পুলক রায় চৌধুরী তাঁর ‘বিজ্ঞান নিয়ে পড়ছে ক’জন’ (১৫-৯) শীর্ষক প্রবন্ধে এ রাজ্যে বিজ্ঞান নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের অনাগ্রহের ছবি তুলে ধরেছেন। এই সূত্রে কিছু কথা বলতে চাই। কয়েক বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গে দেখা যাচ্ছে, প্রতি বছর পাশের হার বাড়লেও বিজ্ঞান বিভাগে পড়া ছাত্রসংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে কমছে। ২০১৮ এবং ২০১৯ সালের উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, গণিতে ২০১৮-তে ‘এএ’ গ্রেড পাওয়া ছাত্রসংখ্যা ছিল ৩০,৬১৪ জন, যা ২০১৯-এ কমে দাঁড়িয়েছে ২২,৬৫৩ জন। একই ভাবে পদার্থবিদ্যায় ২৪,৬৮৫ জন থেকে কমে ১১,৩০৯ জন এবং জীবনবিজ্ঞানে ৪০,২৯৭ জন থেকে কমে ২১,৬৮৯ জন। এ বছর মাধ্যমিক পাশ করে উচ্চ মাধ্যমিকে বাণিজ্য বিভাগে পড়ুয়া ভর্তির সংখ্যা বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তির সংখ্যার থেকে অনেক বেশি। এই প্রবণতার পিছনে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ আছে। প্রথমত, বিগত দু’দশকে শিক্ষার অভিমুখ জ্ঞানার্জনের পথ থেকে সরতে সরতে অর্থোপার্জনের দিকে ঘুরে গিয়েছে। একটা সময় বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করা মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের স্কুল, কলেজে চাকরি পাকা ছিল। সময়ের পরিবর্তন, সরকার বদলের সঙ্গে দেখা গেল, শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়াটাই বন্ধ হয়ে গেল। এতে এক দিকে যেমন স্কুলে শিক্ষকের অভাব ঘটল, অন্য দিকে বেকার সমস্যাও তৈরি হল। অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা ভেবে বিজ্ঞান ছেড়ে বাণিজ্য বা বিভিন্ন টেকনিক্যাল কোর্স বেছে নিতে বাধ্য হল মোটামুটি একটা উপার্জনের আশায়। দ্বিতীয়ত, যে গ্রামের স্কুলে পড়াশোনা করে এক সময় মণি ভৌমিকের মতো বিজ্ঞানী বিশ্বখ্যাত হলেন, সেই সব স্কুল আজ বিজ্ঞান-শিক্ষকের অভাবে ধুঁকছে। অথচ, শহরের স্কুলগুলিতে শিক্ষকের অভাব নেই। শিক্ষা দফতর বিভিন্ন স্কুলের ‘সারপ্লাস টিচার’-দের অন্য স্কুলে সরিয়ে দেওয়ার কথা বললেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্কুলগুলিতে বেশি করে বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসার ঘটানো দরকার। সেখানে বহু মানুষ কুসংস্কারে ডুবে আছেন। স্কুলেই যদি বিজ্ঞান শিক্ষা ঠিকমতো না হয়, তা হলে সাধারণ মানুষের কাছে যুক্তির আলো কী ভাবে পৌঁছবে?
শ্রেণিকক্ষে মানচিত্র, ভূ-গোলক, অণুবীক্ষণ যন্ত্র, মডেল, চার্ট ব্যবহার নিয়মিত করতে হবে। এ জন্য সরকার স্কুলগুলিকে যে টাকা দেয়, তা যথেষ্ট নয়। শিক্ষকেরও কাজ হবে বিজ্ঞানচর্চাকে পাঠ্যপুস্তকের একঘেয়েমি থেকে বার করে আনা। বছরে অন্তত এক বার ছাত্রছাত্রীদের কলকাতার জাদুঘর, সায়েন্স সিটি, তারামণ্ডলে নিয়ে যেতে হবে। তার জন্য আলাদা করে টাকার বরাদ্দ করতে হবে। এতে পড়ুয়ারা বিজ্ঞান পড়বে আনন্দে।
অরুণ মালাকার
কলকাতা-১০৩
চাই কর্মসংস্থান
বর্তমানে এই রাজ্যের ভাল ছেলেমেয়েরাও বিজ্ঞান বিষয় নিয়ে পড়তে চায় না। তার কারণ প্রসঙ্গে পাঁচটি বিষয় তুলে ধরতে চাই। ১) কলকাতা ও জেলা শহরের স্কুলগুলোর উপর উচ্চ মাধ্যমিকে ছাত্রছাত্রীদের বিজ্ঞান পড়ানোর জন্য সরকার ও শিক্ষা দফতরের বিশেষ গুরুত্ব দানের অভাব এবং গ্রামবাংলার উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলগুলিতে বিজ্ঞান বিভাগে পড়ানোর ব্যাপারে সরকারি উদাসীনতার কারণে আজ গ্রামের মেধাবী ছেলেমেয়েরাও বিজ্ঞান নিয়ে পড়ার ব্যাপারে বিমুখ হয়ে পড়েছে। ২) বিজ্ঞান শাখা পড়ানোর ব্যাপারে স্কুলগুলির পরিকাঠামো ভেঙে চৌচির হয়ে গিয়েছে। ৩) ২০১৪ সালে রাজ্য সরকারের শিক্ষক বদলির নীতির ফলে এবং দীর্ঘ দিন বিজ্ঞান বিভাগে নতুন শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী দিতে না পারায় অধিকাংশ উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান শাখাগুলি বন্ধ হতে চলেছে। ৪) মাধ্যমিক পাশ করার পর ছেলেমেয়েরা জেনে ফেলেছে, যে, পর্ষদের ঢালাও নম্বর দেওয়ার ফলে কলা বা বাণিজ্য বিভাগের প্রতি বিষয়ে ৯০-১০০ শতাংশ নম্বর সুনিশ্চিত। অযথা বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে যাবে কেন, যেখানে নম্বর পাওয়াটাই মূল উদ্দেশ্য?
৫) এই রাজ্যে এখন উচ্চ মাধ্যমিকের মূল্যায়নের উপর ভিত্তি করে বেশ কিছু খুচরো চাকরি বাজারে উড়ে বেড়াচ্ছে। সেখানে কলা বিভাগে বেশি নম্বর পাওয়া ছেলে ও মেয়েরা নার্স, আইসিডিএস, ডাকবিভাগে ঢুকে পড়ছে। কেউ আবার মোটা টাকা প্রণামী দিয়ে প্রাথমিক শিক্ষক পদে ঢুকে পড়ছে।
অন্য দিকে, বিজ্ঞান শাখায় যারা উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করছে, তারা ইঞ্জিনিয়ারিং, স্নাতক বা স্নাতকোত্তরের ডিগ্রি নিয়ে মেথর, ডোম, হাবিলদার, সুইপার এবং হাতি তাড়ানোর (বন দফতর) মতো চাকরি পাওয়ার জন্য হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ফলে, ভাল পড়ুয়ারাও বিজ্ঞান নিয়ে পড়ার ব্যাপারে হতাশ হয়ে পড়ছে। তাই আগামী দিনে সরকার যদি বিজ্ঞান নিয়ে পাশ করা ছেলেমেয়েদের উচ্চশিক্ষা লাভের পর কোনও কর্মসংস্থানের দিশা দেখাতে না পারে, তা হলে অদূর ভবিষ্যতে গ্রামবাংলার উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলগুলো থেকে বিজ্ঞান শাখাটির বিলুপ্তি ঘটবে।
তপনকুমার বিদ
বেগুনকোদর, পুরুলিয়া
মানবাধিকার পাঠ
‘ইঞ্জিনিয়ারিং পাঠ্যক্রমে রামায়ণ’ (১৪-৯) শীর্ষক প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে এই পত্র। সংবাদে প্রকাশ, মধ্যপ্রদেশের ইঞ্জিনিয়ারিং পাঠ্যক্রমে রামায়ণ, মহাভারত, রামচরিতমানস-এর মতো মহাকাব্যগুলি স্থান পেয়েছে। মধ্যপ্রদেশের উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী মোহন যাদব বলেছেন, পড়ুয়াদের দেশীয় গৌরবের ইতিহাস জানানোই এর মূল উদ্দেশ্য। অথচ, ভারতীয় সংস্কৃতিতে ছাত্রাবস্থাতেই এই মহাকাব্যগুলি কিঞ্চিৎ পড়ার অভিজ্ঞতা আমরা পাই। এর পরিবর্তে দেশের সকল শিক্ষার ক্ষেত্রেই ‘মানবাধিকার’ সংক্রান্ত বিষয়গুলি যদি গুরুত্ব সহকারে পড়ানো হয়, তা হলে সমাজে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলি সম্পর্কে দেশের যুবসমাজ যথেষ্ট সচেতন হয়ে উঠবে। দেশের পক্ষে সর্বার্থেই তা ভাল।
সঞ্জয় রায়
দানেশ শেখ লেন, হাওড়া
প্রশংসনীয়
‘গরিব ঘরের ছাত্রছাত্রীদের নিখরচায় পাঠ ৩৭ কেন্দ্রে’ (২০-৯) শীর্ষক খবরটি দেখে খুবই ভাল লাগল। শিক্ষা নিয়ে যখন ব্যবসা চলেছে এবং শিক্ষা যখন বাজারের পণ্য হয়ে গিয়েছে, ঠিক সেই সময়ে এ ধরনের সংবাদ আশা জাগায় ও ভরসা জোগায়। এখনও কিছু শিক্ষকের হৃদয়ে ছাত্রছাত্রীদের জন্য যে পরিসরটুকু আছে, সেটা প্রশংসনীয়। দীর্ঘ দু’বছরের মতো সময় ধরে যখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি বন্ধ আছে, বিশেষ করে আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকা পরিবারের সন্তানদের লেখাপড়া একেবারে শিকেয় উঠেছে, স্কুলছুটের সংখ্যা উত্তরোত্তর বেড়ে যাচ্ছে, তখন নিখিল বঙ্গ শিক্ষক সমিতির (এবিটিএ) উদ্যোগে এই পড়ুয়াদের বিনা পয়সায় কোচিং ক্লাস করানোর সিদ্ধান্তটিকে সাধুবাদ জানাই।
দিলীপ কুমার সেনগুপ্ত
কলকাতা-৫১
পান্তাবুড়ির গল্প
শৈশবে ‘পান্তাবুড়ির গল্প’ পড়েছিলাম। লিখেছিলেন উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী। গল্পে পান্তাচোরকে ধরার জন্য এক বুড়ি শিঙিমাছ, গোবর, বেল ও খুরের সাহায্য নেয়। শেষে চোর ধরা পড়ে।
পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের তৃতীয় শ্রেণির ‘পাতাবাহার’ বাংলা বইয়ে ‘পানতাবুড়ি’ গল্পটি আছে। কিন্তু এখানে লেখক হিসাবে নাম আছে যোগীন্দ্রনাথ সরকারের। এই গল্পটি হুবহু উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর ‘পান্তাবুড়ির গল্প’-এর মতোই। এখানেও পান্তাচোরকে
ধরার জন্য বুড়ি বিভিন্ন জিনিসের সাহায্য নেয়। তফাত সামান্য আছে। যেমন— এই গল্পে খুরের বদলে আছে ছুরি। আর অতিরিক্ত জিনিস হিসাবে আছে ছুঁচ আর কুমির। এগুলি ছাড়া বাকি গল্পটি একই রকম। একই গল্প, একই প্লট, একই থিম, কিন্তু লেখক আলাদা। বড় আশ্চর্য!
অচিন্ত্য সরকার
দেবীনগর, উত্তর দিনাজপুর
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy