‘সত্যই ভয়ঙ্কর’ (২৯-৭) শীর্ষক সম্পাদকীয় প্রকৃত সত্যকে পাঠকের সামনে নিয়ে এসেছে। শিক্ষাক্ষেত্রে এবং অন্যান্য ক্ষেত্রেও পরিব্যাপ্ত দুর্নীতির জন্য রাজ্যের শাসক দলের নেতারা বিশ্বাসযোগ্যতা হারাচ্ছেন। আদালতের তদন্ত ও নির্দেশ এবং কেন্দ্রীয় অনুসন্ধান সংস্থার সর্বশেষ তথ্য প্রকাশে মানুষ সরকারের নিছক আশ্বাস ও প্রতিশ্রুতিতে ভরসা রাখতে পারছেন না। সংবাদমাধ্যমে জানা গিয়েছিল, আন্দোলনকারী শিক্ষক প্রতিনিধিদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর ‘রাজনৈতিক উত্তরাধিকারী’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আলোচনা সদর্থক ও ইতিবাচক হয়েছে এবং তিনি জটিলতা কাটিয়ে অনতিবিলম্বে শিক্ষকদের নিয়োগ-প্রক্রিয়া আরম্ভের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এখানে প্রশ্ন ওঠে, রাজ্যে বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী পদে ব্রাত্য বসু বহাল থাকা সত্ত্বেও এক জন সাংসদ কেমন করে এই দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারেন?
আবার তার পরই সংবাদমাধ্যমে দেখা গেল, ক্যামাক স্ট্রিটে সাংসদের অফিস ঘেরাওয়ের অপরাধে পুলিশি অভিযান করে অবস্থানরত আন্দোলনকারী শিক্ষকদের টেনে-হিঁচড়ে সেখান থেকে সরিয়ে দিতে। এক দিনেই আশ্বাসের পাশা পাল্টে গেল? পুলিশকে ব্যবহার করে বঞ্চিত শিক্ষক-কর্মপ্রার্থীদের উপর এমন প্রতিহিংসাপরায়ণ প্রত্যাঘাত অনভিপ্রেত ও অবাঞ্ছিত।
রাজ্যের মানুষ দুর্নীতিমুক্ত শাসক দলের দেখা পাওয়ার আশায় থাকবেন। জনসাধারণ তাঁদেরই নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি এবং দলীয় নেতাদের কাছ থেকে জনকল্যাণমূলক কাজ দেখতে চান। কেবলমাত্র তাঁদের প্রতিশ্রুতিতে আর ভুলে থাকতে চান না। নাটকীয় প্রতিশ্রুতি বা আশ্বাসের দিন অতিক্রান্ত হয়েছে! এ বার জনসাধারণের জন্য কাজ করে দেখানোর পালা!
যে কোনও দায়িত্বশীল প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির মুখে ‘আমি জানতাম না’ অজুহাত গ্রহণযোগ্য নয় এবং অশোভনও বটে! যে কোনও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে মন্ত্রিসভার প্রত্যেক সদস্যের দৈনিক গতিবিধির সব খবর গোপনীয়তা রক্ষা করে নথিবদ্ধ থাকে। তাই, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোতে মন্ত্রী-মণ্ডলীর কোনও এক জন সদস্যের অনৈতিক অপকর্ম ও দুর্নীতির জন্য তাঁদের প্রধান বা মুখ্য নেত্রী এবং অন্য সব মন্ত্রীও জনগণের কাছে সমবেত ভাবে দায়বদ্ধ থাকেন।
সমরেশ বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা-৯১
সেই ট্র্যাডিশন
বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়-এর ‘ধ্বংসের মুখোমুখি আমরা’ (২৯-৭) প্রবন্ধ প্রসঙ্গে কয়েকটি কথা। কোনও একটি টেলিভিশন চ্যানেলের সাক্ষাৎকারে এক অধ্যাপিকা তথা শাসক দলের এক নেত্রী শিক্ষার আঙিনায় দুর্নীতি এবং স্বজনপোষণ প্রসঙ্গে একটি শব্দ উল্লেখ করেছিলেন— ‘অ্যাকাডেমিক মাফিয়া’। শিক্ষক নিয়োগে একাধিক বেনিয়ম, দুর্নীতি, বেলাগাম আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে এই শব্দবন্ধনী যে যথার্থ এবং সাযুজ্যপূর্ণ— তাতে সন্দেহ নেই। অবশ্য তাঁর সমস্ত বক্তব্য অধিকাংশ শিক্ষকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়, এবং সেটিই আমাদের আশার আলো দেখায়। কিন্তু শিক্ষার আঙিনায় এই দুর্নীতি, স্বজনপোষণ এবং শিক্ষাজগতের দালালদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন, শিক্ষাবিদ এবং বুদ্ধিজীবীরা কোনও এক অজ্ঞাত কারণে যে নিষ্ক্রিয়তা দেখাচ্ছেন, তা হতাশজনক।
আজ মনে পড়ছে, বিকাশ ভবনে শিক্ষামন্ত্রীর বিতর্কিত প্রথম দিনটির কথা। টেলিভিশনের পর্দায় দেখা গিয়েছিল, মন্ত্রীর সামনের চেয়ারটিতেই যিনি অধিষ্ঠিত ছিলেন, তিনি একদা সিপিএম আমলের বিধায়ক, বৈদিক ভিলেজ কাণ্ডে অভিযুক্ত এবং তৃণমূল জমানায় ভাঙড় কলেজের পরিচালন সমিতির সদস্য সেই কলেজেরই অধ্যাপিকাকে জগ ছুড়ে মারার দায়ে অভিযুক্ত ‘তাজা’ রাজনৈতিক কর্মী আরাবুল ইসলাম। সম্ভবত সেই দিনই নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থাটির ভবিষ্যৎ কোন দিকে যেতে চলেছে। তার আগেই অবশ্য ছোট ছেলেদের কাজকর্ম রায়গঞ্জ কলেজে আমরা প্রত্যক্ষ করেছিলাম। এবং এ রকম ধারাবাহিক অনেক ঘটনা ঘটেই চলছিল প্রায় প্রতি দিন। অথচ, কড়া পদক্ষেপ তো দূরের কথা, সরকার তথা দলের তরফে কর্মীদেরই প্রশ্রয় দেওয়া হয়েছে বার বার।
রাজ্যের বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলি ১৯৯৮ সাল থেকেই শিক্ষাকে পণ্যের আকার দিয়েছিল। এই বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষা-শিল্পগুলি কিন্তু আমাদের রাজ্যের একটি লাভদায়ক শিল্প। শাসক দল এই বেসরকারি কলেজগুলিকে আগলে রেখেছে অতি যত্নে। লক্ষণীয়, রাজ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়লেও সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের সংখ্যা বাড়েনি। উপরন্তু রাজ্যের সাধারণ কলেজগুলি চিহ্নিত হয়েছে রাজনৈতিক ছাত্র নেতা-নেত্রী তৈরির আখড়ায়। বাম জমানা থেকেই শিক্ষাবিদদের একাংশের মধ্যে শিক্ষক থেকে প্রশাসক হওয়া তথা রাজনৈতিক ক্ষমতার অলিন্দে প্রবেশ করার ইঁদুর-দৌড়ের প্রবণতা দেখা যায়। স্কুল থেকে অনামী কলেজ, অনামী কলেজ থেকে সরকারি কলেজ, অনামী সরকারি কলেজ থেকে নামী সরকারি কলেজ, এবং নামী সরকারি কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়। এবং তার পরও বিভিন্ন সংসদ এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের সম্ভাবনাময় একটি প্রতিযোগিতা এক শ্রেণির শিক্ষকদের শাসক দলের চাটুকারে পরিণত করেছিল। সেই ট্র্যাডিশন-এর কোনও ব্যতিক্রম ঘটেনি আজও। রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থাটিকে তার নিজস্ব গরিমা ফিরে পেতে হলে দরকার বুদ্ধিজীবী, শিক্ষকমহল এবং শুভবুদ্ধিসম্পন্ন জনসাধারণের মধ্যে একটি নিরপেক্ষ প্রতিবাদী মঞ্চ।
পিনাকী রুদ্র, কলকাতা-১২৪
অদ্ভুত নীরবতা
‘ধ্বংসের মুখোমুখি আমরা’ শীর্ষক প্রবন্ধ প্রসঙ্গে বলি, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বৃত্তে থাকা শিল্পী, বুদ্ধিজীবী-সহ বিদ্বজ্জনদের অদ্ভুত নীরবতা দেখা অত্যন্ত কষ্টকর। বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনৈতিক ক্রিয়াকলাপ এবং দুর্নীতির ইঙ্গিত যখন পাওয়া যাচ্ছিল, তাঁরা কি তখন ব্যক্তিগত স্তরে মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারতেন না? পারতেন না, বিষবৃক্ষটিকে অঙ্কুরে উৎপাটিত করতে মুখ্যমন্ত্রীকে সাহায্য করতে? কেন্দ্রের শাসক দলকে বিষোদ্গার করে, অন্য রাজ্যের দুর্নীতির উদাহরণ টেনে নিজেদের গায়ের পাঁক ধুয়ে ফেলা যায় না, এ সরল সত্যটি বোঝা দরকার। তুমি অধম তাই বলিয়া আমি উত্তম হইব না কেন?— এক নবকুমারকে দেখার আশাতেই তো মানুষ বুক বেঁধেছিলেন।
ধীরেন্দ্র মোহন সাহা, কলকাতা-১০৭
বড় ক্ষতি বাংলার
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের পর ঋদ্ধিমান সাহাই হলেন একমাত্র বাঙালি ক্রিকেটার, যিনি দেশের হয়ে চল্লিশটিরও বেশি টেস্টে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। উইকেটরক্ষক-ব্যাটার হিসেবে দেশের জার্সিতে তিনটি শতরান-সহ তাঁর কেরিয়ার পরিসংখ্যানও যথেষ্ট ঈর্ষণীয়। অথচ, সেই ঋদ্ধিমানই জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ার পর সিএবি কর্তাদের সঙ্গে বিবাদের জেরে পাকাপাকি ভাবে বাংলা ছেড়ে ভিনরাজ্যে পাড়ি দিয়েছেন। আর তাই দেখেও আশ্চর্যজনক ভাবে নির্বিকার তাঁর নিজের রাজ্য ক্রিকেট সংস্থা সিএবি। প্রায় ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলাকে নিঃস্বার্থ সেবা করা ঋদ্ধিকে সম্মান প্রদর্শন তো দূর অস্ত্, তাঁকে আটকানোর চেষ্টাটুকুও করা হয়নি। এমনকি যে জনৈক কর্তা ঋদ্ধির দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রকাশ্যে প্রশ্ন তুলেছিলেন, সেই কর্তার বিরুদ্ধে কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা করার বদলে ভারতীয় দলের ম্যানেজার-এর ‘প্রোমোশন’ দিয়ে পরোক্ষে ওই কর্তাকেই নৈতিক সমর্থন দিয়েছে সিএবি।
ইতিমধ্যে প্রতিবেশী রাজ্য ত্রিপুরায় মেন্টর কাম ক্রিকেটার হিসেবে যোগও দিয়েছেন তিনি। বলা বাহুল্য, কিছু ক্ষমতাশীল সিএবি কর্তার ব্যক্তিগত স্বার্থ এবং ইগোর কাছে হার মানল বাংলার ক্রিকেট!
সুদীপ সোম, হাবড়া, উত্তর ২৪ পরগনা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy