—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায়ের ‘আমরা যাইনি মরে আজও’ (২৮-১১) প্রবন্ধ প্রসঙ্গে এই চিঠি। মানবসভ্যতার সঙ্কট কি সভ্যতার অন্তরেই নিহিত? এত মারণাস্ত্রের আমদানি ও রফতানির বহর তো আমাদের সভ্যতাকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। উন্নয়নশীল দেশের সামরিক খাতে ব্যয় শিক্ষার থেকে অনেক বেশি। অস্ত্র কারবারিদের নিশানা কি এই সভ্যতাকেই? বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী রাষ্ট্র রাশিয়া নির্বিচারে বোমাবর্ষণ চালিয়ে গেল ইউক্রেনের বিরুদ্ধে। ভয়াবহ আক্রমণে প্রায় বিধ্বস্ত দেশটি। এর পর গণহত্যা বলতে ঠিক কী বোঝায়, তা দেখা গেল ইজ়রায়েল-হামাস যুদ্ধে। প্রতিশোধজনিত হিংসা চরিতার্থ করতে এগোল ইজ়রায়েল, আর আমেরিকা, ব্রিটেন-সহ কিছু পশ্চিমি দেশ মদত জুগিয়ে গেল ইজ়রায়েলকে। ১৯৪৮ সালে ইজ়রায়েলের জন্মলগ্ন থেকেই আরব উদ্বাস্তুর সংখ্যা বাড়তে থাকে।
গাজ়ার মেয়ে ফিডা কিশতা ২০০৮-০৯ সালে গাজ়ায় ইজ়রায়েলের আক্রমণ নিয়ে একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন— হোয়্যার শুড দ্য বার্ড ফ্লাই। সেই ছবিতে দশ বছরের শিশুকন্যা মোনার কথা রয়েছে, যে সেই যুদ্ধের বোমাবর্ষণে বহু প্রিয়জনকে হারিয়েছিল। মোনা খাতার পাতা উল্টে উল্টে দেখাচ্ছিল তার আঁকা মা, বাবা, দিদি, জামাইবাবু, বন্ধুর বাড়ি, বোমারু বিমানের ছবি। সে দিনের ১০ বছরের মেয়ের বয়স আজ ২৫ বছর। সে কি আজও ছবি আঁকে, না কি ২০২৩-এর ইজ়রায়েল-হামাস যুদ্ধে তার অস্তিত্ব মুছে গিয়েছে এই পৃথিবী থেকে?
দিলীপ কুমার সেনগুপ্ত, বিরাটি, উত্তর ২৪ পরগনা
ব্যর্থ বিধি
‘দেউলিয়া বিধিতে কমছে বকেয়া উদ্ধার, সময় লাগছে বেশি’ (২৭-১১) সংবাদটি ব্যাঙ্কশিল্পের কাছে এক অশনিসঙ্কেত, সাধারণ মানুষের কাছেও উদ্বেগের। ঋণখেলাপি সংস্থার থেকে বকেয়া আদায়ের ব্যাপারে যে দেউলিয়া বিধি (আইবিসি) এসেছিল, সেই বিধি ব্যাঙ্কশিল্পের স্বার্থে কতখানি কার্যকর, সে প্রশ্ন থেকেই যায়। মূল্যায়ন সংস্থা ক্রিসিল-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৯-এর মার্চে দেউলিয়া বিধিতে সংস্থা পুনরুজ্জীবনের হার যেখানে ছিল ৪৩ শতাংশ, তা গত সেপ্টেম্বরে ৩২ শতাংশে নেমে এসেছে। দেউলিয়া আইনে মামলার ফয়সালা হতে যেখানে এক সময়ে গড়ে ৩২৪ দিন লাগত, বর্তমানে তা বেড়ে হয়েছে ৬৫৩ দিন। এখনও ১৩ হাজারের কাছাকাছি মামলা ঝুলে রয়েছে। যদিও এ ক্ষেত্রে ক্রিসিল কিছু আশার কথা শুনিয়েছে। তাদের দাবি, এই বিধি প্রয়োগ করে ৮০৮টি ক্ষেত্রে আটকে থাকা ৩.১৬ লক্ষ কোটি টাকার বকেয়া ঋণ উদ্ধার হয়েছে। ঋণগ্রহীতাদের আচরণেও বদল এসেছে। সংস্থা হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কায় দেউলিয়া আদালতে পৌঁছনোর আগেই ঋণের বকেয়া টাকা মিটিয়ে দিচ্ছেন বহু প্রোমোটার।
তা সত্ত্বেও ব্যাঙ্কের অনাদায়ি ঋণের পরিমাণ ক্রমবর্ধমান। সামাল দিতে খরচ কমানোর রাস্তায় হাঁটছে প্রতিটি ব্যাঙ্ক। স্থায়ী কাজে স্থায়ী কর্মী নিয়োগ হচ্ছে না দীর্ঘ দিন। অস্থায়ী কর্মী বা চুক্তির ভিত্তিতে নিযুক্ত কর্মীদের কম বেতন দিতে হয়, যখন-তখন ছাঁটাই করা যায়। তাই স্থায়ী কাজে অস্থায়ী কর্মী নিয়োগ এখন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। ক্রমবর্ধমান বেকার সমস্যার সামনে দাঁড়িয়ে এই পদক্ষেপ যে কত বিপজ্জনক, তা বুঝিয়ে বলার অপেক্ষা রাখে না। পাশাপাশি, আমানতের উপর সুদের হার কমছে। সার্ভিস ট্যাক্স-এর পরিধি এবং পরিমাণও ক্রমশ বাড়িয়ে চলেছে বিভিন্ন ব্যাঙ্ক। অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ককর্মীদের মূল পেনশন নিয়ম মেনে বৃদ্ধির ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ নীরব। এঁদের ভবিতব্য হল, অবসর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মূল পেনশনের পরিমাণ থাকবে ধ্রুবক। এ সব করেও পরিস্থিতি ভয়াবহ। অনাদায়ি ঋণের বোঝা ব্যাঙ্কশিল্পকে এমন জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে, যা সাধারণ গ্রাহকদের স্বার্থকে বিপন্ন করে তুলছে।
২০১৮ সাল পর্যন্ত ব্যাঙ্কে অনাদায়ি ঋণের পরিণামে সৃষ্ট অনুৎপাদক সম্পদ বা এনপিএ-র পরিমাণ ছিল ব্যাঙ্কগুলির দেওয়া মোট ঋণের প্রায় ১২ শতাংশ। গত ১০ বছরে খাতা থেকে কিছু অদেয় ঋণ মুছে দেওয়ার মাধ্যমে এনপিএ কমেছে ১৩,২২,৩০৯ কোটি টাকা। ২০২১ সালে ‘ব্যাড ব্যাঙ্ক’-এর ফর্মুলা আনা হয়। সেই মতো ‘ন্যাশনাল অ্যাসেট রিকনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড’ (এনএআরসিএল) তৈরি হয়। তাতেও আশানুরূপ ফল হয়নি। ২০২৩ অর্থবর্ষে এদের অদেয় ঋণ কেনার লক্ষ্যমাত্রা ৫০,০০০ কোটি টাকা থাকলেও তারা মাত্র ১০,৩৮৭ কোটি টাকার ঋণ ক্রয় করেছে তিনটি অ্যাকাউন্ট থেকে। এ দিকে, ঋণ মকুবের বদলে ঋণ মুছে দেওয়া হলেও তা পুনরুদ্ধারের সুযোগ থাকছে বলা হচ্ছে। কিন্তু গত তিন বছরে ৫.৯৫ লক্ষ কোটি টাকার ঋণ মুছে দিয়ে মাত্র ১.১ লক্ষ কোটি টাকা পুনরুদ্ধার হয়েছে। অর্থাৎ উদ্ধার হয়েছে ১৮-১৯ শতাংশ। কিন্তু উদ্ধার না-হওয়া টাকা কাদের? এ তো সাধারণ মানুষের কষ্টার্জিত অর্থ, যা ব্যাঙ্কে গচ্ছিত রাখা হয়েছে। তা কি এ ভাবে যথেচ্ছ ব্যবহার করা যায়? এই অনাদায়ি ঋণের সিংহভাগ হল এ দেশের বড় বড় শিল্পপতি, ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর। আইন অনুযায়ী সেখানে কেবল কোম্পানির সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত বা ক্রোক করা হয়। কিন্তু ওই সব কোম্পানির শীর্ষ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে দেওয়ানি বিধির পরিবর্তে ফৌজদারি বিধি যাতে প্রয়োগ করা হয়, সেই আইন হোক।
গৌরীশঙ্কর দাস, অল ইন্ডিয়া ব্যাঙ্ক এমপ্লয়িজ় ইউনিটি ফোরাম, কলকাতা
অবহেলা
সময়ে সময়ে প্রবীণদের নিয়ে লেখা প্রতিবেদনগুলি পড়ে খুবই ভাল লাগে। কিন্তু এই মামুলি অসুবিধাগুলি ছাড়াও অন্য বহুবিধ সমস্যা প্রবীণদের দৈনন্দিন জীবনে আছে।
এক ভদ্রলোকের দুই ছেলে— বড় ছেলে ডাক্তার, ছোট জন বেকার। ডাক্তার ছেলে বাইরে থাকে। বড় চাকরি করে, শ্বশুর-শাশুড়ির একমাত্র মেয়েকে বিয়ে করে শ্বশুরবাড়ির সম্পত্তি পেয়েছে। আর ভুলে গিয়েছে বৃদ্ধ মা-বাবার কথা। আমি দেখছি আকুল পিতৃত্বের প্রতীক্ষা। শুধু একটা ফোনের জন্য, একটা চেনা গলা শোনার জন্য। ছোট ছেলে কাছেই থাকত। বেকার। বাবা একটা দোকান করে দিয়েছিলেন। তাঁর দোতলা বাড়ি, জায়গা-জমি দুই ভাইয়ের নামে উইল করে দিয়েছিলেন। যদিও ছোট ছেলে বলত, সব আমার নামে লিখে দাও। কিন্তু বৃদ্ধ নারাজ। আমাকে বলতেন, কী করব? বলতাম, আপনি ঠিকই করেছেন। কিন্তু এক দিন সব কিছু ছোট ছেলের নামে লিখে দিতে বাধ্য হলেন। এই যন্ত্রণা কি ভাষায় প্রকাশ করা যায়?
প্রবীণদের আর একটা দিক হচ্ছে ঠকে যাওয়া। যখন কেউ বোঝে যে, লোকটা বুড়ো হয়ে গিয়েছে, ঠকাতে কেউ দ্বিধা করে না। যে পরিবারে শুধু বৃদ্ধরাই আছেন, তাঁদের অবস্থা আরও ভয়াবহ। হাট-বাজার করার লোক নেই, জিনিসপত্র আনার লোক নেই। নির্ভর করতে হয় অন্যদের উপর। তাঁদের প্রতি সবাই বিরক্ত হয়। তবে অনেক লোকের সহৃদয়তার কথাও বলতে হয়। তাঁরা কথায় ও কাজে সত্যিই সহানুভূতিশীল। কিন্তু এঁরা সংখ্যায় খুব কম।
পীযূষকান্তি চন্দ, কলকাতা-৮৬
কাজের শর্ত
‘গ্রামে গিয়ে পড়াতেই হবে শিক্ষকদের’ (২৮-১১) সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে এই চিঠি। পশ্চিমবঙ্গের আট লক্ষের বেশি ছাত্রছাত্রী বিএড পাশ করে বসে আছে। কিন্তু রাজ্যে স্কুল সার্ভিস কমিশনের শিক্ষক নিয়োগের সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া কোনও না কোনও আইনি জটিলতায় দীর্ঘ দিন আটকে থাকছে। লক্ষণীয়, গ্রামের স্কুলগুলোতে শিক্ষকের শূন্য পদের সংখ্যা বেশি। কারণ, গ্রাম থেকে শিক্ষক-শিক্ষিকারা উৎসশ্রীর মাধ্যমে বদলি নিয়ে শহরে আসছেন। তাই, চাকরিজীবনের প্রথমে গ্রাম্য অঞ্চলে শিক্ষকতা বাধ্যতামূলক করাই উচিত। প্রতি বছর রাজ্যে স্বচ্ছতার সঙ্গে শিক্ষক নিয়োগও প্রয়োজন।
অমিয় বিশ্বাস, গোবরডাঙা, উত্তর ২৪ পরগনা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy