—ফাইল চিত্র।
সুগত মারজিৎ-এর ‘নির্দোষের শাস্তি দুর্ভাগ্যজনক’ (৩০-৪) প্রবন্ধ প্রসঙ্গে কিছু কথা। যদিও সুপ্রিম কোর্ট ওই মামলায় কোনও শিক্ষককে খারিজ করা, বা বেতন ফেরত দেওয়ার উপর স্থগিতাদেশ দিয়েছে, তবু হাই কোর্টের রায়, এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে সুগতবাবুর প্রবন্ধটি নিয়ে কিছু কথা বলা দরকার।
কলকাতা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ যোগ্য এবং অযোগ্য প্রার্থীদের তালিকা পৃথক করে দেওয়ার জন্য স্কুল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যানকে বারে বারে অনুরোধ করেছিল। তাঁরা অক্ষমতা প্রকাশ করায়, নিরুপায় হয়েই দুই বিচারপতি যোগ্যদেরও বরখাস্ত করতে বাধ্য হয়েছিলেন। তবে সুদ-সমেত টাকা ফেরতের সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র অযোগ্যদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে, বলা হয়েছিল। সবাইকে টাকা ফেরত দিতে হত না। প্যানেলের বাইরে থেকে যাঁদের নিয়োগ করা হয়েছে, আর যাঁরা ফাঁকা ওএমআর শিট জমা দিয়েও নিয়োগপত্র পেয়েছেন, শুধু তাঁদেরই টাকা দিতে হত।
ওএমআর শিটে কারচুপি করার অজস্র উদাহরণ প্রকাশ্যে এসেছে। শূন্য, ১, ২ পাওয়া চাকরিপ্রার্থীরা টাকার বিনিময়ে নম্বর বাড়িয়ে শিক্ষকতার মহান পেশায় নিযুক্ত হয়ে বছরের পর বছর সরকারি কোষাগার থেকে জনগণের টাকায় বেতন পেয়ে গেছেন। উল্টো দিকে, অযোগ্য শিক্ষকদের কাছে পাঠ গ্রহণ করার ফলে দিনের পর দিন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী। এসএসসি কর্তৃপক্ষ অযোগ্যদের বাঁচাতেই গড়িমসির নজিরবিহীন ঘটনা ঘটাল কি না, ভেবে দেখা প্রয়োজন। এমন পরিস্থিতিতে ‘ন্যায়বিচার’ হল না বলে হাই কোর্টকেই দোষারোপ করার অর্থ হয় কি?
পরিশেষে বলব, ভারতীয় বিচারব্যবস্থায় ‘এক জন নিরপরাধ ব্যক্তিও যাতে শাস্তি না পান’, তা নিশ্চিত করার জন্য বিচারপতিরা সচেষ্ট থাকেন বলেই হয়তো কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষ ভেবেছিলেন যে, যোগ্যদের সঙ্গে অযোগ্যদের মিলিয়ে দিলে বিচারপতিরা নিরুপায় হয়ে সকলকেই শিক্ষকতার চাকরিতে বহাল রাখার পক্ষে রায় দিতে বাধ্য হবেন। এই মামলার ক্ষেত্রে সেটা হয়নি। হাই কোর্টের এই রায়ের ফলে ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্নীতির পথে পা বাড়াতে দুর্নীতিগ্রস্তরা দ্বিধাগ্রস্ত হন কি না, তা দেখা দরকার।
রতন রায়চৌধুরী, পানিহাটি, উত্তর ২৪ পরগনা
চাল-কাঁকর
সুগত মারজিৎ তাঁর প্রবন্ধে প্রশ্ন তুলেছেন, বিচারের চিরায়ত দর্শন এবং শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির মামলায় রায়, এই দুইয়ের সংঘাত নিয়ে। যার পরিণামে কিছু নিরপরাধ ব্যক্তিকে চাকরি থেকে খারিজের নির্দেশ দিয়েছিল হাই কোর্ট। এটা দুর্ভাগ্যজনক, তা তো বটেই। কিন্তু চাল থেকে কাঁকর আলাদা করবে কে? মহামান্য হাই কোর্ট এই কথাই রায়ে বলেছিল যে, চাল আর কাঁকর এমন ভাবে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে যে আলাদা করা যাচ্ছে না। কেন যাচ্ছে না? প্রবন্ধকার বলেছেন, তথ্যভান্ডার সাজাতে হবে। পাবেন কোথায়? তিনি কি জানেন না যে, তথ্যভান্ডার পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে? তথ্যভান্ডার সংরক্ষণের দায় কার? সেই তথ্য আদালতের সামনে পেশ করে যোগ্য শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের চাকরি রক্ষার দায় কার?
বিচারের চিরায়ত দর্শনকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে প্রবন্ধকার বলছেন, চাল আর কাঁকর যদি আলাদা করা না-ই যায়, তা হলে চাল ফেলে দেওয়া হবে কেন? চালের কী দোষ? এ যেন চালকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে কাঁকর পাচারের পরিকল্পনা। এলোমেলো করে দে মা, লুটেপুটে খাই। প্রবন্ধকার এই মামলায় বাদী-বিবাদীর ভিড় টপকে তৃতীয় পক্ষকে খুঁজে পেলেন, যারা নাকি ‘লাভের গুড়’ খেয়ে যাচ্ছে। সরকারের পতন চাইছে। নিয়োগ দুর্নীতির এত নিপুণ নির্মাণ যাঁরা করলেন, তাঁদের খুঁজে পেলেন না? সরকার তেড়েফুঁড়ে কেন সুপ্রিম কোর্টে গেল, কার স্বার্থ রক্ষা করতে গেল, তা বোঝা কঠিন নয়। কিন্তু আমাদের বুদ্ধিজীবীরা স্বেচ্ছায় অন্ধ, বধির। তাঁরা কিছুতেই স্টাম্পের মধ্যে বল রাখবেন না। তাঁদের সমস্যা, শ্যাম রাখি না কুল রাখি। এখানেই বুদ্ধিজীবীর সঙ্কট।
অরূপরতন মুখোপাধ্যায়, কলকাতা-৬০
যাঁরা অযোগ্য
নিয়োগে অনিয়মের জন্য ২৫৫৭৩ জন শিক্ষককে খারিজ করার যে রায় দিয়েছিল কলকাতা হাই কোর্ট, তাতে আমরা সাধারণ মানুষ ভীষণ খুশি হয়েছিলাম। অনেকেই বলছেন, যোগ্যদের বঞ্চিত করা হবে কেন, অযোগ্যদের বাদ দেওয়া হোক। আমার প্রশ্ন, ‘যোগ্য-অযোগ্য’ শব্দের ব্যবহার আসবে কেন? যাঁরা পরীক্ষায় না বসে অন্য ভাবে চাকরি পেয়েছেন, তাঁদের ‘অযোগ্য’ বলা উচিত নয়। তাঁদের এক কথায় ‘চোর’ বলা উচিত। সেই সঙ্গে তাঁদের যাঁরা চাকরি পাইয়ে দিয়েছেন, তাঁদের ‘ডাকাত’ বলা উচিত। এই অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া উচিত। কারণ, এঁরা আমাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারময় করে তুলেছেন।
অনেকেই চাকরিহারাদের হয়ে সওয়াল ও সহমর্মিতা প্রকাশ করেছেন। এই সকল দুর্নীতিগ্রস্ত শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের প্রতি কোনও সহানুভূতি দেখানোই উচিত নয়, কারণ এঁদের অনেকেই সজ্ঞানে যোগ্য প্রার্থীদের হটিয়ে কেবল টাকার বিনিময়ে চাকরিগুলি কিনেছেন। যদি সহমর্মিতা দেখাতেই হয়, তা হলে আজ বিগত ছ’বছর ধরে যাঁরা রাস্তার ধারে অনশন করছেন, তাঁদের প্রতি সহানুভূতি দেখানো উচিত।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য দু’টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যেগুলি আমাদের আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যতের ভিত মজবুত করে। সেখানেও এই সরকার দুর্নীতির খেলায় মত্ত হয়েছে। সাধারণ মানুষের পরিত্রাণ পাওয়ার একমাত্র রাস্তা এখন আদালত।
প্রবীর আদক, পূর্বকোলা, পূর্ব মেদিনীপুর
জল অপচয়
পাইপের মাধ্যমে ঘরে ঘরে পানীয় জল পৌঁছনোর প্রকল্প নিয়ে নতুন করে ভাবনার প্রয়োজন। নিরাপদ পানীয় জল সরবরাহ করতে গিয়ে প্রচুর ভৌমজলের অপচয় হচ্ছে। পাইপলাইনের অধিকাংশ জায়গায় ট্যাপ লাগানো নেই। প্রশাসনের সাফাই গায়, পাইপবাহিত জলের বেগ বেশি থাকে, ট্যাপ লাগালে পাইপ ফেটে যাবে। কিন্তু ভৌমজলের তো অফুরন্ত ভান্ডার নেই যে, জল নষ্ট করা যাবে। কোথাও বা সরকারি উদ্যোগে পাড়ায় সাবমার্সিবল বসিয়ে ট্যাঙ্কের উপরে সোলার প্লেট বসানো হচ্ছে। এতে প্রয়োজনীয় বিদ্যুতের সাশ্রয় হচ্ছে বটে, কিন্তু জলের অপচয় আরও বেশি হচ্ছে, কারণ জল তুলতে তো কোনও অর্থব্যয় হচ্ছে না।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলার অনেক জায়গায় এই জলে বাসনপত্র পরিষ্কার থেকে গরুকে স্নান করানো, ধান সেদ্ধ, সবই হচ্ছে। আগে এগুলো পুকুরের জলেই হত। স্থানীয় মেয়েদের কাছে জেনেছি, ট্যাপ-কলের সুখ ছেড়ে পুকুরে আর কেউ যেতে চাইছে না। এতে ভূ-গর্ভস্থ জলের অপচয় হচ্ছে। দীর্ঘ দিন অব্যবহৃত থেকে পুকুরগুলোর স্বাস্থ্যও বিনষ্ট হচ্ছে, ফলত জলজ বাস্তুতন্ত্র প্রভাবিত হচ্ছে ও পুকুর মজে যাওয়ায় বৃষ্টির জল সঞ্চয়ের পরিসর কমছে। পাড়ার টিউবওয়েলগুলিও অকেজো হয়ে আছে। সাবমার্সিবল বসিয়ে দেওয়ায় এটি সারানোর উদ্যোগ নেই প্রশাসনের। পরিশ্রম করে পাম্প করে টিউবওয়েলে জল তুলে খরচ করলে কিছুটা পরিমিত ব্যবহারে অভ্যস্ত হওয়া যায়, ট্যাপকলে সেটা হয় না।
আমরা অধিকাংশই জলের যথাযথ ব্যবহার নিয়ে উদাসীন। তাই অদূর ভবিষ্যতে তীব্র জলসঙ্কট এড়াতে সরকারের উচিত, প্রতিটি জলের উৎসমুখে জলের মিটার বসানো। এমনকি ব্যক্তিগত ভাবে সাবমার্সিবল বসানো প্রতিটি বাড়িতেও জলের মিটার লাগানো বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত। ব্যক্তিগত ও পাড়ার টিউবওয়েলগুলি চালু রাখা, পুকুরগুলির নিয়মিত সংস্কার, ও নতুন পুকুরও খনন করা জরুরি।
শুভ্রা সামন্ত, বালিচক, পশ্চিম মেদিনীপুর
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy