প্রতীকী ছবি।
কিছুতেই পাল্টাচ্ছে না পশ্চিমবঙ্গের ভোটচিত্র। হাজার কোম্পানির কাছাকাছি কেন্দ্রীয় বাহিনী এনে, আট দফায় ভোট করা হচ্ছে। তবু দ্বিতীয় পর্বের ভোটচিত্রে যে রকম হিংসাত্মক চেহারা দেখা গেল, তাতে পরিষ্কার যে অপর রাজ্যগুলির ছবি পাল্টে গেলেও পাল্টানোর জায়গা নয় এই রাজ্য। সেই একই অবস্থা— দু’দলের মধ্যে সংঘর্ষ, মারামারি, বোমাবাজি, খুন, বুথ দখল, ছাপ্পা ভোট, ভোটারদের হুমকি, প্রভৃতি যত অনৈতিক কার্যকলাপ, সব কিছুই ঘটছে ভোটকে কেন্দ্র করে আমাদের সাধের এই রাজ্যে। এখন আমাদের প্রত্যেকেরই ভাবা দরকার, গণতন্ত্র রক্ষার্থে এই রাজ্যের জন্য কী করা উচিত। কী ভাবে প্রত্যেকে নির্বাচনে নিজের মত স্বাধীন ভাবে প্রকাশ করতে পারবে।
আমার মতে, এই কাজটা করতে পারবে একমাত্র অনলাইন ভোট। অপর রাজ্যগুলির ভোট প্রকাশ্যে বুথ গঠন করে ইভিএমের দ্বারা সুস্থ ভাবে, নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করা গেলেও এই রাজ্যের ক্ষেত্রে কোনও ভাবেই যে সম্ভবপর নয়, তার প্রকৃষ্ট প্রমাণ এই বারের বিধানসভার ভোটে এত কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়েও সন্ত্রাস আটকাতে না পারা। অন্তত পশ্চিমবঙ্গের নাগরিকদের ইচ্ছানুযায়ী সুস্থ ভাবে ভোটদানে এর পর থেকে ইভিএমের পরিবর্তে চালু করা হোক অনলাইন ভোটদান। অনলাইনে সব রকম কাজ হচ্ছে, বহু সমস্যার নিরসন করছে ডিজিটাল প্রযুক্তি। অনলাইন পরিষেবা এখন সব রকম সরকারি কাজেও চালু হয়েছে, বহু আবেদন এবং তার অনুমোদন কেবলমাত্র অনলাইনেই হচ্ছে। তা হলে ভোটই বা অনলাইন করা হবে না কেন?
তাপস সাহা
শেওড়াফুলি, হুগলি
ভোটনামচা
ভোট নিতে গিয়ে যত বারই শুনেছি, “এমন পরিবেশ কোত্থাও পাবেন না, স্যর”, পরের দিন সকালে ঠিক ঝামেলা হয়েছে। এ বারে সত্যি কোনও ঝামেলার সম্মুখীন হতে হয়নি। ভোট পড়েছে ৯২.৫৭ শতাংশ। রায়দিঘি আর পাথরপ্রতিমা বিধানসভার সীমানায় আমার ভোটকেন্দ্র পড়েছিল। ফেরিঘাট ব্রিজ থেকে এক কিলোমিটার দক্ষিণে। সুন্দর পরিবেশ। পাকা রাস্তার বাঁ দিকে সবুজ ধানের খেত। ডান দিকে প্রাথমিক বিদ্যালয়। পরিত্যক্ত বিদ্যালয় নির্বাচনের দৌলতে ‘আনলক’ হল এত দিনে।
ভোটকর্মীদের ন্যূনতম চাহিদা থাকে জল, আলো, শৌচাগার এবং পরিবহণ। ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা থেকেই প্রতিটি বিদ্যালয় তথা ভোটকেন্দ্রে সব সুবিধে নিশ্চিত করার কথা। দেখা গেল, শৌচাগার ঘুটঘুটে অন্ধকার। মাকড়সার জালে ‘প্রবেশ নিষিদ্ধ’। পানীয় জলের কলটি অকেজো। যদিও ভোটের দিন সকালে সারানো হল। সেক্টর অফিসারকে ফোন করে রাত ন’টায় পাওয়া গেল জলের ড্রাম। আসবাবপত্রে ধুলোর প্রলেপ। বলতে দ্বিধা নেই, জলের অভাবে দাঁত মাজা হয়নি আমার।
ভোর সাড়ে চারটের সময় উঠে প্রস্তুত হয়ে সাড়ে পাঁচটায় মক পোল শুরু করতে হয়েছে। ভোট নিতে নিতে হালকা টিফিন সেরেছি। ওখানকার স্বনির্ভর গোষ্ঠী খুব ভাল। আগের দিন রাতে দেশি মুরগির ঝোল করেছিল। সঙ্গে একটু ভাজা ও ডাল। ভোটের দিন দুপুরে মাছের ঝোল-ভাত, আলু পটলের তরকারি এবং আমের চাটনি। শেষে ঠান্ডা পানীয়। রান্না মুখরোচক।
নির্বাচন কমিশন কোভিড কিট দিয়েছে এ বার। তাতে রয়েছে থার্মাল গান, পিপিই কিট, গ্লাভস, ফেসশিল্ড, হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ার এবং মাস্ক। প্রত্যেক নির্বাচকের জন্য গ্লাভস বরাদ্দ। যাঁরা মাস্কহীন হয়ে ভোট দিতে আসবেন, তাঁদের জন্য শুধু মাস্ক। আশাকর্মী নিযুক্ত রয়েছেন এই কাজ দেখভালের জন্য। প্রত্যেক ভোটকর্মীর জন্য আলাদা স্যানিটাইজ়ারের ব্যবস্থা ছিল। বর্জ্য ফেলতে দুটো বড় বড় ড্রামের বন্দোবস্ত ছিল।
ভোটের দিনে নির্বিঘ্নে রাতে বাড়ি ফেরা সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার। রামগঙ্গার ডিসি আরসিতে মালপত্র জমা দিয়েছি আটটায়। সঙ্গে সঙ্গে ডায়মন্ডহারবারগামী বাস। ওখান থেকে মিলন মোড় স্টপে নামার আগে এক শিক্ষক-বন্ধু তাঁর মোটরবাইক নিয়ে হাজির। বাড়ি ফিরলাম পৌনে দশটায়। গণতন্ত্রের উৎসবে শামিল হতে পেরে গর্বিত।
নিখিলকুমার সামন্ত
রায়দিঘি, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
এই ১৪৪ ধারা?
১ এপ্রিল পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় দফার ভোটে নন্দীগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রে ১৪৪ ধারা মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টা থেকে শুক্রবার বিকেল অবধি বলবৎ করা হয়। এই ধারা অনুসারে চার জনের অধিক লোকের নিরস্ত্র অবস্থায় চলাফেরা বা জমায়েত নিষিদ্ধ। তা নিশ্চিত করার জন্য দু’হাজার পুলিশের উপস্থিত থাকার কথা। কিন্তু চূড়ান্ত পরিতাপের বিষয়, বুধবার ২০-২১ জনের দল অস্ত্রসমেত দাপাদাপি করছিল, ভোটারদের ভয় দেখিয়েছিল। ফলে যে উদ্দেশ্যে ১৪৪ ধারা প্রযুক্ত হল, তা সিদ্ধ হয়নি। টিভির খবর দেখে ওই নন্দীগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রের ভোটদান বাতিল ঘোষণা করতে কী অসুবিধে ছিল? পুলিশরা টহল দেওয়ার বদলে কি ঘুমোচ্ছিল? তা ছাড়া যে বিপুল সংখ্যক ‘অবজ়ার্ভার’ ছিলেন, তাঁরাও কি চোখ বন্ধ করে থাকলেন? নির্বাচন কমিশনার কি এক বারও ভাবলেন না, আইন ঠিকমতো প্রয়োগ হচ্ছে কি না? যে মানুষেরা প্রাণ হারালেন, তাঁদের পরিবারের দায়িত্ব কে নেবেন? এটা কি আমাদের সামাজিক দায়বদ্ধতার মধ্যে পড়ে না?
আরও কত বছর অপেক্ষায় থাকতে হবে এমন ভোটের জন্য, যেখানে ভোটদান সত্যিই গণতন্ত্রের এক মহান উৎসব হয়ে উঠবে, ভীতি প্রদর্শন, খুনখারাবি থাকবে না?
তপন কুমার বসু
বি গার্ডেন, হাওড়া
ভাড়াটে
ভোটচিত্রে বঙ্গবাসী মোটামুটি ওয়াকিবহাল। তাই প্রতি বার ভোটের আগে, অথবা ভোট চলাকালীন যে সব ঘটনা ঘটে, তাই নিয়ে এত আলাপ-আলোচনার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। ভোটের আগে বাহিনী মোতায়েন ও তাদের কার্যপ্রণালী, দায়িত্ব ইত্যাদি নিয়ে অনেক আগে থেকেই গালভরা প্রচার চলে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে এর প্রতিফলন অতি সামান্যই ঘটে, এবং রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের ক্ষমতা প্রয়োগ করে কিছু ভাড়াটে সৈনিক এনে ভোট পরিচালনা করে। এই ভাড়াটে সৈনিকদের কোনও নীতি নেই। যখন যে দল বিরিয়ানি, মদ বা অর্থের প্রলোভন দেখায়, তখন তাদের হয়েই নিজেদের নিয়োজিত করে ও বুথ দখল, ভোট দিতে না দেওয়া ইত্যাদি খুব নিষ্ঠার সঙ্গে সাঙ্গ করে যায়। এই পরম্পরা চলে আসছে বছরের পর বছর। অবিলম্বে এই প্রক্রিয়া বন্ধ করা দরকার। নতুবা এত আলোচনা, অকারণ মৃত্যু কোনও মতেই আটকানো সম্ভব নয়।
সুব্রত সেনগুপ্ত
কলকাতা-১০৪
দফারফা
এ বারের নির্বাচনে প্রথম দফা এবং দ্বিতীয় দফাতে পরিষ্কার হয়েছে, কী ভাবে গণতন্ত্রের দফারফা করা হচ্ছে। তা হলে কি পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় বাহিনী শুধুই রুট মার্চ করছে? এলাকা নিয়ন্ত্রণে আনছে না? এত বিধিব্যবস্থা থাকতেও এমনটা ঘটছে, তা কি ব্যবস্থাপনাতে গলদের জন্য, না কি যাঁরা সমগ্র ব্যবস্থাপনাকে কার্যকর করেন তাঁদের সদিচ্ছার অভাবে? যদি ব্যবস্থাপনাই দায়ী হয়, তা হলে অন্য রাজ্যে ভোটে তো এত অশান্তির খবর শোনা যায় না। দফাও এত বেশি হয় না। এ রাজ্যেই কেন ব্যবস্থাপকরা রাজনৈতিক দলগুলির শক্তির সঙ্গে পেরে উঠেন না?
যাঁরা অন্যায় ভাবে ভোটে জেতেন, তাঁরাও তো সারা জীবন গ্লানি বয়ে নিয়ে বেড়ান। যদি শান্তিপূর্ণ ভোট হয়, তা হলে যিনিই ভোটে জিতুন, জয়টা গণতন্ত্রের হবে, এবং সারা জীবন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা মাথা উঁচু করে থাকবেন। তাঁদের দলের গৌরব বাড়বে। যাঁরা এ বাংলায় রাজনীতি করেন, তাঁরাই বা বাংলার গৌরবকে নষ্ট হতে দেবেন কেন?
সনাতন পাল
বালুরঘাট, দক্ষিণ দিনাজপুর
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy