ছবি: সংগৃহীত
মুর্শিদাবাদে এক জনের ভোটার কার্ডে, স্বামীর নামের জায়গায় একটি হাসপাতালের নাম। আর এক জনের কার্ডে, তাঁর ছবির জায়গায় একটি কুকুরের ছবি। সেই জন্য এক আধিকারিককে শো-কজ় করা হয়েছে (‘কুকুর-কাণ্ডে শো-কজ়’, ৬-৩)।
কেন তাঁকে শো-কজ় করা হল, ঠিক বুঝতে পারলাম না। এই অপরাধে অপরাধী খুঁজতে গেলে তো ঠগ বাছতে গাঁ উজাড় হয়ে যাবে। আমার পরিবারে চারটি প্রাণী। ভোটার লিস্টে কারও নাম ঠিক নেই। আমি যখন প্রথম ভোটার হয়েছিলাম, তখন আমার নাম ছিল রেজাউল। আগে কিছু ছিল না। বাবার নামে কোনও পদবিও ছিল না। বহু সাধ্যসাধনায় বাবা ও আমি পুরো নাম ফেরত পেলাম। কিন্তু যদিও আমার সরকারি বেসরকারি কোনও কাগজে পদবি নেই, আমার নামের পাশে সেটা গুঁজে দেওয়া হল।
আমার কনিষ্ঠ কন্যার নাম ভোটার লিস্টে তোলার জন্য মোট তিন বার দরখাস্ত করা হয়েছে। প্রতি বার কোনও না কোনও ভুল ধরে তাঁরা ফেরত পাঠিয়েছেন। অবশেষে নাম উঠেছে, তবে তার পিতার নামের জায়গায় অন্য লোকের নাম। লাবণ্য নামটি বাংলার মানুষের কাছে অপরিচিত নয়, সেটি কী করে ‘লেবণ্যা’ হয়ে যেতে পারে, কে জানে।
সারা রাজ্য জুড়ে হাজার মানুষের নাম ভুল, পিতার নাম ভুল, ভুল ঠিকানা, ভুল ছবি। এক জনকে শাস্তি দেওয়া কেন?
মোঃ রেজাউল করিম
কলকাতা-২২
সংস্কৃতির গুঁতো
অশ্লীলতা একটি আপেক্ষিক অনুভূতি। আপনার কাছে যা অশ্লীল লাগে, আমার সেটা অশ্লীল নাও লাগতে পারে। উল্টোটাও ঠিক। এখন দেশে প্রচুর সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষ। তাঁদের মতে, আমার যেটা অশ্লীল লাগে, সেটা আমার সামনে কেউ করলে, তাকে আমি পেটাব। জেলে ঢোকাব। তার ভবিষ্যৎ নষ্ট করব। বা মেরেই ফেলব। তবেই না সংস্কৃতি রক্ষা হবে!
বছরখানেক আগে কলকাতা মেট্রোয় চুম্বন করার ‘অপরাধ’-এ দু’জনকে মারধর করা হয়েছিল, কারণ ঘটনাটা অনেকের চোখে অশ্লীল ঠেকেছিল। মহানন্দে তারা দেশের সংস্কৃতি রক্ষা করেছে। নির্ভয়ার খুনিদের উকিল এপি সিংহ বলেছেন ‘‘আমার মেয়ে যদি এত রাতে কোনও ছেলের সঙ্গে ঘুরত, আমি নিজেই ওর গায়ে আগুন দিতাম।’’ কারণ এটা ওঁর কাছে ‘অশ্লীল’, আর অশ্লীলতা তো মেনে নেওয়া যায় না, সংস্কৃতি তো রক্ষা করতে হবে!
রবীন্দ্রভারতীর কয়েক জন ছাত্রছাত্রী পিঠে বুকে কিছু ‘অশ্লীল’ শব্দ লিখে ছবি তুলেছে, তাই প্রায় গোটা বাংলা এখন উঠেপড়ে লেগেছে তাদের উত্তমমধ্যম দিতে (অন্তত ভার্চুয়ালি)। কিছু সংস্কৃতিপ্রেমী বাঙালির সে কী উল্লাস ! কেউ লিখছে ‘‘ওই পিঠে চাবুক মারো’’, কেউ মেয়েগুলিকে কদর্য গালাগালি দিচ্ছে। ব্যস, আর কী চাই, এই বার এই ছাত্রছাত্রীদের গর্তে পুঁতে দেওয়া হোক। আমরা তাদের পাথর ছুড়ে ছুড়ে মারব। কোনটা সংস্কৃতি আর কোনটা অপসংস্কৃতি এ ভাবেই ঠিক বুঝিয়ে দেব।
উপর থেকে নিশ্চয় কবিগুরু হাততালি দেবেন।
অর্ঘ্য সেন
কলকাতা-৫৯
আমার, তোমার
রোদ্দুর রায় এবং রবীন্দ্রভারতীর বসন্তোৎসবে আগত ৫-১০টি বহিরাগত ছাত্রছাত্রী মিলে বাঙালি সংস্কৃতির গণহত্যা করেছে, আর এই ধরনের কদর্য, আসুরিক মস্তি দেখে সমস্ত বাঙালি শিউরে উঠেছে। বাঙালি কবিতায় শ্বাস নেয় আর গানে ছবিতে শ্বাস ছাড়ে, তাই কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না এই জঘন্য অপরাধ।
সত্যিই কি তাই? এই ছাত্রছাত্রীরা কারা? আমাদের নিজের বাচ্চাকাচ্চারা। আমরা যাদের বড় করার সময় বুঝিয়েছি, আর্টস পড়ে বোকারা। বাংলা পড়ে গাধারা। যে বিদ্যায় টাকার গ্যারান্টি নেই, সে আবার বিদ্যা নাকি? টাকার চেয়ে বড় কিছু নেই আমরা বুঝিয়েছি, হিন্দি না পড়লে ভবিষ্যৎ নেই আমরা শিখিয়েছি, আমরা শিখিয়েছি বলিউডের সিনেমার বক্স অফিস দু’শো কোটি আর বাংলা সিনেমার বাজেট এক কোটিও না, তাই বলিউড অন্তত দু’শো গুণ বেশি ভাল।
আপনি নিজের বাচ্চাকে বছরে ক’টা সমকালীন বাংলা লেখকের বই কিনে দেন? সে কবিতা লিখলে বা পড়লে কতটা উৎসাহ দেন?
বই কেউ কেনে না, ছবি কেউ বোঝে না, গান কেউ শোনে না, শিল্প বলতে বাঘবন্দি খেলা। আমাদের সংস্কৃতির ধারক ও বাহক দিলীপ ঘোষ, বিমান বসু ও পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
টাইটানিক ডুবছে, লাইফবোট নেই, তাই যে যে ভাবে পারছে মস্তি করে নিচ্ছে। কারণ, এখানে আর কিছু হওয়ার নেই। কারণ কোনও রোল মডেল নেই। কারণ কেউ নোবেল প্রাইজ় পেলে আমরা তক্ষুনি তাঁর বিদেশি বৌয়ের সমীকরণ বার করি। কেন হতে চাইবে কেউ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়?
সংস্কৃতি বেঁচে থাকলে, সমাজ সুস্থ থাকলে এ ধরনের ব্যবহার দেখা যায় না। কিন্তু সমাজ সুস্থ নেই। আপনি একটি মেয়ের পিঠে অশ্লীল শব্দ দেখে আঁতকে উঠছেন। কিন্তু আপনার মেয়ে টিভি শোয়ে নিজেকে চিকনি চামেলি দাবি করলে আপনি হাততালি দিচ্ছেন।
এ-পারের বাঙালির মৃত্যু হয়েছে। এদের শাস্তি দিতেই পারেন, কিন্তু পচনের গন্ধ আপনি আটকাতে পারবেন না। যখন সুযোগ ছিল, তখন বাঁচানো যেত, কিন্তু বাচ্চাকে স্মার্ট বানাতে গিয়ে আমরাই নিজেদের খুন করেছি, এখন মৃতদেহ সাজালেন কি সাজালেন না, সেটা অবান্তর।
অনিকেত ভট্টাচার্য
কলকাতা-৪২
প্রশ্রয় দেবেন না
শ্রদ্ধেয় নচিকেতা চক্রবর্তী বলেছেন, ‘‘ওরা ভুল করেছে, কিন্তু কোনও অপরাধ করেনি।’’ এখন প্রশ্ন, এই সব ছাত্রছাত্রী রবীন্দ্ররচনা সম্বন্ধে কতটা ওয়াকিবহাল? নিজেদের স্বাধীন চিন্তাভাবনার প্রকাশে তাদের ‘কবিগুরু’র গানের কলি ও কথা ধার করার প্রয়োজন পড়ে কেন? সর্বোপরি, এ হেন সাহসী উপস্থাপনার মাধ্যমে তাদের সৃষ্টিশীলতা ও মৌলিক চিন্তাভাবনার কতটা প্রকাশ ঘটল?
কোনও সন্দেহ নেই, আমরা সকলেই জীবনে কখনও না কখনও এমন অশ্লীল শব্দ ব্যবহার করেছি নানা ক্ষেত্রে, বন্ধুমহলে তো বটেই। কিন্তু প্রশ্ন, তা কি বাবা-মার সামনেও করা হয়েছে! সম্ভবত হয়নি। কারণ, বাবা-মা ‘হেরিটেজ’ নন বটে, তবে নিশ্চিত ভাবে শ্রদ্ধা ও সম্মানের পাত্র। তাই, তাঁদের চরণ স্পর্শ করে প্রণাম করা হয়, তাঁদের স্মৃতিতে ছবিতে মাল্যদান হয় ও সেই একই কারণে, তাঁদের বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানোর বিরুদ্ধে কোনও এক তরুণ গায়ক রচনা
করে বসেন ‘বৃদ্ধাশ্রম’ নামের মর্মস্পর্শী গান। তাই সম্মান পেতে ও দিতে গেলে হেরিটেজ হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না, প্রয়োজন পড়ে যথাযথ শিক্ষার।
আশা করা যায়, এমন শিক্ষার অভাবে তরুণ প্রজন্ম কিছু ‘ভুল’ করে বসলে, নচিকেতার মতো সচেতন চিন্তাভাবনার মানুষেরা তাঁদের নিজেদের সন্তানের মতোই তিরস্কার করবেন, সঠিক দিশা দেখাবেন। তবে, প্রশ্রয় দেবেন না।
ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত
কলকাতা-৫৭
উলালা
‘গানেও গালি, কাঠগড়ায় ৪ স্কুলপড়ুয়া’ (৭-৩) প্রসঙ্গে জানাই, রবীন্দ্রসঙ্গীতকে অ-রাবীন্দ্রিক ভঙ্গিতে উপস্থাপন করার রেওয়াজ অনেক দিন ধরেই চলে আসছে। একটি বাংলা ছবিতে ‘পাগলা হাওয়া’ গানটির সঞ্চারীর আগে ‘উলালা উলালা’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এই গানকে এই প্রজন্ম সাদরে গ্রহণ করেছে। বিভিন্ন নৃত্যের অনুষ্ঠানে ছেলেমেয়েরা ‘উলালা’-সহ এই ‘পাগলা হাওয়া’ পরিবেশন করে থাকে। এই ভাবেই মূল সুরের বিচ্যুতি ঘটছে। ঐতিহ্য এই ভাবেই লুণ্ঠিত হচ্ছে।
হীরালাল শীল
কলকাতা-১২
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy