Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Recruitment Scam

সম্পাদক সমীপেষু: অন্যায়ের পক্ষে

এক আশ্চর্য বাংলায় আমরা বাস করছি। এখানে মেধা লুটায় রাস্তায়, মেধা বসেছে ধর্নায়, মেধার চোখে জলের ধারা।

A Photograph of a protest

এখানে মেধা লুটায় রাস্তায়, মেধা বসেছে ধর্নায়, মেধার চোখে জলের ধারা। ফাইল ছবি।

শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০২৩ ০৬:০৫
Share: Save:

‘চাকরি খাবেন না: মুখ্যমন্ত্রী’ (১৫-৩) শীর্ষক প্রতিবেদন প্রসঙ্গে এই লেখা। এক আশ্চর্য বাংলায় আমরা বাস করছি। এখানে মেধা লুটায় রাস্তায়, মেধা বসেছে ধর্নায়, মেধার চোখে জলের ধারা। আর অন্য দিকে, অনৈতিক ভাবে কিছু অযোগ্য মানুষ রাজ্যের বিভিন্ন স্কুলে টাকার বিনিময়ে শিক্ষক, অশিক্ষক কর্মচারী, অথবা চতুর্থ শ্রেণির পদে চাকরি করছে। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, তাদের যেন চাকরি না যায়! ছোটবেলা থেকে যে ছেলে বা মেয়েটি ভাল পড়াশোনা করেছে জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য, তাদের বঞ্চিত করে এক দল অযোগ্য মানুষ অর্থের বিনিময়ে চাকরি করছে! মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, যে সমস্ত অযোগ্যের চাকরি যাচ্ছে, তাঁদের সংসার আছে, বাবা-মা আছেন। কিন্তু উনি এক বারও বলছেন না, যে যোগ্য মানুষেরা চাকরি পেলেন না, তাঁদের কেন ঠিক ভাবে সংসার চালানো যাচ্ছে না, তাঁরা কেন তাঁদের বৃদ্ধ বাবা-মাকে দেখতে পারছেন না। পর্ষদ যে ৩৪৭৮ জনের নামের তালিকা আদালতে জমা দিয়েছে, যা সমাজমাধ্যমে দেখা যাচ্ছে এবং সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে, সেখানে প্রকৃত নম্বর এবং অবৈধ উপায়ে নম্বর বাড়িয়ে দেওয়ার পর দুটোর পার্থক্য দেখে আমরা, এই বাংলার সাধারণ মানুষেরা স্তম্ভিত হয়ে যাচ্ছি।

আদালত হস্তক্ষেপ করায় শাসক দলের অনেক মন্ত্রী ছোট-বড় অনেক নেতার আত্মীয়-স্বজনের চাকরি চলে যাচ্ছে। সেই চাকরিগুলো যাতে থেকে যায়, তার জন্য কেন এই অনুরোধ? মুখ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ করব, অযোগ্যদের কথা না ভেবে যোগ্য প্রার্থীদের কথা ভাবুন। তাঁদের কষ্টের কথা, মানসিক যন্ত্রণার কথা ভাবুন। তাঁরা যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও চাকরি না পাওয়ায় অর্থনৈতিক ভাবে বঞ্চিত হয়েছেন। সেই কারণেই তাঁদের মধ্যে অনেকের পরিবার সঙ্গে থাকে না, তাঁরা তাঁদের বাবা-মার দেখভাল করতে পারেন না।

মিঠু মণ্ডল, কৃষ্ণনগর, নদিয়া

শিশুসুলভ

গত ১৪ মার্চ আলিপুর আদালতের এক অনুষ্ঠানে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতিতে অযোগ্য চাকরিপ্রাপকদের চাকরি না খাওয়ার জন্য কলকাতা হাই কোর্টের উদ্দেশ্যে আবেদন জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিছু কাল পূর্বেও তিনি এই রকম মতামত প্রকাশ করেছিলেন। অথচ দুঃখের কথা, যোগ্য হয়েও যাঁরা চাকরি পেলেন না, চাকরি পাওয়ার জন্য ঘুষ দেননি বা ন্যায্য পথে চাকরি পাওয়ার জন্য রোদ, জল, ঝড় উপেক্ষা করে বৎসরাধিক কাল ধরে আন্দোলনরত, তাঁদের প্রতি প্রশাসনের কেউ বিন্দুমাত্র সহানুভূতি তো প্রকাশ‌ই করেননি, উল্টে তাঁদের আদালত দেখিয়ে আসা হয়েছে এ-তাবৎ কাল। আরও আশ্চর্য লাগে এই কথা ভেবে যে, যাঁরা আদ্যন্ত সৎ পথে থেকে চাকরি পাওয়ার পরীক্ষা দিয়ে যোগ্যতা অর্জন করেছেন, তাঁদের বঞ্চনাকে স্বীকৃতি না দিয়ে, তাঁদের ন্যায্য চাকরির বন্দোবস্তের কথা না বলে, যাঁরা প্রায় কোনও চেষ্টা না করেই ঘুষ দিয়ে (মুখ্যমন্ত্রীর‌ই দলের মন্ত্রী এবং অন্য ছোট-বড় নেতাদের) বা অন্য নানা অসৎ উপায়ে চাকরি পেয়েছেন, তাঁদের হয়ে বিচারব্যবস্থার কাছে আবেদন করছেন খোদ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী! এ কোন রাজ্যে আমরা বাস করছি! মুখ্যমন্ত্রীর এই আবেদনে সাড়া দেওয়ার অর্থ দুর্নীতিকে আদালত/ বিচারব্যবস্থার মাধ্যমে স্বীকৃতি দেওয়ার চেষ্টা। এটা কি আদৌ কোনও সভ্য, গণতান্ত্রিক দেশে করা যায়? তা ছাড়া, প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিচারব্যবস্থার উপর এ রকম পরোক্ষ ভাবে চাপ দেওয়া আদৌ সমীচীন কি না, এ নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে।

যাঁরা অসৎ উপায় অবলম্বন করেননি এবং যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও দুষ্টচক্র এবং সমাজবিরোধীদের জন্য চাকরি পাননি, তাঁদের কি ঘর-সংসার পাতার ইচ্ছা নেই, না কি তাঁদের বাবা-মায়ের মুখে অন্ন জোগানোর‌ ইচ্ছা নেই? তা হলে কি এই ভাগ্যহতদের যাবতীয় কামনা-বাসনা তাঁদের আন্দোলনের সঙ্গে পথেই শেষ হয়ে যাবে? পশ্চিমবঙ্গের ইতিহাস, শিক্ষা ও সংস্কৃতি যদি কিছুমাত্র এই সরকার বুঝতে পারত, তা হলে মহামান্য উচ্চ আদালতের কাছে এমন ধরনের শিশুসুলভ আবদার করা যেত না। এই বার্তা সামগ্রিক ভাবে পশ্চিমবঙ্গের পক্ষে শুভ নয়।

অমিতকুমার চৌধুরী, কলকাতা-৭৫

অবৈজ্ঞানিক

‘বিজ্ঞান ও বৈষম্য’ (২২-৩) শীর্ষক সম্পাদকীয়ের অনুসন্ধান যথার্থ। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করার আগেই আমার বিয়ে হয়ে গিয়েছিল, এক প্রকার জেদ নিয়েই পাঠ শেষ করি। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিত স্নাতকোত্তরের চূড়ান্ত ফলাফলে প্রথম বিভাগে প্রথম হয়ে উত্তীর্ণ হই। খুব ইচ্ছে ছিল গবেষণা করব, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আর হয়নি! সংসার-সন্তানের জট-জটিলতায় এমনই জড়িয়ে গেলাম যে, গবেষণায় আর আত্মনিয়োগ করতে পারিনি। তখন মনে হত, সন্তান প্রতিপালনের যদি একটা সুষ্ঠু ও সহায়ক ব্যবস্থাপনা থাকত, ঠিকই গবেষণায় নিয়োজিত হতে পারতাম। কয়েক বছর পরও মনে হয়েছিল, যদি আবার শুরু করতে পারতাম, তা হলেও কিছুটা এগোনো যেত।

শিক্ষিকা জীবনে অনেক অভিভাবককে দেখেছি, উচ্চ মাধ্যমিকে ছেলেকে ঠিকই বিজ্ঞান বিভাগে পড়াচ্ছেন, অথচ মেধাবী হওয়া সত্ত্বেও মেয়েকে বিজ্ঞান পড়াতে চাইছেন না, কারণ বিজ্ঞান বিভাগে পড়ানোর খরচ বেশি। আমাদের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতিও এমন, অনেক শিক্ষিত মেয়ের বিদ্যা-দক্ষতা-শ্রমও বয়ে যায় রান্নাঘরের নালি দিয়ে!

পরীক্ষানিরীক্ষার মাধ্যমে বিজ্ঞানকে আত্মস্থ করতে হয়। তার জন্য চাই উপযুক্ত পরিকাঠামো। দুর্ভাগ্য, অধিকাংশ স্কুলে তা নেই। ফলে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে অনুসন্ধানের খিদে জাগিয়ে তোলা যাচ্ছে না। বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে তারা। বিজ্ঞানচর্চা অব্যাহত রাখতে প্রথমত বিদ্যালয় স্তরে পরিকাঠামোগত উন্নয়ন ঘটিয়ে ছাত্রছাত্রীদের উৎসাহিত করা এবং প্রতিটি হাই স্কুলে বিজ্ঞান বিভাগ চালু করা প্রয়োজন।

শুভ্রা সামন্ত, বালিচক, পশ্চিম মেদিনীপুর

জরাজীর্ণ

পূর্ব বর্ধমান জেলার মেমারি ১ ব্লকের দলুইবাজার ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত মামুদপুর কেন্দ্রের মল্লিকপুকুর স্থিত ১৪০/৪০৪ অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের ঘরের টিনের ছাউনি ফুটো একাধিক জায়গায়। বহু পুরনো হওয়ায় মরচে ধরেছে টিনের চালে। তাই বৃষ্টি ও রোদ থেকে বাঁচতে ভরসা ত্রিপলের ছাউনি। ঘরের দেওয়াল মাটির গাঁথনির হওয়ায় দীর্ঘ দিন মেরামতি না হওয়ায় সেখানে ফাটল ধরেছে নানা প্রান্তে। নেই কোনও বিদ্যুৎ সংযোগ। গর্ভাবস্থায় মা ও সদ্যোজাত শিশুদের বিভিন্ন রকম প্রতিষেধক দেওয়া হয় এই কেন্দ্র থেকেই বহু সময়। প্রচণ্ড গরম পড়লে নাজেহাল হয়ে যায় তারা বিদ্যুৎ না থাকায়।

অপর দিকে, বৃষ্টি নামলে ফুটো হয়ে যাওয়া টিন দিয়ে জল পড়ে শিকেয় ওঠে কাজকর্ম। এমনকি কেন্দ্রের ভাঙা দেওয়াল দেখে অভিভাবকরাও তাঁদের সন্তানদের স্কুলে পাঠানোর সময় দ্বিধা বোধ করছেন। সব মিলিয়ে দুর্বিষহ অবস্থা এই শিশুশিক্ষা ও পুষ্টিকেন্দ্রের। তাই ‘পাড়ায় পাড়ায় সমাধান’ প্রকল্পে এই সমস্যার সুরাহার দাবি তুলছেন সকলে। সম্ভবত ১৯৯৭-তে প্রতিস্থাপন হয়েছিল এই কেন্দ্র। ২০১৫-তে কিছুটা মেরামত করা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে আমূল সংস্কার না হলে আগামী বর্ষায় এর অনেকটা অংশই ধূলিসাৎ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্কুলেরই সহায়ক-সহ সকলে। এখানে নেই যথাযথ পরিস্রুত পানীয় জলের ব্যবস্থাও, এবং অনেক ক্ষেত্রে বাচ্চাদের খাদ্যের মানও ঠিকঠাক হচ্ছে না। তাই অনতিবিলম্বে উপরিউক্ত এই সকল বিষয়ে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা করার আর্জি জানাচ্ছি।

সন্দীপন সরকার, পাল্লা রোড, পূর্ব বর্ধমান

অন্য বিষয়গুলি:

Recruitment Scam protests Injustice Unemployment
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy