Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Durga Puja 2023

সম্পাদক সমীপেষু: এই কি ঐতিহ্য?

পাঁচ দিনের দুর্গোৎসব গত কয়েক বছরে ১৫ দিনের উৎসবে পরিণত হয়েছে। এর ফলে কর্মদিবস নষ্ট ও কর্মসংস্কৃতির যে অবক্ষয় হচ্ছে, সেই দিকটা ইউনেস্কোর নজরে পড়েছে কি?

An image of Pandal

—প্রতীকী চিত্র।

শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০২৩ ০৪:২০
Share: Save:

জ্ঞান হওয়া থেকে গত বছর পর্যন্ত দেখে এসেছি যে, বড় পুজো উদ্যোক্তারা মহালয়ার দু’মাস আগে দুর্গাপুজোর আয়োজন (মণ্ডপ তৈরি, আলোকসজ্জা ইত্যাদি) শুরু করতেন, মাঝারি মাপের পুজো উদ্যোক্তারা মহালয়ার দু’-তিন সপ্তাহ আগে থেকে। কিন্তু এ বছর লক্ষ‍ করছি যে, মাঝারি মাপের উদ্যোক্তারাও প্রায় দু’মাস আগে থেকেই পুজোর আয়োজন শুরু করে দিয়েছেন। অধিকাংশ স্থানেই পুজোমণ্ডপ অর্ধেক তৈরি হয়ে গিয়েছে। সবচেয়ে বিড়ম্বনার ব্যাপার হল, বেশ কিছু স্থানে রাস্তার কিছুটা অংশ বা সম্পূর্ণ অংশ দখল করে মণ্ডপগুলি গড়া হচ্ছে। আগেও মণ্ডপগুলি রাস্তা জুড়ে তৈরি হত, তার জন‍্য জনসাধারণকে দু’-তিন সপ্তাহ দুর্ভোগ সহ‍্য করতে হত। কিন্তু এ বছর সেই দুর্ভোগ দু’মাস আগে থেকেই শুরু হয়ে গেল।

পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুজোকে ইউনেস্কো-র দেওয়া ‘আবহমান ঐতিহ‍্য’-এর শিরোপা আমাকেও গর্বিত করে। কিন্তু পাঁচ দিনের দুর্গোৎসব গত কয়েক বছরে ১৫ দিনের উৎসবে পরিণত হয়েছে। এর ফলে কর্মদিবস নষ্ট ও কর্মসংস্কৃতির যে অবক্ষয় হচ্ছে, সেই দিকটা ইউনেস্কোর নজরে পড়েছে কি? বিভিন্ন সংগঠনকে তাদের আয়োজিত পুজোর জন্য নানা সংস্থা পুরস্কার দিয়ে থাকে। রাস্তা আটকে পুজো করা ক্লাবগুলোকে যদি পুরস্কারের তালিকা থেকে প্রথমেই বাতিল করে দেওয়া হয়, তা হলে আগামী বছর থেকে হয়তো সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ কমবে। আইন-আদালত, পুলিশ-প্রশাসন এত দিনে যা পারেনি, পুরস্কারদাতারা যদি তা করে দেখাতে পারেন, তা হলে তাঁরা সাধারণ মানুষের অকুণ্ঠ প্রশংসা ও ভালবাসা পাবেন।

ইন্দ্রনীল ঘোষ, লিলুয়া, হাওড়া

বৃদ্ধদের দশা

‘ইন্ডিয়া এজিং রিপোর্ট ২০২৩’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকার সম্প্রতি জানিয়েছে যে, দেশে বয়স্ক নাগরিকের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০২১ সালে জনসংখ্যার ১০.১ শতাংশ ছিল বয়স্ক নাগরিক। আগামী ২০৩৬-এ তা ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে বলে বিশেষজ্ঞ মহলের ধারণা। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আর ১৩ বছর পর এই বাংলার জনসংখ্যার ১৮ শতাংশেরও বেশি ষাটোর্ধ্ব হবেন! রিপোর্টে এ-ও বলা হয়েছে যে, আগামী দিনে সবচেয়ে বেশি প্রবীণ নাগরিক থাকবেন কেরলে, সংখ্যাটা দাঁড়াবে সেখানকার মোট জনসংখ্যার ২২.৮ শতাংশ। সবচেয়ে কম থাকবেন বিহারে, মাত্র ১১ শতাংশ (এখন যা রয়েছে ৭.৭ শতাংশ)।

রিপোর্ট বলছে, আয়ু বৃদ্ধির ক্ষেত্রে জাতীয় গড়ের থেকে এগিয়ে বাংলা! ষাট বছর বয়সের পরেও জীবিত থাকার ক্ষেত্রে জাতীয় গড় যেখানে মহিলাদের ১৯ শতাংশ, এবং পুরুষদের সাড়ে ১৭ শতাংশ, সেখানে এই বাংলায় ওই হার যথাক্রমে ২০.৪ ও ১৮.৭ শতাংশ! তবে দৈনন্দিন কাজে কোনও না কোনও সমস্যা আছে বাংলার প্রায় ৩৮.৫ শতাংশ প্রবীণ নাগরিকের। গোটা দেশের ক্ষেত্রে সেই হার ২৩.৮ শতাংশ। প্রসঙ্গত, মহারাষ্ট্র, গোয়া, দিল্লি-সহ দেশের ১১টি রাজ্য এবং প্রায় প্রতিটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে দৈনন্দিন কাজে ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধদের সমস্যা আছে। সেখানে ষাট বছরের পরেও কর্মঠ নাগরিকের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি নাগাল্যান্ডে। ওই রাজ্যের মাত্র ৭.২ শতাংশ দৈনন্দিন কাজকর্মে অস্বচ্ছন্দ, এর পরের স্থান রাজস্থানের (৭.৫ শতাংশ)! এমতাবস্থায় প্রবীণ নাগরিকদের যাবতীয় প্রকল্পে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন, এবং চিকিৎসায় আর্থিক ভার লাঘব করা প্রয়োজন! অথচ, ‘অচ্ছে দিন’-এর বাতাবরণে তার ছিটেফোঁটাও দেখা যায় না!

বিশ্বজিৎ কর, গড়িয়া, কলকাতা

স্মৃতির কাপ

১৩তম ক্রিকেট বিশ্বকাপ শুরু হয়ে গিয়েছে। প্রথম দু’বারের বিশ্বকাপ জয়ী ওয়েস্ট ইন্ডিজ় এই বিশ্বকাপে যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি। জ়িম্বাবোয়ে, কেনিয়ার মতো তথাকথিত ছোট দল— যারা অতীতের বিশ্বকাপে বড় দলগুলিকে হারিয়ে বেশ কিছু অঘটন ঘটিয়েছিল— তারাও এ বার বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি। তবে গত বিশ্বকাপগুলির ঢাকে কাঠি পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই ক্রীড়াপ্রেমীদের মধ্যে প্রবল উদ্দীপনা চোখে পড়ত। প্রায় সব দৈনিক সংবাদপত্রই নিয়ম করে খেলার পাতায় বিশ্বকাপ নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন লিখত, সঙ্গে বিনামূল্যে বিশেষ ক্রোড়পত্রও দিত। প্রত্যেক দেশের সম্ভাব্য তারকা কে হতে পারেন, সে বিষয়ে নানা অনুমান করত, এবং সেই সব খেলোয়াড় সম্বন্ধে বিশেষ এবং বিশদে বিবরণ থাকত। সঙ্গে থাকত তাঁদের রঙিন ছবিও। আমরা সেই ছবিগুলি ঘরের দেওয়ালে আটকে রাখতাম। সম্পূর্ণ ক্রীড়াসূচি হাতে পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই অনুমান করার চেষ্টা করতাম, কোন দল কোন খেলাতে জিততে পারে, এবং সেই অনুযায়ী সেমিফাইনাল ফাইনালের দল কী হতে পারে, অনুমান করতাম। মিলে গেলে দারুণ আনন্দও পেতাম।

সেই ক্ষুদ্র আনন্দগুলো কোথায় যেন এখন হারিয়ে গিয়েছে! বিভিন্ন বাণিজ্যিক কোম্পানি তখন বেশ আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন ও নানা অফার দিত। বিশ্বকাপের আগে এক কোম্পানির টিভি কিনলে ব্যাট ফ্রি, তো আর এক কোম্পানির বিস্কুট কিনলে মাঠে বসে খেলা দেখার টিকিট পাওয়ার মতো লোভনীয় অফার থাকত। বিয়েবাড়ির মেনুকার্ড থেকে শুরু করে ক্যালেন্ডার, টুপি থেকে শুরু করে টি-শার্ট, সবেতেই বিশ্বকাপের প্রতিচ্ছবি স্পষ্ট ভাবে ফুটে উঠত। পাড়ায়, পাড়ায় জাতীয় পতাকা দিয়ে মুড়ে ফেলা হত। সময়ের সঙ্গে এই সব কিছুই কেমন যেন হারিয়ে যাচ্ছে! এর কারণ কি শুধুই আমাদের সময়ের অভাব? সমাজমাধ্যম বা বিভিন্ন কম্পিউটার গেম এগুলোকে গ্রাস করে নিচ্ছে? এখন সারা বছরই ক্রিকেটের নানা প্রতিযোগিতা হচ্ছে বলে কি মানুষ ক্রিকেটের প্রতি উন্মাদনা হারাচ্ছে? না কি ফ্র্যাঞ্চাইজ়ি ক্রিকেট ও টি২০’র প্রভাবে ৫০ ওভারের ক্রিকেট বিশ্বকাপ জৌলুস হারাচ্ছে?

জয়ন্ত শীল, ইছলাবাদ, পূর্ব বর্ধমান

নামমাহাত্ম্য

আবির্ভাব ভট্টাচার্য তাঁর ‘অমৃতকালের ভারতকথা’ (৮-৯) প্রবন্ধে দেখিয়েছেন, পুরাকালে সকলে অমৃত পায়নি। অর্থাৎ, ভালরা পেয়েছে, মন্দরা পায়নি। সেই বৈষম্য এই কলিযুগে পরিপূর্ণতা লাভ করেছে। সুতরাং সাম্যে বা একেবারে সমানে ফেরার জন্য যদি এই অমৃতকালের ভাবনা হয়, তবে মন্দ কী?

কিন্তু এই অমৃতকালের উৎসবে শামিল হওয়ার আগে কী ভাবে আমরা সবাই অমৃতের সমান ভাগ পাব, সেই ছকটা জেনে নেওয়া ভাল। মানে সবাই অমৃত পাবে কি না, সবাই সমান পাবে কি না, দলিতরা, সংখ্যালঘুরাও পাবে কি না— সেই সব তথ্য। এ ক্ষেত্রে প্রবন্ধকারের আশঙ্কা অমূলক নয়।

অমৃতকালের কর্মসূচিতেই কি ‘ইন্ডিয়া’ হটানোর পরিকল্পনা? ভারতীয়দের তুলনায় ইন্ডিয়ানদের নাক উঁচু, কিছু কিছু সন্ত্রাসবাদী সংস্থার নামেও ‘ইন্ডিয়া’ শব্দটি আছে। তা হলে কি নাম পাল্টালে তারা সংশোধিত হয়ে যাবে, বা জব্দ হবে? তারাও যদি নাম পাল্টে ‘ভারত’ শব্দটি জুড়ে নেয়, তবে কি দেশের নাম আবার পাল্টানো হবে?

আমাদের পাড়ায় যুধিষ্ঠির দত্ত তাঁর বৃদ্ধ পিতা দুর্যোধন দত্তকে দেখেন না। যদিও দুর্যোধন এক কালে মজুর খেটে ছেলেকে পড়াশোনা করিয়েছিলেন, তাই যুধিষ্ঠির আজ সরকারি চাকুরে। পাড়ায় যুধিষ্ঠির তাঁর প্রাপ্যের চেয়েও কিঞ্চিৎ বেশি নিন্দিত নামের কারণে। তবে কি ওঁরা নামগুলো পাল্টাপাল্টি করে নেবেন? নামের একটা মাহাত্ম্য হয়তো অনেক ক্ষেত্রেই আছে। এবং সে ক্ষেত্রে নামে কিছু যায় আসে। তবে যে চিন্তাভাবনা করে নামে পরিবর্তন আনা উচিত, সেই সদ্ভাবনার অভাব স্পষ্ট। অমৃতকালের সূচনায় এ সব শুভ ইঙ্গিত নয়।

দুর্গেশ কুমার পান্ডা, নরেন্দ্রপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা

অন্য বিষয়গুলি:

Durga Puja Pandals Durga Puja Preparations Kolkata Traffic Jam
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy