গ্রামাঞ্চলে লিঙ্গবৈষম্য এখনও প্রকট। —ফাইল চিত্র।
স্বাতী ভট্টাচার্যের ‘প্রশাসনের ভাঙা কুলো’ (৭-৬) প্রবন্ধ আবাস যোজনার সঙ্কটের উপরে আলোকপাত করেছে। অবিরাম রাজনৈতিক মতপার্থক্যের ফলে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর টলমল অবস্থা হয়েছে। গ্রামোন্নয়ন প্রকল্পগুলির সঙ্গে কর্মসূত্রে সত্তরের দশকের মাঝামাঝি থেকেই আমার যোগাযোগ আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থার এক ক্ষুদ্র অংশ হিসাবে! প্রবন্ধকারের মূল অভিযোগ হল উপভোক্তাদের তালিকা নিয়ে, যার প্রস্তুতির ক্ষেত্রে যে কোনও সময়ের গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতাদের প্রভাব পড়ে। আবার তালিকার ত্রুটি যাচাইয়ের জন্য কিছু মাসিক চুক্তিভিত্তিক কর্মচারীদের দিয়ে তদন্ত করানো হয়। এই কর্মীদের উভয়সঙ্কট— ঠিক বা ভুল, যা-ই বলুন না কেন, তাঁরা কোনও এক পক্ষের রোষানলে পড়বেনই। এক দিকে সরকারের নির্দেশ অমান্য করলে সরকারি কর্তৃপক্ষের চোখ-রাঙানি, ও দিকে তদ্বিরের জোরে যারা ঘর পেয়েছিল, তাদের হুঙ্কার!
এই প্রকল্পের উপভোক্তাদের নির্দিষ্ট মাপের ঘর তৈরির খরচ যৌথ ভাবে বহন করে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার। অতএব কেন্দ্রের অবশ্যই অধিকার আছে প্রকল্পের হালহকিকত পর্যবেক্ষণ করার। রাজ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের দল আসা নতুন কিছু নয়, চাকরিজীবনের প্রথম থেকেই ‘সেন্ট্রাল টিম’-এর সফরের ভীতিপ্রদ অভিজ্ঞতার সঙ্গে পরিচিত হয়েছি। বিষয়টির যৌক্তিকতা অবশ্যই আছে, তবে এখন রাজনৈতিক অসাম্যের কারণে বিষয়টি মাত্রাতিরিক্ত প্রচার পেয়েছে। কোনও অবস্থাতেই অযোগ্য উপভোক্তাদের তালিকাভুক্ত করা সমর্থনযোগ্য নয়। প্রবন্ধটিতে এক অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীর উপর চাপ সৃষ্টি, এবং সেই জন্য তাঁর আত্মহত্যার কাহিনি হৃদয়বিদারক! পঞ্চায়েতের অর্ধেক আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত হওয়া সত্ত্বেও আশা, আইসিডিএস, মিড-ডে মিলের কর্মীদের লাঞ্ছনার শিকার হতে হচ্ছে, এটা সত্যিই লজ্জার কথা। গ্রামাঞ্চলে লিঙ্গবৈষম্য এখনও প্রকট, পঞ্চায়েত ব্যবস্থাও তার বাইরে নয়।
সুবীর ভদ্র, ডানকুনি, হুগলি
দায়হীন কেন্দ্র
‘প্রশাসনের ভাঙা কুলো’ শীর্ষক প্রবন্ধটি মর্মস্পর্শী। শুধু আবাস যোজনা নিয়ে নয়, একশো দিনের কাজ, মিড-ডে মিল, প্রায় সব ক্ষেত্রেই রাশি রাশি অভিযোগ। প্রশ্ন, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় কেন্দ্রের দায়িত্ব কি কিছু নেই? হিসাবে গরমিলের অভিযোগ ওঠা মানে কি রাজনীতির খেলায় টাকা পাঠানো বন্ধ করে গরিব মানুষের রোজগারের সুযোগ নষ্ট করে দেওয়া? সময়মতো কেন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করেনি কেন্দ্র? মানুষের উপর অগাধ বিশ্বাস ও আস্থার কারণেই হয়তো বড়ু চণ্ডীদাস বলেছিলেন— সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই। সমাজে এক শ্রেণির মানুষ আছে, যারা নিজেদের সুখ-বৈভব বজায় রাখতে অন্য শ্রেণির মানুষকে বঞ্চিত করে চলেছে। উপেক্ষিত হচ্ছে দরিদ্রের আর্তি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সব দেখেশুনেও কার্যত নীরব। তিনি জনসভায়, সাংবাদিক সম্মেলনে, মিটিং-মিছিলে, মানবিকতার কথা বলেন। কিন্তু অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে, সততার নিরিখে সবার উপরে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে কতটা সমর্থ হয়েছেন? রাজ্যের বিরোধী দলগুলিরও কি সদর্থক ভূমিকা থাকার কথা নয়? তারাও যদি দলীয় রাজনীতির ঘোলা জলে কেবলই ঘুরপাক খায়, তা হলে আর মানবতার মূল্য কী রইল?
শক্তিশঙ্কর সামন্ত, ধাড়সা, হাওড়া
প্রকল্পভোজী
ভোট বড় বালাই। অধিকাংশ মানুষ মনে করেন, যাঁরা রাজনীতি করেন, তাঁরা দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত। ফলে তাঁরা প্রার্থীদের সরাসরি প্রশ্ন করছেন, “আপনাকে ভোট দিলে আমি কী পাব?” ফলে ভোটে জয়ী হওয়ার জন্য প্রতিশ্রুতির বন্যা বইয়ে দিচ্ছেন প্রার্থীরা। একটা পরিবারের যত সদস্য আছে, সবাইকে কিছু না কিছু দিতে হবে। তাঁর সত্যিই পাওয়ার যোগ্যতা রয়েছে কি না, তা নিয়ে কথা বলতে গেলেই বিপদ। আবাস যোজনার সুযোগ নিয়ে এক দল মানুষ দোতলা, তিনতলা ঘর করছেন। বাবা নিজে ঘর পাওয়ার পরে তদ্বির শুরু করছেন, ছেলে কী ভাবে ঘর পাবে। অনেকে একাধিক প্রকল্পের আওতায় আছেন, পরিবারের সদস্যদেরও বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধা দিচ্ছেন। আবার অনেকে কিছুই পাচ্ছেন না। এঁরা সরাসরি রাজনীতি করেন না। গ্রামাঞ্চলে বাহুবলীও নন। সরকারি প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের চিহ্নিত করা প্রয়োজন। আবাস যোজনায় ঘর যিনি পেলেন, তাঁর ছেলে ওই একই প্রকল্পের সুবিধা ভোগ যাতে করতে না পারে, তা সুনিশ্চিত করতে হবে। যাঁরা সরকারের বিদ্যুৎ নিয়েছেন অসৎ উপায়ে, ঋণ নিয়ে শোধ করেননি, এমন মানুষ অধিকাংশ প্রকল্প গিলে খাচ্ছেন। তাই বিকল্প ভাবনা ভাবতে হবে।
সৈয়দ সাদিক ইকবাল, সিমলা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
প্রকল্পের শর্ত
‘প্রশাসনের ভাঙা কুলো’ নিবন্ধটি একটি জরুরি বিষয়ের উপর আলোকপাত করতে চেয়েছে। তবে কয়েকটি জরুরি বিষয় স্পষ্ট করা প্রয়োজন। প্রথমত, আর্থসামাজিক ও জাতি সমীক্ষা হয়েছিল ২০১১ সালে, প্রবন্ধে উল্লিখিত ২০১৩ সালে নয়। দ্বিতীয়ত, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা-গ্রামীণ, এবং আবাস প্লাস প্রকল্পের জন্য তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন ভিলেজ রিসোর্স পার্সন এবং আবাসবন্ধুরা। তাঁরা ছবি তুলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় বাড়ি নির্মাণের অগ্রগতির প্রমাণ সংগ্রহ করতে। তৃতীয়ত, আর্থসামাজিক ও জাতি সমীক্ষা এবং আবাস প্লাসের জন্য সমীক্ষা থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ১৩টি পয়েন্ট তৈরি হয়েছিল, যার ভিত্তিতে আবাস প্লাসের তালিকা থেকে ‘অটো এক্সক্লুশন’-এর মাধ্যমে অযোগ্যদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছিল। চতুর্থত, আর্থসামাজিক ও জাতি সমীক্ষা করা হয়েছিল শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা-গ্রামীণ প্রকল্পটির জন্যেই। ওই সমীক্ষা এক দশকেরও বেশি পুরনো, তাই তাতে তথ্যের অনেক ফাঁক থেকে গিয়েছে। যাঁরা তথ্যের সীমাবদ্ধতার জন্য ওই প্রকল্পে বাড়ি পাননি, তাঁদের জন্যই আবাস প্লাস প্রকল্পের অবতারণা করা হয়েছে।
নিলয় বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা-৩৪
ভোটে বাহিনী
পঞ্চায়েত ভোটের জন্য শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় বাহিনী আনলেই চলবে না, তাদের স্বাধীন ভাবে কাজ করার পরিসর দিতে হবে। বিগত নানা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভোটকর্মীরা দেখেছেন, কেন্দ্রীয় বাহিনী এসেও নিষ্ক্রিয় থেকেছে। তখন প্রিজ়াইডিং অফিসার-সহ ভোটকর্মীদের কিছু করার থাকে না। ভোটকেন্দ্রে প্রথম থেকেই অবাধ ছাপ্পা অথবা লুটের আয়োজন চলছে দেখেও কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রতিবাদ করছে না, প্রাণ হাতে নিয়ে ভোটকর্মীরা কাঁপছেন, এমনও দেখা গিয়েছে। অশান্তি বা বুথ জ্যামের বার্তা ডিসিআরসি-তে পাঠালে সে আর এক বিড়ম্বনা। যারা ভোট লুট করল, তাদের পরিবর্তে ভোটকর্মীরা হয়ে যান বলির পাঁঠা। পরে তাঁদেরই মুচলেকা দিতে হয়, কেন্দ্রে কোনও অশান্তি, লুটতরাজ হয়নি। এক প্রকার জোর করে লিখিয়ে নেওয়া হয়। কারণ, এর কোনও প্রমাণ দেওয়া যায় না। ক্যামেরার ব্যবস্থা থাকলেও উচ্চ কর্তৃপক্ষ কেন এগুলো দেখতে পান না, জানা নেই। হয় অশান্তি মেনে নিতে হবে, নয়তো বীরত্বের খেসারত দিতে হবে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আপসের পথ বেছে নেন বুথকর্মীরা। স্বভাবতই ভোট কর্মীদের ছুঁচো গেলার অবস্থা হয়। কোনও রকমে তাঁরা হাতে পায়ে ধরে বাড়ি ফিরতে পারলে বাঁচেন। সুতরাং, নির্বাচন কমিশনের কাছে আমাদের কাতর নিবেদন— কেন্দ্রীয় বাহিনীকে স্বাধীন ভাবে কাজ করতে দেওয়া হোক। নয়তো বাহিনীর উপস্থিতি কেবলমাত্র প্রহসন হয়ে থেকে যাবে।
দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা-১৫২
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy