দেবাশিস ভট্টাচার্যের ‘জানি না, দেখিনি, বুঝিনি!’ শীর্ষক উত্তর সম্পাদকীয় (১-৭) খুবই প্রাসঙ্গিক। স্বীকার করে নেওয়া ভাল যে, অভিযুক্ত দেবাঞ্জন দেবের কর্মকুশলতা অসীম। সরকারি প্রায় সব দফতরে তাঁর অবাধ যাতায়াত ছিল। তাঁর নিরাপত্তারক্ষীরও রাজভবনে যাতায়াত ছিল— এমন অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু তাঁর এই অতি ‘ভিআইপি’ হয়ে পড়া আবারও অনেক কিছু সামনে নিয়ে এল। তিনি পুরসভার ‘মুখ্য উপদেষ্টা, যুগ্ম সচিব, রাজ্য সরকার’ হয়ে উঠলেন, দীর্ঘ দিন অফিস করলেন, অথচ পুরসভার সরকারি আধিকারিকরা চিনলেন না! দেবাঞ্জনের এ ধরনের কর্মকাণ্ডে কোনও বিশেষ মহল থেকে ছাড়পত্র ছিল কি না, তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ থেকেই যায়। তাঁর এই বিলাসবহুল জীবনযাপনের উৎস কী ছিল, সে নিয়েও সংবাদমাধ্যমে কিছু জানা যাচ্ছে না। তিনি অন্যদের ‘সরকারি’ চাকরির নিয়োগপত্র দিতেন, চাকরি দিতেন এবং মাইনেও দিতেন— এমনটাই শোনা যাচ্ছে। কিন্তু তিনি সরকারি আধিকারিক হিসেবে নিজে কোনও মাইনে পেতেন কি না, তা এখনও অজানা।
আসা যাক তদন্তের কথায়। অতীতে এই রাজ্যে সবচেয়ে বড় হইচই হয়েছিল সারদা কাণ্ড নিয়ে। তদন্ত করেছিল এবং করে চলেছে রাজ্য পুলিশের স্পেশ্যাল ইনভেস্টিগেশন টিম (সিট), এবং সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সিবিআই। কিন্তু আজ আট বছর পরে তার পরিণতি কী হয়েছে, তা আর বলে দিতে হবে না। তা হলে কি এটা ধরে নিতে হবে যে, ভবিষ্যতে ভুয়ো ভ্যাকসিন কাণ্ডের পরিণতিও সারদা কাণ্ডের মতোই হবে?
সুদীপ মাইতি
কাঁথি, পূর্ব মেদিনীপুর
প্রশাসনিক দায়
সংবাদমাধ্যমে একটার পর একটা ঘটনা যে ভাবে সামনে আসছে, তাতে প্রশ্ন ওঠে যে, প্রশাসন ও ভোটসর্বস্ব নীতিহীন রাজনীতির কারবারিদের দেশের মানুষের প্রতি কোনও দায়িত্ববোধ আছে কি? প্রতি দিন যা কিছু ঘটছে, তার দায়িত্ব কোনও ভাবেই তাঁরা এড়িয়ে যেতে পারেন না, যদি না কোনও ব্যক্তিগত স্বার্থ থাকে। সাম্প্রতিক দেবাঞ্জন দেব ও ভুয়ো ভ্যাকসিন কাণ্ড তেমনই এক ঘটনা। সমাজে এ ধরনের সমস্যা উত্তরোত্তর বাড়ছে। তুলনায় প্রশাসনের নজরদারির পরিধি-বৃদ্ধি ঘটছে না, বরং অনেক ক্ষেত্রে তা কমিয়ে ফেলা হচ্ছে। প্রশাসনের নিরপেক্ষতাও তলানিতে। কাজেই সরকারের পরিচালকমণ্ডলী যে অনেকাংশেই সমস্যা-বৃদ্ধির জন্য দায়ী, দেবাঞ্জনের কুকীর্তি তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।
তাই প্রয়োজন আন্দোলন। পাশাপাশি প্রশাসনের পক্ষ থেকে করা হোক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা, যাতে দ্বিতীয় কেউ এ ধরনের কাজ করার কথা আর না ভাবেন।
তপন বর্মন
রায়গঞ্জ, উত্তর দিনাজপুর
আড়ালের চেষ্টা
ভুয়ো ভ্যাকসিন কাণ্ড প্রকাশ্যে আসার পর দেবাঞ্জন দেব রাতারাতি খবরের শিরোনামে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে এই ধরনের মানুষদের অতিরিক্ত গুরুত্ব না দেওয়ার কথা বললেও প্রতি দিনই বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ সংবাদে তাঁর নাম এবং ছবি উঠে আসছে। শুধু তা-ই নয়, প্রতিনিয়ত প্রকাশ্যে আসছে তাঁর কীর্তিকলাপের নানা কাহিনি। মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ্যে আসা এই সমস্ত ছবির প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে ফেক ভিডিয়ো এবং “বিজেপির অনেকের সঙ্গেও ছবি আছে” (‘রিপোর্ট চায় কেন্দ্র’, ১-৭) বলে বিষয়টিকে লঘু করে দেখানোর চেষ্টা করেছেন। ইতিমধ্যেই কোনও কোনও মহল থেকে দেবাঞ্জন দেবকে মানসিক ভারসাম্যহীন বলে প্রমাণ করার চেষ্টা চলছে, যাতে তাঁর পাহাড়প্রমাণ জালিয়াতি এবং তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা বিভিন্ন ব্যক্তি এবং সংস্থার দুর্নীতিকে আড়াল করা যায়। এই ধরনের অপচেষ্টার ফলে আইনের ফাঁক-ফোকর গলে আগামী দিনে শত শত ‘দেবাঞ্জন’ উৎসাহিত হয়ে বাংলার বুকে যে দাপিয়ে বেড়াবে, সেই আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে।
সোমনাথ চৌধুরী
বোলপুর, বীরভূম
দুর্নীতিরাজ
ভুয়ো ভ্যাকসিন কাণ্ডে পুলিশ, প্রশাসন এবং রাজনৈতিক নেতাদের সম্পর্কে জনমনে ক্ষোভ ও অবিশ্বাসের এক বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। ‘জানি না, দেখিনি, বুঝিনি!’ শীর্ষক নিবন্ধের একেবারে শেষে তাই দেবাশিস ভট্টাচার্য যেমন এক দিকে প্রশ্ন তুলেছেন, “পুলিশ, নেতা সবাই কি জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছেন? দক্ষতা কমছে? টাকা পেয়ে চুপ করে থাকেন? না কি, ‘খুঁটির জোর’ বুঝলে ঘাঁটান না”, আর এক দিকে তাঁর অনুমান ব্যক্ত করেছেন— “সত্যিকারের তদন্ত হলে ‘রুই-কাতলা’ জালে পড়ার সম্ভাবনা যথেষ্ট।” সত্যিই, কী ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে আমরা দিন কাটাচ্ছি, ভাবলে শিউরে উঠতে হয়। ক্রমবর্ধমান দুর্নীতি-কেলেঙ্কারি, পুলিশ-প্রশাসনের ব্যর্থতা-উদাসীনতা এবং নামমাত্র তদন্ত কমিটি গঠনের প্রবণতার ঘটনায় আজ সমাজ অভ্যস্ত। এই নিম্নগামী সামাজিক পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসা কতটা সম্ভব, সে বিষয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।
আশ্চর্য লাগে, পুরসভার লোগো-হলোগ্রাম ব্যবহার, পুরসভার জিএসটি নম্বর দিয়ে ভুয়ো অ্যাকাউন্ট খোলা থেকে সর্বশেষে করোনার ভুয়ো প্রতিষেধক শিবিরের কর্মকাণ্ড— এর বিন্দুমাত্র খবর পুরসভা-পুলিশ-প্রশাসনের নজরে এল না? এই কথা কি সত্যিই বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়?
শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়
নবদ্বীপ, নদিয়া
গুরুর আসনে
‘ভাবমূর্তি এখনও অটুট’ (২৮-৬) নিবন্ধে জহর সরকার যথার্থই বলছেন, “মোদীর সবচেয়ে বিপজ্জনক অবদান হল রাজনীতির সঙ্গে ভারতীয় গুরুবাদী ঐতিহ্যের সংযোজন।” অন্যান্য ধর্মে দেখা যায়, প্রতিটি এলাকার ধর্মীয় প্রধানরা ভক্তদের মানসিক সান্ত্বনা জোগান এবং উপদেশও দিয়ে থাকেন। কিন্তু হিন্দু ধর্মে শাস্ত্রজ্ঞ বা মন্দিরের পুরোহিতদের এ ধরনের কাজ করতে সাধারণত দেখা যায় না। এর জন্য ভক্তরা যান গুরুদেবের কাছে, যাঁদের অবিশ্বাস্য প্রভাব দেখতে পাওয়া যায় ভক্তদের মধ্যে। এই গুরুরা ভক্তদের কাছে প্রায় দেবতাস্বরূপ। মোদী খুব পরিকল্পিত ভাবে নিজেকে এই গুরুর জায়গায় বসিয়েছেন। ভারতে এই গুরুভক্তি এমনই যে, তাকে টলানো অত্যন্ত দুষ্কর। ‘ভক্ত’রা কোনও অবস্থাতেই তাঁদের গুরুর প্রতি অবিচল আস্থা হারিয়ে তাঁকে পরিত্যাগ করার কথা ভাবতেই পারবেন না।
কথাটা যে কতটা সত্যি, তা একটা ঘটনা থেকে বুঝেছিলাম। ২০১৭ সালের অগস্টে পঞ্জাবে গ্রেফতার হন গুরু গুরমিত রামরহিম। অভিযোগ সাংঘাতিক— একাধিক মহিলা শিষ্যের ধর্ষণ ও খুন। কিন্তু তাঁর সমর্থনে কোনও ভাটা পড়ল না। তাঁর গ্রেফতারির বিরোধিতা করে তিনটি রাজ্য জুড়ে তাঁর ভক্তরা দাঙ্গা বাধিয়ে, নিরীহ মানুষের মৃত্যু ঘটিয়ে, প্রচুর সরকারি ও ব্যক্তিগত সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি করলেন। সে সময় আমি কর্মসূত্রে দিল্লিতে। এক সহকর্মীর কাছে শুনেছিলাম, গুরুদেবের কোনও ভক্তের স্ত্রী-কন্যার ‘সেবা’ গ্রহণের মধ্যে গৃহকর্তা অন্যায় কিছু না-ও দেখতে পারেন। এমন মানসিকতা যে দেশে রয়েছে, সেখানে গুরুদেব চারটি মিথ্যা কথা বললেই বা কী আসে যায়? পেট্রল-ডিজ়েলের দাম বাড়ানো, অসংখ্য মানুষের চাকরি হারানো, করোনায় কয়েক লক্ষ মানুষের মৃত্যুও ভক্তের মনে খুব বেশি প্রভাব ফেলতে পারে না। এই কারণেই মোদীর দিকে আঙুল উঠলে, বা আঙুল ওঠার সম্ভাবনামাত্র তৈরি হলে ভক্তকুলের প্রতিক্রিয়া এত তীব্র হয়।
ইন্দ্রনীল মণ্ডল
কলকাতা-১৬
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy