ইদানীং একটু জোরে বৃষ্টি হলেই জলমগ্ন হয়ে পড়ছে শহর ও শহরতলির বিস্তীর্ণ অঞ্চল। শুধু রাস্তাঘাট বা গৃহস্থদের ঘরবাড়ি নয়, একটু ভারী বৃষ্টিতে জল থই থই করছে শহরের প্রথম সারির সরকারি ও নামী বেসরকারি হাসপাতালের ভিতরও। অসহায় রোগীরা বাধ্য হচ্ছেন হাঁটু সমান জলে দাঁড়িয়ে পরিষেবা নিতে। একটি সংবাদচিত্রে দেখা গেল খাস কলকাতার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের স্টোর বিভাগের ভিতরও জলে টইটম্বুর। ইতস্তত নোংরা জলে ভাসছে ওষুধের প্যাকেট, গজ, ব্যান্ডেজ। কর্মীরা গামবুট পরে সেই জমা জলের ভিতর কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। জলযন্ত্রণার এই সামগ্রিক চিত্রই প্রমাণ করে কলকাতা শহর ও শহরতলিতে নিকাশিব্যবস্থার হাল কতটা বেহাল। দীর্ঘ দিন যার জন্য নিদারুণ মূল্য দিতে হচ্ছে অসহায় নাগরিকদের। কয়েক বছর আগেও বৃষ্টি হওয়ার অব্যবহিত পরে জমা জল সরে যেত। ইদানীং তা আর হয় না। অথচ, পুরসভাগুলি এ ব্যাপারে আশ্চর্য রকম নির্বিকার।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে এক সাংবাদিক জলযন্ত্রণার প্রসঙ্গ তুলতেই মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বেশ খানিকটা উষ্মাভরেই বলে বসলেন, বৃষ্টির পরই জমা জলের ছবি তুলে দেখালে হবে না। চার-পাঁচ ঘণ্টার মধ্যেই জল নেমে যাচ্ছে। মাননীয় মন্ত্রীর এই উক্তি যে কতখানি অসার, তা ভুক্তভোগীরা টের পাচ্ছেন। চার-পাঁচ ঘণ্টা তো দূর অস্ত্, পরবর্তী দু’-তিন দিনেও ঘরের ভিতরের জমা জল সরছে না। সর্বত্র এক চিত্র।
সাফাই না গেয়ে পুরসভাগুলি যদি নিকাশিব্যবস্থা উন্নত করার লক্ষ্যে বিন্দুমাত্রও সচেষ্ট হয়, তা হলে শহর ও শহরতলির নাগরিকরা নিত্য নরকযন্ত্রণার হাত থেকে অন্তত কিছুটা মুক্তি পেতে পারেন।
সমীর কুমার ঘোষ
কলকাতা-৬৫
ঐতিহ্যপূর্ণ মেচা
ভারতীয় ডাক বিভাগের বিশেষ খামে ছাপা হয়েছে জয়নগরের মোয়ার ছবি ‘বিশেষ খামে মোয়া’ (১৬-৯)। এই কাজের জন্য ভারতীয় ডাকবিভাগকে অভিনন্দন জানাই। প্রায় একশো বছর আগে এই মোয়ার জন্ম। রাজ্যের বিভিন্ন গ্রামে-গঞ্জে-শহরে নিজস্ব ঘরানার মিষ্টান্ন তৈরি হয়। এবং বেশ জনপ্রিয়। বাঁকুড়ার একটি বর্ধিষ্ণু জনপদ বেলিয়াতোড়। এই গ্রামের ঐতিহ্য আর পরম্পরার সঙ্গে একাত্ম হয়ে রয়েছে ‘মেচা’ সন্দেশ। মেচার ইতিহাস দু’শো বছরের প্রাচীন। ভারতের আর কোথাও এই সন্দেশ মেলে না। দেশ-বিদেশেও এর কদর আছে। এই বেলিয়াতোড়েই জন্মেছিলেন প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী যামিনী রায়। তাঁর প্রিয় মিষ্টির মধ্যে ছিল এই মেচা সন্দেশ।
মেচা তৈরি করার নিয়ম হল, প্রথমে ডালের বেসনের গাঠিয়া তৈরি করা হয়। সেই গাঠিয়া গুঁড়ো করে চিনি আর ক্ষীর দিয়ে পাক দেওয়া হয়। ঠান্ডা হয়ে গেলে সঙ্গে মেশানো হয় দেশি গাওয়া ঘি, এলাচ। তার পর লাড্ডুর মতো করে পাকানো হয়। সেই লাড্ডু কড়া, মোটা চিনির রসে ডুবিয়ে নামিয়ে রাখা হয় শালপাতায়। ব্যস, তৈরি ‘মেচা’ সন্দেশ। কারিগররা দাবি করেন, বেলিয়াতোড়ই প্রথম দেখিয়েছিল কী ভাবে ছানার ব্যবহার না করেও মিষ্টান্ন প্রস্তুত করা যায়। তাই মেচা সন্দেশের জন্য জিআই ট্যাগ পাওয়ার দাবি রয়েছে স্থানীয় মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী ও কারিগরদের।
বিপদতারণ ধীবর
বেলিয়াতোড়, বাঁকুড়া
সোনায় মরচে
‘ছেলেখেলা’ (১৬-৯) শীর্ষক সম্পাদকীয় নিবন্ধটিতে যথাযথ এবং রাজ্যের তথা দেশের খেলাধুলার যথার্থ চিত্রায়ণ হয়েছে। দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুরের জাতীয় স্তরে বার বার সোনাজয়ী অ্যাথলিট রিঙ্কু বর্মন সুদূর সুরাতে গিয়ে এমব্রয়ডারির কাজ জুটিয়েছেন। মা আরতি বর্মন এ বাড়ি-ও বাড়ির কাজ করে দিন গুজরান করছেন। ২০০৯-এ অনূর্ধ্ব ১৬ বিভাগে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন অ্যাথলিটের উত্থান বা হারিয়ে যাওয়ার খবর জেলা বা রাজ্য ক্রীড়া দফতরের অজানা। শত শত ছেলেমেয়ে এ ভাবেই হারিয়ে যান খেলা থেকে, বহাল তবিয়তে থাকে রাজ্য বা দেশের ক্রীড়া দফতর। সদ্য টোকিয়ো অলিম্পিক ও প্যারালিম্পিক গেমস ২০২০-তে ভারত যে পদক জয়ের নিদর্শন রাখল, তাতে এটা প্রমাণিত যে আমাদের প্রতিভার অভাব নেই। অভাব অর্থের। কেন্দ্রীয় ক্রীড়া মন্ত্রক নাহয় টার্গেট অলিম্পিক পোডিয়াম ‘টপ’ চালু করে প্রতিশ্রুতিসম্পন্ন অ্যাথলিট ও সম্ভাবনাময় অন্যান্য খেলার খেলোয়াড়দের প্রস্তুতির আর্থিক প্যাকেজ চালু করেছে, এ রাজ্যে তেমন উদ্যোগ কোথায়! কত সম্ভাবনাময় খেলোয়াড় আধপেটা খেয়ে শ্রমজীবী জীবন নির্বাহ করেও জেলা বা রাজ্যস্তরে উঠে আসছেন। সরকারি নজরদারির অভাবে ভুল অনুশীলন করে বা প্রশিক্ষণ পেয়ে দ্রুত ফুরিয়ে যাওয়ার পথে হাঁটছেন। তাঁরা বয়স ভাঁড়িয়ে, বাড়তি ট্রেনিং লোড নিয়ে, যেন তেন প্রকারেণ সাফল্যের স্বাদ পেতে চান। লক্ষ্য, যদি একটা চাকরি হয়।
ক্রীড়া দফতরে কোনও আধিকারিককে দায়িত্ব দেওয়ার আগে দেখা দরকার, খেলাধুলোয় তাঁর কতটা আগ্রহ রয়েছে, খেলাধুলোর সামগ্রিক তথ্য বিষয়ে তিনি কতটা ওয়াকিবহাল। অনুশীলনের পরিকাঠামো ও খেলোয়াড়ের প্রয়োজন তাঁকে নখদর্পণে রাখতে হবে। বিভিন্ন স্তরের আধিকারিক, ক্রীড়াসংস্থা মাঠেঘাটে কাজ করবে, আদানপ্রদান, মূল্যায়ন নিরবচ্ছিন্ন চলতে থাকবে। বছরে এক বার গা-ঝাড়া দিয়ে বাজিমাত করা বা পদক হাসিল করার চেষ্টায় থাকলে সেই তিমিরেই থাকবে রাজ্য। ক্লাবস্তরে, বা ব্লক-মহকুমা-জেলা-রাজ্যস্তরে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় যে প্রতিযোগিতা হত বছর বছর, তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আসলে, সরকারি দৃষ্টি ঠিক করা জরুরি— কী করব, কী ভাবে করব, কাদের দায়িত্ব দেব। এটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। বছর বছর ক্লাবগুলোকে যে অনুদান দেওয়া হয়, তাতে ব্লক-ভিত্তিক খেলার অনুশীলন শিবির চালানো যায়। এতে এলাকায় খেলাধুলোর পরিবেশ তৈরি হবে।
সৌম্যেন্দ্র নাথ জানা
বোড়াল, কলকাতা
পাশে থাকুন
আন্তর্জাতিক ক্রীড়াক্ষেত্রে কোনও ক্রীড়াবিদ সফল হলে ফুলে, মালায়, সরকারি চাকরি, জমি আরও হরেক উপঢৌকনে ভরিয়ে দিই আমরা। কিন্তু প্যারালিম্পিক্সের মতো আন্তর্জাতিক ক্রীড়াক্ষেত্রে ভারতের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ক্রীড়াবিদরা সাফল্যের যে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তার পরেও সরকারি বা বেসরকারি সংস্থার তরফে তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর তেমন উদ্যোগ চোখে পড়ল না। প্যারালিম্পিক্সের অনেক সফল ক্রীড়াবিদকে পদক বিক্রি করতে হয়। ঠোঙা তৈরি করে, চায়ের দোকান করে, ঝুড়ি-চুবড়ি বুনে জীবনধারণ করতে হয়। কেউই তাঁদের খবর রাখেন না।
যাঁরা দেশের মুখ উজ্জ্বল করলেন, তাঁদের স্পোর্টস অথবা প্রতিবন্ধী কোটায় একটা চাকরি দিয়ে অন্তত বেঁচে থাকার ব্যবস্থাটা করুন।
অজয় দাস
ফুলেশ্বর, হাওড়া
ইতিহাসের হত্যা
‘জালিয়ানওয়ালায় মুছেছে ইতিহাসের চিহ্ন’ (৩১-৮) প্রসঙ্গে ভারতের স্বাধীন নাগরিক হিসাবে চরম পরিতাপ জানাই, কারণ এটি স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর শহিদদের প্রতি অবমাননার বহিঃপ্রকাশ। ইতিহাস কথা বলে। তার সত্যতা, বাস্তবতাকে নতুন করে প্রতিষ্ঠা করা যায় না। শহিদ কুয়ো ভেঙে ফেলা, লেজ়ার প্রযুক্তির প্রয়োগ, সৌন্দর্যায়ন— এগুলো দেশবাসীর কাছে খুব একটা সুখকর বিষয় নয়। পরিবর্তিত চেহারা, তা ঐতিহাসিক জালিয়ানওয়ালা বাগের প্রকৃত রূপ থেকে অনেক দূরে। প্রবেশের দ্বারে সরু গলিপথে জেনারেল ডায়ার তাঁর বাহিনী নিয়ে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে অগণিত মানুষকে হত্যা করেছিলেন। সেই ঘটনাস্থলে নানা রঙের আলো জ্বালালে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয় কি?
মানিক কুমার বসু
কলকাতা-৯০
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy