‘ইন্ডিয়া’ জোট। —ফাইল চিত্র।
‘সম্পর্ক টেকসই কি না’ (৩০-৮) শীর্ষক প্রবন্ধে ইন্দ্রজিৎ অধিকারী যা বলেছেন, তা খুব যুক্তিগ্রাহ্য। তিনি জন গটম্যানের পরীক্ষালব্ধ কুড়ি রকমের অভিব্যক্তি যা বিভিন্ন দম্পতির কথা বলার সময় ফুটে ওঠে, তা তুলে ধরেছেন। আমি ‘ইন্ডিয়া’ জোট ভাঙার কারণ হিসাবে সাত নম্বর অভিব্যক্তি যুক্তিযুক্ত মনে করছি— অর্থাৎ, অনমনীয়তা। জনের ‘লাভ ল্যাব’-এ এই বৈঠকটা হলেও ওই বাদাম ভাজা খাওয়া পর্যন্ত থেমে থাকত, লাঞ্চ পর্যন্ত আর পৌঁছত না। কেননা এই প্রেম ওই দম্পতির প্রেমের মতোই ঠুনকো কারণে ভেঙে যাবে। বিয়ে হয়তো হবে, কিন্তু ফুলশয্যা পর্যন্ত পৌঁছবে কি? প্রশ্ন থেকেই যায়। যেমন দেবগৌড়া, আই কে গুজরালের কথাই ধরা যাক। খুব সামান্য কারণে কংগ্রেস এঁদের সরকার থেকে সমর্থন তুলে নিয়েছিল। দেবগৌড়ার বদলে ১৯৯৬ সালে যদি জ্যোতি বসু প্রধানমন্ত্রী হতেন, তা হলে কংগ্রেস ওই ১১ মাসের মধ্যে সরকার ফেলে দেওয়ার দুঃসাহস দেখাত না, অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকই বলেন।
প্রেম আর জোটের পার্থক্য বোঝা গটম্যানের পক্ষেও একটা সমস্যা ছিল, সম্ভবত যা তিনি মেটাতে পারতেন না, বলেছেন প্রবন্ধকার। এই ছদ্মপ্রেমের বিয়ে কী কারণে ভেঙে যেতে পারে? বিচ্ছেদের তিনটি কারণ হতে পারে। এক, প্রধানমন্ত্রিত্বের প্রশ্ন। দুই, দলীয় স্বার্থরক্ষা। তিন, রাজ্যে রাজ্যে প্রতিবন্ধকতা। জনগণ জানেন, বিজেপির মতো সাম্প্রদায়িক শক্তিকে কেন্দ্র থেকে হটানোর লক্ষ্যে এই জোট। কিন্তু জনগণ যখন ভোট দিতে গিয়ে দেখবেন, এই জোটের বিভিন্ন দলের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে, তখন ভাববেন এই জোটের প্রেম সুদৃঢ় নয়। ভোটের আগেই যদি প্রেম ছাঁদনাতলায় আটকে যায়, তা হলে ফুলশয্যা তো অনেক দূর। অতএব নেই মামার চেয়ে কানা মামাই ভাল।
কমল চৌধুরী, কলকাতা-১৪০
ল্যাবের বাইরে
‘সম্পর্ক টেকসই কি না’ প্রবন্ধে প্রবন্ধকার মনোবিদ গটম্যানের তত্ত্বের ভিত্তিতে রাজনৈতিক জোটের বিজ্ঞানসম্মত আলোচনা করেছেন। কিন্তু তিনি হয়তো বুঝতে ভুল করেছেন, রাজনীতিতে ফ্রয়েডের আদিমতার সঙ্গে মিশে আছে কার্ল ইয়ুং-এর সমাজনীতি। গটম্যানের লাভ ল্যাব-এ দম্পতিরা এসে খোলাখুলি আলোচনা করতেন। ফলে ফ্রি অ্যাসোসিয়েশন হত। স্যাম্পলিং পাওয়া যেত সহজে। কিন্তু রাজনীতি স্বার্থের খেলা। খেলা হবে শুধু ভোটের। আর কাউন্সেলিং করার জন্যে শিক্ষার দরকার, দরকার বোধের। কাদা ছোড়াছুড়ি করলে কিছুই আন্দাজ করা যাবে না। রাজনীতিতে সবাই জ্ঞানী। তাই দুধে সোনা মেলে! এবং সেই কারণেই গটম্যান বা তাঁর স্ত্রী জুলিয়ে গটম্যানের ‘সোশ্যাল সিকোয়েন্স অ্যানালিসিস’ রাজনীতিতে ভুল প্রমাণিত হবে। জোটও ভেঙে যাবে। ফ্রান্সিস বেকনের রাজনীতির হাস্যরস নিশ্চয় সবার মনে থাকবে। দেবযান উপন্যাসে লেখক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, “...তোমায় আমি কি বোঝাবো যতুদা, তুমি কি আমার চেয়ে কম বোঝো?”
তন্ময় কবিরাজ, রসুলপুর, পূর্ব বর্ধমান
মানুষের জন্য
বাংলা যে বারুদের স্তূপের উপর দাঁড়িয়ে আছে, তার হাতেগরম প্রমাণ দিল দত্তপুকুরের ঘটনা। রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসনের কাছে বাজি কারখানার কোনও খবর নেই, এ কথা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। সাধারণ মানুষের উপর রাজনৈতিক নেতাদের কোনও রকম দায়বদ্ধতা না থাকলেও দেশের এক জন নাগরিক হিসাবে সহ-নাগরিকের উপর সামাজিক, নৈতিক দায়বদ্ধতা আমরা নতমস্তকে গ্রহণ করি। এই দায়বদ্ধতা থেকেই বেশ কিছু প্রশ্ন উঠে আসছে। রাজ্যে বাজি কারখানা কোথায় কোথায় আছে? এটা যে এখনও রাজ্য প্রশাসনের অগোচরে, তা প্রমাণ করে রাজ্য প্রশাসনের সম্পূর্ণ ব্যর্থতাকে। বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ যে সাধারণ মানুষের প্রাণহানি ঘটাল, সেই দায় কার? বাজি কারখানার মালিকের, না কি সরকারের? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে বেশ কয়েক আলোকবর্ষ অপেক্ষা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই।
যে কোনও মৃত্যু দুঃখজনক। এই দুঃখজনক ঘটনা নিয়ে রাজ্যের রাজনৈতিক দলগুলি পারস্পরিক দোষারোপে ব্যস্ত। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সাহায্য করবার যে নৈতিক তাগিদ রাজ্যের রাজনৈতিক দলগুলির কাছে রাজ্যের সাধারণ মানুষ আশা করেন, সেই তাগিদে কোথাও যেন ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। মনে রাখা প্রয়োজন, শুধুমাত্র পেটের টানেই গরিব মানুষ এই বিপজ্জনক পেশাকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকেন। প্রকৃতপক্ষে ‘গরিবি হটাও’ শুধুমাত্র স্লোগানই থেকে গিয়েছে। এর বাস্তবায়ন হয়নি। ‘অচ্ছে দিন’-এর স্বপ্ন আমরা দেখেছি, কিন্তু বাস্তবায়ন কয়েক আলোকবর্ষ দূরে অপেক্ষা করছে। অপেক্ষার সময় বড়ই দীর্ঘস্থায়ী। এমতাবস্থায় রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি, অবিলম্বে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে কোনও রকম এককালীন অর্থ নয়, মাসিক ভাতা দশ থেকে বারো হাজার টাকার ব্যবস্থা করা হোক। এ কথা প্রমাণিত যে, গরিব মানুষ এককালীন টাকা ধরে রাখতে পারেন না। এই বাস্তবতাকে সামনে রেখে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে প্রতি মাসে আর্থিক সাহায্য করলে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পরবর্তী প্রজন্ম এবং নিকট আত্মীয় দু’বেলা ভাতের নিশ্চয়তা পাবে। পাশাপাশি সমস্ত ধরনের বাজি নিষিদ্ধ করা হোক। শব্দবাজি কিংবা আলোর বাজি— দুই-ই পরিবেশ দূষিত করে। এই দূষণ থেকে রাজ্যের সাধারণ মানুষকে বাঁচাতে রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে উপযুক্ত পদক্ষেপ করতে হবে। সমস্ত রাজনৈতিক দলকে এগিয়ে আসতে হবে। পারস্পরিক দোষারোপ নয়, সহযোগিতার মধ্য দিয়ে দত্তপুকুরে নিহতদের পরিবারের নিকট আত্মীয়দের পাশে দাঁড়িয়ে এখনই প্রমাণ করতে হবে ‘মানুষ মানুষের জন্য’।
কুন্তল চক্রবর্তী, বনগাঁ, উত্তর ২৪ পরগনা
বিমা কেন?
‘পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য বিমা করাবে বঙ্গ-সরকার’ (২৪-৮) শীর্ষক সংবাদ পড়ে আমি বিস্মিত। লকডাউনের সময় পরিযায়ী শ্রমিকদের অসহনীয় দুর্দশার কথা ব্যক্ত করে রাজ্য সরকার এ রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য যে পরিকল্পনার কথা শুনিয়েছিল, তা আজ বিশ বাঁও জলে। এখন মুখ্যমন্ত্রী এ রাজ্যের শ্রমিকদের বাইরে না গিয়ে এ রাজ্যেই চা-বিস্কুট, ঘুগনি, পাউরুটি, চপের দোকান করার পরামর্শ দিয়ে শ্রমিকদের মূল সমস্যা ও তার সমাধান থেকে কার্যত দূরে সরে যেতে চাইছেন। এ সব দোকান করে একটা সংসার চালানো এ দুর্মূল্যের বাজারে যে অসম্ভব, তা ব্যাখ্যা করে বলার অপেক্ষা রাখে না। আজ ঘরে ঘরে বেকার। সবাই যদি এমন একটি করে দোকান খুলে বসে যায় তবে কিনবে কে? এ এক অর্থে শ্রমিকদের প্রতি নিষ্ঠুর রসিকতা।
পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বিমা করার যে প্রস্তাব এমএসএমই-র সভায় মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, তাও কি সমর্থনযোগ্য? মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী, বাজি, মৎস্য, তাঁত, কৃষি, স্বনির্ভর গোষ্ঠীর কেউ দুর্ঘটনায় মারা গেলে দু’লক্ষ টাকা আর আহত হলে পঞ্চাশ হাজার টাকা দেবে বিমা কোম্পানি। বিমার টাকা পাওয়ার নানা জটিলতা, দুর্নীতি, মিডলম্যানদের দাদাগিরি, অমানবিকতার অসংখ্য উদাহরণ আছে। বলা বাহুল্য, এই বিমা কোম্পানিকে তাদের প্রিমিয়ামের টাকা জোগাবে রাজ্য সরকার। এ টাকার পরিমাণ অবশ্যই কম হবে না। বিমা কোম্পানি তাদের মোটা লাভের অঙ্ককে সামনে রেখেই হিসাব কষবে। সরকার নিজে টাকা দিলে এই বাবদ খরচ অনেক কম হতে পারে। সরকারি তহবিল থেকে বিমা কোম্পানির লাভকে এ ভাবে সুনিশ্চিত করার পিছনে কোন উদ্দেশ্য কাজ করছে?
গৌরীশঙ্কর দাস, খড়্গপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy