প্রায় এক বছর ধরে চলা কৃষক আন্দোলনের জয় হল। ভারতে স্বাধীনতার পর এত বড় কৃষক আন্দোলনে জয়, গোটা বিশ্বের কাছে এক ঐতিহাসিক ঘটনা। চাষিদের একতা নেই, সঙ্ঘবদ্ধ হতে জানেন না, লেখাপড়া জানেন না, ওঁদের আবার আন্দোলন— এ সব বদ্ধমূল ধারণাকে চূর্ণবিচূর্ণ করে দিলেন চাষিরা। ন্যায়সঙ্গত দাবি নিয়ে দৃঢ় ও অনমনীয় মনোভাব, প্রবল বাধা অতিক্রম করার সাহস, ও সংগঠিত শক্তি জন্ম দিতে পারে এমন আন্দোলনের, যা জনবিরোধী কালাকানুনকে বাতিল করতে পারে। ‘প্রতিবাদ করে লাভ নেই, লড়ে কিছু হবে না, যা আইন হয়ে গিয়েছে তার আর পরিবর্তন করা যাবে না, এ সব করে শুধু সময় নষ্ট করা’— এ রকম ভাবনা নিয়ে যাঁরা চলতেন, তাঁদের এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিতে হবে। এক বছরে সাতশো কৃষকের প্রাণ গিয়েছে, মিথ্যা মামলা অনেক চাষির উপর চেপেছে, কুৎসা ও অপপ্রচার চালিয়েছে, ‘আন্দোলনজীবী’, ‘সন্ত্রাসবাদী’, ‘পাকিস্তানি’, ‘খলিস্তানি’, ‘মাওবাদী’— কত অপবাদে ভূষিত করা হয়েছে ওই কৃষক আন্দোলনের নেতা ও কর্মীদের। কাঁদানে গ্যাস, জলকামান, লাঠিচার্জ, রাস্তায় ফেলে মার, বোল্ডার দেওয়া, খাল কেটে দেওয়া, কাঁটা জলুই পোঁতা, মিছিলে মন্ত্রীর ছেলের গাড়ি চালিয়ে দেওয়া, দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা, মেয়েদের হয়রান করার চেষ্টা— কিন্তু সব চক্রান্ত ফাঁস হয়ে গিয়েছে। আন্দোলন তোলার জন্য হুমকি দেওয়া, পেটোয়া কমিটি গঠন করা, কৃষি আইনের পক্ষে স্বাক্ষর জোগাড় করা, শীর্ষ আদালতে মামলা করা, সব রকম চেষ্টা করেও সফল হতে পারেনি কেন্দ্রের শাসক দল। প্রবল শীত, তীব্র দাবদাহ, অতিবৃষ্টি, বজ্রপাত, তাঁবুগুলোয় আগুন, সব কিছু উপেক্ষা করে আজও আন্দোলনের ময়দানে অন্নদাতারা আছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্বয়ং ক্ষমা চাইলেন, কৃষি আইন তুলে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবুও কৃষকরা উঠছেন না। যত দিন না আইন প্রত্যাহার করা হচ্ছে ও এমএসপি বাধ্যতামূলক করার আইন হচ্ছে, বিদ্যুৎ বিল ২০২০ প্রত্যাহার করা হচ্ছে, তত দিন পর্যন্ত কৃষক আন্দোলন চলবে। এ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। শ্রমিকরাও এর পাশে রয়েছেন। জয় অনিবার্য।
বিদ্যুৎ সীট
জগদল্লা, বাঁকুড়া
মোদীর কৌশল
‘কিন্তু এখানে থেমো না’ (২০-১১) শীর্ষক উত্তর সম্পাদকীয়টির বিশ্লেষণ যথার্থ। কর্পোরেট স্বার্থবাহী তিন কৃষি আইনের বিরোধিতায় গড়ে-ওঠা কৃষক আন্দোলনকে মোদী সরকার পাত্তা দিতে চায়নি। ‘সংযুক্ত কৃষক মোর্চা’-কে কখনও ‘খলিস্তানি’, কখনও ‘মদ্যপদের জমায়েত’ বলে অভিহিত করেছে। কিন্তু পুলিশের লাঠিও চাষিদের দমাতে পারেনি। রোদ-জল-ঝড় উপেক্ষা করে কৃষকরা সত্যাগ্রহের পরীক্ষা দিয়েছেন, প্রায় ৭০০ জন কৃষক বা তাঁদের পরিবারের সদস্য গত এক বছরে শহিদ হয়েছেন। লখিমপুরে গাড়ি পিষে কৃষক নিধনের ঘটনা একেবারে টাটকা। চাষিদের সমর্থনে দেশব্যাপী দু’টি হরতাল হয়েছে। স্বাধীন ভারত এত বড় মাপের আন্দোলন দেখেনি।
হতে পারে উত্তরপ্রদেশ পঞ্চায়েত নির্বাচনে অধিকাংশ আসনে বিজেপি প্রার্থীদের পরাজয় বা সাম্প্রতিক উপনির্বাচনগুলিতে খারাপ ফল দেখে বিজেপির ‘থিঙ্ক ট্যাঙ্ক’ সিঁদুরে মেঘ দেখছে। তাই আসন্ন পাঁচ রাজ্যের উপনির্বাচনে ক্ষতি সামাল দেওয়ার আশায় মোদীর এই কৌশলগত পশ্চাদপসরণ। তবু বলতেই হবে, জাতপাতের অঙ্কের বাইরে কৃষকদের একত্রিত শক্তিকে ‘মোদী অ্যান্ড কোং’ বাস্তবিক ভয় পেয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসবাণীকে স্বাগত জানিয়েও সংযুক্ত কৃষক মোর্চা সংসদে বিল প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী পদের প্রতি এই আস্থাহীনতা সংসদীয় গণতন্ত্রের পক্ষে অশনিসঙ্কেত। ২০১৬ সালে ভূমি সংস্কার বিলের ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের অভিজ্ঞতা থেকে হয়তো অন্নদাতাদের এই সিদ্ধান্ত। যে অতিকায় কর্পোরেট উদ্যোগের স্বার্থে নয়া কৃষি আইন চালু করার এই প্রাণপণ চেষ্টা, তা দু’পা এগোনোর লক্ষ্যেই রাষ্ট্রকে এক পা পিছোতে দিয়েছে— প্রবন্ধকারের এই মন্তব্য ‘ক্ষমা প্রার্থনা’ পর্বের সঠিক বিবরণ।
সরিৎশেখর দাস
ব্যারাকপুর, উত্তর ২৪ পরগনা
অন্য নেতৃত্ব
অবশেষে কৃষকদের দাবি মেনে কেন্দ্র কৃষি আইন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে। স্বাধীন ভারতের এই ঐতিহাসিক কৃষক আন্দোলন রাষ্ট্রের বিপ্রতীপে জনগণের নিজস্ব কণ্ঠকে প্রতিষ্ঠা করেছে। ক্ষমতার অলিন্দে বিরাজমান অসংখ্য নেতাদের উল্টো দিকে কৃষকদের নিজস্ব নেতৃত্বকে তুলে এনেছে।
এখন শুধু ‘ক্ষমা প্রার্থনা’ নয়, সরকারের উচিত সংসদে বিল পাশ করে আইন বাতিল করা, এবং শহিদদের নিকট আত্মীয়দের এক জনের স্থায়ী চাকরির ব্যবস্থা করা।
প্রদীপ সেনগুপ্ত
ব্যান্ডেল, হুগলি
মাঠে ধান কিনুন
‘শুরু হয়নি সরকারি ধান কেনা, মাঠে ফড়েরাই’ (২২-১১) প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে যে, যদিও খাতায়-কলমে সরকারি ভাবে ধান কেনার প্রক্রিয়া ১ নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছে, কিন্তু তা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। কুইন্টাল প্রতি ধানের সহায়ক মূল্য ধার্য হয়েছে ১৯৪০-১৯৬০ টাকা। কিন্তু চাষিরা কুইন্টাল পিছু ১১০০-১৫০০ টাকা দরে ফড়েদের কাছে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। চাষিদের প্রতি সরকারের এই ঔদাসীন্য খুব দুঃখের বিষয়। ফড়েদের স্বার্থরক্ষার তাগিদে প্রশাসনের সদিচ্ছার অভাবও থাকতে পারে। সরকার ‘দুয়ারে রেশন’ প্রকল্প খুব ঢাকঢোল পিটিয়ে চালু করছে। সরকার ‘মাঠে ধান কেনা’ প্রকল্প চালু করলে প্রান্তিক ও দরিদ্র চাষিদের খুব উপকার হত। কুইন্টাল প্রতি ৫০০-৯০০ টাকা কম দামে ফড়েদের কাছে ধান বিক্রি করে প্রবল ক্ষতিগ্রস্ত হতে হত না চাষিদের। দুয়ারে রেশন প্রকল্পের চাইতে ‘মাঠে ধান কেনা’ প্রকল্পের গুরুত্ব আরও বেশি।
জহর সাহা
কলকাতা-৫৫
দূষণ কমাতে
দূষণ নিয়ে এই পত্রিকায় প্রকাশিত ‘দুয়ারে দূষণ’ শীর্ষক ধারাবাহিক রচনাগুলি আমাদের ভীষণ ভাবে চিন্তিত করেছে! শুধু তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দূষণই এর জন্য দায়ী নয়। এ ছাড়াও বহু রকম দূষণের মুখোমুখি হচ্ছে মানুষ এবং পরিবেশও ভয়ঙ্কর বিপর্যস্ত।
গোদের উপর বিষফোড়ার মতন নতুন করে আমদানি হয়েছে ফসলের অবশেষ পোড়ানো! এর মতো জঘন্য কাণ্ড আমাদের পশ্চিমবঙ্গেও চালু হওয়ায় পরিবেশ সচেতন মানুষরা খুবই চিন্তিত। খেতে-খামারে এই ধরনের নাড়া পোড়ানোর প্রচলন এই রাজ্যে আগে ছিল না। মূলত গৃহপালিত পশুর খাদ্য হিসাবেই তার ব্যাপক ব্যবহার ছিল। কিন্তু ইদানীং খুব সহজেই আগুন লাগিয়ে তা পোড়ানোর ফলে পরিবেশের ভয়াবহ ক্ষতি হচ্ছে। এই দূষণে ইতিমধ্যেই দিল্লি, পঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ অনেক এগিয়ে আছে! এখন পশ্চিমবঙ্গ প্রায় সমান তালে তাদের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে!
এই ব্যাপারে আমার একটি প্রস্তাব আছে। ফসল তোলার জন্য খেতের মালিক যা করণীয় করুন। কিন্তু অবশেষ অংশকে জমিতেই রেখে তাকে পচানোর জন্য প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে মাটি ঢাকা দিয়ে দিলেই তা বিনষ্ট হবে। এখন আবার এক ধরনের রাসায়নিক বেরিয়েছে। তা যদি প্রয়োগ করা হয়, তা হলে খুব সহজেই ফসলের অবশেষ বিনষ্ট করা সম্ভব। এবং একশো দিনের কাজের শ্রমিকদের দিয়ে এই কাজটি অনায়াসেই করানো যায়। শ্রমিকদের কাজ পাওয়ার দিবসও সৃষ্টি হবে। এর জন্য, গ্রামের পঞ্চায়েত সব দিক দিয়েই সাহায্য করতে পারে। সরকার যদি এই প্রস্তাবটিতে গুরুত্ব দেয়, তবে অচিরেই ফসল-অবশেষ থেকে ভয়াবহ পরিবেশ দূষণ বন্ধ হতে পারে।
বিবেকানন্দ চৌধুরী
কাটোয়া, পূর্ব বর্ধমান
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy