প্রতীকী ছবি।
এ বারের মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা বাতিল হওয়ার পর বিশ লক্ষাধিক ছাত্রছাত্রীর ভবিষ্যৎ কোন পথে বইবে, চিন্তার বিষয়। এরা বিদ্যালয়ের পাঠ থেকে বঞ্চিত হয়েছে, ধারাবাহিক মূল্যায়নের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। চূড়ান্ত মূল্যায়নের ক্ষেত্রে আর যেন বঞ্চিত হতে না হয়, সে দিকে নজর দেওয়া উচিত ছিল।
চূড়ান্ত মূল্যায়নের সময় খেয়াল রাখা উচিত ছিল মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় সাধারণত ছাত্রছাত্রীরা কেমন নম্বর পেয়ে থাকে। স্কুলের পরীক্ষার নম্বরের থেকে এই সব পরীক্ষার নম্বরের অনেক তফাত হয়। সেই কারণে স্কুলের পরীক্ষার নম্বরকে মানদণ্ড হিসেবে ধরা যায় না। আবার ছোট ছোট আকারে নানা পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেওয়ার প্রস্তাবও উঠেছিল। কিন্তু সেটাও উচিত হত না, কারণ ছাত্রছাত্রীরা মানসিক ভাবে পরীক্ষা থেকে এখন অনেক দূরে।
চূড়ান্ত মূল্যায়নের প্রগতিপত্র তাদের বয়ে নিয়ে যেতে হবে উচ্চশিক্ষা বা চাকরির দুয়ার পর্যন্ত। তাই সব দিক ভেবেচিন্তে নম্বর দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে একটা বিষয় ভেবে দেখা যেত। কোনও একটি স্কুলের বিগত কয়েক বছরের ফলাফলকে মানদণ্ড হিসেবে রেখে, সেই স্কুলের বর্তমান ছাত্রছাত্রীদের যোগ্যতা বিচার করে (যা বিচার করবেন সেই স্কুলের শিক্ষকমণ্ডলী) স্কুলের পক্ষ থেকে একটা সামঞ্জস্যপূর্ণ রেজ়াল্ট প্রস্তুত করে বোর্ড বা কাউন্সিলে পাঠানো যেতে পারত। বোর্ড বা কাউন্সিলও সেই স্কুলের পুরনো রেকর্ড দেখে তা পর্যালোচনা করে, চূড়ান্ত রেজ়াল্ট প্রস্তুত করতে পারত। তাড়াহুড়ো না করে এ ভাবে রেজ়াল্ট দিলে ছাত্রছাত্রীরা অনেকটা সুবিচার পেত বলে মনে হয়। রেজ়াল্টের জন্য হীনম্মন্যতার হাত থেকেও তারা মুক্তি পেত। দেখা দরকার ছিল, তাদের যোগ্যতাকে যেন পরবর্তী কালে খাটো করে দেখা না হয়।
গৌতম পাত্র
চন্দননগর, হুগলি
শূন্যতেও পাশ
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জন্য মূল্যায়ন পদ্ধতি প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু এ কী রকম মূল্যায়ন পদ্ধতি? মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের মূল্যায়নের ক্ষেত্রে বলা হল, নবম থেকে দশম শ্রেণিতে ওঠার সময়ে কোনও পরীক্ষার্থী কোনও এক বিষয়ে ৯০ পেলে তার ৫০ শতাংশ, অর্থাৎ ৪৫ এবং ইন্টারনাল ফর্ম্যাটিভ অ্যাসেসমেন্টে ১০-এ ১০, অর্থাৎ ১০০-তে ১০০। তার ৫০ শতাংশ মানে ৫০। তা হলে দু’দিক মিলিয়ে ওই পরীক্ষার্থী একটি বিষয়ে পেল (৪৫+৫০)=৯৫। অর্থাৎ বিষয়টি দাঁড়াল, নবম থেকে দশম শ্রেণিতে ওঠার সময়ে কোনও পরীক্ষার্থী কোনও এক বিষয়ে ‘শূন্য’ পেলেও মাধ্যমিকের ফলাফলে সে ন্যূনতম ৩৫ থেকে সর্বোচ্চ ৫০ নম্বর পেতে পারে, কারণ ইন্টারনাল ফর্ম্যাটিভ অ্যাসেসমেন্টে সাধারণত পরীক্ষার্থীরা সাত থেকে দশের মধ্যে নম্বর পায়। অর্থাৎ বলা যেতে পারে, কমপক্ষে ৩৫-৫০ নম্বর পরীক্ষার্থীদের পাইয়ে দেওয়া হল। কার্যত, এ বছরের মাধ্যমিকের ফলাফলে পরীক্ষার্থীদের ফেল তো দূর অস্ত্, নবম শ্রেণিতে সমস্ত বিষয়ে ‘শূন্য’ পেয়েও ন্যূনতম ২৪৫-৩৫০ নম্বর, অর্থাৎ ৩৫ থেকে ৫০ শতাংশ নম্বর নিয়ে একাদশ শ্রেণিতে ওঠার পথ প্রশস্ত হল। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে আবার বলা হয়েছে যে, নম্বর মনের মতো না হলে কোভিড পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পরীক্ষায় বসা যাবে। যদিও এই ঘোষণা কথার কথামাত্র। প্রথমত, কোভিড পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে কেউ জানে না। দ্বিতীয়ত, এই বছরের মধ্যেই করোনার তৃতীয় ঢেউ আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তৃতীয়ত, পড়াশোনার সঙ্গে দীর্ঘ দিন যুক্ত না-থাকা মধ্য ও নিম্ন মানের পরীক্ষার্থীরা বোর্ডের ঘোষণা সানন্দে মেনে নেবে, বলা বাহুল্য।
মাধ্যমিকের মূল্যায়ন-পদ্ধতির ক্ষেত্রে পর্ষদকে আরও বেশি সুচিন্তিত ও কৌশলী হওয়া উচিত ছিল বলে অনেকে মনে করছেন। অন্য দিকে, উচ্চ মাধ্যমিকের ঘোষিত মূল্যায়ন পদ্ধতি সমালোচিত হলেও অনেকটাই মন্দের ভাল। বোর্ড পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়ন ছাড়া পূর্ববর্তী পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে মূল্যায়ন পদ্ধতি কখনও যথার্থ হতে পারে না। অথচ, যে করোনা সংক্রমণের দোহাই দিয়ে এই বিকল্প মূল্যায়ন পদ্ধতি মেনে নিতে বলা হচ্ছে, সেটা কখনও হত না যদি পরীক্ষা নিয়ামক কর্তৃপক্ষ আরও বেশি যত্নশীল, আন্তরিক ও সক্রিয় হতেন। রাজ্যে বিধানসভা ভোটের আবহে এই দুই বোর্ডের পরীক্ষা ততটা গুরুত্ব পায়নি। একটু অসুবিধা হলেও জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি, অথবা ফেব্রুয়ারি-মার্চে এই দুই পরীক্ষার বন্দোবস্ত করা যেত। এই সময় রাজ্যে করোনা সংক্রমণ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছিল।
হারান চন্দ্র মণ্ডল
কলকাতা-১২৩
অবিচার হল
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের মূল্যায়ন করার জন্য যে নিয়মের কথা ঘোষণা করা হল তাতে দেখা যাচ্ছে, মাধ্যমিকের মূল্যায়নে নবম শ্রেণির পরীক্ষার নম্বর, উচ্চ মাধ্যমিকের মূল্যায়নের ক্ষেত্রে একাদশ ও দশম শ্রেণির বোর্ডের পরীক্ষার নম্বরের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হবে। এই সিদ্ধান্ত যে পড়ুয়াদের মেধার প্রতি অবিচার করা হল, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এই ব্যবস্থায় মাধ্যমিক স্তরের অনেক মেধাবী পড়ুয়া একাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান পড়া থেকে, এবং উচ্চ মাধ্যমিকের পড়ুয়ারা পছন্দমতো কলেজে ভর্তি হওয়া, বা বিষয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে বঞ্চিত হতে পারে। সবার উপর যে কথাটা বলা দরকার, এক বছরের বেশি সময় ধরে স্কুলে পঠনপাঠনই তো বন্ধ, অনলাইন ক্লাস ক’জন করতে পেরেছে? যারা করেছে, তাদের সিলেবাসই কি শেষ হয়েছে? প্রাইভেট টিউশনও বন্ধ। এতটা পড়াশোনার ঘাটতি নিয়ে পরবর্তী ক্লাসের পাঠ কী ভাবে তারা গ্রহণ করবে? এ সব ভেবে দেখা দরকার ছিল। পড়ুয়াদের হাতে মার্কশিট ধরিয়ে দিয়েই কি শিক্ষা সম্পূর্ণ হবে?
অসিত কুমার রায়
ভদ্রেশ্বর, হুগলি
ফলের মান্যতা
‘অনিশ্চিত’ (১৫-৬) শীর্ষক সম্পাদকীয় প্রতিবেদন প্রসঙ্গে এই চিঠি। মূল্যায়ন যেমন ভাবেই হোক আর প্রাপ্ত নম্বর যত বেশিই হোক না কেন, ভবিষ্যতে ওদের ফলাফল কতটা মান্যতা পাবে, সে বিষয়ে গভীর সংশয়ে আচ্ছন্ন ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক, শিক্ষকসমাজ। বন্ধ স্কুল ও পরীক্ষা বাতিলের টানাপড়েনে বহু শিক্ষার্থী স্কুলছুট হবে, বহু শিশুশ্রমিক জন্ম নেবে— অনিশ্চিত ভবিষ্যতের ভাবনায় মানসিক অস্থিরতায় রয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা, কেননা ছাত্রছাত্রীরাই তাঁদের শ্রেষ্ঠ সম্পদ।
স্কুল হল শিশুর মানসিক বিকাশের অন্যতম পীঠস্থান। অতিমারির অভিঘাতে এক বছরের বেশি স্কুল-শিক্ষার্থীর সংযোগ বিচ্ছিন্ন। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা বাতিল করার সিদ্ধান্তের মানসিক অভিঘাত শিক্ষকদেরও পীড়িত করছে। পারস্পরিক দূরত্ববিধির গেরোয় ক্রমশ একলা হয়ে যাচ্ছি আমরা। প্রিয়জনকে হারিয়ে, জীবিকা হারিয়ে, বন্ধুদের সান্নিধ্য হারিয়ে, শৈশব থেকে বার্ধক্যের সবটুকু জুড়ে এখন কেবলই অনিশ্চয়তা, অসহায়তা। এই মানসিক বিপর্যয়ের ব্যাপ্তি সম্ভবত কোভিডের তুলনায় অনেক বেশি।
শুভ্রা সামন্ত
বালিচক, পশ্চিম মেদিনীপুর
অনুচিত
‘ধৃত ভুয়ো অফিসার’ (১৮-৬) শীর্ষক সংবাদের প্রেক্ষিতে উল্লেখ করা যায়, এক শ্রেণির মানুষ ব্যক্তিগত গাড়িতে প্রেস, ডিফেন্স, নেভি, আর্মি বা সরকারি কোনও দফতরের নামে স্টিকার বা বোর্ড লাগাচ্ছেন। এমনকি কেউ কেউ অস্বচ্ছ, কালো কাচ-ঢাকা গাড়িতেও যাতায়াত করছেন, যার কোনওটাই আইনসিদ্ধ নয়।
অন্যের সমীহ আদায় বা রাস্তায় বাড়তি কিছু সুবিধা লাভ ছাড়া এর পিছনে হয়তো অন্য কোনও উদ্দেশ্য নেই। কিন্তু পুলিশের নজর এড়াতে অপরাধমূলক কাজে এই সুযোগের ব্যবহার করা হবে না, তা কি নিশ্চিত করে বলা যায়?
ধীরেন্দ্র মোহন সাহা
কলকাতা-১০৭
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy