‘ছুটির ফাঁদে’ (৮-৪) সম্পাদকীয় প্রসঙ্গে কিছু সংযোজন। এই যে গত কয়েক বছর গ্ৰীষ্মাবকাশ দীর্ঘায়িত করার রেওয়াজ শুরু হয়েছে, এতে শুধু ছাত্রছাত্রীদের পঠনপাঠন ও শৃঙ্খলার অভ্যাস-অনুশীলন ব্যাহত হয় তা নয়, পাশাপাশি তাদের সুষম পুষ্টির ঘাটতি ও সুস্থ যাপনেরও বিঘ্ন ঘটে। মিড-ডে মিলে রান্না করা খাবার খেয়ে ছাত্রছাত্রীরা যে পুষ্টি আহরণ করে, বাড়িতে তা হয় না, বিশেষত প্রান্তিক পরিবারগুলোতে। এমনিতেই প্রচণ্ড গরমে ঘর্মাক্ত শরীরে বেশি ক্ষণ রোদে কাজ করা যায় না, তার উপর মেশিনে ধান কাটা থেকে অন্যান্য কাজকর্ম হওয়ার ফলে দিনমজুরির সুযোগ মেলে না, ফলে পরিবারে গরমে অভাব-দারিদ্র প্রকট হয়। সে জন্য দীর্ঘ ছুটির পর ছাত্রছাত্রীদের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটতে দেখা যায়।
অধিকাংশ নিম্নবিত্তের বাড়ির চাল টিন অথবা অ্যাসবেস্টসের, অনেকের ঘরের দেওয়ালও টিনের, ফলে দুপুরে প্রচণ্ড গরম হয়ে যায়, ঘরের ভিতরে থাকা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। তখন বাড়ির লোকজন বেশির ভাগ গাছতলায় কোনও ক্রমে দুপুর পার করে। তাই স্কুল ছুটি থাকলে ছাত্রছাত্রীদেরও ভীষণ অসুবিধা হয়। গত বছর সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রের অভিভাবক বলেছিলেন, “গরমে বেশি ছুটি থাকা ভাল নয়, স্কুলে পাকা ছাদ-পাখার হাওয়া আছে, ঘরে তো আর নেই! ছেলেমেয়েরা তাই সারা দুপুর গাছতলায়, পুকুর পাড়ে টো-টো করে ঘুরতে থাকে, ওদের আটকে রাখা যায় না।”
বেশি দিন স্কুল বন্ধে সিলেবাস শেষ করতে আমাদেরও ভীষণ অসুবিধা হয়। পাঠ্য বিষয় ছাত্রছাত্রীদের বোধগম্য করাতে ন্যূনতম যে সময় লাগে, তা না হলে খুব মুশকিল, হুড়মুড়িয়ে পড়িয়ে সিলেবাস শেষ করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘তোতাকাহিনী’-র পুনরাবৃত্তি করে তো লাভ নেই। সে জন্য প্রবল গ্রীষ্মে বিকল্প হিসাবে সকালে ক্লাসের কথা ভাবা যেতে পারে। পিরিয়ডের নির্দিষ্ট সময় একটু কমিয়ে সকাল দশটা কিংবা সাড়ে দশটার মধ্যে স্কুল ছুটি দিলে পঠনপাঠনটা অন্তত চালু থাকে, পাঠ্যসূচি ও ছাত্রছাত্রীরাও আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে। যে-হেতু সরকারি বেতনে ঘরভাড়ার বিষয় অন্তর্ভুক্ত, প্রয়োজনে এই সময় স্কুলের কাছাকাছি বাসা ভাড়া নেওয়া যেতেই পারে। এ ব্যাপারে আমরা শিক্ষক-শিক্ষিকারা নীতিগত ভাবে দায়বদ্ধ। তবে সর্বপ্রথম স্কুল খোলা রাখার সদিচ্ছা সরকারের থাকা চাই।
শুভ্রা সামন্ত, বালিচক, পশ্চিম মেদিনীপুর
শুধু স্কুল কেন
সম্পাদকীয় ‘ছুটির ফাঁদে’ যথার্থ ও সময়োচিত। সেখানে বঙ্গবাসীর অন্তরের প্রশ্নটি তুলে ধরা হয়েছে— বাকি জনজীবন যখন গরমে খোলা, স্কুল কেন ছুটির ফাঁদে? গরমের মাত্রা দিন দিন বাড়তেই থাকবে। তা হলে এক দিন এমন আসবে, যখন স্কুল বছরভর ছুটি থাকবে। অত্যধিক ছুটি স্কুলপড়ুয়াদের স্কুল-বিমুখ করে তুলছে। পড়ুয়ারা আরও বেশি করে গৃহশিক্ষকতার দিকে ঝুঁকে পড়ছে। লম্বা ছুটি, সেই কারণে সিলেবাস অসমাপ্ত থেকে যাচ্ছে। ফলে গৃহশিক্ষকতা বা কোচিং সেন্টারগুলি সমান্তরাল স্কুলের মতো হয়ে উঠছে। আর নিম্ন আয়ের অভিভাবকদের নাভিশ্বাস উঠছে টিউশনির খরচ জোগাতে। লম্বা ছুটি অনেক পড়ুয়াকে স্কুলছুট হতে বাধ্য করছে। বাল্যবিবাহ এবং পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা বৃদ্ধিতে ছুটিগুলি অতি সহায়ক।
গরম মোকাবিলায় যদি স্কুলের ঝাঁপ নামিয়ে দিতেই হয়, তা হলে শিখন দিবস বাড়ানোর জন্য বিকল্প পথ ভেবে দেখা হবে না কেন? রবিবার ব্যতিরেকে বছরে পঁয়ষট্টি দিন স্কুল ছুটি থাকার কথা। কিন্তু বাস্তব অন্য কথা বলে। গরমের জন্যে যদি স্কুল বন্ধ রাখতে হয়, পুজোর ছুটি এত লম্বা থাকবে কেন? তা ছাড়া বেশ কিছু ছুটিকে ‘সেকশনাল ছুটি’র আওতায় আনা হলে শিখন দিবসের সংখ্যা বাড়তে পারে। পরিকাঠামোর ঘাটতি পূরণ করে গরমে স্কুলগুলিকে সকালে করাই যায়। প্রাইমারি স্কুল সকালে চললে হাই স্কুল ও হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল নয় কেন?
অভিজিৎ কাপাস, রাজনগর, পশ্চিম মেদিনীপুর
শিকেয় পড়া
ইদানীং দেখা যাচ্ছে এপ্রিলে বেশি গরম পড়লে রাজ্য সরকার ছুটি আরও বাড়িয়ে এপ্রিল থেকেই টানা দু’মাস স্কুলে ছুটি ঘোষণা করে কর্তব্য সম্পন্ন করে। তার পর ভোটের বছরে কেন্দ্রীয় বাহিনীর থাকার ব্যবস্থা স্কুলগুলিতেই হয়। ফলে আরও আগে কার্যত পড়াশোনা শিকেয় ওঠে। ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়ার মান কী করে উন্নত হবে, সিলেবাস কী করে শেষ হবে, তা নিয়ে সরকারের বিন্দুমাত্র মাথাব্যথা নেই। শুধুমাত্র চাকরি নয়, যে কোনও কাজ, ব্যবসা-বাণিজ্য করতেও ‘বিদ্যেবুদ্ধি’ লাগে। যে জনকল্যাণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় আসে, শিক্ষার উন্নতিতে সেখানে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া দরকার। ছুটি কমিয়ে কিছু দিন ‘মর্নিং স্কুল’ করে সিলেবাস শেষ করা যায়। প্রয়োজনে সান্ধ্যকালীন ক্লাসও নেওয়া যেতে পারে। কোভিডকালে আমরা দেখেছি জেলার কিছু কিছু স্কুলে মাস্টারমশাই-দিদিমণিরা ক্লাসঘরের বাইরে ফাঁকা আরামপ্রদ জায়গায় আলাদা করে পড়াতেন। পাঁচ দশক আগে আমাদের স্কুলবেলায় টেস্টের রেজ়াল্ট বেরোনোর পরে ও বোর্ডের পরীক্ষার আগের সময়টাতে স্কুলেই বিকেলবেলা শিক্ষকরা টেস্ট পেপারের সমাধান-সহ নানা ভাবে বোর্ডের পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করে দিতেন। শিক্ষকদের এই সহায়তাও ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার মান বাড়াতে সাহায্য করে।
শিখা সেনগুপ্ত, বিরাটি, উত্তর ২৪ পরগনা
সক্ষমতা
বিপ্রদাস ভট্টাচার্যের ‘উপেক্ষিত প্রতিবন্ধী’ (৮-৪) শীর্ষক চিঠি এবং ফিরোজ ইসলামের ‘বিশেষ সক্ষমদের সফর মসৃণ করতে উদ্যোগ’ (৪-২) শীর্ষক প্রতিবেদন প্রসঙ্গে কিছু কথা। ‘বিশেষ ভাবে সক্ষম মানুষদের নানাবিধ চাহিদাকে গুরুত্ব দিতে হবে। ১৯৯০-এর দশকে জয়পুরে গিয়েছিলাম কৃত্রিম অঙ্গ উদ্ভাবন দেখতে। বৈদ্যুতিন ব্যবস্থা ছাড়াই প্রযুক্তির অসাধারণ ব্যবহার দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম। ইদানীং আধুনিক বৈদ্যুতিন প্রযুক্তি বিশেষ ভাবে সক্ষমদের সহজে চলাফেরা ও কাজ করার নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। ইলন মাস্ক-এর কোম্পানি এক রোগীর মস্তিষ্কে প্রথম বার নিউরালিঙ্ক ব্রেন ইমপ্লান্ট করেছে। এ বিষয়ে কিছু ভিডিয়ো দেখে ও প্রতিবেদন পড়ে খুব আনন্দ হয়েছিল।
সরকার ভারতে এই ক্ষেত্রে কাজের জন্য স্টার্ট-আপ কোম্পানিগুলোকে উৎসাহ দিক। এই সঙ্গে গণপরিসরে সর্বত্র বিশেষ ভাবে সক্ষমদের জন্য সস্তায় সব রকম প্রয়োজনীয় সুযোগ দিতে তো বাধা নেই। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে এই অরাজনৈতিক বিষয় অগ্রাধিকার পায় না। লোকসভা থেকে পুরসভা-পঞ্চায়েত, সব স্তরে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের প্রতি অনুরোধ, এ ব্যাপারে মানবিক হন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে, বিশ্বমানবের ১৬ শতাংশ প্রতিবন্ধী। ভারতে ২০১১-র জনগণনায় ওই অনুপাত ১২১ কোটি মানুষের ২.২১ শতাংশ। সংখ্যার দিক থেকে তা অনেক। দৈহিক প্রতিবন্ধীদের জন্য সমতল, লিফটের ব্যবস্থা করে হুইলচেয়ারের বন্দোবস্ত কঠিন নয়। স্বয়ংক্রিয় হুইলচেয়ারে আরোহীদের কারও সাহায্য নিতে হয় না। বিখ্যাত নৃত্য-নাট্যশিল্পী সুধাচন্দ্রন অসাধারণ সাহস দেখিয়ে গেছেন। আজ প্রস্থেসিস ও কৃত্রিম অঙ্গের সাহায্যে ট্র্যাকে দৌড়চ্ছেন দৌড়বিদরা। বিশেষ ভাবে সক্ষমরা দৌড়লে সরকার, রাষ্ট্র, মানবিকতাও দৌড়ে এগিয়ে যাবে প্রগতির পথে।
শুভ্রাংশু কুমার রায়, চন্দননগর, হুগলি
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy