‘মমতার পথেই মনোনয়ন শুভেন্দুর’ (১৩-৩) সংবাদে শুভেন্দু অধিকারীর একটি মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে এই পত্র। শুভেন্দু বলেন, “ভোটের পরে কোনও একটি রাজনৈতিক দলের (তৃণমূলের) অবস্থা এসইউসি-র মতো হবে।” প্রশ্ন জাগে, হঠাৎ এসইউসি-র প্রসঙ্গ এল কেন? সেটা কি এই জন্য যে, এক সময়ে এসইউসি-র সাত জন বিধায়ক ও এক জন সাংসদ ছিলেন, কিন্তু বর্তমানে এক জনও নেই? শুভেন্দুবাবুর মতো যে সমস্ত নেতা ক্ষমতার অলিন্দে ঘোরাফেরা করতে অভ্যস্ত, তাঁরা মনে করেন সাংসদ ও বিধায়ক দিয়েই একটি দলের শক্তি নির্ধারিত হয়। সত্যিই কি তা-ই? তা হলে স্বাধীনতা সংগ্রামে ক্ষুদিরাম, ভগৎ সিংহ, মাস্টারদা এমনকি নেতাজির কী শক্তি ছিল এই মাপকাঠিতে! একটি সংগ্রামী দলের আসল শক্তি হল, নিষ্ঠাবান, আদর্শবাদী কর্মী-বাহিনী। আজকের এই আদর্শভ্রষ্ট নীতিহীন রাজনীতির দিনেও এসইউসিআই-এর তা আছে। এবং এর জন্যই এই দলটি কিছুটা হলেও ব্যতিক্রমী। তাই শুধুমাত্র ভোটের জন্য দলবদল করে নীতিহীন জোটে এরা শামিল না হয়ে, একাই লড়াই করছে। সাধারণ মানুষের স্বার্থে সীমিত সামর্থ্য নিয়ে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধি রোধ-সহ নানা দাবিতে লড়ছে। আশা, অঙ্গনওয়াড়ি, মিড-ডে মিল কর্মী, গৃহপরিচারিকা প্রভৃতি অসংগঠিত শ্রমিক কর্মচারীদের জন্য লড়াই করে যাচ্ছে। গত চার মাসের ঐতিহাসিক কৃষক আন্দোলনে দলটির এই সংগ্রামী ভূমিকা জনসাধারণ লক্ষ করেছে। এই ধরনের সংগ্রামী দলে যোগদান করতে হলে যে সাহস দরকার, তা দলবদলু নেতাদের নেই। এখানে আর্থিক স্বার্থ বা ক্ষমতা পাওয়ার কোনও সুযোগ নেই, বরং যথেষ্ট স্বার্থত্যাগের প্রয়োজন আছে।
বানের জলের মতো যে দলগুলি বাড়ে, বানের জলের মতোই সেগুলো কমে যায়। ১৯৭৭ সালে নির্বাচন ঘোষণার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কংগ্রেস-বিরোধীদের নিয়ে জনতা পার্টি গঠিত হয়েছিল, যারা কংগ্রেসকে ধরাশায়ী করে কেন্দ্রে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এর শরিক ছিল বর্তমান বিজেপি দলের পূর্বতন নেতারা। এই দল কিন্তু তিন বছরও টেকেনি, নিশ্চিহ্ন হয়েছিল!
তাপস বেরা, আন্দুল মৌরি, হাওড়া
তৃতীয় লিঙ্গ
বামেদের খসড়া নির্বাচন ইস্তাহারে স্থান পেল তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের (এলজিবিটি) অধিকার রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করার আশ্বাস (‘পরিযায়ী দফতর, বিদ্যুৎ বিলে ছাড়ের ঘোষণা বাম ইস্তাহারে’, ১২-৩)। এ এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, বিশেষত যখন বাম কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নতুন প্রজন্মের এক ঝাঁক ছেলেমেয়ের মধ্যে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। এ বার নির্বাচনে তাঁদের ‘টার্গেট ভোটার’ নিঃসন্দেহে নবীন প্রজন্ম। তাঁদের অনেক সাধুবাদ।
কিন্তু তৃতীয় লিঙ্গ এবং ‘এলজিবিটি’ এই দু’টি সমার্থক নয়। তৃতীয় লিঙ্গ বলতে বোঝায় রূপান্তরকামীদের (ট্রান্সজেন্ডার), যাঁরা এলজিবিটি-র একটি অংশ। এ ছাড়াও মহিলা সমকামী (লেসবিয়ান), পুরুষ সমকামী (গে), উভকামী (বাইসেক্সুয়াল)— এঁরাও এলজিবিটি-র অংশবিশেষ, যাঁদের অধিকার রক্ষার তাগিদ কোনও দলেরই নেই। এলজিবিটি মানুষেরা সমান অধিকারের দাবিতে লড়াই করে চলেছেন প্রতিনিয়ত। বিবাহের অধিকারের দাবি নিয়ে আজ তাঁরা শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ। কোনও রাজনৈতিক দল তাঁদের এই লড়াইতে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি, সহানুভূতি দেখায়নি। বামেরাও তাঁদের হতাশ করেছে। এলজিবিটিকে শুধু তৃতীয় লিঙ্গের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া ভুল। এই বিষয়ে আর একটু সচেতনতা আশা করেছিলাম।
অর্ক চক্রবর্তী, কলকাতা-৬৫
ফেলো কড়ি
ভোটের প্রচারের একটা অংশ, দেওয়াল লিখন। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ আছে, দেওয়ালে লিখতে গেলে বাড়ির মালিকের অনুমতি নিতে হবে। যাঁদের দেওয়ালে প্রচার-লিখন হয়েছে, এমন বেশ কিছু পরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানলাম, কোনও অনুমতিই নেওয়া হয়নি। কিন্তু অভিযোগ কে করবে? জলে থেকে কে আর কুমিরের সঙ্গে বিবাদ করে! মনে আছে, ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে নির্বাচন কমিশন দৃশ্যদূষণের কারণে দেওয়াল লিখনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। তার পর আবার যে কে সে-ই। অনেকে ‘দেওয়াল লিখিবেন না, পোস্টার মারিবেন না’ বার্তা লিখে সুফল পেয়েছেন। প্রশ্ন, রাজনৈতিক দল দেওয়াল ব্যবহার করলে মালিককে অর্থ দেবে না কেন? এই আইন প্রণয়ন করা হোক। প্রার্থী তাঁর প্রচারের ব্যানার, পোস্টার, ফ্লেক্স, রং, তুলি, সব টাকা দিয়ে কেনেন। ডিজিটাল মাধ্যমের প্রচারও অর্থের বিনিময়ে হয়। তাই দেওয়াল লিখুন, দেওয়ালের ভাড়া দিন।
অভিজিৎ ঘোষ, শ্যামনগর, উত্তর ২৪ পরগনা
প্রতারণা
নাগরিক ভোট প্রয়োগ করে পছন্দের দলের প্রার্থীকে পাঁচ বছরের জন্য সংসদ বা বিধানসভায় পাঠান। এই আশায় যে, তিনি অন্তত পাঁচ বছর সুখ-দুঃখের ভাগীদার হবেন। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, তাঁরা এক দলের হয়ে জিতে সুবিধেমতো অন্য দলে চলে যাচ্ছেন। ভোটারদের মতামতের তোয়াক্কা করছেন না। তাঁদের ট্রাপিজ়ের খেলা দেখার জন্য তো মানুষ তাঁদের ভোট দেয়নি। এটা কি এক ধরনের প্রতারণা নয়? এক জন পেশাদার কর্মী যত দিন একটা সংস্থায় চাকরি করছেন, তত দিন তার প্রতি নিজের দায়িত্ব পালন করা উচিত। অন্তত কাজের মেয়াদ (এ ক্ষেত্রে পাঁচ বছর) শেষ না হওয়া পর্যন্ত।
নিচু স্তরের কর্মীরা নেতাদের এই স্বেচ্ছাচারিতা মেনে নিতে নারাজ। তাই এত অসন্তোষ, পার্টি অফিস ঘেরাও, কুশপুতুল পোড়ানো চলছে। এটা সতর্কবার্তা। নেতারা আগুন নিয়ে খেলা বন্ধ করুন।
চন্দন চক্রবর্তী, কলকাতা-৬৩
শুধুই অঙ্গীকার
বিধানসভা নির্বাচনে বিভিন্ন দলের নির্বাচনী ইস্তাহার দেখে হতাশ লাগছে। কারও ইস্তাহারে নেই সমাজ গড়ার লক্ষ্য। রয়েছে পাইয়ে দেওয়ার, কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি, রয়েছে বিভিন্ন প্রকল্পের আশ্বাস। শুধুই যেন ভোট জেতার ‘অফার’। প্রতিটা রাজনৈতিক দল তাদের ইস্তাহারে যা বলে থাকে, ভোট জেতার পর কি সেটা পালন করে? গত কয়েক মাসে শাসক গোষ্ঠীকে দেখা গিয়েছে পাড়ায় পাড়ায় রিপোর্ট কার্ড বিলি করতে। ভাল উদ্যোগ। কিন্তু এই কার্ডের সত্যতা কী করে জানা যাবে? নির্বাচন কমিশনের উচিত, তাদের ওয়েবসাইটে প্রতি দলের ইস্তাহার নথিভুক্ত করে রাখা। এর পর যে দল জিতবে, পরের নির্বাচনের আগে প্রতিটা অঙ্গীকার পালন হয়েছে কি না, উপযুক্ত তথ্য-সহ দেখতে হবে। কোনও স্বতন্ত্র কেন্দ্রীয় সংস্থার মাধ্যমে অবশ্যই তা করা যেতে পারে। আমরা নাগরিকেরা ইস্তাহার দেখি, কিন্তু তার কতটা ভবিষ্যতে পালিত হচ্ছে, তার খেয়াল রাখি না। ইস্তাহারের সঙ্গে রিপোর্ট কার্ডকেও গুরুত্ব দিতে হবে।
সুমন চক্রবর্তী, কলকাতা-৬৫
শিক্ষা
অগ্নিগর্ভ মায়ানমারের পরিস্থিতি। সেই দেশের সেনাবাহিনী কার্যত নিজের দেশের নাগরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালাচ্ছে। বহু নাগরিক নিহত, তা সত্ত্বেও আন্দোলন দমছে না। বরং পরিধি বিস্তৃত হচ্ছে। এই দেশেই কিছু দিন আগে সামরিক অভিযান হয়েছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। তখন অধিকাংশ নাগরিক তা সমর্থন করেছিল। নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী সু চি পর্যন্ত এর বিরুদ্ধে মুখ খোলেননি। কী নির্মম পরিহাস, রোহিঙ্গাদের দিকে তাক-করা বন্দুক আজ ঘুরে গিয়েছে সে দিনের সামরিক কার্যকলাপের সমর্থক দেশবাসীর দিকেই। মায়ানমারের দিকে তাকিয়ে আমরা কি কিছুই শিখব না?
প্রিয়রঞ্জন পাল, রায়গঞ্জ, উত্তর দিনাজপুর
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy