মূল্যবৃদ্ধি আর নতুন কথা নয়। প্রায় সারা বছর মূল্যবৃদ্ধির আঁচে সাধারণ মানুষের হাত পুড়েই চলে। প্রান্তিক মানুষদের কথা বাদই দিলাম, নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারেও আজ নুন আনতে পান্তা ফুরোনোর দশা। বর্তমানে পেট্রল-ডিজ়েলের দাম আকাশ ছুঁয়েছে, যার প্রত্যক্ষ প্রভাব এসে পড়ছে বাজারে। হেঁশেলের গ্যাসের দাম ডিসেম্বরে দু’দফায় ১০০ টাকা বৃদ্ধির পরে আবার সম্প্রতি ২৫ টাকা প্রতি সিলিন্ডারে বৃদ্ধি পেয়েছে, যদিও ভর্তুকি বাড়েনি। সর্ষের তেলের মূল্য প্রতি দিন চড়চড় করে বেড়ে ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছে। সাধারণ বাড়িতে তেল দিয়ে মেখে আলুসিদ্ধ ভাত খাওয়াও যেন আজ বিলাসিতা মনে হয়।
কোভিড-পরবর্তী পরিস্থিতিতে বহু মানুষেরই হয় চাকরি নেই, অথবা কর্মক্ষেত্রে কাজের সঙ্কোচন ঘটেছে। ফলে উপার্জন প্রায় তলানিতে এসে ঠেকেছে। এই অবস্থায় দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির ফলে সংসার চালানোই সমস্যার। দক্ষিণ কলকাতার এক শপিং মলে কাজ করা একটি ছেলে সে দিন কথায়-কথায় বলছিলেন যে, তিনি, এবং তাঁর মতো অনেক কর্মী আগের চেয়ে অনেক কম দিন কাজ পাচ্ছেন, ওভারটাইমও পাচ্ছেন না। ফলে আয় অর্ধেকেরও কম হয়ে গিয়েছে। এই মানুষগুলির কথা আমাদের গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে হবে। এবং মূল্যবৃদ্ধির ব্যাপারে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষকে যথাযথ ব্যবস্থা করতে হবে।
সুশীলা মালাকার সর্দার, বসিরহাট, উত্তর ২৪ পরগনা
অপ্রত্যক্ষ
‘দায় কাহার?’ (সম্পাদকীয়, ২৩-২) পড়ে মনে হল, তেলের দাম বৃদ্ধিতে রাষ্ট্রের ‘বাকি রাখা খাজনা মোটে ভাল কাজ না’ মানসিকতাই প্রকাশ পায়। এই অর্থনৈতিক অবস্থায় উত্তরোত্তর জ্বালানির দাম বৃদ্ধি শাসকের ‘শোষক’ রূপটিকে প্রকাশ করে। এবং তার জন্য পূর্বসূরিদের দোষারোপ করাও হাস্যকর বলে মনে হয়। জ্বালানির দামের ৫৫% দাম আসলে হল সরকারি কর। এই সত্য সবার জানা ও বোঝা খুব দরকার। বহু পরিচিতকে বলতে শুনেছি যে, “আমায় আয়কর দিতে হয় না।” কিন্তু এই যে অপ্রত্যক্ষ কর প্রতিনিয়ত তাঁরা দিয়ে চলেছেন, সেটা কি যথেষ্ট নয়? ব্যক্তিগত গাড়ি হোক, বা স্কুটি কিংবা গণপরিবহণ— সব ক্ষেত্রেই যে জ্বালানির দাম বা টিকিটের ভাড়া আমরা দিচ্ছি, তা তো আসলে করের অংশই। প্রয়োজনীয় রাজস্ব আদায় দরকারি, কিন্তু সঙ্গে নাগরিক সমাজ যাতে মূল্যবৃদ্ধি এবং করের বোঝায় জর্জরিত না হয়ে পড়ে, সেটা দেখাও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের কর্তব্য।
সুমন চক্রবর্তী, কলকাতা-৬৫
ভুল তথ্য
‘দায় কাহার?’ শীর্ষক সম্পাদকীয় খুবই যুক্তিযুক্ত। আমরা কিছুতেই বুঝতে পারছি না, কেন এই মিথ্যাচার? পেট্রলিয়ামের মূল্য আকাশছোঁয়া হওয়ার বিষয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কেন ভুল তথ্য পরিবেশন করছেন? পেট্রলিয়ামের মূল্য নিজেরা বাড়িয়ে তার দায় চাপাচ্ছেন পূর্বতন মনমোহন সিংহ সরকারের উপর।
তেলের উপর বর্ধিত হারে কর আদায় করলে দেশের সব কিছুরই মূল্যবৃদ্ধি হয়। অথচ, ভারতের মানুষকে বোকা বানানোর জন্য স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী এই ভুল তথ্য দিচ্ছেন।
মনশ্রী চৌধুরী, কাটোয়া, পূর্ব বর্ধমান
ধোঁয়াশা
গত ডিসেম্বর থেকে আড়াই মাসে রান্নার গ্যাসের দাম সিলিন্ডারে প্রায় ২০০ টাকা বাড়ল। রাষ্ট্রায়ত্ত তেল-গ্যাস সংস্থাগুলোর সাম্প্রতিক ঘোষণা অনুযায়ী, ১৪.২ কিলোগ্রামের ভর্তুকিহীন সিলিন্ডারের দাম আরও ২৫ টাকা বেড়ে ৮২০.৫০ টাকা হল। দু’সপ্তাহ আগেই বাড়িতে ব্যবহার করার সিলিন্ডারের দাম বেড়েছিল ৫০ টাকা। কিন্তু ভর্তুকির অঙ্ক অপরিবর্তিতই রয়ে গিয়েছে। এর ফলে মধ্যবিত্তের হেঁশেলে নাভিশ্বাস উঠছে। এমনও শোনা যাচ্ছে, রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডারের দাম বাড়লেও ভর্তুকি বাড়বে না। অর্থাৎ, বছরে ১২টি সিলিন্ডারে যে সামান্য ভর্তুকি মিলত, তাও তুলে দেওয়ার ইঙ্গিত মিলেছে। প্রায় ২৮ কোটি উপভোক্তার উপরে বাড়তি বোঝা চেপেছে।
বেশ কিছু দিন ধরেই চুপিসারে গ্যাসে ভর্তুকির অঙ্ক কমিয়ে আনছে কেন্দ্র। কারণ, প্রতি বারে সিলিন্ডারের দাম কতটা বাড়বে, সেটা জানানো হচ্ছে, কিন্তু ভর্তুকির অঙ্ক কতটা বাড়বে, সেই বিষয়টি গোপন থাকছে। ফলে ধোঁয়াশা তৈরি হচ্ছে। পাশাপাশি কেরোসিনের দামও বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কাজেই সাধারণ মানুষের কাছে রান্না করার জন্য দুটো ভাত ফোটানো সাধ্যাতীত হয়ে পড়েছে।
ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলোতে পেট্রল-ডিজ়েলের দাম অনেক কম। ভারতে গত দু’মাসে চার বার গ্যাস সিলিন্ডারের দাম বাড়ানো হয়েছে। ক্রমান্বয়ে রান্নার গ্যাস, পেট্রল-ডিজ়েল, কেরোসিনের দাম বাড়ানো প্রকৃতপক্ষে জনবিরোধী নীতি। কেন্দ্রীয় সরকার বা রাজ্য সরকার, কেউই দায়িত্ব অস্বীকার করতে পারে না। দেখা যাচ্ছে, সাম্প্রতিক সময়ে কাজের সুযোগ কমেছে, বেকারত্ব বেড়েছে। যদিও রাজ্য সরকার এক টাকা দাম কমিয়েছে, এতে কি মানুষের কিছু সুরাহা হবে?
পরেশনাথ কর্মকার, রানাঘাট, নদিয়া
চাই প্রত্যাহার
সরকার প্রায়ই বলে থাকে যে, পেট্রোপণ্যের দাম নির্ভর করে আন্তর্জাতিক বাজারের দামের উপর। কিন্তু বাস্তবে আমরা দেখি, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে এ দেশে দাম বাড়ে। কিন্তু দাম কমলে আমাদের পেট্রল, ডিজ়েলের দাম কমে না। করোনা কালে আন্তর্জাতিক বাজারে পেট্রোপণ্যের দাম একেবারে তলানিতে ঠেকেছিল। কিন্তু সরকার আরও বেশি কর, সেস বসাল। ফলে দাম কমল না, একই থাকল। সেই হার এখনও বলবৎ আছে। ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম ব্যারেল প্রতি প্রায় ১০৮ ডলার ছিল, বর্তমানে ব্যারেল প্রতি দাম ৬০ ডলার। তা হলে দেশে তেলের দামের এত কেন মূল্যবৃদ্ধি? তখনকার ডলারের দাম এখনকার থেকে কম ছিল। কিন্তু হিসেব করলে দেখা যাবে, এখনকার তেল আমদানির মূল দাম অনেক কম। কারণ, সরকার আমদানি শুল্ক এবং ভ্যাট বাবদ প্রতি লিটারে আদায় করে ৫২ টাকা ৫৩ পয়সা। এর মধ্যে রাজ্য সরকার পায় ভ্যাট বাবদ ১৯ টাকা ৫৫ পয়সা, বাকিটা কেন্দ্রীয় সরকার পায়। কেন্দ্রের উচিত, এই সময় অতিরিক্ত শুল্ক প্রত্যাহার করে পেট্রোপণ্যের দাম কমানো।
তপন কুমার রায়, কলকাতা-৭৫
যাঁরা বিস্মৃত
সাম্প্রতিক ট্যাক্সি ধর্মঘটের কারণ পেট্রল-ডিজ়েলের লাগাতার মূল্যবৃদ্ধি। বাসও সেই পথে। সত্যিই তো, তাঁদেরও সংসার চালাতে হয়। করোনা-পরবর্তী কালে জিনিসপত্রের দামে লাগামহীন বৃদ্ধি। সরকার যেন ভুলে গিয়েছে, অনেক প্রবীণ নাগরিক আছেন, যাঁরা পেনশন পান না। কেউ হয়তো বা ১০০০ টাকা পরিবার পেনশন পান, কেউ তা-ও পান না। কারও অবসরের সময় প্রাপ্ত টাকা ব্যাঙ্কে রেখে সুদের টাকায় সংসার চলে। সুদও ক্রমহ্রাসমান। ওষুধের খরচ আছে। মূল্যবৃদ্ধির মুখে এঁদের সাহায্যে কেউ এগিয়ে আসে না।
দিলীপকুমার ভট্টাচার্য, কলকাতা-৫৭
রক্তদাতা
রক্তদাতাদের সরকার নির্ধারিত জলযোগের জন্য অর্থবরাদ্দের পরিমাণ মাত্র ২৫ টাকা, যা বর্তমান বাজার মূল্যে খুবই সামান্য। রক্তদাতাদের জলযোগের অর্থমূল্য বৃদ্ধির জন্য সরকারের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। সর্বস্তরেই অর্থবরাদ্দের পরিমাণ বাড়ছে। কিন্তু যাঁদের দেওয়া রক্তে অন্যের প্রাণ রক্ষা হচ্ছে, তাঁদের প্রতি সরকারের যেন নজর নেই।
জয়দেব দত্ত , কাটোয়া, পূর্ব বর্ধমান
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy