—প্রতীকী ছবি।
‘গৃহস্থের সঞ্চয়ে ধাক্কাই চিন্তা মোদী সরকারের’ (২৯-৯) খবরটি উদ্বেগের, এবং দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার সার্বিক উন্নতির বিষয়ে সরকারি দাবির সঙ্গে সঙ্গতিবিহীন। অর্থ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে একাধিক কারণ এই বিষয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে, যার বিস্তারিত বিবরণ সংবাদটিতেই আছে। সেখানে প্রধান কারণ হিসাবে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলির ঋণ করে দামি বৈদ্যুতিন পণ্য কেনার প্রবণতাকে বিশেষ ভাবে তুলে ধরা হয়েছে, এবং আংশিক কারণ হিসাবে জাতীয় অর্থনীতিতে কোভিড অতিমারির বিরূপ প্রভাবের উল্লেখ করা হয়েছে।
সুকৌশলে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে গার্হস্থ সঞ্চয় কমার আরও দু’টি মূল কারণ। এক, সন্তানদের শিক্ষাখাতে মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারগুলির আয়ের অনুপাতে বাধ্যতাজনিত কারণে অস্বাভাবিক ব্যয়বৃদ্ধি। কারণ, উচ্চ গুণগত মানের সরকারি শিক্ষা পরিকাঠামোর দ্রুত সঙ্কোচন, এবং সেই শূন্যস্থান পূরণে অত্যধিক ব্যয়সাপেক্ষ বেসরকারি শিক্ষাব্যবস্থার ক্রমবর্ধমান প্রচলন। দুই, চিকিৎসা খাতে পরিবারগুলির ব্যয় বৃদ্ধি। মনে রাখতে হবে, সরকারের স্বাস্থ্য বিমার কার্ডগুলি হাসপাতালের ভর্তি হওয়া রোগীদের ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা যায়। এগুলি দৈনন্দিন চিকিৎসার জন্য প্রযোজ্য নয়। এখানেও পরিবারগুলি সরকারি চিকিৎসাব্যবস্থার অপ্রতুলতার জন্য বাধ্য হচ্ছে ব্যয়বহুল ব্যক্তিগত চিকিৎসাব্যবস্থার উপর নির্ভর করতে।
জনগণের শিক্ষা এবং চিকিৎসার দায়িত্ব পালন থেকে সরকারের (কেন্দ্র এবং রাজ্য, দু’পক্ষেরই) হাত গুটিয়ে নেওয়ার ক্রমবর্ধমান প্রবণতার জন্য জাতীয় অর্থনীতিতে গার্হস্থ সঞ্চয় মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারগুলি থেকে দ্রুত কমে যাচ্ছে, যা সরকারের ব্যর্থতাকেই চিহ্নিত করে। সেই সত্য সচেতন ভাবে আড়াল করে সরকারি ভাষ্য প্রচার করা হয়েছে।
আশীষ কুমার চট্টোপাধ্যায়, বালি, হাওড়া
দেনা বাড়ছে
বর্তমানে ব্যাঙ্কগুলি এক নতুন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে— সাধারণ মানুষের সঞ্চয় ক্রমাগত কমে যাচ্ছে। গত আর্থিক বছরে ব্যাঙ্কগুলিতে সাধারণ মানুষের সঞ্চয় নেমে এসেছে জিডিপি-র ৫.১ শতাংশে, যেটা পাঁচ দশকের সর্বনিম্ন। ২০২১-২২ সালে গৃহস্থের মোট সঞ্চয়ের পরিমাণ ছিল ১৬.৯৬ লক্ষ কোটি টাকা, সেটা ২০২২-২৩ সালে নেমে হয়েছে ১৩.৭৬ লক্ষ কোটি টাকা। ১৯৭৬-৭৭ সালের পর ব্যাঙ্কে গৃহস্থের সঞ্চয়ের হার কখনও এত কমেনি। এ দিকে সাধারণের ব্যাঙ্কের কাছে দেনার হার ২০২২-২৩ সালে বেড়ে হয়েছে জিডিপি-র ৩৭.৬ শতাংশ, স্বাধীনতার পর এত দেনার বোঝা এক বারই বেড়েছিল। এতে ইঙ্গিত মেলে যে, কোভিডের সময় থেকে সাধারণ মানুষের আয় অনেক কমেছে, আর জিনিসপত্রের, বিশেষ করে খাদ্যবস্তু ও ওষুধের দাম বেড়েছে।
অন্য দিকে, ব্যাঙ্কগুলির অনাদায়ি বিপুল ঋণের বোঝা রয়ে গিয়েছে। বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের ন’বছরের মধ্যে ব্যাঙ্কগুলির হিসাবের খাতা থেকে ১৪.৫৬ লক্ষ কোটি টাকার অনাদায়ি ঋণ মুছে ফেলা হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে মাত্র ২ লক্ষ কোটি টাকা। বাকি সব লোকসান। এই সব অনাদায়ি ঋণগ্রহীতার মধ্যে অনেক নামকরা ব্যবসায়ী আছেন, যাঁরা ইচ্ছাকৃত লোন শোধ করেননি। এতে ব্যাঙ্কগুলির আর্থিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে।
এর পর সরকার ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’ করার জন্য এমন সব পদক্ষেপ করছে, যার ফলে গ্রাহকের বায়োমেট্রিক তথ্য চুরি করে হামেশাই জালিয়াতেরা গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট খালি করে দিচ্ছে। সরকারের এ দিকে নজর নেই, তারা শুধু দু’দিন পর পর নতুন নতুন নিয়ম করে গ্রাহকদের আরও অসুবিধার মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে।
তপন কুমার রায়, কলকাতা-৭৫
গ্রাহক সুরক্ষা
এটিএম কার্ড ক্লোনিং করার মাধ্যমে সাইবার জালিয়াতি করে গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা হাতানোর ফন্দি তো আগেই ছিল, এ বার গোদের উপর বিষফোড়ার মতো যুক্ত হয়েছে আধারের বায়োমেট্রিক হ্যাক করে সঞ্চিত অর্থ গায়েব করা। কোনও রকম ওটিপি বা এটিএম কার্ড ছাড়াই শুধুমাত্র আধারের বায়োমেট্রিক ক্লোন করে অত্যাধুনিক উপায়ে অ্যাকাউন্ট থেকে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে সঞ্চিত অর্থ। বিগত কয়েক দিনে রাজ্য জুড়ে বহু গ্রাহক এই প্রতারণার শিকার। সংখ্যাটা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। মূলত আধার-নির্ভর লেনদেন প্রথা, অর্থাৎ আধার এনেবলড পেমেন্ট সিস্টেম বা এইপিএস ব্যবস্থার অপব্যবহার করা হচ্ছে, আধার লক করেও এই প্রতারণার হাত থেকে নিস্তার মিলছে না। এ ক্ষেত্রে প্রতারিত গ্রাহকেরা তাঁদের নির্দিষ্ট রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির শাখায় যোগাযোগ করলেও উপযুক্ত সুরাহা মিলছে না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে তাঁদের। তা হলে গ্রাহকদের ব্যাঙ্কে সঞ্চিত অর্থের সুরক্ষা কোথায়? গ্রাহকদের সঞ্চিত অর্থের সুরক্ষা দেওয়ার কোনও দায় কি ব্যাঙ্কগুলির নেই? কেন্দ্রীয় সরকার বা তাদের আধার দফতরের ভূমিকাই বা কী? দেশবাসীর আধারের ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা বজায় রেখে সুরক্ষা প্রদান করা তো সরকারের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। তবে এখনও কেন নির্বিকার আধারের সৃষ্টিকর্তারা? অবিলম্বে জনগণের কষ্টার্জিত সঞ্চিত অর্থের সুরক্ষা প্রদানে সঠিক এবং উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হোক।
সুদীপ সোম, হাবড়া, উত্তর ২৪ পরগনা
আধারের বিপর্যয়
‘আঙুলের ছাপ ক্লোন করে টাকা চুরি, গ্রেফতার দুই’ (২৮-৯) খবরটা নিয়ে উদ্বেগ জাগে শুধু টাকা চুরির জন্য নয়। পুলিশ জানিয়েছে যে, ধৃত একটি আধার সেবা কেন্দ্র চালাত। তা হলে বিষয়টা কি শুধু প্রশাসনিক তৎপরতার, না কি ২০০৯ সাল থেকে আজ পর্যন্ত আধার-কেন্দ্রিক বিপর্যয়ের এক সার্বিক পর্যালোচনা দরকার?
২০১০ সালে যখন আধার এনরোলমেন্ট শুরু হল, তখন তড়িঘড়ি ২২০০০-এর বেশি এনরোলমেন্ট সেন্টার/ স্টেশন গড়ে তোলার কর্মসূচি নেওয়া হল। সেখান থেকেই প্রথম তথ্য চুরির সূত্রপাত। ২০১৭ সালে তৎকালীন তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ রাজ্যসভায় জানিয়েছিলেন যে, গত ছয় বছরে ৩৪ হাজার অপারেটরকে বাতিল ও ব্ল্যাকলিস্ট করা হয়েছে, কারণ তারা ভুয়ো আধার কার্ড তৈরির চেষ্টা করছিল। এদের অধিকার বাতিল হলেও, বছরে এরা যদি ৫০ জনের আধার অন্তর্ভুক্তি করে থাকে, তা হলে কত কোটি জাল আধার তৈরি হয়েছে? সেই ভুয়ো আধার নম্বর নিয়ে মোবাইল সিম নেওয়া হয়েছে, প্যান কার্ড হয়েছে, ব্যাঙ্কের খাতা খোলা হয়েছে!
প্রথম থেকেই বার বার আধারের তথ্য চুরি/ ফাঁসের অভিযোগ এসেছে। ২০১৮ সালে ১১০ কোটি লোকের তথ্য ফাঁসের খবর আসে। ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরাম-এর ২০১৯ সালের ‘গ্লোবাল রিস্ক রিপোর্ট’-এ এই ঘটনাকে ওই বছরে পৃথিবীর বৃহত্তম ব্যক্তিগত তথ্য চুরি বলে বর্ণনা করা হয়েছিল। তবু আধার কর্তৃপক্ষ আধারের তথ্য চুরি আজ পর্যন্ত স্বীকার করেননি। ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে তথ্যের অধিকার আইনের অধীনে একটি প্রশ্নের জবাবে তাঁরা বলতে বাধ্য হয়েছিলেন যে, ২১০টা সরকারি ওয়েবসাইট থেকে লোকের ব্যক্তিগত তথ্য বেরিয়ে গিয়েছে। এটা ঠিকই, সব লোকের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা বেরিয়ে যাচ্ছে না। সবার আধার-তথ্য চুরিও হয়তো হয়নি। কিন্তু আধারের পুরো ব্যবস্থাটার মধ্যে গোলযোগ আছে, জালিয়াতরা তা হাতিয়ে নিতে পারছে, এটা আজ আর অস্বীকার করার উপায় নেই।
গত বছরই ২৭ ইলেকট্রনিক্স ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রক একটা প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল, কোনও সংগঠনের সঙ্গে আধার-এর ফোটোকপি শেয়ার করলে অপব্যবহার হতে পারে, মাস্কড আধার ব্যবহার করতে হবে। দেখা যাচ্ছে, এ সবই কথার কথা!
জিতেন নন্দী, কলকাতা-১৮
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy