অভিরূপ সরকারের ‘আগে সংস্কারের প্রস্তুতি চাই’ (২২-১১) প্রবন্ধে বড় কৃষক ও ছোট কৃষকদের প্রসঙ্গ উঠে এসেছে। কৃষক ও কৃষিকাজ সম্বন্ধে ভাবতে চাইলে সারা ভারতে কৃষির উপর বড় মাপের একটা সমীক্ষা প্রয়োজন। সব কৃষক সরকারি ধান্য ক্রয় কেন্দ্রে ধান বিক্রি করতে পারেন না। তাই এলাকার ফড়ে-আড়তদারদের কাছে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হন। বড় আড়তদাররা ধান মজুত করে রাখেন, ও পরে বেশি দামে বিক্রি করতে পারেন। কর্পোরেট সংস্থা এমন করলে বড় আড়তদারদের ব্যবসার ব্যাঘাত হত, তাই তাঁরা কর্পোরেটদের বিরোধিতা করলেন। এ দিকে, কৃষকরা আড়তদারদের কাছে ধান বিক্রি করে টাকা সঙ্গে সঙ্গে নগদ পেয়ে যান এমন কিন্তু নয়। ছ’মাস, ন’মাস, এক বছর পর ধান বিক্রির টাকা পেয়ে থাকেন কৃষকরা। অতএব কৃষকরা কৃষি আইন পাশ হওয়ার আগে থেকেই মার খাচ্ছেন।
কৃষি আইনের সুযোগে কর্পোরেট সংস্থাগুলো এসে প্রান্তিক গরিব চাষিদের লাভবান করে দিতে পারত, এমন সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। স্বাধীনতার ৭০ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরও গ্রামগঞ্জে কৃষিতে সেই ভাবে উন্নতি হয়নি। ইদানীং অতিবৃষ্টি, বন্যায় ঘন ঘন খেত ভেসে যাওয়ার কারণে কৃষিকাজে ব্যাঘাত ঘটছে। আবার অনেক জায়গায় জলের অভাবেও কৃষিকাজ থমকে আছে। ফসলের দাম বৃদ্ধির ফলে প্রান্তিক গ্রামের কৃষকরা চাষ করতে সাহস করতে পারেন না, কারণ এখন চাষবাসে পরিশ্রমের থেকে লাভ কম। এই অবস্থায় কৃষি আইন এনেই যে কৃষকের অবস্থা ফিরে যাবে, এমন আশা করা যায় না। কৃষকদের আয় বাড়াতে গেলে কৃষিজাত পণ্য আর কৃষিকাজে ব্যবহৃত জিনিসপত্রের দাম কমাতে হবে। তা হলে কোনও কৃষক কৃষিকাজ ফেলে চেন্নাই, বেঙ্গালুরুতে যাবেন না।
মুন্সি দরুদ
কাজিপাড়া, বীরভূম
দগ্ধ খেত
দক্ষিণ দিনাজপুরে আলু চাষ বিখ্যাত। ধানের পরেই আলু বসানো হয়। আমাদের গ্রামে বিশাল খেতের ধান কাটতে ভিন্রাজ্যের শ্রমিকরা আসেন। পুরো মাঠের ধান কাটেন, ও খড়-সহ ধান মাথায় করে বয়ে চাষির খামারে পৌঁছে দেন। এই কাজে এক থেকে দেড় সপ্তাহ লাগে। তার পর আলু চাষের জন্য জমি প্রস্তুত করতে এবং আলু বসাতে সর্বাধিক দু’সপ্তাহ লাগে। আলু বসানো ও (বিশেষ করে) আলু তোলা প্রধানত বাঁকুড়ার শ্রমিকদের উপর নির্ভরশীল।
উল্লেখ্য, আগে যেখানে শ্রমিক দিয়ে বিঘা প্রতি ধান কাটা ও খামারে তুলতে ১২০০-১৫০০ টাকা খরচ হত, বর্তমানে তা দাঁড়িয়েছে ৪২০০ টাকা। খরচ কমাতে অনেক চাষি ধান কাটার হার্ভেস্টর মেশিন ব্যবহার করছেন। অপর দিকে, গবাদি পশু কমে যাওয়ায় খড়ের চাহিদাও কমেছে।
মেশিনে কাটায় ধান কুটিতে পরিণত হয়, যার বেশির ভাগটা জমিতে রয়ে যায়। যে হেতু ধানের পরেই আলু চাষের চাপ থাকে তাই চাষিরা সেই খড় ও নাড়াগুলো জমিতেই পুড়িয়ে দেন। এর ফলে কৃষিজমিতে কৃষিবান্ধব কেঁচো বা অন্যান্য পোকা আগুনের তাপে পুড়ে শেষ হয়ে যায়। কাস্তে দিয়ে ধানগাছ কাটলে নাড়াগুলো ছোট করে কাটা হত এবং চাষের সময়ে সেগুলো মেশিন দিয়ে কুচিয়ে মাটির সঙ্গে মিশে যেত। জৈব বস্তু মাটিতে মিশলে মাটি কিছুটা হলেও জৈব উপাদান পেত। এখন পোড়ানোর ফলে সেটা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কৃষিজমি। বিভিন্ন জায়গায় বিপুল পরিমাণ খড়-নাড়া দহনের ফলে প্রচুর পরিমাণ কার্বন ডাই অক্সাইড, ও সেই সঙ্গে কার্বন কণা ও অন্যান্য গ্যাস বাতাসে মিশছে।
এই খড় দহন রোধে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন জায়গায় কয়েকটা ফেস্টুন টাঙিয়ে দায় শেষ করলে হবে না। খড়ের বিকল্প ব্যবহারের কথা ভাবতে হবে। সমস্ত চাষিকে এই খড় দহন রোধ করতে উদ্বুদ্ধ ও বাধ্য করতে হবে। বিকল্প আবিষ্কারের আগে খড়গুলো পঞ্চায়েতের মাধ্যমে সংগ্রহ করে নিকটবর্তী নদীর পরিত্যক্ত অংশে বা পরিত্যক্ত কোনও জায়গায় ফেলা যেতে পারে। এগুলি জৈববস্তু হওয়ায় কিছু দিন পর মাটির সঙ্গে মিশে যাবে।
আলাউদ্দিন মল্লিক
ইমেল মারফত
ঘাটতির ধাক্কা
আমন ধান উঠেছে। কিন্তু কৃষকের মুখে হাসি নেই। কারণ বাজারে ধানের দাম নেই। চারিদিকে ফড়েরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। এ দিকে সরকার এখনও ধান কেনা শুরুই করেনি। মান্ডিগুলোতে ধান বেচার টোকেন দেওয়ায় উঠে আসছে দালাল চক্রের দাপাদাপির কথা।
গত বছর সরকার ধানের বাজারদর ঠিক করেছিল ১৮৬০ টাকা প্রতি কুইন্টাল। এ বার মাত্র ৮০ টাকা বাড়িয়ে করেছে ১৯৪০ টাকা। যদিও এই এক বছরে চাষের খরচ বেড়েছে প্রায় ৩০%-৪০%। তাল মিলিয়ে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যও বৃদ্ধি পেয়েছে। সেখানে ধানের সরকারি মূল্য বাড়ানো হয়েছে মাত্র ৪.৩০%। এই ঘাটতির ধাক্কা গিয়ে লাগছে কৃষকদের গায়ে। এই ঘাটতি মেটাতে কি লক্ষ্মীর ভান্ডার, কৃষক বন্ধু,
কৃষক সম্মাননিধির মতো সরকারি প্রকল্প যথেষ্ট?
তার পরে আবার সরকার যেটুকু মূল্য ধার্য করেছে, বাস্তবে সেটাও মিলছে না। বর্তমানে কৃষকরা ১২০০ টাকা-১৪০০ টাকা প্রতি কুইন্টাল দরে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। কিন্তু সেটাও কেনার লোক নেই। ধান কাটা হতেই সেই ধান প্রান্তিক এবং ক্ষুদ্র চাষিদের গোলায় পুরোটা না গিয়ে উঠছে মহাজনের গোলায়। যেটুকু ধান রয়েছে, সেটাও বিক্রি হচ্ছে না। কারণ, দাম নেই। এখন থেকেই আলু, সর্ষে, বোরো ধান-সহ রবি শস্য চাষের প্রস্তুতি শুরু করতে হবে। কিন্তু কৃষকদের হাতে পয়সা নেই। তাই তাঁরা বাধ্য হচ্ছেন মহাজনের বাড়িতে গিয়ে ধর্না দিতে। এটাই যদি বাস্তব পরিস্থিতি হয়, তা হলে কৃষকরা বাঁচবেন কী করে?
সমস্যার বাস্তব সমাধান করতে হলে কৃষিকাজের খরচ কমাতে হবে, সরকার নির্ধারিত মূল্যে ধান কিনতে হবে, আর সাধারণ গরিব ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে তাঁদের রোজগারের পথ দেখাতে হবে। এই সব কাজই করতে পারে শুধুমাত্র সরকার এবং সাধারণ মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টা। কিন্তু কোথায়
সেই উদ্যোগ?
সনাতন পাল
বালুরঘাট, দক্ষিণ দিনাজপুর
সেই গ্রাম
ধরা যাক, এই বাংলার আর পাঁচটা গ্ৰামের প্রতিনিধিস্বরূপ একটি ছোট্ট গ্ৰাম, নাম তার কুসুমদিঘি। এই গ্ৰামের উত্তরে আছে ছোট্ট খাল, যার বুকে ২০-২৫ বছর পূর্বেও বালির উপরের স্তরে সারা বছর ঝর্নার জল বয়ে যেত। বর্তমানে সেই জল উধাও, কারণ মাটির নীচ থেকে নির্বিচারে জল তুলে ফেলা হচ্ছে, জলের অপচয় হচ্ছে। এক একর চাষের জমিতে আলুর ফলন বৃদ্ধির জন্য ৫০০-৬০০ কিলোগ্রাম রাসায়নিক সার প্রয়োগ হচ্ছে, যা মাটির গুণকে নষ্ট করার পক্ষে যথেষ্ট। কীটনাশকের মাত্রাহীন ব্যবহারে জমির কেঁচো-কাঁকড়া-শামুক প্রায় লুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। ফলে, শেয়াল-বেজি প্রভৃতি প্রাণী খাদ্যাভাবে ধুঁকছে। খাদ্যশৃঙ্খল বিপন্ন।
প্রায় দু’বছর হতে চলল অতিমারির কারণে স্কুল-কলেজ বন্ধ, ছাত্রদের শিক্ষার মান তলানিতে পৌঁছে গিয়েছে। কিন্তু কোনও শিক্ষক বা শিক্ষক সংগঠনের প্রধানকে একটি বারও বলতে শুনলাম না যে, শিক্ষকদের প্রতি মাসে পাওয়া মাইনের কিছু অংশ অসহায় পরিযায়ী শ্রমিক বা দুঃস্থ শিশুদের দান করবে। শহুরে ডাক্তারবাবুরা গ্ৰামীণ বাজারের কোনও ওষুধের দোকানে ১৫ দিন অন্তর আসেন। ফিরে যান টাকার ব্যাগ ভর্তি করে। গ্ৰামের স্কুলের শিক্ষকদের মধ্যে অনেকেই প্রতি দিন ৫০-১০০ কিলোমিটার দূরের কোনও শহর থেকে শিক্ষকতা করতে আসেন মোটরবাইক বা চার চাকার গাড়িতে চেপে। ফিরে যাওয়ার সময়টা অহরহ মনে গেঁথে থাকে তাঁদের। এই ভাবে কি চিকিৎসা, শিক্ষকতা হয়! এই কারণেই আর্থিক উন্নতি সযত্নে গ্ৰামকে পরিহার করে।
রাজীব ঘোষ
ময়নাপুর, বাঁকুড়া
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy