Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
information

সম্পাদক সমীপেষু: তথ্যতন্ত্র সর্বত্রই

মহম্মদ জুবের বা কাশ্মীর জেলবন্দিদের ঘটনার জন্য তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি, আর তথ্যপ্রযুক্তিনিবিড় সমাজমাধ্যমকে একতরফা দোষ দেওয়া হচ্ছে কেন?

শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০২২ ০৫:২১
Share: Save:

তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানিগুলো সম্পর্কে গবেষকদের অভিযোগ, তারা নিজেদের লাভের স্বার্থে তৈরি করে এমন এক ‘তথ্যতন্ত্র’, যেখানে ‘বিদ্বেষে চোবানো, বিদ্রুপে ভাজা, মুচমুচে মিথ্যাগুলো অনেক ফেরি হয়, নিরামিষ তথ্যগুলো পড়েই থাকে’ (‘শয়তানের মেগাফোন’, ২০-৭)। তাঁরা সমাজমাধ্যমকে তাই মনে করেন ‘শয়তানের মেগাফোন’,যা মানুষের জঘন্যতম দিক বাইরে নিয়ে আসে, লিখেছেন স্বাতী ভট্টাচার্য।

প্রশ্ন হল, মহম্মদ জ়ুবের বা কাশ্মীর জেলবন্দিদের ঘটনার জন্য তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি, আর তথ্যপ্রযুক্তিনিবিড় সমাজমাধ্যমকে একতরফা দোষ দেওয়া হচ্ছে কেন? যে কোনও নতুন সমাজে যাওয়ার আগে আমরা সেই সমাজ বিষয়ে ওয়াকিবহাল হয়ে যাই, খোঁজখবর করে নিই। এটাই সামাজিক প্রক্রিয়া। যা কিছু আবর্জনা, তাকে বাদ দিতে হবে— এই সাধারণ নিয়ম তথ্যপ্রযুক্তি সমাজে প্রবেশের আগেই কি জানা ছিল না? এটা তো সংবাদমাধ্যমে প্রিন্ট, অডিয়ো, অডিয়ো-ভিস্যুয়াল সব মাধ্যমের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।

সংবাদ জগতের বাণিজ্যিক সংস্থাগুলো কি সামাজিক দায়িত্ব পালন করে? তাদের মাথায় থাকে সরকারি, বেসরকারি বিজ্ঞাপন থেকে আয়। সেখানে প্রকাশ্যে বা আড়ালে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা থাকে। এ-ও এক ‘তথ্যতন্ত্র’। সংবাদ জগৎ বা গণমাধ্যম কোম্পানি আজ তথ্যপ্রযুক্তি-নির্ভর। এই সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত সব খবর আমরা পড়ি না, সব খবর আমরা শুনি না। আমাদের মানসিক গড়ন, রাজনৈতিক পছন্দ, সাংস্কৃতিক চাহিদা, ব্যক্তিগত অগ্রাধিকার অনুযায়ী ছেঁকে নিই। সমাজমাধ্যমেও আমরা নিজেদের তৈরি এক ‘ফিল্টার’ ব্যবহার করি। আজকের দিনে সমাজমাধ্যম অপরিহার্য। এখানে অনেক খারাপের পাশে অনেক ভাল দিক গড়ে উঠেছে। এখানে মানুষের নিঃসঙ্গতা কিছু কাটছে। ঠিকমতো প্রয়োগ করলে সমাজমাধ্যম সাংগঠনিক স্বচ্ছতা আনবে, আস্থা ও বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াবে। তবে সেটা কতটা হতে পারে, তা সমাজমাধ্যমের সদস্যদের ব্যক্তিগত আচার-আচরণের উপর নির্ভর করে।

শুভ্রাংশু কুমার রায়, চন্দননগর, হুগলি

অশুভ গহ্বর

‘শয়তানের মেগাফোন’ প্রবন্ধটি সময়োপযোগী। চেনা পৃথিবী, চেনা স্বজন, আত্মীয়, বন্ধুরা ক্রমাগত দূরে সরে যাচ্ছেন, অথচ হাতের কাছেই যোগাযোগ করার কত প্রযুক্তি এখন সাধারণ মানুষের আয়ত্তে এসেছে। সেই দিন গিয়েছে, যখন বিপদের দিনে নিকট আত্মীয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পাশের বাড়ির অবস্থাপন্ন গৃহস্থের দরজায় দাঁড়িয়ে কাতর অনুরোধ করতে হত, তাঁদের ব্যক্তিগত দূরভাষে কথা বলার অনুমতি পাওয়ার জন্য। প্রযুক্তির উন্মুক্ত এলাকায় আমরা পৌঁছলাম, কিন্তু তত দিনে নানা জটিলতায় মনের কুঠুরিটা ছোট হয়ে গেল। সমাজমাধ্যমের বন্ধনহীন উন্মত্ততায় কর্পূরের মতো উবে গেল শিষ্টতা, ধৈর্যশীলতা অথবা যুক্তি-বিন্যাসের দক্ষতা। ফলে, সামাজিক কথোপকথনে যে অশুভ গহ্বরের সৃষ্টি হল, তার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করল বিকৃত রাজনীতির ধামাধারীরা। সুস্থ স্বাভাবিক রাজনৈতিক মত বিনিময়কে গ্রাস করল এক ধরনের ঘৃণামিশ্রিত বালখিল্যতা, সঙ্গে দোসর হিসেবে অশ্রাব্য ভাষাসন্ত্রাস। যুক্তিহীনতা, অসত্য, ইতিহাসহীনতার স্রোত বওয়া শুরু হল অপ্রতিরোধ্য ভাবে। ন্যায্যতার ধারণা খড়কুটোর মতো ভেসে গেল। এক লাইনের মধ্যে বিশ্লেষিত হয়ে গেল এক দশকের সমাজ-রাজনীতি সম্পর্কিত আহূত জ্ঞান।

‘আমার ধর্মীয় বোধে আঘাত লেগেছে’— এই কুযুক্তির আড়ালে সংখ্যাগুরু আর সংখ্যালঘু উভয় মৌলবাদীরা ঝাঁপিয়ে পড়ল নিরীহ মানুষের উপর সম্পূর্ণ ভাবে, আপন শাসকশ্রেণির প্রশ্রয়ে। এই ভাবেই গড়ে উঠল অসহিষ্ণুতার, ধৈর্যহীনতার সংস্কৃতি। যা কিছু সুন্দর, তাকেই অসুন্দর করার প্রতিযোগিতা। আলোচনার জায়গায় স্থান করে নিল কুস্তির আখড়া।

এই প্রবণতা প্রযুক্তির হাত ধরে এখন বাইরে থেকে ঘরে ঢুকে পড়েছে। উচ্চশিক্ষিত আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব, কোনও ব্যতিক্রম নেই। সমাজমাধ্যমের চটজলদি রাজনৈতিক মতবাদে মুগ্ধ এই গোষ্ঠী আধিপত্যবাদী রাজনৈতিক পদক্ষেপকে দেশপ্রেমের সঙ্গে একই সমতলে রাখতে দ্বিধা বোধ করে না। হাসতে হাসতে অনেকেই ‘এনকাউন্টার’ বা উন্মত্ত জনতার হাতে অসহায় একক মানুষের নিগ্রহকে সমর্থন করে। সমস্ত ধর্মীয় উন্মাদরা এ ক্ষেত্রে এক বিন্দুতে অবস্থান করে নির্দ্বিধায়। এদের হাত থেকে বাঁচতে বাধ্য হয়ে যেতে হয় প্রসঙ্গান্তরে। ‘আবহাওয়া’ বা ‘খেলা’ জাতীয় নিরীহ বিষয়ে, যা আপাতদৃষ্টিতে বর্ম হিসেবে ব্যবহার করতে বাধ্য হতে হয়। এর থেকে পরিত্রাণের আশু সম্ভাবনা সুদূরপরাহত। তবু যতটুকু সম্ভব, এই অরাজকতার বিরুদ্ধে বলে যেতে হবেই, থামার কোনও উপায় নেই।

পার্থসারথি মুখোপাধ্যায়, কলকাতা-৩৪

গুজবের জয়

‘শয়তানের মেগাফোন’ শীর্ষক প্রবন্ধটি ধারণা দেয় যেন অবোধ, সদাশয়, মহৎ মানবসন্তানকুলকে তথ্য-তান্ত্রিকেরা প্রযুক্তি কোম্পানির হয়ে বিদ্বেষে চোবানো, বিদ্রুপে ভাজা মুচমুচে মিথ্যা গিলিয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু মানুষ নামক চতুর প্রাণিকুল বুঝে বা না-বুঝে কেন গপগপিয়ে এই কুখাদ্য খান, ও অন্যদের গেলাতে থাকেন? তার অন্য ব্যাখ্যা আছে ইউভ্যাল নোহা হারারি-র স্যাপিয়েন্স বইটিতে। যেখানে ব্যাখ্যা করা হয়েছে ‘গসিপ থিয়োরি’ বা গুজব তত্ত্ব। এই ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে মানবসভ্যতা। কাজের থেকে অকাজে, অকারণে, অদরকারি কথা, কথার কথা বলতে বলতে, শুনতে শুনতেই এত দূর এসে এই কালবেলায় অন্যথা করা সম্ভব হচ্ছে না ‘স্যাপিয়েন্স’, অর্থাৎ মানবকুলের পক্ষে। প্রতিটি তথ্যকে বিচারের আলোকে দেখার, বোঝার জন্য যে শ্রম, অধ্যবসায়, নিরপেক্ষ মন প্রয়োজন, সে অন্য সাধনার ধন। সেই সাধনায় চরম নিরুৎসাহী বলেই, শয়তানের মেগাফোন সুরেলা বাজে, অপ্রিয় তথ্য শুনতে না-চাওয়া এবং মিথ্যা সুমধুর প্রতিশ্রুতি শুনতে চাওয়া কানের কাছে। দোষ একতরফা কারও নয়, স্বখাত পঙ্কিল সলিলে ডুবছে মানবসভ্যতা।

মানস দেব , কলকাতা-৩৬

মদের বলি

খবরের কাগজের পাতায় বিষমদে প্রাণহানির যে সব খবর পাই, সেখানে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই থানার মাত্র কয়েকশো মিটারের মধ্যে এই চোলাই মদের কারবার চলতে থাকে। অনেকে এক সঙ্গে মারা গেলে তবে কিছু ঘটনা সামনে আসে, তবে তার প্রতিক্রিয়া বেশি দিন থাকে না। কিন্তু রাষ্ট্র যে প্রাণের মূল্য দিতে বাধ্য। মদ্য সংবিধানের যুগ্ম তালিকায় থাকার জন্য কেন্দ্র এবং রাজ্য এর উপর আইন বানাতে পারে। ফলে, বিহার, গুজরাত, মিজোরাম ও নাগাল্যান্ডের মতো রাজ্যে মদ নিষিদ্ধ হলেও অন্যান্য রাজ্যে তা আইনত স্বীকৃত। যদিও মদ যেখানে নিষিদ্ধ, সে সব রাজ্যের বিধানসভা থেকেই মদের বোতল উদ্ধারের প্রমাণ মিলেছে। ‘বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরো’-র দৃষ্টান্ত তো দেখাই যাচ্ছে! আর যদি আমাদের রাজ্যের কথায় আসি, তা হলে তো বলতে হয়, মদ বিক্রি আছে বলে রাজ্য চলছে। কারণ, পশ্চিমবঙ্গে রাজস্ব আদায়ের বিচারে মদ বিক্রি তিন নম্বরে আসে।

কিন্তু চোলাই মদের পিছনেও কি পরোক্ষ ভাবে সরকার দায়ী নয়? সরকার ঘোষণা করে, কুড়ি টাকায় বাংলা মদ বিক্রির কথা। সেটাকে রোজগারের অব্যর্থ উপায় মনে করে অনেকে এই ব্যবসায় নামেন। কিন্তু কালক্রমে চটজলদি বড়লোক হওয়ার স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করতে তাঁরাও চোলাই মদ তৈরির পথ ধরেন। আর যথারীতি এলাকায় রাজনৈতিক পরিচয়ের জন্য কঠোর আইনকে লঘু করে নেন। মদ বিক্রিতে সরকার যদি এই ভাবে প্রশ্রয় দিতে থাকে, তা হলে বিষমদে প্রাণহানির ঘটনা কোনও দিন কমবে না।

সায়ন্তন টাট, জাঙ্গিপাড়া, হুগলি

অন্য বিষয়গুলি:

information Society
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy