প্রতীকী ছবি।
‘চলাচল’ সম্পাদকীয় (১৪-৬) পড়ে যে বিষয়টি মনকে সবচেয়ে বেশি নাড়া দেয়, তা হল রাজনৈতিক নেতাদের জনতার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা। সংবিধান নাগরিকের ভোটকে যতটা মূল্য দিয়েছে, তাকে ততটাই মূল্যহীন করছে রাজনীতি। জনপ্রতিনিধিত্বের নামে আখের গোছাতে নেতা জনশক্তিকে কতটা অপমান করলেন, বলার অপেক্ষা রাখে না। এটা সাংবিধানিক ব্যবস্থার প্রতি চরম অবমাননা প্রদর্শন। অবলীলায় দলবদলের ফলে গণতন্ত্র প্রহসনে পরিণত হচ্ছে। অতীতে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের যখন তখন রাজনৈতিক শিবির পাল্টানোয় লাগাম টানার জন্য দলত্যাগ বিরোধী আইন আনা হলেও, তার উপযুক্ত প্রয়োগের অভাবে আইনটি পর্বতের মূষিক প্রসবের স্তরে পর্যবসিত হয়।
গণতন্ত্রের অবমাননা রুখতে হলে বর্তমান আইনে সংশোধন এবং পরিমার্জন দরকার। দলত্যাগ আইন বলবৎ করতে স্পিকারের হাতে ক্ষমতা না রেখে, সংসদ বিষয়ক কোনও স্থায়ী কমিটির দায়িত্বে আনা হোক। কমিটিতে সর্বদলীয় প্রতিনিধিত্ব রাখা হোক, যার মধ্যে দু’জন হবেন রাজ্যপাল বা রাষ্ট্রপতি দ্বারা মনোনীত নিরপেক্ষ ব্যক্তি। দু’জন মনোনীত প্রতিনিধির মধ্যে এক জন হবেন সংবিধান বিশেষজ্ঞ, অন্য জন হবেন পরিচিত সমাজকর্মী। কমিটির প্রত্যেক সদস্যের সমান ক্ষমতা থাকবে এবং প্রত্যেকের মতামতের সমান গুরুত্ব থাকবে। এ ভাবে আইনটি নতুন রূপে প্রয়োগ করা যেতে পারে।
দেবাশিস চক্রবর্তী
মাহেশ, হুগলি
অপূর্ণ মেয়াদ
রাজনীতিতে দলবদল অস্বাভাবিক নয়। রাজনীতিকদের এক দল থেকে অন্য দলে যাওয়ার অধিকার আছে; কিন্তু মানুষকে ঠকানোর অধিকার নেই। সাংসদ, বিধায়ক, জেলা পরিষদের সদস্য, পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য, গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য— এঁরা প্রত্যেকেই জনগণের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। একটি রাজনৈতিক দলের টিকিটে ভোটে দাঁড়িয়ে, সেই দলের সমর্থকদের ভোটে জয়লাভ করে, পাঁচ বছরের জন্য মানুষের সেবা করার দায়িত্ব লাভ করেন। কিন্তু মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বেই অন্য একটি রাজনৈতিক দলে যোগ দেওয়ার অর্থ, যে দলের সমর্থকদের ভোটে জয়লাভ করেছেন, সেই দলের সমর্থকদের অপমান করা। ইদানীং এই ঘটনা যেন একটু বেশিই ঘটছে। দলবদল বন্ধ করা যাবে না। কিন্তু জনপ্রতিনিধিদের এই যখন-তখন দলবদলের চলমান ধারা বন্ধ হওয়া দরকার। যদি কোনও জনপ্রতিনিধি দলবদল করতে চান, তা হলে তাঁকে পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ করতেই হবে— এমন আইন করা যায় না কি?
সত্যকিঙ্কর প্রতিহার
যমুনা দেশড়া, বাঁকুড়া
গদ্দারের রুচি
বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি ও কৃষ্ণনগর উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক মুকুল রায়ের পূর্বাশ্রমে যোগদান মঞ্চে তৃণমূল নেত্রী বলেছেন, “নিম্নরুচির গদ্দারদের ফেরাব না” (‘নিম্নরুচির গদ্দারদের ফেরাব না: মমতা’, ১২-৬)। মুকুলের উপলব্ধি, বিজেপি করা যায় না, বিজেপি সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা তৈরির চক্রান্ত করছে, তাই এই ঘর ওয়াপসির সিদ্ধান্ত। নির্বাচনের মাসখানেক আগে থেকে এক ঝাঁক তৃণমূল নেতা ‘দলে থেকে কাজ করতে পারছি না’, বা ‘দলে থেকে দম বন্ধ হয়ে আসছে’ বলে বাঁধা গৎ আওড়ে বিজেপির নৌকায় পা দিলেন। ফল প্রকাশের এক মাসের মধ্যে পুরনো দলে ফিরলেন, বা ফেরার ইচ্ছে প্রকাশ করলেন। মূল স্রোতের রাজনীতিতে এ সব আজ আর বেমানান নয়। দলত্যাগীদের দলে নেওয়ার প্রক্রিয়ার ‘ফ্ল্যাগ অফ’ মুকুল রায়কে দিয়ে শুরু করলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। দল ভাঙানোর খেলায় দক্ষ মুকুলবাবু নতুন ইনিংসে তাঁর সুনাম অক্ষুণ্ণ রেখে দলনেত্রীর আস্থা অর্জন করবেন।
তুর্কি ভাষায় ‘গদ্দার’ শব্দটির অর্থ নিষ্ঠুর, অন্যদের প্রতি অন্যায়কারী। প্রচলিত অর্থে ‘গদ্দার’ শব্দটি বিশ্বাসঘাতকতার সঙ্গে বেশি যায়। তাই ‘নিম্নরুচির গদ্দার’ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করতে ইচ্ছে হয়, বিশ্বাসঘাতকদের রুচিপার্থক্য কোন নিক্তিতে মাপা হয়? আরএসএস-এর মতাদর্শে গঠিত বিজেপি আদ্যন্ত একটি হিন্দুত্ববাদী দল। দেশব্যাপী সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা সৃষ্টির অসংখ্য নজির রয়েছে বিজেপির ঝুলিতে। ১৯৯২ সালে পাঁচশো বছরের সৌধ ধ্বংস থেকে ২০০২ সালে গুজরাতে নরমেধ যজ্ঞ, ২০১৩ সালে মুজফ্ফরনগরের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা থেকে ২০২০ সালে দিল্লির সংঘর্ষ— এ সবের জন্য বিজেপির দিকে আঙুল উঠেছিল। এ সব এনডিএ-র দু’-দু’বার জোটসঙ্গী, তৃণমূল দলের একদা ‘সেকেন্ড ইন কমান্ড’ মুকুল রায়ের অজানা নয়। তাই দলবদল করার সময়ে বিজেপি ‘সাম্প্রদায়িক’ বলে গাল পেড়ে পূর্বাশ্রমে ফিরে আসার ব্যাখ্যা হাস্যকর। দলবদলের এই রঙ্গমঞ্চ কোভিড-জনিত স্বাস্থ্য অ-ব্যবস্থা, বন্যা দুর্গতদের দুরবস্থা, ছাত্রজীবনের দুটো প্রধান পরীক্ষা বাতিলের উৎকণ্ঠা ও খেটে-খাওয়া মানুষদের জীবন-জীবিকার মৌলিক প্রশ্নগুলোকে কিছু দিনের জন্য পিছনের সারিতে ঠেলে দেয়, আপাতত প্রাপ্তি বলতে এটাই।
রাজশেখর দাশ
কলকাতা-১২২
নেতার ঢাল
‘ফুল বদল’ (১২-৬) শীর্ষক সংবাদের প্রেক্ষিতে এই চিঠি। রাজনীতির কূটকৌশলে ‘মানুষের জন্য’ কথাটা প্রহসনে পরিণত। যে কোনও সাফাই গাইতে তাঁরা বলে থাকেন, ‘মানুষের জন্য এটা প্রয়োজন’, বা ‘মানুষ চান’। সম্প্রতি মুকুল রায়ের প্রত্যাবর্তনেও শুনলাম, উনি ফিরেছেন মানুষের জন্য কাজ করবেন বলে। অনেক রাজনৈতিক হিংসা, গোলমালকে নেতারা ‘স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ’ আখ্যা দেন। রাজনীতিকরা যা করেন, তা একান্তই নিজেদের স্বার্থে। তাঁদের সার্কাসে মানুষ বিরক্ত। বার বার ‘মানুষের জন্য কাজ করছি’ বলে লজ্জা দেবেন না।
অরিত্র মুখোপাধ্যায়
চাতরা, হুগলি
কর্মীর অপমান
মুকুল রায়কে দলে নেওয়া যথার্থ পদক্ষেপ। তবে, রাজ্যস্তরে মুকুল রায়ের সমসাময়িক দু’-চার জন ব্যক্তিকে তৃণমূল নিলেও, জেলা-ব্লক-পঞ্চায়েত স্তরের কোনও বিজেপি কর্মীকে যেন না নেওয়া হয়। তা হলে যে হাজার হাজার তৃণমূলকর্মী প্রাণ বাজি রেখে, পকেটের টাকা খরচ করে বিজেপির বিরুদ্ধে এই নির্বাচনে লড়াই করে দলের জয় এনেছেন, তাঁদের অপমান করা হবে।
সৈয়দ আনসার উল আলাম
ঘাটাল, পশ্চিম মেদিনীপুর
অনিয়ম
ছ’বছরের সাসপেন্ড হওয়া নেতা মুকুল রায় ও তাঁর পুত্রকে যে ভাবে বরণ করা হয়েছে, তাতে প্রশ্ন জাগছে, সাসপেন্ড করার কোনও গুরুত্ব আছে কি না। ন্যূনতম নিয়মরক্ষার জন্য তৃণমূলের যা করণীয় ছিল, তা করা হয়েছে কি?
রাধাকান্ত ঘড়াই
পূর্ব মেদিনীপুর
কর নয়
‘কোভিড-চিকিৎসায় জিএসটি দ্বন্দ্ব তুঙ্গে’ (১৩-৬) পড়ে অবাক হলাম। লকডাউনে বহু মানুষ কর্মহীন, অনেকেরই রোজগার কমেছে। তবু কোভিড-আক্রান্তরা ওষুধ, অক্সিজেন লেভেল মাপার যন্ত্র, স্যানিটাইজ়ার প্রভৃতিতে উচ্চ হারে জিএসটি দিতে বাধ্য হয়েছেন। ১২ জুন বৈঠকের পর এই করের হার কোভিড ও মিউকরমাইকোসিসে ব্যবহৃত দু’টি ওষুধের ক্ষেত্রে শূন্য করা হলেও, অন্যান্য ক্ষেত্রে শুধুমাত্র কমানো হয়েছে। আবার কোভিডের টিকা, মাস্ক, পিপিই কিটের করের হার অপরিবর্তিত। আগামী দিনে কোভিড চিকিৎসায় ব্যবহৃত সামগ্রীর কর শূন্য হবে, এই আশা রইল।
পার্থসারথী মণ্ডল
কৃষ্ণনগর, নদিয়া
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy