‘নারীবাদ’ শব্দটিকে জোর করে নামিয়ে আনা হয় এক ছোট্ট গণ্ডির ভিতর। প্রতীকী ছবি।
সামনে নারীদিবস। কিন্তু আজও ‘নারীবাদ’ শব্দটিকে জোর করে নামিয়ে আনা হয় এক ছোট্ট গণ্ডির ভিতর। যার চার দিকে থাকতে নেই কোনও ইতিহাস, কোনও সাম্যের ও সমতার কথা। পুরুষ-নারী নির্বিশেষে এগিয়ে এসে অসুস্থ চিন্তাগুলোকে দূর করে সঠিক চিন্তন ও মনন নতুন প্রজন্মকে উপহার দেওয়া যেতে পারে, সে কথা আজও মেনে নিতে বড় কষ্ট হয়। কেন কষ্ট?
বিরোধিতা শুরু হয় পরিবার থেকেই। যা চলে আসছে, তার বিরুদ্ধে কারও মনে প্রশ্ন উঠলেই দাগিয়ে দেওয়া হয় বিশেষ ভাবে। যেমন, চাকরিতে সাময়িক বিরতি নিয়ে সংসার করতে আসা মেয়েটির আদর-যত্নে পরিবারে সকলেই বেশ একটা আরামদায়ক জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত হয়ে যান। সময়মতো হাতের কাছে যা প্রয়োজন, পেয়ে যাওয়া যায়। সন্তান কিছু বড় হওয়ার পরে মেয়েটি আবার নিজের কেরিয়ার শুরু করতে চাইলে কিন্তু বাদ সাধে এই পরিবারই, যাঁদের জন্য এত বছর সে কাজের জগৎ থেকে সরে থাকার ত্যাগ স্বীকার করেছে। যাঁদের সহায়তা দরকার, সেই স্বামী, মেয়েটির নিজের বাবা-মা, বা শ্বশুর-শাশুড়ি, পাশে পাওয়া যায় না কাউকেই। কেন পাওয়া যায় না? কারণ, কাজের মধ্যে দিয়ে নিজেকে খোঁজার প্রয়োজনটা একান্ত সেই মেয়েটির নিজের। তার কেউ আর নিজের আরামের বৃত্ত থেকে বার হতে প্রস্তুতই নন। উল্টে তাকে বোঝানো হয়, “ঠিক সময়ে যখন হয়নি, তখন আর কেন? এখন কাজ করলে সন্তানের সমস্যা, সকলের সমস্যা।” অথচ, সেই স্বামীই আবার মাথা গরম থাকলে অনেক সময় ‘আমার টাকায় খাও, আমার বাড়িতে থাকো’ ধরনের মন্তব্যও শোনাতে ছাড়েন না। বাকিরা বলতে ছাড়েন না, ‘কী করো সারা দিন, ঘরেই তো আছ।” অভিভাবকরাও পিছু হটেন, বাচ্চা সামলানোর হ্যাপা এড়ানোর জন্য। সংসারী মেয়েদের রোজগার করাটা আজও একটা প্রয়োজন বলে দেখা হয় না, ওটা যেন একটা ইচ্ছামাত্র।
প্রশ্ন হল, নতুন প্রজন্মও কি স্ত্রীকে সব দিক থেকে স্বাধীন বলে দেখতে ভালবাসে? উত্তর, না। সমীক্ষা কী বলবে জানি না, কিন্তু আমার অনুভব, অধিকাংশ পুরুষ চায় যে, স্ত্রী তার আয়ত্তে থাকুক। বিশেষত টাকা-পয়সার ব্যাপারে স্ত্রী’র নির্ভরশীলতা চায়। মেয়েরা যখনই নিজের মতো বিনিয়োগ করে, নিজের ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট নিজে ব্যবহার করতে শুরু করে, তখনই এক তুমুল নিরাপত্তাহীনতা কাজ করে এখনও।
চাকরি করা মেয়েরাও কি পুরোপুরি স্বাধীন? কখনওই নয়। বিয়ের পর সে যে চাকরি করবে, তার উপরেও পরিবার থেকে চাপানো হয় হাজার শর্ত। কখনও মাইনের নির্দিষ্ট শতাংশ দেওয়া, কিংবা স্বামীর চেয়ে কম মাইনের চাকরি করা, রাতের শিফটে কাজ না করা, আরও অনেক।
উল্টো ছবিটাও অবশ্য সমাজে দেখতে পাওয়া যায়, যেখানে মেয়েরা নিজেরাই এই নির্ভরশীলতা ভালবাসে। তারা শাঁখা পলা লোহা সিঁদুরে, কিংবা পুত্রসন্তানের মা হিসেবে যতটা গর্বিত, ততটাই পুরুষমানুষকে দিয়ে ঘরের কাজ করানোকে অপরাধ বলে মনে করে। আর কত দিন? অবস্থা পরিবর্তন করতে হলে নিজেদের লড়াইটা নিজেদেরই লড়তে হয়, প্রশ্ন করতে শিখতে হবে, না-হলে অবস্থা পরিবর্তন হওয়াটা এত সহজেসম্ভব নয়।
সবর্ণা চট্টোপাধ্যায়, বারাসত, উত্তর ২৪ পরগনা
হারবে কাপুরুষ
ছোটবেলায় যখন বাসে যাতায়াত করতে শুরু করি, তখন সর্বপ্রথম যৌন-হেনস্থার সম্মুখীন হয়েছিলাম। বাড়িতে এসে খুব কেঁদেছিলাম। বাড়ি এসে মাকে বলি, আজ এক জন পুরুষ তার পুরুষাঙ্গ আমার গায়ে বার বার ঠেকিয়ে অশ্লীল আচরণ করছিল। তখন আমি ক্লাস ফাইভে ভর্তি হয়েছি। মা আমাকে বলেছিলেন, “এটা প্রতিটি মেয়ের সঙ্গেই হয়ে থাকে। তুই যদি এটা ভেবে বাড়িতে বসে থাকিস, তা হলে পড়াশোনা ছেড়ে দে। এটা ভেবে নিয়ে এগিয়ে চলতে হবে যে, আমার সঙ্গে এটা রোজ হবে। এটাকে এমন কিছু গুরুত্ব দিস না। সব মেয়ে এ সবের সম্মুখীন হতে হতেই এগিয়ে চলেছে। তোকেও এগিয়ে যেতে হবে।” কিন্তু সে দিন থেকে আজও যখন এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হই, তখন শরীর বলে ওঠে, তফাত যাও। এখনও ভিড় বাসে আমার কাঁধে ব্যাগ থাকে। মেয়ে হয়ে জন্মেছি, তাই নিজের শরীর আমার শত্রু। গোপনীয়তা মেনে মেয়েদের চিকিৎসা করানোর ব্যবস্থা নেই অনেক জায়গায়। যে সব জায়গায় মহিলাকর্মী রাখা দরকার, সেখানে তা নেই।
কলেজ, ইউনিভার্সিটি, অফিস সব জায়গাতেই কেউ না কেউ, কখনও না কখনও শ্লীলতাহানি কিংবা ধর্ষণের সম্মুখীন হয়। সব কিছু যে থানা পর্যন্ত পৌঁছয়, তা কিন্তু নয়। মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত মানুষটি সাহস করে যদিও থানা পর্যন্ত পৌঁছয়, তার পর তাকে নোংরা প্রশ্নের এবং প্রস্তাবের সম্মুখীন হতে হয়। তার প্রতি যে ব্যক্তি অন্যায় করেছে, তার জন্য শারীরিক যন্ত্রণা এবং মানসিক যন্ত্রণাতে সে এমনিতেই মরে থাকে। লড়াইটা হয় সমস্ত অশ্লীল মন্তব্য ব্যবহার করা মানুষগুলোর সঙ্গে নিজের। আইন-আদালত, থানা-পুলিশ চক্কর কাটতে কাটতে মেয়েটির অর্থের ভাঁড়ারে মা ভবানী। তার পরেও অপরাধী প্রভাবশালীহলে নিজের ক্ষমতাবলে ছাড়া পেয়েও যায়।
আমাদের দেশে মেয়েদের জন্য আইনের অভাব নেই। ভারতীয় সংবিধানে যৌন-নির্যাতন ও হেনস্থার জন্য ধারা ৩৫৪, ধারা ৩৫৪ (ক), নারীকে বলপূর্বক বিবস্ত্র করানোর জন্য ধারা ৩৫৪ (খ), গোপনে নারীঅঙ্গ দেখা বা ছবি তোলার জন্য ধারা ৩৫৪ (গ), নারীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার পিছনে ঘোরা বা তার সঙ্গে যোগাযোগ করার ধারা ৩৫৪ (ঘ), শোষণের উদ্দেশ্যে বলপূর্বক নারী-পাচারের ধারা ৩৭০ (১), এবং ৩৭০ (ক), ধর্ষণ বা গণধর্ষণের জন্য ধারা ৩৭৬, স্বামী বা তার আত্মীয়ের দ্বারা দৈহিক এবং মানসিক নিষ্ঠুরতার ধারা ৪৯৮ (ক), হাসপাতাল দ্বারা নির্যাতিতার চিকিৎসা না-করার ধারা ১৬৬ (খ), যৌন আক্রমণ থেকে শিশু সুরক্ষা আইন— তার পরেও প্রশ্ন থেকে যায়, মেয়েরা কি সত্যিই নিরাপদে আছে?
কেউ ভাবতে পারেন, মেয়েরা এত অগ্ৰবর্তী হচ্ছে কী করে? এত কিছুর পরেও তো মেয়েরা থেমে যায়নি। আসলে আমাদের ছোট থেকেই বলা হয়, মেনে নাও আর মানিয়ে নাও। আর সব থেকে বড় বাধা হল, “কী বলবে লোক?” অর্থাৎ, তোমাকে এগিয়ে যেতে হলে এই সমস্ত কিছু নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে। আর নয়তো দরজা বন্ধ করে বসে থাকো। পড়াশোনা করার দরকার নেই। চাকরি করার দরকার নেই। এমনকি চিকিৎসা করানোর কোনও দরকার নেই। অথচ, আমরা একবিংশ শতকের নারী। এখন মনে হয়, মেয়েরা না কোনও দিন নিরাপদে ছিল, না কোনও দিন থাকবে। পুরুষ হতে পারে শারীরিক দিক থেকে অনেক বেশি ক্ষমতাবান, কিন্তু মেয়েদের মানসিক ক্ষমতার কাছে কাপুরুষদের হারতেই হবে।
অনন্যা সামন্ত, বেলগ্রাম, পূর্ব বর্ধমান
হয়রানি
উত্তর ২৪ পরগনার মসলন্দপুরের রাজবল্লভপুর ডাকঘরের গ্রাহকরা হয়রানিরশিকার হচ্ছেন। কর্মচারীরা প্রতিদিন অফিসে আসেন, কিন্তু কোনও কাজ যথাযথ ভাবে হয় না। ফলে গ্রাহকরা রেকারিং ডিপোজ়িট,সুকন্যা সমৃদ্ধি এবং সেভিংস অ্যাকাউন্টে ঠিক সময়ে টাকা জমা করতে পারছেন না। ডাকঘর বিভাগের কাছে জানাতে চাই,যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এইডাকঘরের কাজকর্ম যথাযথভাবে শুরু হোক।
সোমনাথ ঘোষ হাবড়া, উত্তর ২৪ পরগনা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy