প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের মতো অর্থনীতিবিদকে পরামর্শ দেন সনিয়া গান্ধী। ফাইল ছবি।
‘কে ভাই, কে দুশমন’ (২-৪) শীর্ষক প্রবন্ধের জন্য অমিতাভ গুপ্তকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলি, তাঁর প্রবন্ধ নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা প্রয়োজন। উদারবাদী রাজনীতি ক্রমশ এলিটদের রাজনীতি হয়ে উঠেছে কেন, সে বিষয়ে বলতে হয়, এই পথ কংগ্রেসই সুগম করেছে। স্বাধীনতা-উত্তর কালে এমন অজস্র উদাহরণ পাওয়া যাবে, যেখানে তথাকথিত উচ্চশিক্ষিত কংগ্রেস নেতারা একাধারে স্বঘোষিত ‘এলিট’ এবং সেই সময়কার উদারবাদী। ইন্দিরা গান্ধী এই রাজনীতিকদের জাতীয় ইতিহাস পড়তে বলতেন। জওহরলাল নেহরু জেলখানায় বসে মেয়েকে ইতিহাস নিয়ে লিখেছিলেন। এই স্বঘোষিত এলিটদের সে বালাই নেই। কংগ্রেস থেকে যে সকল শাখা বিচ্যুত হয়ে পরবর্তী কালে নতুন দল তৈরি হয়েছে, সেগুলো এরই উদাহরণ। সোভিয়েট যখন ভাঙেনি, তখনই সংবিধানের অলিগলিতে অবাধে বিচরণ শুরু হয়েছিল, অচিরেই এমন রাজনীতিকদের দাপাদাপি দেশ জুড়ে শুরু হয়ে গেল। মধ্যমেধার আস্ফালন কেমন, তার সর্বোচ্চ উদাহরণ কংগ্রেসেই পাওয়া যায়। সেখানে দেশের আর্থিক শ্রীবৃদ্ধি কেমন করে হবে, তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের মতো অর্থনীতিবিদকে পরামর্শ দেন সনিয়া গান্ধী (ছবি)। এমনই তো রাজনৈতিক এলিট!
দ্বিতীয় ধাপে দেখা যায়, বিশ্বের অর্থনীতির পালে যখন জোর হাওয়া, তখন দলে এসে জোটে ভাড়াটে মেধা, যাদের কাজই হল এমন এক ‘কর্পোরেট ম্যানেজমেন্ট’ ব্যবস্থা চালু করা, যাতে ভোটারদের মগজ এদের কব্জায় চলে আসে। যে দলের সঙ্গে এরা অর্থের বিনিময়ে নিযুক্ত হয়, সে দলের কোনও ইস্তাহার বা ঘোষিত কর্মসূচি যদি না-ও থাকে, তাকেও এই ব্যবস্থা নির্বাচনে জিতিয়ে আনতে পারে। এই তো মেধাতন্ত্র নামক ‘মস্তিষ্ক প্রক্ষালন যন্ত্র’, একে যে ভাড়া করে, ভোট তার দখলে যায়!
যে মেধাতন্ত্রের কথা লেখক বলছেন, সে কাকের গায়ে ময়ূরের পালক। ‘হেরে যাওয়া মানুষের বিরুদ্ধ-শক্তি’র তত্ত্বটি ইউটোপিয়ান তত্ত্ব কি না, তা ভাবার বিষয় বইকি!
বিমল জানা, বেলদা, পশ্চিম মেদিনীপুর
কেন এই কাব্য?
পশ্চিমবঙ্গের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত পাঠ্যসূচিতে (সাম্মানিক ও জেনারেল) ২০১৭-১৮ সালের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে অম্বিকাদত্ত ব্যাসের রচিত শিবরাজবিজয় গদ্যকাব্যের প্রথম পরিচ্ছেদ। শিবরাজ মানে শিবাজি। যবন (মুসলমান) রাজত্বে শিবাজির উত্থান এবং বিজয়কে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে প্রশংসাই এই সাহিত্যখণ্ডের প্রতিপাদ্য।
বলে রাখা ভাল, ধ্রুপদী সংস্কৃতে ‘যবন’ বলতে প্রধানত গ্রিকদের বোঝায়, অনেক সময় বোঝায় উত্তর-পূর্ব সীমান্তের জাতিগুলোকে। মুসলমান অর্থে ‘যবন’ শব্দের প্রয়োগ অর্বাচীন। পাঠ্য অংশের কাহিনি সংক্ষেপ: সাত বছরের একটি ব্রাহ্মণকন্যাকে রূপের লোভে এক মুসলমান যুবক অপহরণ করে। পথে ভালুক তাড়া করায় সে মেয়েটিকে ফেলে পালায়। একটি ব্রহ্মচর্যাশ্রমের ছাত্রেরা মেয়েটিকে উদ্ধার করে নিজেদের কাছে রাখে। এর মধ্যে প্রাচীন কালের এক যোগীর সমাধি ভাঙল। আশ্রমের আচার্য তাঁকে জানালেন, ভারতে ম্লেচ্ছগণের দ্বারা গোহত্যা হচ্ছে, বেদ ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে, সতীদের পতিতা করা হচ্ছে, ইত্যাদি। গজনির সুলতান মামুদের আক্রমণ, কুতবউদ্দিন থেকে ঔরঙ্গজেব পর্যন্ত পুরো শাসনব্যবস্থাই ভারতের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। বলা হল, দানবেরা ভারতীয়দের নির্যাতন করছে, শুধু আকবর শাহ ভারতের গোপন শত্রু হলেও শান্তিপ্রিয় এবং বিদ্বৎপ্রিয়! দক্ষিণ ভারতে ‘শিববীর’ (শিবাজি) ভারতবর্ষের আশ্রয়। এর পর যোগীর আশীর্বাদে ও গুরুর অনুপ্রেরণায় আশ্রমের এক ছাত্র সেই অপহরণকারী মুসলমান যুবকের মুণ্ডচ্ছেদ করল। গুরু আনন্দিত হলেন।
ইউজিসির প্রস্তাবিত পাঠ্যসূচিতে এই শিবরাজবিজয় নেই। বহু বিশ্ববিদ্যালয় একে পাঠ্যসূচিতে রাখেনি। অথচ, একে স্থান দিতে গিয়ে বাদ পড়েছে ধ্রুপদী এবং সুপাঠ্য টেক্সট। শিবরাজবিজয়-এর এত কদর কেন? এর ভাব কত উচ্চ পর্যায়ের তা তো দেখাই যাচ্ছে। শব্দ নির্বাচন এবং বাচনভঙ্গির বিচারে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচির অনুপযুক্তই বলা চলে। মুসলিম-বিদ্বেষ দেখাতে গিয়ে সাত বছরের মেয়েকে রূপের লোভে অপহরণের মতো বিষয় পাঠ্যে থাকা কতটা সঙ্গত, সেটাও ভাবা দরকার।
পরন্তপ ঘোষ, কলকাতা-২৭
রোমাঞ্চের যাত্রা
অরিন্দম ঘোষালের ‘কলকাতায় গঙ্গার নীচে নির্মিত প্রথম সুড়ঙ্গপথ’ (রবিবাসরীয়, ২৩-৪) লেখাটি অনবদ্য। সুড়ঙ্গটি নিয়ে আমার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থেকে জানাই, আমি যখন সাদার্ন জেনারেটিং স্টেশনে-এ ইঞ্জিনিয়ার ছিলাম, ওই সুড়ঙ্গপথটির দেখভাল আমাকে করতে হত। সপ্তাহে দু’দিন লিফ্ট-এ নেমে দেখতে হত টানেলের অবস্থা। ওখানে ছোট ছোট পাম্প আছে, যা চুইয়ে পড়া জলকে বার করে দেয়। পাম্পগুলো ঠিকমতো চলছে কি না, আলোগুলো জ্বলছে কি না, এ সবই দেখতে হত। গঙ্গার প্রায় সাতাশ মিটার নীচে ছ’ফুট উচ্চতার পর পর রিং জোড়া লাগিয়ে তৈরি ওই টানেল ছ’শো গজ লম্বা। রিং-এর উপরের দিকে মোটা মোটা কেব্ল চলে গিয়েছে মেটিয়াবুরুজ থেকে শিবপুর। সুড়ঙ্গপথে মনোরম ঠান্ডা হাওয়া বহমান। প্রায় শত বৎসর প্রাচীন ওই নিঃসীম শূন্যতার মধ্যে নামলে রোমাঞ্চ হত।
অরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়, গড়িয়া, কলকাতা
সেই পুকুর
সনৎ ঘোষের ‘স্নানের ঘাট’ (সম্পাদক সমীপেষু, ৬-৪) শীর্ষক চিঠিটি আজ থেকে ৩০-৩৫ বছর আগে ছেলেবেলার স্মৃতি উস্কে দিল। তখন পুকুরের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। কিন্তু গত বছর অক্টোবর মাসে আমার শহর বেলদা (পশ্চিম মেদিনীপুর) গিয়ে দেখলাম, ইলেকট্রিক অফিসের পাশে যে বিশাল ও গভীর পুকুরে পাড়ার লোক স্নান করতেন, কাপড় কাচতেন, আমরা ছোটরা সাঁতার কাটতাম, আর গ্রীষ্মকালে পুকুরপাড়ের বিশাল আমগাছের আম খেতাম, তা বহুতল বাড়ি আর গাছপালাবেষ্টিত এক ছোট্ট পানাপুকুর তথা আবর্জনা ফেলার জায়গায় পরিণত হয়েছে। বেলদা থেকে পাঁচ কিমি পশ্চিমে আমার গ্রাম ধলবেলুনেও যে বিরাট পুকুর আমাদের ছেলেবেলার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ ছিল, তা-ও আজ এক ছোট্ট পানাপুকুর। ওই গ্রামেরই অন্য দিকে আমার ঠাকুরদার পুরনো ভিটেয় যে বিরাট পুকুর ছিল ও অন্য আর এক দিকে যে বিশাল গুইখাঁর পুকুর ছিল, তাও আজ পরিত্যক্ত।
২০০৪ সালে পিএইচ ডি-র ক্ষেত্র সমীক্ষা করতে গিয়েও দেখেছি সুন্দরবনের অনেকে, বিশেষ করে পুরনো দিনের মানুষ, পুকুরের জলে রান্না করতেন। ছোটবেলায় দেখতাম, পুকুরের জল দিয়ে ভাত-তরকারি রান্না হত। চান করা, কাপড় কাচা, রান্না করা ইত্যাদি ছাড়াও পুকুরের জলে কৃষিকাজ ও সেচের কাজও হত। নলকূপ ব্যবহার শুরুর পরেও পুকুরের গুরুত্ব ছিল। আজ যে ক’টি পুকুর দেখা যায়, তার প্রায় সবই উন্নত পদ্ধতিতে মাছ চাষের জন্য। যুগের সঙ্গে পুকুরের প্রয়োজনীয়তাও ফুরিয়েছে।
এখন বিদ্যুৎচালিত পাম্পের সাহায্যে ভূগর্ভস্থ জল উত্তোলন করে কৃষিকাজ থেকে গৃহকাজ— সব হচ্ছে। ঘরে-ঘরে টুলু পাম্প। কৃষিকাজে কীটনাশক ব্যবহারের ফলে জলদূষণও মানুষকে পুকুর ব্যবহারে বিমুখ করেছে। গ্রীষ্মকালে যখন জলস্তর অনেক নীচে নেমে যায়, টুলু পাম্পেও জল ওঠে না। আর ঝড়বাদলে বিদ্যুৎ না থাকলে যখন টুলু পাম্প চলে না, তখন ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে জলের জন্য হাহাকার করে। গ্রাম থেকে শহর একই অবস্থা। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতি এক দিকে আনে স্বাচ্ছন্দ্য, অন্য দিকে আনে দুঃখ ও দুর্দশা। পুকুরের অবলুপ্তি আগামী দিনের সেই দুর্দশার পথই যেন প্রশস্ত করে তুলছে।
সমরেশকুমার দাস, জালুকি, নাগাল্যান্ড
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy