০-৯) শীর্ষক সংবাদের প্রেক্ষিতে এই চিঠি। ১৯৫৭ সালের কথা। আমি তখন চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র, খড়দহে দাদু-দিদিমার কাছে থাকতাম। সে বছর ৬৪ পয়সা বা ১৬ আনায় এক টাকার পরিবর্তে ১০০ পয়সায় এক টাকা, ও ১৬ ছটাকে এক সেরের পরিবর্তে ১০০০ গ্রামে এক কিলোগ্রামের সূচনা হয়। তা সত্ত্বেও সের দরে বিকিকিনির চল বেশ কিছুকাল ছিল। প্রতি রবিবার দাদুর সঙ্গে সকাল আটটা নাগাদ নতুন বাজারে যেতে হত বাজার করতে। সেই সময় এক সের খাসির মাংসের দাম ছিল আড়াই টাকা, এক সের ভাল কাটা রুই-কাতলার দাম ছিল আড়াই টাকা ও মুদিখানার দোকানে এক নম্বর পোস্তের দাম ছিল এক সের আড়াই টাকা। তখন অনেক নিম্নবিত্তের যৌথ পরিবারেও মাসকাবারি মুদিখানার ফর্দে এক সের-দু’সের পোস্তের স্থান ছিল। ছাত্রজীবনে দেখেছি, ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের সমর্থকেরা মোহনবাগান সমর্থকদের পোস্ত চচ্চড়ি ও কুচো চিংড়ির সঙ্গে তুলনা করতেন।
বীরভূম জেলার মানুষ প্রণব মুখোপাধ্যায় যখন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ছিলেন, পোস্তের আকালের কারণে এক বার পোস্ত আমদানির ব্যবস্থা করেছিলেন। ফলে, সেই সময় পোস্ত ৪৫০ টাকা প্রতি কিলোগ্রামের পরিবর্তে ৩০০ টাকায় নেমে এসেছিল বেশ কিছু দিন। তার কিছু পরেই রাজ্যের তৎকালীন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত সাংবাদিক সম্মেলন করে রাজ্যবাসীকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে, রাজ্যের কৃষি খামারগুলিতে যে সব জমি অব্যবহৃত অবস্থায় রয়েছে, সেগুলোতে শীঘ্রই পোস্ত চাষের ব্যবস্থা করা হবে। পোস্তপ্রিয় বাঙালি এ বার সস্তায় পোস্ত পাবেন। সে দিন মন্ত্রিমশাইয়ের কথায় এমন ব্যঞ্জনা ছিল যে, দূরদর্শনের পর্দার সামনে বসে অনেকের জিভে জল আসার উপক্রম হয়েছিল! কিন্তু সরকারি পোস্ত আজও বাজারে আসেনি।
বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে অনেক চাষি হুগলি, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ ও মালদহ জেলার কিছু কিছু জায়গায় লাভের আশায় গোপনে পোস্ত চাষ করে থাকেন। ফল যখন পুষ্ট হতে শুরু করে, ঠিক সেই সময় পাকা ধানে মই দেওয়ার মতো আবগারি দফতরের কর্মচারীরা বীরদর্পে এসে পোস্তগাছে আগুন ধরিয়ে যুদ্ধ জয়ের হাসি হাসতে থাকেন! খবরে জানা গেল, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানের কিছু জায়গায় যে পোস্ত হয়, তার বেশির ভাগটাই কিনে নেয় আমাদের রাজ্য; যদিও তা রাজ্যের মোট চাহিদার মাত্র ১০ শতাংশ। প্রশ্ন আসতেই পারে, দেশের অন্য অনেক রাজ্যে যদি পোস্ত চাষ সম্ভব হয়, তবে পোস্তপ্রিয় বাঙালির রাজ্যে পোস্তচাষের ব্যবস্থা না করে অন্য রাজ্য অথবা বিদেশের উপর নির্ভর করতে হবে কেন?
প্রসন্নকুমার কোলে, শ্রীরামপুর, হুগলি
ভৃত্য নয়
অমিতাভ গুপ্তের “উন্নততর ‘কাজের লোক’” (১০-৯) শীর্ষক প্রবন্ধের প্রেক্ষিতে এই চিঠি। ‘উৎকর্ষ বাংলা’ প্রকল্পের লক্ষ্য, বেকার ছেলেমেয়েদের কর্মসংস্থান। অল্পশিক্ষিত বেকারদের গৃহস্থ বাড়িতে কর্মনিযুক্তি নিঃসন্দেহে সাধু উদ্যোগ! তবে, কারখানায় এক জন কর্মীর বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা গৃহস্থবাড়ির সমান না-ও হতে পারে। তাই, অন্যের বাড়িতে কাজ করার পোর্টালে নিশ্চিত করতে হবে, নিয়োগকর্তা-কর্মচারীর সম্পর্ক যেন মালিক-ভৃত্যের না হয়। কারখানার চাকরির মতো একটা চলমানতার আশ্বাস যেন থাকে। আবার, আন্তর্জাতিক শ্রম আইন কঠোর ভাবে মানতে গিয়ে গৃহস্থকে যেন অযথা হেনস্থার শিকার না হতে হয়। গৃহস্থ ভয় পেলে কর্মী সঙ্কোচনের সম্ভাবনা প্রবল। প্রকল্পের পোর্টালে উল্লিখিত কর্মপ্রার্থীদের লেখক ‘ঊনমানব’ আখ্যা দিয়েছেন। এই ঊনমানবদের প্রশিক্ষণ দিয়ে, ‘উৎকর্ষ বাংলা’র সনদ মেনে, মালিক-কর্মচারী উভয়ের স্বার্থ রক্ষা করে রাজ্যের কর্মসংস্থানের মানচিত্র উজ্জ্বল হবে, এই আশা করি।
অমরেশ পাল, সাহাগঞ্জ, হুগলি
ত্রিপুরায় পীড়ন
‘দুর্বিষহ’ (১৩-৯) সম্পাদকীয়টি অত্যন্ত সময়োচিত। ত্রিপুরায় ক’দিন আগে যা ঘটে গেল, তাকে ফ্যাসিস্ট বর্বরতা বললে ভুল বলা হবে না। ৮-৯ সেপ্টেম্বর ত্রিপুরায় সিপিএমের প্রায় ৫০টি অফিসে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। ত্রিপুরার শ্রদ্ধেয় জননেতা দশরথ দেবের মূর্তি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বাম সমর্থকদের বাড়িতে বলপূর্বক প্রবেশ করে তাঁদের আক্রমণ করা হয়েছে, বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ সব ঘটনার পর ওখানকার বিজেপি সরকার বিবৃতি দিয়ে যে সাফাই গেয়েছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে— এ সবের পিছনে সরকারি মদত ছিল। অর্থাৎ, ‘সরকারি গুন্ডামি’। বিজেপির এই আঘাত হানার চেষ্টা থেকে বোঝা যাচ্ছে, তারা আসলে ভয় পেয়ে এই সব ঘটিয়েছে। ত্রিপুরায় তৃণমূল যতই লাফালাফি করুক, ওখানে আসল বিরোধী শক্তি এ বার সিপিএম। বিজেপির অবস্থা ত্রিপুরায় তেমন ভাল নয়। বিজেপি নিজের অবস্থান বুঝতে পেরে আক্রমণের মূল টার্গেট করেছে সিপিএমকে। ত্রিপুরায় সিপিআই (এমএল) লিবারেশনের পার্টি অফিস বিজেপি পুড়িয়ে দেওয়ার ফলে তারাও সিপিএমের সঙ্গে যৌথ আন্দোলনে নেমেছে। পশ্চিমবঙ্গের গত বিধানসভা নির্বাচনের সময় সিপিএমের সঙ্গে লিবারেশনের সম্পর্ক মোটেই ভাল ছিল না।
ত্রিপুরার রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকার, কেউই এই সব ঘটনার পর উদাসীন থাকতে পারে না। কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিমবঙ্গে ভোট-পরবর্তী হিংসার সিবিআই তদন্ত নিয়ে তৎপরতা দেখিয়েছিল, ত্রিপুরার বেলায় সেই দায়িত্ব এড়াতে পারে না। রাজধর্ম ছাড়া গণতন্ত্র অর্থহীন।
অশোক বসু, বারুইপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
বৈষম্যহীন
সেনাবাহিনীর সশস্ত্র শাখায় এখন থেকে নারীরাও যোগ দিতে পারবেন— এই সিদ্ধান্ত স্বাগত। এ বিষয়ে সংবিধানের ১৫(১) এবং ১৫(৩) ধারাগুলোর প্রাসঙ্গিকতা চলে আসে। প্রথমটি বলছে, রাষ্ট্র কখনও নাগরিকের ধর্ম, জাত, লিঙ্গ, জন্মপরিচয় প্রভৃতির ভিত্তিতে বৈষম্য করবে না। এবং দ্বিতীয়টি তার সঙ্গে যোগ করেছে যে, বৈষম্যহীনতা সত্ত্বেও রাষ্ট্র মহিলা ও শিশুদের সুরক্ষার জন্য কোনও বিশেষ ব্যবস্থা করলে তা থেকে রাষ্ট্রকে নিবৃত্ত করা যাবে না। মহিলাদের চেয়ে পুরুষদের পেশিশক্তি একটু বেশি, এই বাস্তব সত্য মাথায় রেখেই মহিলাদের জন্য বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা, বাসে, ট্রামে মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত আসন রাখা হয়েছে। যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুর মোকাবিলা করতে যাওয়া থেকে মহিলাদের অব্যাহতি দেওয়া হত এই যুক্তিতেই। আজ ঐশ্বর্য ভাটির করা মামলার সুবাদে সর্বোচ্চ আদালতের আদেশে সশস্ত্র বাহিনীতে মহিলাদের ভর্তির রাস্তা খুলে গেল। মহিলাদের প্রতি ‘বিশেষ সুবিধা’র তত্ত্বকে ছাপিয়ে গেল ‘লিঙ্গ বৈষম্যহীনতা’। সংবিধানের উপরোক্ত দু’টি ধারার মধ্যে ১৫(১) ধারাটিই প্রাধান্য পেল।
মানস কুমার চৌধুরী, কল্যাণী, উত্তর ২৪ পরগনা
অসাম্যের ছবি
আর্থিক অসাম্যের মাপকাঠিতে ভারত চিরকালই উপরের দিকে। বিশ্বের সর্ববৃহৎ দশটি ব্যবসায়িক কেন্দ্রের একটি মুম্বই। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বস্তি সেখানে, আবার সেখানেই আছে একটিমাত্র পরিবারের থাকার ১০,০০০ কোটি টাকা মূল্যের ২৭ তলা বাড়ি। ভারতের মোট সম্পদের ৮০ শতাংশের মালিক ১% ধনী। সম্পন্ন ব্যক্তিরা যখন নিজস্ব প্লেনে মলদ্বীপ থেকে করোনার টিকা নিয়ে আসছেন, তখন অন্যরা সারা রাত লাইনে দাঁড়াচ্ছেন প্রথম ডোজ় বিনা পয়সায় পাওয়ার আশায়। এই রকম আরও অজস্র না-বলা-কথা আনন্দবাজার পত্রিকা-য় প্রকাশিত একটি ছবি (১২-৯) বুঝিয়ে দিল— দিল্লিতে হাঁটু-জলে দাঁড়িয়ে-পড়া মার্সিডিজ় বেঞ্জ ঠেলছে কিছু শিশু, ড্রাইভার, সহযাত্রী ফোনে মশগুল!
দেবাশিস মিত্র, কলকাতা-৭০
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy