‘ফ্ল্যাট মালিক জানেনই না ভাড়াটে কে! সৌজন্যে দালাল-রাজ’ (১১-৬) খবরটি পড়লাম। নিউ টাউনের নিরিবিলিতে বিশাল এলাকা জুড়ে নবনির্মিত আবাসন প্রকল্পে একটা ছোটখাটো নগরীর মতো আবাসনের ঘটনার প্রেক্ষিতেই এই প্রসঙ্গটি উঠেছে। সেখানে নবাগত ভাড়াটেবেশী ভিন্রাজ্যের দুষ্কৃতীদের সঙ্গে পুলিশের গুলির লড়াইয়ে দুষ্কৃতীদের মৃত্যু ঘটেছে। প্রশ্ন উঠেছে, ওই ভাড়াটেদের কথা কেউ জানতেন না কেন? ভাড়াটে সম্বন্ধে তথ্য পুলিশকে জানানো দরকার, বাড়ির মালিক পুলিশকে জানাননি কেন?
কিন্তু মালিক-ভাড়াটে সম্পর্ক নিয়ে ওয়াকিবহাল ব্যক্তিরা জানেন, এ সব আইনি কূট তথ্য। সাবেক ভাড়াটে বলতে যা বোঝায়, এ সব আবাসনের ফ্ল্যাট ভাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে তেমন বোঝাপড়া হয় না। এগারো মাসের চুক্তি। পুরসভার নীতি, কারও বসবাস কোনও ভাবেই অবৈধ নয়, কাউকেই গৃহহীন করা যায় না। তাই প্রশাসনের কিছুই করার নেই, যত ক্ষণ না খুনোখুনি, অগ্নিসংযোগের মতো কোনও ঘটনা ঘটছে। কোনও ফ্ল্যাটের মালিক নিজের খুশিমতো ভাড়াটে বসাতে পারেন না। দালালরাই কার্যত ঘরের মালিক। তাঁরা টাকা দেখে চুক্তি করিয়ে দেন। হাত বদল করিয়ে দেন। কারও বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি বা লুক আউট নোটিস থাকলে পুলিশ প্রশাসন রেড করে। ফ্ল্যাট কিনে ভাড়া দিয়ে রোজগারের ভাবনা, এ পথে সাধারণ মানুষ হাঁটতে চাইছেন না। তাই বহু ফ্ল্যাট শূন্য থেকে যাচ্ছে। নির্মাণ শিল্পে আঘাত আসছে।
অঞ্জন কুমার শেঠ, কলকাতা-১৩৬
আবাসনের জীবন
‘ফটফট শব্দ, গুলি আমাদের আবাসনে!’(১০-৬) আক্রান্ত আবাসনটির সম্পর্কে প্রতিবেদক লিখেছেন, কে কখন কোন ফ্ল্যাটে আসছে, তা জানার উপায় নেই। অবাক করেছে ওই আবাসনের এই হাল। আবাসিক কমিটি না থাকলে আবাসনটি দেখভাল কারা করেন? অত বড় একটা আবাসনে সিকিয়োরিটি গার্ডের কাজ তবে কী? তাঁদের কাছে তো থাকবে রেজিস্টার। অপরিচিতের প্রবেশ-প্রস্থান লিখিত হবে, সময়ও। থাকবে বহিরাগতের মোবাইল নম্বর। স্থায়ী বাসিন্দারা এ সব সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নন? প্রতিবেদক জানিয়েছেন, আবাসনটিতে ‘একটি ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কমিটি আছে’। নিরাপত্তাই যেখানে বেহাল, সেখানে কী প্রয়োজন বিনোদনের? এত ঢিলেঢালা হতে পারে একটি উচ্চবিত্তদের আবাসন?
বাসিন্দারাই একত্রে ফ্ল্যাট কিনে একটি আবাসনের জন্ম দেন। সমিতি গঠিত হয়। পারস্পরিক আদান-প্রদানের মানবিক সম্পর্ক নিবিড় হয় আবাসনের পুজো, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে। একত্রে বসবাস করতে হলে আলাপ-পরিচয় থাকাটা জরুরি। আমিও একটি আবাসনের বাসিন্দা। দু’টি স্তরে বিভক্ত আবাসনটিতে দু’টি স্বয়ংসম্পূর্ণ সমিতি আছে। উন্নয়ন তথা রক্ষণাবেক্ষণ, অর্থাৎ জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ, সব কিছুর দায়-দায়িত্বই কতিপয় বোর্ড-সদস্যের উপর বর্তায়। বাকিরা রক্ষণাবেক্ষণের মাসিক টাকা দিয়েই দায় সারেন। ব্যতিক্রমীরা সযত্নে নিজেদের বৃত্ত রচনা করেন। এঁরা পরিচালন সমিতিতে কদাপি আসেন না। বার্ষিক সাধারণ সভায় অনুপস্থিত থাকাটাই এঁদের রেওয়াজ। অথচ, উপস্থিত সদস্যদের সম্মতিক্রমে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলি প্রয়োগের সময় বাধাদান এঁদের স্বভাব।
তবু ১১০টি ফ্ল্যাটবিশিষ্ট আমাদের আবাসনে সবাই সবাইকে বিলক্ষণ চেনেন। সাড়ম্বরে দুর্গোৎসব হয়, চার দিনের সমবেত ভোজনপর্ব-সহ। আবাসন-চরিত্রে এটাই তো কাম্য। আবাসনে থাকতে হলে সর্বপ্রথম অহং পরিত্যাগ করে আবাসনের ভালমন্দ সম্পর্কে খোঁজ রাখা প্রয়োজন। ব্যক্তিগত অসুবিধা, অসুখবিসুখে পাশে এসে দাঁড়ান আবাসিক-প্রিয়জনরাই।
ধ্রুবজ্যোতি বাগচি, কলকাতা-১২৫
সুখবৃষ্টির অসুখ
আবাসনের নাম ‘সুখবৃষ্টি’। নামটি মিষ্টি, এখন সংবাদ শিরোনামে। সাপুরজি-পালনজি গোষ্ঠী এর নির্মাণকর্তা বলে অনেকের কাছে এর পরিচয় ‘সাপুরজি আবাসন’। চার দিকে পাখপাখালি গাছগাছালিতে ভরা। কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, অশোক, পলাশ, বকুল, শিমুলের সঙ্গে আম, জাম-সহ নানা ফলের গাছ। আছে গোলাপের সাজানো বাগান। মুক্ত বাতাস, ঝাঁ চকচকে প্রশস্ত রাস্তাঘাট। রাস্তার দু’ধারে টগর, মল্লিকা, হরেক রঙের জবা গাছের সারি। শিশুরা খেলে বেড়ায় শিশু উদ্যানে। এ রকম শান্ত, সুন্দর, খোলামেলা প্রাকৃতিক পরিবেশে থাকতে কার না ভাল লাগে! তাই অবসর কালে কলকাতার উপকণ্ঠে সুখবৃষ্টিতে এসে বাসা বেঁধেছি। দিনগুলো কাটছিল সুখে শান্তিতে। কিন্তু সুখের ঘরের চাবি যে কখন হারিয়ে গিয়েছে, তা জানা গেল ৯ জুন দুপুরের ভয়ঙ্কর এনকাউন্টারে।
সুখবৃষ্টি আবাসনের মূল সমস্যা নিরাপত্তা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাব। এর একমাত্র কারণ, কর্তৃপক্ষের চরম ঔদাসীন্য। ফলে আবাসনের ভিতরে, নামমাত্র নিরাপত্তার বেষ্টনী অতিক্রম করে, পঞ্জাবের দুই গ্যাংস্টার কখন যে ঢুকে পড়েছে, তা কেউ জানতে পারেনি। জানা সম্ভব নয় এখানকার কয়েক হাজার ফ্ল্যাটের আবাসিকের। তবে আমরা অনেকেই কম-বেশি জানি আবাসন রক্ষণাবেক্ষণে কর্তৃপক্ষের নানা ব্যর্থতা। প্রয়োজনীয় সংখ্যায় সিসি ক্যামেরা, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা রক্ষীর অভাব, ন্যূনতম পরিষেবায় ঘাটতি, আরও কত কী। এ সবের জন্য অভিযোগ জানিয়েও দেখা গিয়েছে, কর্তৃপক্ষ সমস্যা সমাধানে সচেষ্ট হননি। আশা করি, এই ভয়ঙ্কর ঘটনার পর আবাসন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সরকারও আবাসিকদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
অমরনাথ করণ, কলকাতা-১৩৫
নিরাপত্তার দাবি
সুখবৃষ্টি আবাসনে অপরাধীদের আস্তানা খুঁজে পাওয়ার পর বিভিন্ন আবাসনের ফ্ল্যাটমালিকরা পুলিশের কাছে নিরাপত্তার দাবি তুলেছেন (‘নিরাপত্তার দাবিতে থানায় গেলেন নিউ টাউনের বাসিন্দারা’, ১২-৩)। পুলিশি নিরাপত্তায় সকলের সমান অধিকার। আবাসনগুলির নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং রক্ষী রয়েছে। কিন্তু ফ্ল্যাটগুলোতে যাঁরা নানা পরিষেবা জোগান, তাঁদের অস্থায়ী, অবৈধ ঝুপড়ির অবস্থাও যেন ভুলে না যাওয়া হয়। ‘বহিরাগত’দের উপর নজরদারির নামে সেখানকার পরিযায়ী শ্রমিকদের উত্ত্যক্ত করার সুযোগ না করে দেওয়া হয় পুলিশকে। কারণ, এখানকার মানুষদের সহজেই ‘অপরাধী’ বলে ধরে নেয় পুলিশ। এঁদের নিরাপত্তা নিয়ে নিউ টাউন, বিধাননগরের পুলিশ চিন্তা করছে কি?
অমল ভরদ্বাজ, কলকাতা-৯৯
মোবাইল
2 সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশ মহিলা কমিশনের সদস্য মীনা কুমারী মন্তব্য করেছেন, মেয়েদের হাতে ফোন দেওয়া উচিত নয়, তাতে ধর্ষণের সম্ভাবনা বাড়ে (“মেয়েদের হাতে ফোনই ‘বিপদ’! বিতর্কে মীনা”, ১১-৬)। আমি এক জন মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। এই খবর পড়ে অবাক হয়ে গেলাম এটা ভেবে যে, আমরা একুশ শতকে এসেও পুরনো চিন্তাধারার বশবর্তী! এখনও সমাজ মেয়েদের দোষই দেখে, অথচ একটা ছেলে সমান ভাবে দোষী হয়েও নিরপরাধ থাকে! যে কথাটা মীনা কুমারী মেয়েদের ক্ষেত্রে বললেন, সেটা কেন ছেলেদের ক্ষেত্রে বললেন না? মেয়েরা ফোন হাতে তুলে না নিলে কি নির্ভয়া আমরা দেখতাম না? ২০১৯-এর হায়দরাবাদে তরুণীকে ধর্ষণ করে পুড়িয়ে মারার ঘটনা, কিংবা হাথরসের দলিত তরুণীর করুণ মৃত্যু দেখতাম না? আমাদের কি উচিত নয়, প্রত্যেক ছেলেকে শিক্ষা দেওয়া, যাতে সে ধর্ম-বর্ণ-জাত নির্বিশেষে প্রত্যেকটি মেয়েকে সম্মান করে? উচিত নয়, ছেলেটিকেও অপরাধের যোগ্য শাস্তি দেওয়া? পুরুষতান্ত্রিক সমাজে যারা মেয়েদের প্রতি অপরাধ করে, তারা অবাধে ঘুরে বেড়ায়। তাই মেয়েদের হাতে ফোন মানেই বিপদ নয়।
সঞ্জনা সাহা, কলকাতা-৫
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy