Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
Kolkata International Book Fair

সম্পাদক সমীপেষু: মেলা শেষ কথা শুরু

এ বারের মেলার অপেক্ষায় দিন গুনছিলেন প্রকাশক, লেখক থেকে শুরু করে পাঠক-ক্রেতারাও।

শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০২২ ০৬:১০
Share: Save:

বইমেলা ফুরোল। কোভিডের কারণে মাঝে এক বছরের অনাকাঙ্ক্ষিত বিরতি। তাই এ বারের মেলার অপেক্ষায় দিন গুনছিলেন প্রকাশক, লেখক থেকে শুরু করে পাঠক-ক্রেতারাও। প্রত্যাশা ছাপিয়ে ভিড় হয়েছে যেমন (প্রতি দিনের গড় উপস্থিতি নব্বই হাজার), বিক্রির পরিমাণমূল্য তেমনই গড়েছে রেকর্ড (তেইশ কোটি টাকারও বেশি)।

এই সবই বইপাড়ার, বিশেষত বাংলা বই-বাজারের জন্য আশার কথা, মানতেই হবে। বইমেলা ফুরোলেই বই নিয়ে কথাবার্তাও মুড়োয়। সমাজমাধ্যমে এই সে দিন পর্যন্ত যে সমস্ত প্রকাশক ও লেখক তাঁদের বইয়ের বিক্রি এবং বিপণন নিয়ে মুখর ছিলেন, মেলা-শেষে আজ তাঁরা নীরব, হয়তো বা বিশ্রামরত। আমরা যাঁরা পাঠক হিসাবে গর্ব বোধ করি, তাঁরাও খুব একটা খবর রাখি না, জানিও না— বইমেলায় কোন ভাষার বই কত বিক্রি হয়, তুল্যমূল্য বিচারে বাংলা বইয়ের বিশেষত সাহিত্য-গ্রন্থের বিক্রি কেমন, প্রবন্ধ-বইয়ের চাহিদা বাড়ছে না কমছে, বই-বিক্রির অঙ্কে বাংলা শিশুসাহিত্যের ভবিষ্যৎ বোঝা যাচ্ছে কি না। বইমেলার উদ্যোক্তা, বুকসেলার্স অ্যান্ড পাবলিশার্স গিল্ড কর্তৃপক্ষ নিজেরাও সেই কথা জানেন কি? জানলেও, পাঠকসমাজকে জানানো হয় না তার খুঁটিনাটি। এ বারের ২৩ কোটির বিক্রিবাটায় ‘ছোট’ প্রকাশনাগুলো আদৌ বলার মতো লাভের মুখ দেখল কি? লিটল ম্যাগাজ়িনের ‘দুর্দান্ত’ বিক্রিবাটা নিয়ে নানা কথা শুনছি, সেটা কি সার্বিক চিত্র?

বইমেলার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গি ভাবে জড়িয়ে থাকা এই বিষয়গুলো নিয়ে কথা হোক। নাহয় ঝুলি থেকে অপ্রত্যাশিত বেড়ালই বেরোবে কিছু, তবু বাজার ও গ্রাহকের, লেখক-প্রকাশক ও পাঠকের এই সংলাপের প্রয়োজন রয়েছে। বাংলা বইয়ের ভবিষ্যৎ স্বার্থেই প্রয়োজন রয়েছে।

ব্রততী পাল

কলকাতা-১৫০

ঘেঁটুপুজো

বাঙালির হারিয়ে যাওয়া সংস্কৃতি ঘেঁটু উৎসব। ফাল্গুন মাসের সংক্রান্তিতে সকালবেলায় এই পূজা অনুষ্ঠিত হয়। বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বর্ধমান, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার অনেক গ্রামে আজও এই পুজোর চল আছে। লৌকিক দেবতা ঘেঁটুর আর এক নাম ঘণ্টাকর্ণ। কথিত আছে, ঘেঁটু নাকি শিবের অনুচর এবং তীব্র হরিবিদ্বেষী। তিনি চর্মরোগের দেবতা। বসন্ত ঋতুতে আবির্ভূত ছোঁয়াচে চর্মরোগ নিবারণের উদ্দেশ্যে এই পূজার্চনা করা হয়। জনশ্রুতি আছে, পুজোর অন্যতম উপকরণ ঘেঁটু ফুল (ভাট ফুল) থেকে এরূপ নামকরণ হয়েছে।

এই পুজোতে পুরোহিত লাগে না। কোনও মন্ত্রের প্রয়োজন হয় না। বাড়ির পুরুষ ও মহিলারা পুজো করতে পারেন। তবে মন্ত্রের বদলে সুর করে ছড়া বলা হয়— “ধামা বাজা তোরা কুলো বাজা/ এলো এলো দ্বারে ঘেঁটু রাজা।” তেরাস্তা বা চৌরাস্তার ধারে, পুকুর পাড়ে বা বাড়ির নিকানো উঠোনে সকলের মাঝে পুজো সংঘটিত হয়। তবে মন্দিরে ঘেঁটু পুজো করা নিষিদ্ধ। এই পুজোয় মুড়ি ভাজার পুরনো ঝুলকালিমাখা মাটির খোলার উপর গোবর, সিঁদুর ও কড়ি দিয়ে একটি ছোট্ট প্রতিমূর্তি তৈরি করা হয়। তার পরে হলুদ জলে ডোবানো অব্যবহৃত কাপড় পরিয়ে দেওয়া হয়। পুজো-শেষে মাটির খোলাটি ভেঙে দেওয়া হয়। প্রসাদ হিসেবে চাল, বাতাসা, মুসুর ডাল, গুড় নিবেদন করা হয়।

এর সঙ্গেই মনে রাখতে হবে, ঘেঁটু গাছের পাতা, ফুল ও মূলের ভেষজ গুণ প্রচুর। চর্মরোগ, পেটের সমস্যা, জ্বর ও কাশিতে, কৃমি দূর করতে, এবং ম্যালেরিয়া রোগ নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। গাছটি সাধারণত গ্রামগঞ্জের ঝোপঝাড়ে বা রাস্তার ধারে অযত্নে বেড়ে ওঠে। এই ঘেঁটু গাছই (ভাট) হল গ্রামবাংলার ওষুধ।

বিপদতারণ ধীবর

বেলিয়াতোড়, বাঁকুড়া

চাটাই বোনা

এক কালে বাড়িতে আত্মীয়স্বজন এলে উঠোনে পেতে দেওয়া হত লম্বা চাটাই, অতি পরিচিত সেই প্রথা। আর এই গরমে স্বস্তির বিশ্রাম ও ঘুম সেই চাটাই পেতেই, দুপুর হলে পুকুরধারে ঘাটের কাছে কোনও গাছতলায়, আর সন্ধে নামলে উঠোন বা দালানে। ঘরে ঘরে তাই চলত সেই চাটাই বোনার কাজ, আর সেই কাজ করতেন বয়স্করা। মা, জেঠিমা, কাকিমারাও বুনতেন তাঁদের কাজের ফাঁকে, অবসরে। মাদুরের আদলে তৈরি হত খেজুর পাতার চাটাই। তবে এর বুননের পদ্ধতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। আর তা কেউ কোনও দিন হাতেকলমে মেয়েরা শিখেছেন বলে মনে হত না। অনেকটা উল-কাঁটায় সোয়েটার বোনার মতো এই চাটাই বোনাও শুধু আঙুল ও হাতের প্রয়োগ পদ্ধতি দেখেই শিখেছেন, সেটাই বলতেন মা জেঠিমারা। সামান্য একটু দেখে বুঝে নিয়ে তাঁরা নিজের চেষ্টাতেই শিখতেন।

সম্প্রতি হঠাৎ যখন দেখলাম, গ্ৰামের এক বয়স্কা সেই একই দু’হাতের আঙুলের প্রয়োগে পাতার পর পাতা জুড়ে বুনে চলেছেন সেই চাটাই, খুব মনে পড়ছিল নিজের ছেলেবেলাটা। বাড়িতে মাস্টারমশাই এলে উঠোনে বা দালানে পেতে দেওয়া হত চাটাই। চোখ বুজলে এখনও মনে পড়ে, হারিকেনের আলোয় মাস্টারমশায় আমাদের পাঁচ-সাত জনকে পড়াচ্ছেন।

চাটাই এখন যেমন বিলুপ্তপ্রায়, তেমনই হারিয়ে গিয়েছে কাঠির বুননে তৈরি মাদুরও। এক বিশেষ পদ্ধতিতে খেজুর পাতা কেটে শুকিয়ে ও চিরে প্রস্তুত করা হত সেই পাতা। তার পর বোনা হত তিন-চার ইঞ্চি চওড়া পাটি, আর তা বুনতে বুনতে হয়ে উঠত আশি থেকে একশো ফুট লম্বা। তার পর থেমে যেত সেই বুনন, গোলাকার কুণ্ডলীর আকারে রেখে দেওয়া হত। এর পর জোড়ার পালা। সেই লম্বা থেকে ছ’-সাত ফুট করে কেটে ওই খেজুর পাতাই বিশেষ ভাবে তৈরি রাখা হত সেলাইয়ের জন্য, কেবল পাতার বাঁধনেই সেই চাটাই। এ ভাবেই বারো থেকে জোড়া হত ষোলো পাটি পর্যন্ত। চওড়ায় হয়ে উঠত চার থেকে পাঁচ ফুট। তার পর কাটা অংশের দিকে মুড়ে সেলাই করা। এ ভাবেই তৈরি হয়ে যেত চাটাই।

তবে চাটাই তৈরি করতে বেশ সময় ও ধৈর্যের দরকার হত। আবার তা কিনতেও পাওয়া যেত। পাটি হিসেবে তার দাম ঠিক হত। আর চাহিদার কথা মাথায় রেখে অনেকেই পেশা হিসেবে নিতেন সেই কাজ। পাশাপাশি চলত শুকনো তালপাতা দিয়ে চৌকো ছোট ছোট তালপাতার চাটাইও। কাঁচা পাতা রোদে বিশেষ নিয়মে শুকিয়ে নিপুণ হাতে চৌকো আসনের আদল দিতেন বাড়ির বয়স্করা।

বাড়িতে পাতার সেই শিল্পকর্ম আজ আর প্রায় নেই। স্মৃতি হয়ে
আছে সে সব।

সনৎ ঘোষ

খালোড়, হাওড়া

সাহচর্য

বৃদ্ধাশ্রম নামটি শুনলেই চোখের সামনে ধরা দেয় ক্রন্দনরত মায়ের মুখ, বাবার দুর্বল চাহনি। এ যেন জীবনের পরম অভিশাপ। ‘বৃদ্ধাশ্রম’ শব্দটি আমাদের দেশে এখনও মহামারি হিসাবে ধরা না দিলেও দিন দিন এর প্রয়োজন বেড়েই চলেছে। বৃদ্ধাশ্রম বয়স্কদের থাকার জায়গা। অনেকটাই হস্টেলের মতো। তফাত হল, যে সব বৃদ্ধ-বৃদ্ধাকে দেখার কেউ নেই, তাঁদের জন্যই তৈরি করা হয়েছে এই আবাসন।

বাস্তবের ভিত্তিতে যদি বলি, তবে ছেলেমেয়েদের কাছে অভিভাবক বোঝা মনে হলে তাদের ভার লাঘব করে বৃদ্ধাশ্রমগুলো। আবার অনেকে শেষ বয়সে স্বেচ্ছায় নিজেরাই চলে আসেন এখানে। যতই হোক, আত্মসম্মান কার কাছেই বা অপ্রিয়? অচেনা হলেও, এই মানুষগুলোর আবেগ একটা জায়গায় এক হয়ে যায়— তাঁরা সংসারে ব্রাত্য। তখন তাঁরা নিজেরাই হয়ে ওঠেন নিজেদের আত্মীয়, দুটো প্রাণের কথা বলার মানুষ। তাই নিজের সমবয়সি মানুষদের সঙ্গ পেতে অনেকে বৃদ্ধাশ্রমে যান।

তবে, কেন দিন দিন বৃদ্ধাশ্রম ভরে যাচ্ছে, এই প্রশ্নের উত্তর কখনও খুঁজি না। সন্তানের শিক্ষার উপরেও নির্ভর করে এর উত্তর। শিক্ষা মানেই পুঁথিগত শিক্ষা নয়। প্রার্থনা করি, সব সন্তান যেন ভাল মানুষ হয়।

রাহুল বৈরাগ্য

মুড়াগাছা, নদিয়া

অন্য বিষয়গুলি:

Kolkata International Book Fair
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy