—ফাইল চিত্র।
গত লোকসভা নির্বাচনে ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের (সিপিআইএম যার শরিক) মূল লক্ষ্য ছিল সংবিধান, গণতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতা টিকিয়ে রাখতে স্বৈরাচারী মোদী সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা। এনডিএ সরকার ক্ষমতায় ফিরলেও ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের সদর্থক প্রচার বিজেপির আসন সংখ্যা ৩০৩ থেকে ২৪০-এ নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়।
অন্য দিকে, এ বারের নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে বাম দলগুলোর ফলাফল অত্যন্ত হতাশাজনক। এ ব্যাপারে কিছু বিষয় উল্লেখ করার বিশেষ তাগিদ অনুভব করছি। প্রথমত, আমাদের রাজ্যে মিডিয়ার একাংশ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মুসলিম-দরদি সাজিয়ে সাম্প্রদায়িক বিজেপির সঙ্গে তৃণমূলের মেকি দ্বন্দ্বের প্রচারে লিপ্ত ছিল। সেই দ্বন্দ্ব মানুষকে কমবেশি প্রভাবিত করে। নির্বাচনের ফলাফলে তার প্রতিফলন ঘটে। আরএসএস-এর মর্জিতে বিজেপি এবং তৃণমূল পরিচালিত হয়— বামপন্থীদের এই প্রচার মানুষের মনে বিশ্বাস জাগাতে পারেনি। তাই এই রাজ্যে বিজেপির আসনসংখ্যা কমে তৃণমূলের আসনসংখ্যা বৃদ্ধিতে সাহায্য করেছে। দ্বিতীয়ত, বামফ্রন্টের আমলে ‘ভাতা’ সংক্রান্ত বেশ কিছু সরকারি প্রকল্প চালু ছিল। তৃণমূলের সময় সেই সংখ্যা স্বাভাবিক নিয়মেই কিছুটা বাড়ে। বামফ্রন্টের শাসনকালে ‘ভাতা’ কখনও নির্বাচনী বিষয় হয়ে ওঠেনি। তার কারণ সে সময় শিক্ষিত বা অশিক্ষিত বেকারদের সরকারি অথবা বেসরকারি সংস্থায় চাকরির যথেষ্ট সুযোগ ছিল। তাই মানুষ ‘ভাতা’ নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত ছিলেন না। তৃণমূলের আমলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ধ্বংসপ্রায়, কলকারখানার অভাব, কর্মসংস্থানের কোনও সুযোগ না থাকায় লক্ষ লক্ষ বেকার ছেলে সামান্য কিছু উপার্জনের আশায় পরিযায়ী শ্রমিকের জীবন বেছে নিচ্ছেন, কেউ কেউ রাস্তার পাশে তেলেভাজা, ঝালমুড়ি, ফুচকা, ঘুগনির দোকান দিচ্ছেন। অভাবী ঘরের বহু মহিলা পরিচারিকার কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। খুব স্বাভাবিক ভাবেই অসংখ্য স্বল্প আয়ের পরিবার তাই এই ‘ভাতা’-র উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে।
তৃতীয়ত, গ্রামেগঞ্জে তৃণমূলের অনেক নেতা নির্বাচনী প্রচারে বলেছেন ‘তৃণমূলকে ভোট না দিলে ভাতা বন্ধ হয়ে যাবে’। শাসক দলের অত্যাচার সম্বন্ধে মানুষ যথেষ্ট ওয়াকিবহাল, তাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও তৃণমূলকে ভোট দিতে বাধ্য হয়েছেন। চতুর্থত, আমাদের রাজ্যে যত সংখ্যক সংখ্যালঘু ভোটার আছেন, তাঁরা সব সময়ই নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন এবং নিজেদের নিরাপত্তার তাগিদে শাসক দলের সঙ্গে থাকেন। নির্বাচনের ফল সেটা বুঝতে আমাদের সাহায্য করে। যদিও কিছু কিছু অঞ্চলে এর ব্যতিক্রমও চোখে পড়ে। পঞ্চমত, রাজ্য জুড়ে ১০০ দিনের কাজের টাকা আদায়ে বামপন্থীদের কেন্দ্রের বিরুদ্ধে যতটা সরব হওয়া উচিত ছিল ততটা লক্ষ করা যায়নি। ষষ্ঠত, অনেক অঞ্চলে ‘ডায়মন্ড হারবার মডেল’-এ ভোট হওয়ায় তৃণমূলের আসন সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই মডেল সম্পর্কে অনতিবিলম্বে পার্টির পক্ষ থেকে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা না করলে আগামী নির্বাচনগুলোতে রাজ্য জুড়ে এই মডেল তৃণমূল চালু করে দেবে।
বছরের পর বছর পার্টির কর্মী-সমর্থকরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে প্রতিটি নির্বাচনে হতাশাজনক ফল পেলে তাঁদের উৎসাহ ও উদ্দীপনা তলানিতে ঠেকবে। পার্টির সর্বোচ্চ নেতৃত্বকে এই দিকটা একটু ভেবে দেখার অনুরোধ রইল।
জয়ন্ত তপাদার, যোগীপাড়া, উত্তর ২৪ পরগনা
নির্দোষের শাস্তি
‘নির্দোষের শাস্তি দুর্ভাগ্যজনক’ (৩০-৪) শীর্ষক আমার লেখাটির সমালোচনা করে বেশ কিছু চিঠি এই সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়। আমার লেখাটি প্রকাশিত হওয়ার অব্যবহিত পরেই মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ব্যাপারটির এক ধরনের স্বল্পমেয়াদি সমাধানের ব্যবস্থা হয়েছে এবং রায়টিতে মহামান্য প্রধান বিচারপতির বক্তব্যের সঙ্গে লেখায় আলোচিত বিষয়ের কিছুটা মিল আছে। আপাতত পাইকারি ভাবে চাকরি লুপ্ত হচ্ছে না। যা-ই হোক, আমার নৈতিক এবং যৌক্তিক অবস্থান আর একটু পরিষ্কার করে দিতে চাই।
সমালোচকেরা এবং আরও অনেকেই বলতে চেয়েছেন যে, সরকার যদি তদন্তের নথিপত্র লোপাট করে দেয় তা হলে কী ভাবে তদন্ত হবে। একটা কথা স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন যে, তদন্তে প্রমাণিত না হলে, বা আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষী জোগাড় করতে না পারলে, কিংবা খুনের অপরাধের বিচারের সময় যদি একটিমাত্র চিঠি অদৃশ্য হয়ে যায়, তা হলে কিছুতেই খুনিকে শাস্তি দেওয়া যায় না। আদালতের ন্যায়বিচার আর আমার-আপনার মনখারাপ বা ক্রুদ্ধ হওয়ার মধ্যে কোনও সম্পর্ক নেই। আইন মোতাবেক দোষী সাব্যস্ত হতে হলে, তদন্তের পর বিচারালয়ে মান্যতা পাবে এমন প্রমাণ আবশ্যক।
এ দেশের এখনও তেমন কোনও আইন আছে বলে জানা নেই যে, যদি সরকারের কোনও বিভাগ আসল কাগজপত্রের সন্ধান না দিতে পারে, তা হলে সেই আইন সরকারকে দোষী সাব্যস্ত করে, তাকে উৎখাত করে জেলে দেবে। এ বাংলায় ১৯৭০ সালে বর্ধমানে মায়ের চোখের সামনে ছেলের রাজনৈতিক হত্যা হলেও, সেই বিচারে প্রকৃত দোষী সাজা পায়নি। কারণ প্রমাণের অভাব। শিকাগো চত্বরে কুখ্যাত মাফিয়া ডনকে কিছুতেই অন্যদের নিধন করার দোষে অভিযুক্ত করা যায়নি। কারণ কোনও সাক্ষীই বেঁচে থাকত না। শেষ পর্যন্ত কর ফাঁকির অপরাধে তাঁর জেল হয়েছিল। আমি নিশ্চিত রবার্ট ডি নিরো এবং কেভিন কসনার অভিনীত হলিউডের বিখ্যাত ছবি দি আনটাচেবলস অনেকেই দেখে থাকবেন।
দোষীরা চাকরি পেলেন আর নির্দোষরা পেলেন না। অন্যায় এবং দুর্নীতিকে হাতিয়ার করে যাঁরা চাকরি পেয়েছেন তাঁদের শাস্তি আবশ্যক। কিন্তু আমাদের সাংবিধানিক এবং আইনের পরিসরে ‘সরকার’ নামে বস্তুটি যৌথ দায়িত্বভার বা ‘কালেকটিভ রেসপনসিবিলিটি’-র প্রতিভূ। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সরকারের দিকে আঙুল তুলে কয়েকটি কথা বলেছেন। কিন্তু তদন্তের কাগজপত্র যত ক্ষণ না পাওয়া যাচ্ছে, তদন্ত যত ক্ষণ না শেষ হচ্ছে এবং তদন্তকারী সংস্থা যত ক্ষণ না সঠিক ভাবে প্রমাণ করতে পারছে, তত ক্ষণ কোনও তথাকথিত দোষী মানুষকেও শাস্তি দেওয়া সহজ নয়। আর এর ফলে একটিও নির্দোষ মানুষ যদি শাস্তি পায়, তা হলে সেই দোষেরও তুলনা নেই।
যদি কেউ আসল দোষীদের শাস্তি চান, তাঁরা বুঝতে পারবেন যে, আইনের বেড়াজালে বিচারের সিদ্ধান্ত সব সময় সঠিক পথের সন্ধান পায় না। অবচেতনের অনেক যুক্তিহীন উষ্মা আমাদের চিন্তাধারাকে বিপথগামী করে। কেউ আসলে দোষী কি না, সেটা ঠিক করবে আদালত, আইনের হাত ধরে। এটাই শেষ কথা।
সুগত মারজিৎ, কলকাতা-২৯
ডাহা ফেল
‘তুকতাক?’ (৮-৬) সম্পাদকীয়টি এক কথায় অনবদ্য। লোকসভা ভোটের শেষ দফার নির্বাচন সম্পূর্ণ হতেই বিভিন্ন সংস্থার এগজ়িট পোল (বুথ-ফেরত সমীক্ষা) প্রচারিত হল। সব ক’টি সংস্থাই এনডিএ-কে ৩৫০-এর উপর আসন দেয়। আগে দেখা গিয়েছে এগজ়িট পোল-এর ফল আসল ফলাফলের কাছাকাছিই থাকত, দু’-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া। তাই মানুষ বিশ্বাসও করেছিলেন। কিন্তু আসল ফল বেরোতে দেখা গেল এনডিএ ৩৫০ তো দূর, তিনশোও পেরোল না।
এতগুলো সংস্থার এগজ়িট পোলের নিদান ভুল হল কেন, সেটাই রহস্যজনক। যদিও এগজ়িট পোল কতটা বিজ্ঞানসম্মত, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। সমগ্র ভোটারের মাত্র এক শতাংশেরও অনেক কম ভোটারের মতামত এতে নেওয়া হয়, তাই গরমিল হতেই পারে। কিন্তু অন্য বারের তুলনায় এ বারের এগজ়িট পোলের ফলাফলে এতটা অমিল হল কেন? যদি কোনও গড়াপেটা থাকে, তা হলে ওই সংস্থাগুলোর মুখেই চুনকালি পড়ল। ভবিষ্যতে এমন সমীক্ষার কোনও প্রয়োজন নেই, যা মানুষকে বিভ্রান্ত করে।
অরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা-৮৪
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy