Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
grant

সম্পাদক সমীপেষু: অভাব কি টাকার?

শুধুমাত্র অনুদান কোনও জাতিকে স্বনির্ভর করতে পারে না, যদি না প্রশিক্ষিত, দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির উপর জোর দেওয়া হয়।

শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০২১ ০৫:৪০
Share: Save:

‘অনুদানের পরে’ (১৬-১১) সম্পাদকীয়তে তিনটি প্রশ্ন তোলা হয়েছে। তার প্রথমটি অনুদানের বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য অর্থ জোগান নিয়ে। আমাদের দেশে সত্যি কি অর্থের অভাব আছে? স্বাধীনতার পর কত শিল্পপতি হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যাঙ্ক ঋণ নিয়ে শোধ করেননি। সরকার তাঁদের টাকা আদায় করার কী ব্যবস্থা করেছে? সুইস ব্যাঙ্কে ভারতীয়দের আয়-বহির্ভূত টাকা নিয়ে কতই তো চর্চা হল। ফল হল অশ্বডিম্ব। আমাদের দেশের লোকসভা, রাজ্যসভা, বিধানসভার নির্বাচিত সদস্যদের অধিকাংশই কোটি কোটি টাকার মালিক। নির্বাচনে তাঁদের মনোনয়ন জমা দেওয়ার হিসাব থেকেই তা পরিষ্কার। অথচ, আমাদের দেশে যখন কোনও বিপর্যয় দেখা দেয়, তখন বিশেষ কয়েক জন শিল্পপতি, বড় ব্যবসাদার, আর্থিক ভাবে সম্পন্ন কিছু খেলোয়াড়, বলিউড বা টলিউডের কিছু শিল্পীকেই এগিয়ে আসতে দেখা যায়। এ ছাড়াও কিছু মানুষকে দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াতে দেখা যায়। কিন্তু কোটি কোটি টাকার মালিক সাংসদ বা বিধায়করা অন্যের সহায়তায় ব্যক্তিগত অর্থ খরচ করছেন, এ কথা কমই শোনা যায়। বরং কোনও বিপর্যয় হলে সরকারকে জনগণের কাছে হাত পাততে হয়।

অপর দিকে, বিভিন্ন রাজনৈতিক সভায় যে পরিমাণ অর্থ খরচ করা হয়, তার কিয়দংশ মহিলা বা দুঃস্থ মানুষের জন্য খরচ করলে, অর্থের অভাব হবে বলে মনে হয় না। ভারতে কোনও সময়েই সম্পদের অভাব ছিল না। যার অভাব আছে, তা হল অর্থ কেলেঙ্কারি কড়া হাতে দমন করা।

শুধুমাত্র অনুদান কোনও জাতিকে স্বনির্ভর করতে পারে না, যদি না প্রশিক্ষিত, দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির উপর জোর দেওয়া হয়। প্রশিক্ষিত মানুষের দ্বারা উৎপাদিত দ্রব্য বিক্রির ব্যবস্থাও করতে হবে। যেমনটা পশ্চিমবঙ্গ সরকার স্বনির্ভর গোষ্ঠী দ্বারা উৎপাদিত দ্রব্য সরকারি মেলার মাধ্যমে বিক্রয়ের ব্যবস্থা করেছে। তবেই তো আন্তর্জাতিক অর্থ ভান্ডার থেকে সাহায্য নেওয়ার সার্থকতা।

জয়ন্ত কুমার দেবনাথ

রানাঘাট, নদিয়া

শতবর্ষে সুবিনয়

‘রবীন্দ্রসঙ্গীতের গভীরে যেতে হলে স্বরলিপি ভাঙতে হয় না’ (রবিবাসরীয়, ১৪-১১) পড়ে আনন্দ পেলাম। সুবিনয় রায় সুরের জগতের এক উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক। রবীন্দ্রনাথের গানের বিশুদ্ধতা রক্ষায় তিনি ছিলেন এক অতন্দ্র প্রহরী। শিল্পীর শতবর্ষে সশ্রদ্ধ প্রণাম। স্বপন সোমের প্রবন্ধটিতে কিছু তথ্য উল্লিখিত হয়নি, সেগুলি যোগ করতে চাই।

সুবিনয় রায় ইংল্যান্ডে যান চার্টার্ড লাইব্রেরিয়ানশিপ পড়তে, কলকাতার চাকরি ছেড়ে। প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ তখন ওখানে ছিলেন। উনি সুবিনয়ের চাকরির ব্যবস্থা করে দেন ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউটে। ২) সুবিনয় রায় বেতারে প্রথম বার অডিশন দিতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছিলেন। এ কথা এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন তিনি। ৩) রেডিয়োর জন্য সুবিনয় বেশ কিছু হিন্দি ভজন পরিবেশন করেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, ‘দেখো রি না মানে শ্যাম’। আরও কিছু ভজন শোনা গিয়েছিল ওঁর কণ্ঠে। যেমন— ‘সুমর মন শ্যাম নাম দিন রাত’। এটি পরিবেশন করেছিলেন ১৯৮৬ সালে, যোধপুর পার্কে অনুষ্ঠিত এক মনোরম জলসায়। ৪) শুধু কলম্বিয়া বা হিন্দুস্থান রেকর্ড কোম্পানি নয়, সুবিনয় রায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ লং প্লেয়িং রেকর্ড মুক্তি পেয়েছিল কনকর্ড রেকর্ড কোম্পানি থেকে। এ ছাড়া মিউজ়িক ইন্ডিয়া, সিবিএস, সান রেকর্ডস, রাগা মিউজ়িক ও ভাবনা রেকর্ডস রিলিজ় করে বেশ কিছু দুষ্প্রাপ্য রেকর্ডিং-এর সঙ্কলন।

শেষে বলি, ১৯৩৯ সালে শেষ বর্ষামঙ্গলে সুবিনয় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের কাছ থেকে ১৭টি গান শিখতে পেরেছিলেন, যা তাঁর কাছে প্রকৃতই ছিল এক দুর্লভ অভিজ্ঞতা।

সঞ্জয় সেনগুপ্ত

কলকাতা-৩১

বহুত্বের দৃষ্টান্ত

বিশ্বজিৎ রায়ের সাম্প্রতিক প্রবন্ধ (‘কলে-ছাঁটা কেরানি নির্মাণ নয়’, ১২-১১) প্রসঙ্গে কিছু কথা। তিনি লিখেছেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের কল থেকে এক রকম ছাঁটা-কাটা মানুষ তৈরি রবীন্দ্রনাথের উদ্দেশ্য ছিল না— বিশ্বভারতীর সাম্প্রতিক এই প্রচেষ্টায় এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বহুত্ববোধকতার পরিচয় মেলে।” এই সিদ্ধান্তে তিনি কী ভাবে পৌঁছলেন, বোঝা গেল না। বহুত্বের ধারণা রবীন্দ্রনাথের জীবনদর্শন এবং শিক্ষাচেতনার কেন্দ্রে আছে। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের সাম্প্রতিক কার্যকলাপের সঙ্গে বহুত্বের ধারণার মিল কোথায়? রামগড়ে পল্লি সংগঠন ও সামাজিক সহযোগ চর্চা রবীন্দ্র ভাবাদর্শ উদ্বুদ্ধ ভাবলেও, বর্তমান বিশ্বভারতীর কার্যকলাপ, যা বিভিন্ন সংবাদ এবং সমাজমাধ্যম সূত্রে আমরা জানতে পারছি, তাতে লেখকের সঙ্গে একমত হওয়া কঠিন। প্রজাতন্ত্র দিবসে উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী ছাত্রদের সামনে বক্তৃতা দিয়েছিলেন। সেই বক্তৃতার রেকর্ড বন্ধুদের পাঠানোর ‘অপরাধ’-এ আর্থিক-সামাজিক ভাবে পিছিয়ে থাকা পরিবার থেকে আসা এক ছাত্রকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ছাত্রাবাস থেকে উৎখাত করা হয়। এই উদাহরণ বিশ্বভারতীর বর্তমান অবস্থার প্রতীকমাত্র। অধ্যাপক-কর্মীদের সাসপেনশন, শাস্তি, বদলি, পদ থেকে অপসারণ, সবই বিশ্বভারতীর রোজনামচা। পরিস্থিতি এমন, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো শিল্পী এবং বিশ্বভারতীর অন্যতম প্রাণপুরুষকে তাঁর জন্মসার্ধশতবর্ষে স্মরণ করতে অপারগ কর্তৃপক্ষ (‘জন্ম-সার্ধশতবর্ষে ‘মৌন’ বিশ্বভারতী’, ৮-৮)।

সম্প্রতি তিন জন ছাত্রছাত্রীকে কর্তৃপক্ষ তিন বছরের জন্য বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়। এই ব্যাপারে জনমানসে তীব্র বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়েছিল। মহামান্য কলকাতা হাই কোর্ট এই সিদ্ধান্তকে বাতিল করে। এই সংবাদপত্রের সম্পাদকীয়তে তারই প্রতিফলন, “বর্তমান বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ ছাত্রদের সহিত এই ‘ঠিকমতো ব্যবহার’ করিতে ব্যর্থ। বিদ্বেষ ও কঠিন শাসনের সম্বন্ধ কয়েদখানা ও সেনা ছাউনিতে চোখে পড়ে— ইহা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চালাইবার অর্থ রবীন্দ্র-আদর্শ হইতে বিচ্যুতি। এই শাসনের সম্বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জ্ঞানকাণ্ডকেও ক্রমে ধ্বংস করিবে” (‘ছাত্রশাসনতন্ত্র’, ১২-৯)। অতিমারির সময় বিশ্বভারতী প্রতি মাসে আন্তর্জালে যে বক্তৃতামালার আয়োজন করেছে, তাকে ‘মত বিনিময় ও নানাত্ব রক্ষার সুযোগ’ বলেছেন প্রবন্ধকার। উদ্যোগটি প্রশংসনীয়, কিন্তু সমস্ত কলেজ-ইউনিভার্সিটিতেই এই উদ্যোগ করা হয়েছে। যত দূর জানি, অতীতে এই উদ্দেশ্য পূরণ করত ‘বিশ্বভারতী পাঠচক্র’। ‘বিশ্বভারতী পাঠচক্র’ ধ্বংস করে এই বক্তৃতামালার সূচনা কোনও নতুনত্বের দাবি করতে পারে না। আর এই বক্তৃতামালা কি সত্যিই বহুত্ববোধের পরিচায়ক? না কি বক্তাদের অনেকের পরিচয় এবং বক্তৃতার বিষয় চয়নের মধ্যে সঙ্কীর্ণ, একপেশে রাজনৈতিক প্রচারের ইঙ্গিত খুব স্পষ্ট? বিজ্ঞান, কলা, সঙ্গীত, গ্রামোদ্যোগ ও উন্নয়ন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন, লিঙ্গ-বৈষম্য ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে কি? একটি বক্তৃতার বিষয় ছিল, ‘পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি ব্যর্থ কেন?’ বিরূপ প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কায় তা তড়িঘড়ি বাতিল করা হয়।

অতিমারির সময়ে বিপন্ন মানুষের পাশে বিশ্বভারতীর দাঁড়ানোর উদ্যোগকেও উল্লেখ করেছেন লেখক। এই সহজ মানবিক বিষয়টিকে রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাভাবনার প্রতি কর্তৃপক্ষের আনুগত্যের উদাহরণ হিসাবে উল্লেখের যৌক্তিকতা কী? লেখক উদ্ধৃত করেছেন রবীন্দ্রনাথের কথা— যে বিশ্ববিদ্যার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তার পার্শ্ববর্তী সমাজের যোগ নেই, সেই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা সফল হতে পারে না। প্রশ্ন হল, আলাপিনী সমিতি, আশ্রমিক সঙ্ঘ, প্রাক্তনী থেকে শুরু করে স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে বিশ্বভারতীর সম্পর্ককে উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে যে ভাবে ছিন্ন করেছেন, তিক্ত করেছেন, তার সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের চিন্তাভাবনার মিল কোথায়? যাঁরা বিশ্বভারতীর সাম্প্রতিক পরিস্থিতি সম্বন্ধে সামান্যতম ওয়াকিবহাল, তাঁরা এই প্রবন্ধের সঙ্গে নিজেদের অভিজ্ঞতার কোনও সংযোগ ঘটাতে পারবেন না।

অরুণাভ অধিকারী

কলকাতা-৫৪

অন্য বিষয়গুলি:

grant music
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy