ছবি: সংগৃহীত
‘সরস্বতী পুজোয় পরীক্ষা নয়: পার্থ’(১১-১) খবরটি ছোট হলেও, বিষয়টি ছোট নয়। কারণ বিতর্কের কেন্দ্রে আছেন সরস্বতী। বৈদিক যুগ থেকে নদী থেকে নারী তথা দেবীত্বে রূপান্তরিতা তিনি। তিনি ব্রহ্মার মানসকন্যা; আবার পত্নীও। নারায়ণের স্ত্রী রূপেও তাঁকে ভাবা হয়। আবার চিত্রশিল্পী মকবুল ফিদা হুসেনের আঁকা সরস্বতীর ছবি নিয়েও অনেকের অসন্তোষ কারও অজানা নয়। ব্রাহ্ম হয়েও রবীন্দ্রনাথ সরস্বতী-বন্দনায় মুখর হয়েছেন বারংবার।
অথচ সিটি কলেজ প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর উপলক্ষে সরস্বতী পুজোর আয়োজন করা হলে কর্তৃপক্ষ তাতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। শুরু হয় বিক্ষোভ। এগিয়ে আসেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। ছাত্রদের আন্দোলন দেখে বলেন, ‘‘এই আন্দোলনের প্রতি আমার উষ্ণ ও অকুণ্ঠ সমর্থন আছে।’’ জটিলতা বেড়ে যায়। কর্তৃপক্ষ ব্রাহ্মসমাজের দোহাই পেড়ে দ্বারস্থ হন রবীন্দ্রনাথের। যিনি কবি হিসেবে বাণীবন্দনায় মুখর, তিনিই বিরূপ মন্তব্য করেন ব্রাহ্ম হিসেবে। বলেন, ‘‘প্রতিমা পূজা করিবার জন্য জিদ অশোভন।’’ ঘৃতাহুতি পড়ে আগুনে। সুভাষচন্দ্র ব্যথিত হয়ে বলেন, ‘‘রবীন্দ্রনাথের ন্যায় ব্যক্তির পক্ষে নিরপেক্ষ থাকাই সঙ্গত ছিল।’’ সুতরাং সরস্বতীর শ্বেতকমলে বারে বারেই কাদা লেগেছে। এ বছরের বিতর্ক নতুন কিছু নয়।
তরুণ মুখোপাধ্যায়
ঝাঁপানতলা, হুগলি
সাবধান
বিজেপি শাসিত অসমে ‘খেলো ইন্ডিয়া’-র উদ্বোধন বাতিল করতে বাধ্য হলেন ছাপ্পান্ন ইঞ্চির ছাতি। ভাবা যেত মাসখানেক আগে? অরাজনৈতিক রামকৃষ্ণ মিশনের স্কুল-কলেজের প্রাক্তনীরা কর্তৃপক্ষকে ইমেল করলেন, মোদীর বেলুড় মঠ সফর বাতিল করতে অনুরোধ করে। ভাবা যেত কয়েক দিন আগে? মোদীর সঙ্গে মমতা মিটিং করলেন বলে, কলকাতা শহরে ‘গো ব্যাক মোদী’র পাশাপাশি স্লোগান উঠল ‘গো ব্যাক মমতা’— ভাবা গিয়েছিল, তার এক ঘণ্টা আগেও? দেশ পাল্টাচ্ছে। এ প্রতিবাদ আর কোনও নির্দিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে নয়; যে কোনও অনৈতিকতার বিপক্ষে। তাই নেতানেত্রীরা সাবধান।
দেবাশীষ মিত্র
কলকাতা-৭০
নাগরিকত্ব
নাগরিকত্ব সংশোধন আইনের প্রাসঙ্গিক দু’টি দিকের কথা সে ভাবে আলোচনায় উঠে আসছে না। বাংলাদেশ রাষ্ট্রে অন্তত দেড় কোটি হিন্দু স্বচ্ছন্দে আছেন। নিজেকে তাঁদের স্বঘোষিত অভিভাবক প্রতিপন্ন করতে দিয়ে ভারত সরকার সে-দেশের এই মানুষগুলির ভাবমূর্তিকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। ভারত সরকারকে এ অধিকার কে দিয়েছে?
দ্বিতীয়ত, এই উপমহাদেশে আজ বাংলাদেশ ছাড়া ভারতের যথার্থ বন্ধুরাষ্ট্র কেউ নেই। পাঁচ দশক আগে বহু রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ পাকিস্তানের দ্বিজাতিতত্ত্বের কারাগার ভেঙে বেরিয়ে এসেছে। সেই বাংলাদেশকে পাকিস্তানের সঙ্গে একাসনে বসিয়ে ভারতের বিদেশনীতির মর্মস্থলে কুঠারাঘাত করা হল। পরে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার হাস্যকর চেষ্টা করলেও, লাভ হল কি?
শেখর মৈত্র
কলকাতা-২৯
লোকসংখ্যা
১৯৫১ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত সময়ে ভারতের লোকসংখ্যা ৩৬,১০,৮৮,৪০০ থেকে বেড়ে হয়েছে ৫৪,৮১,৬০,০৫০। অর্থাৎ, ওই সময়ে ভারতের লোকসংখ্যা বেড়েছে শতকরা ৫১.৮০ ভাগ। ওই সময়ে অসমে লোকসংখ্যা ৮০,২৯,১০০ থেকে বেড়ে হয়েছে ১,৪৬,২৫,১৫৭, অর্থাৎ, শতকরা বৃদ্ধির হার ৮২.১৫। পঞ্চাশোত্তর দুই দশকে সারা ভারতের তুলনায় অসমের অস্বাভাবিক লোকসংখ্যা বৃদ্ধি হওয়া সত্ত্বেও, এনআরসি প্রস্তুত করতে নির্ণায়ক বছর ১৯৭১ হল কেন? এটা ঘটনা যে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান-সহ ভারতের অন্যান্য অংশের অধিবাসী, কৃষি, শিল্প, বাণিজ্য, শিক্ষা, প্রশাসন— সর্ব ক্ষেত্রে অসমে প্রবেশ করেন এবং অধিবাসী হন। আগত জনগণ রাজ্যকে সার্বিক ভাবে ঋদ্ধ করেন। মনে রাখতে হবে, এই সময়ে অসমে বঙ্গাল-খেদা এবং হিন্দু-বিরোধী আন্দোলন সংঘটিত হয়েছে। তা সত্ত্বেও এই তুলনামূলক বেশি লোকসংখ্যা বৃদ্ধি। যখন অসম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, অসমের প্রতিনিধিরা ১৯৭১ সালের আগের অভিবাসীদের মেনে নেন, নিজেদের স্বার্থে। এ বার দেখা যাক, ১৯৭১ সালের পরবর্তী চেহারা কী? ৪০ বছর পর ২০১১ সালে ভারতের লোকসংখ্যা হয় ১২১,০১,৯৩,৪২২, অর্থাৎ এই ৪০ বছরে সারা ভারতের লোকসংখ্যা বৃদ্ধির শতকরা হার ১২০.৭৭। আর ওই সময়ে অসমের লোকসংখ্যা বেড়ে হয় ৩,১১,৬৯,২৭২, অর্থাৎ একই ৪০ বছরে অসমের লোকসংখ্যা বৃদ্ধির শতকরা হার ১১৩.১২। উপরের সমস্ত লোকসংখ্যার তথ্য ভারতের সেনসাস প্রতিবেদন অনুযায়ী। এর থেকে আমরা নির্ণয় করতে পারি, ১৯৭১ থেকে ২০১১— এই সময়ে অসমের লোকসংখ্যা বৃদ্ধির হার সারা ভারতের বৃদ্ধির হার থেকে অনেক কম। এর পর এনআরসি’র চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন ১৯,০৬,৬৫৭ জন। এঁদের বাদ দিলে ওই ৪০ বছরে অসমে লোকসংখ্যা বৃদ্ধির হার আরও কমে দাঁড়ায় শতকরা ১০০.০৮। এই হার সত্যি ধরলে বলতে হয়, অসমে লোকসংখ্যা বৃদ্ধির হার সারা দেশের গড় বৃদ্ধির থেকে ২০.৬৯ শতাংশ কম। এটা কতটা গ্রহণযোগ্য? সেনসাস প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৫ সালে সারা ভারতে জন্মহার এবং মৃত্যুহার যথাক্রমে প্রতি হাজার জনে ২০.২০ জন এবং ৬.৫০ জন। আর অসমের ক্ষেত্রে ২০১৫ সালে জন্মহার এবং মৃত্যুহার যথাক্রমে প্রতি হাজারে ২১.২০ জন এবং ৭.১০ জন। সুতরাং, অসমে লোকসংখ্যা কম বৃদ্ধির কারণ এখানেও নেই। তা হলে অসম রাজ্যে লোকসংখ্যা বৃদ্ধিতে অভিবাসীদের ভূমিকা কী?
পঙ্কজ কুমার চট্টোপাধ্যায়
খড়দহ, উত্তর ২৪ পরগনা
সমীকরণ
এনআরসি একটি সরকারি পদ্ধতি, যার মাধ্যমে দেশের অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করে, দেশ থেকে বিতাড়িত করা হয়।
এনপিআর হল দেশের সাধারণ বাসিন্দাদের রেজিস্টার। সিটিজ়েন রুল, ২০০৩-এ বলা রয়েছে, এনপিআর-এর তথ্য শুধুমাত্র এনআরসি আপডেটে কাজে লাগবে। এর সঙ্গে সরাসরি নাগরিকত্বের সম্পর্ক নেই। এর মুখ্য উদ্দেশ্য usual-non usual resident চিহ্নিত করা ও সাধারণের জন্য ওয়েলফেয়ার প্রোজেক্ট সামনে আনা।
সিএএ নতুন এক আইন যার দ্বারা পাকিস্তান, আফগানিস্তান,বাংলাদেশ থেকে অত্যাচারিত সংখ্যালঘুরা (হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন, খ্রিস্টান, পার্সি) এ দেশে এসে নাগরিকত্ব পাবেন। তাঁদের অবৈধ অনুপ্রবেশকারী হিসেবে গণ্য করবে না সরকার।
২০১০ সালে এনপিআর হয়েছিল, ২০১৫ সালে আপডেট-ও হয়েছিল ১৫ পয়েন্টের ভিত্তিতে। তবে ২০১০ সালের ডেমোগ্রাফিক ডিটেলস-এ পূর্বতন সরকার 'date and place of birth of parents' এবং 'last place of residence' চায়নি। যার জন্য এখন এত বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে। ২০১৪ সালে হোম মিনিস্ট্রি ঘোষণা করেছিল, "The NPR is the first step towards creation of NRC by verifying the citizenship status of every usual resident."
তিনটে জিনিস একত্র করলে দাঁড়ায়— এই সরকার প্রথমে এনপিআর-এর মাধ্যমে সেনসাস ডেটা কালেকশনের গপ্পো শুনিয়ে এনআরসি-র প্রথম ধাপ অর্থাৎ usual resident-দের নাম পাকা করবে। পরবর্তী পদক্ষেপে বিপুল টাকা খরচের মাধ্যমে দেশ জুড়ে এনআরসি চালু করে, ডিটেনশন ক্যাম্পে অবৈধ অভিবাসীদের পাঠাবে, সে হিন্দু হোক বা মুসলিম। শেষ পদক্ষেপে সিএএ-র মাধ্যমে তিন দেশ থেকে আসা সংখ্যালঘু ও ডিটেনশন ক্যাম্পে থাকা হিন্দুদের নাগরিকত্ব প্রদান করবে। খেলাশেষে বাদ পড়লেন দেশি মুসলমানেরা। এ হল ঘৃণ্য রাজনীতি।
ঋজিৎ পাল
কলকাতা-১৩০
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy