‘বুদ্ধিদীপ্ত নারীর মডেল তিনি’ (১৩-৫) প্রবন্ধে সরলা দেবীর নানান কীর্তি পাঠককে জানানোর জন্য ঈশা দেব পালকে ধন্যবাদ। সেই সময়ে এক জন মহিলা ভারতী পত্রিকা সম্পাদনা করছেন, গান গাইছেন, আবার অনেক ব্রত পালনের ব্যবস্থা করেছেন জাতিকে একত্রিত করার উদ্দেশ্যে— এ প্রায় অভাবনীয় ছিল। সেই সময়কার সামাজিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি যে এক ব্যতিক্রমী নারীচরিত্র ছিলেন, তা বলা বাহুল্য। কিন্তু প্রতিরোধ, জটলা, কটূক্তি, মানসিক চাপ এসেছিল অনেক। সে সব উপেক্ষা করতে হয় কী করে, তার দৃষ্টান্তও সরলা। নিজের কাজেই হয়েছিলেন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম ব্যক্তিত্ব।
দেড়শো বছর পরেও তাই সরলা দেবী প্রাসঙ্গিক, মহিলাদের সঞ্চয় প্রকল্প-সহ নানা উদ্যোগের দৃঢ়তায় ও চেতনায়। স্বামী বিবেকানন্দের ধর্ম চেতনায় সরলাদেবী আলোড়িত হয়েছেন। লিখেছেন, “যার ভেতর বারুদের ধর্ম আছে, প্রচন্ড তেজ, প্রচন্ড ভাঙা গড়ার শক্তি সেই বারুদের আগুন থেকে একটা স্ফুলিঙ্গ আমার দিকে এসে পড়েছিল।” তবু আমরা অনেকেই এখনও ওঁর জীবনাদর্শ, ওঁর সৃষ্টি ও কীর্তি সম্পর্কে যথেষ্ট জানি না, এমনকি নাম পর্যন্ত জানি না। কেন হয় এমন উপেক্ষা! এই বিশিষ্ট নারীর কথা মাধ্যমিকের পাঠ্যসূচিতে বুড়িছোঁয়ার মতো করে থাকে। বিস্তারিত আলোচনা বাধ্যতামূলক হতে পারে না? তাঁর লেখা জীবনের ঝরাপাতা-র পাতায় পাতায় সেই প্রাণবন্ত দলিল, আবারও আলোচিত হলে বারুদের সেই স্ফুলিঙ্গ নিশ্চিত ভাবেই আমাদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়বে। সেই পঠনের দীপ্তি নতুন প্রজন্মকে নতুন ভাবনার আবেশে জড়িয়ে ধরুক। নারীবাদী ভাবনা বেঁচে থাকুক আবহমানকাল ধরে।
আগমনী রাজ রায়, পাঁশকুড়া, পূর্ব মেদিনীপুর
পথিকৃৎ
‘বুদ্ধিদীপ্ত নারীর মডেল তিনি’ প্রবন্ধ প্রসঙ্গে কিছু কথা। সমাজ ও সাহিত্যের ক্ষেত্রে সরলা দেবী চৌধুরাণী নিঃশব্দ বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন। তিনি যেমন বাংলা সাহিত্যে নবদিগন্ত সূচনাকারী পত্রিকা ভারতী একক ভাবে সম্পাদনা করেছিলেন প্রায় ন’বছর (১৩০৬-১৩১৪ বঙ্গাব্দ), তেমনই সমাজসংস্কারক পণ্ডিত স্বামী রামভুজ দত্ত চৌধুরীর সহযোগিতায় হিন্দুস্থান নামে একটি উর্দু সাপ্তাহিকও প্রকাশ করেন। এই সাপ্তাহিকে ব্রিটিশ-বিরোধিতার স্বাক্ষর ছিল। ১৮৯০ সালে বেথুন কলেজ থেকে ইংরেজি অনার্স নিয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক হন। শতগান নামক জাতীয় সঙ্গীতের সঙ্কলন, নববর্ষের স্বপ্ন, আত্মজীবনী জীবনের ঝরাপাতা লিখে স্বদেশি আন্দোলন ও নারী স্বাধীনতার ইতিহাসে তিনি স্মরণীয় হয়ে আছেন। সাহস, বল, বিদ্যা, একতা, স্বাবলম্বন ও স্বায়ত্তশাসন— এই ছয়টি মার্গে নিযুক্ত থেকে দেশসেবা করেছেন এবং নারীমুক্তির পথ দেখিয়ে গিয়েছেন।
সরলাদেবী হিন্দু পারিবারিক আইনের বিরোধিতাও করেছিলেন। গত শতকের পঞ্চাশের দশকের মাঝামাঝি স্বাধীন ভারতে হিন্দু পারিবারিক আইন পাশ হওয়ার প্রায় এক দশক আগে এ নিয়ে বিতর্ক চলাকালে তিনি জীবনের ঝরাপাতা-তে লিখেছিলেন— “হিন্দুর সামাজিক নতুন আইন যে বিধিবদ্ধ হতে চলেছে, তাতে অনেকগুলি কু-রীতির সংস্কারের সঙ্গে সঙ্গে অনেকগুলি সু-রীতিরও অনাবশ্যকীয় কর্তন হতে চলেছে।” তৎকালীন বাংলা তথা ভারতীয় সাহিত্য, সঙ্গীত, রাজনীতিতে সরলা দেবী রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দ, নিবেদিতা, মহাত্মা গান্ধী, বালগঙ্গাধর তিলকের স্নেহস্পর্শে এসেছিলেন। জন্মসার্ধশতবর্ষে মহীয়সী এই নারীকে কৃতজ্ঞ চিত্তে স্মরণ করা আমাদের কর্তব্য।
সুদেব মাল, খরসরাই, হুগলি
আদর্শ
ঈশা দেব পালের প্রবন্ধটি সরলা দেবীর নির্ভীক, দৃঢ় চরিত্রটির সঙ্গে পাঠকদের পরিচয় করে দেয়। বিভিন্ন গুণের আধার ছিলেন তিনি। শুধু ছেলেদের নয়, মেয়েদেরও অস্ত্র শিক্ষা, লাঠি খেলা, বলশালী করার জন্য বহু চেষ্টা করেছেন। স্বাধীন, নির্ভীক, জাতীয়তাবাদে উদ্দীপ্ত এই নারী ঠাকুরবাড়ির মেয়ে হয়েও, রবীন্দ্রনাথের ছায়া থেকে বেরিয়ে এসে নিজের স্বতন্ত্র পরিচয় তৈরি করতে পেরেছিলেন। সরলা তাঁর সমস্ত কাজে, চিন্তাধারায় নিজস্বতা বজায় রেখেছিলেন। আধুনিক চিন্তাধারায় বিশ্বাসী ছিলেন তিনি। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের, তিনি প্রায় বিস্মৃতির আড়ালে চলে গিয়েছেন। আরও বেশি করে তাঁর মতাদর্শ প্রচার করা হোক, যাতে বাঙালির নুয়ে-পড়া মেরুদণ্ডটা সোজা হয়ে ওঠে।
সর্বানী গুপ্ত, বড়জোড়া, বাঁকুড়া
জনগণনা
অচিন চক্রবর্তীর ‘দেড়শো বছরে প্রথম বিলম্ব’ (২৪-৫) যথার্থ এবং সময়োপযোগী। প্রতি দশ বছর অন্তর জনগণনা অতি আবশ্যক কাজ। দীর্ঘ দেড়শো বছর ধরে নিয়মিত ভাবে চলা একটি কাজ যদি কোভিড অতিমারির কারণে বন্ধ হয়ে যায়, তবে সেটি অত্যন্ত বেদনার। কারণ এর পরিসংখ্যান সমস্ত রকমের উন্নয়নের সঙ্গে জড়িত। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক সব ক্ষেত্রে জনগণনার তথ্যের গুরুত্ব অপরিসীম। চাকরি জীবনে দু’বার সেনসাসের তথ্য সংগ্রহের জন্য গ্ৰামের বাড়ি বাড়ি গিয়েছি। গ্ৰামের সাধারণ মানুষ সরল মনে সমস্ত রকমের তথ্য দেওয়ার পাশাপাশি সুখ-দুঃখ, বঞ্চনার কথা উজাড় করে দিয়েছেন। আশা, তথ্য সংগ্রাহকরা হয়তো তাঁদের কষ্টের লাঘব করতে পারবেন। সেনসাসের তথ্যভান্ডার বিশ্লেষণ করলে দেশে বিভিন্ন বয়সের নারী, পুরুষের সংখ্যা, তাঁদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, কাজের ধরন, বেকারত্ব ইত্যাদি বিষয়ে পরিসংখ্যান পাওয়া যায়। একটি গ্ৰাম কিংবা শহরের একটি নির্দিষ্ট এলাকার উন্নয়নে এই তথ্য অত্যন্ত কার্যকর। বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে এনপিআর, এনআরসি-র কাজ হচ্ছে বলে জনগণ এ ব্যাপারে ভীত, কিন্তু অভিজ্ঞতা বলছে জনগণনার কাজে তাঁদের সহায়তা সহজেই পাওয়া যাবে। এ কাজ এখনই শুরু করা দরকার।
গৌতম পতি, তমলুক, পূর্ব মেদিনীপুর
অচল মুদ্রা
কাগজের নোট এবং ধাতুর কয়েনগুলো দিন দিন আকারে ছোট হয়ে আসছে। ফলে সঙ্গে করে নিয়ে যাওয়ারও সুবিধা হচ্ছে। সম্প্রতি লক্ষ করছি, কলকাতা বা সরকারি প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য কোনও জায়গায় এক টাকার কয়েন কেউ নিতে চাইছেন না, এবং বলেই দিচ্ছেন এগুলো আমাদের এখানে চলে না। কী বিচিত্র দেশ! যে এক টাকার কয়েন ভারতের যে কোনও রেলের কাউন্টারে, পোস্ট অফিসে, ব্যাঙ্কে বা কলকাতার মতো জায়গায় চলে, সেই টাকার কয়েন অন্য কোনও ব্যবসাদারদের কাছে বা পশ্চিমবঙ্গের অন্য কোনও শহরে চলে না কেন? কর্মসূত্রে কলকাতায় থাকাকালীন আমার কাছে বেশ কিছু এক টাকার ছোট কয়েন জমে গিয়েছে। কিন্তু এখন বহরমপুরের দোকানে চালানো মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। এখানকার দোকানদাররা কেউ ওই কয়েন নিতে চাইছেন না। এমনকি ‘আমাদের এখানে চলে না’ বলে অচল টাকা হিসেবে তকমা মেরে দিচ্ছেন। অথচ কারও কোনও হেলদোল নেই।
সঞ্জয় কুমার মিশ্র, বহরমপুর, মুর্শিদাবাদ
রোগ নয়
‘ওরা অন্য রকম, আগে এটা মানতে হবে’ (পত্রিকা, ১৪-৫) শীর্ষক আবাহন দত্তের লেখা প্রসঙ্গে একটি ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। লেখক অটিজ়মকে অসুখ বলেছেন। কিন্তু সকলকে জানাই, অটিজ়ম কোনও অসুখ বা রোগ নয়, অটিজ়ম একটি অবস্থা। অটিজ়ম যদি রোগ হত, তা হলে চিকিৎসায় সেরে যেত। কিন্তু যে হেতু অটিজ়ম একটি অবস্থা, তাই ওষুধে বা থেরাপিতে তা নিয়ন্ত্রণ করা যায়, সারিয়ে তোলা যায় না।
প্রবীর কুন্ডু, কলকাতা-৭৮
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy