Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
physically challenged

সম্পাদক সমীপেষু: অপাঙ্‌ক্তেয় প্রতিবন্ধী

আমাদের দেশে গণপরিবহণ কিংবা অফিস, কোথাও প্রতিবন্ধীদের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেই।

শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০২১ ০৪:১৭
Share: Save:

অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘সদিচ্ছা নেই, সক্রিয়তাও নেই’ (৩-৪) লেখাটি অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত। এ পোড়া দেশে কোনও সাধারণ নাগরিকেরই দাম নেই, সে সুস্থ হোক বা প্রতিবন্ধী। রাজনৈতিক ব্যক্তিদেরই একমাত্র দাম আছে। মনে পড়ে যায় গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাকের ক্যান দ্য সাবঅল্টার্ন স্পিক? বইটির একটি বাক্য, “আমাদের সাবঅল্টার্নদের থেকে শেখা দরকার।” সাবঅল্টার্ন কারা? যাঁদের ক্ষমতা নেই। যাঁদের কথা কেউ শোনে না। বর্তমান পরিস্থিতিতে এক বিপুল সংখ্যক মানুষ এই শ্রেণিভুক্ত। প্রতিবন্ধীরাও তার আওতাভুক্ত। তাঁদের অসুবিধাগুলো শোনা খুব জরুরি। দুর্ভাগ্যবশত, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হুইলচেয়ারে বসায় তাঁর জন্য তড়িঘড়ি সব রকম বন্দোবস্ত করা হল, যাতে তাঁর কোনও অসুবিধে না হয়। সংবিধান অনুযায়ী, এক সাধারণ নাগরিকের ক্ষেত্রেও সেই একই সুযোগ-সুবিধা পাওয়া উচিত, যদি তিনি দুর্ঘটনাগ্রস্ত হন। কিন্তু বাস্তবে তা হয় না। এ এক নির্মম উপহাস সেই মানুষটির প্রতি।

আমাদের দেশে গণপরিবহণ কিংবা অফিস, কোথাও প্রতিবন্ধীদের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেই। একটি মানুষ যদি জন্ম থেকে প্রতিবন্ধী হন বা দুর্ঘটনায় প্রতিবন্ধী হন, তা হলে সমাজের কাছে তিনি অপাঙ্‌ক্তেয়। রাজ্য হোক বা কেন্দ্র, সরকারের অবশ্যকর্তব্য প্রতিবন্ধীদের জন্য পরিকাঠামোর উন্নতি করা। এক জন সুস্থ, পায়ে হাঁটা মানুষ এবং হুইলচেয়ারে আসা মানুষকে সমান গুরুত্ব দিতে হবে। প্রতিবন্ধীদের চলাচলের জন্য নির্দিষ্ট রাস্তা, দোকান বাজার, শপিং মলে সুষ্ঠু যাতায়াতের ব্যবস্থা, সহজে ট্রেনে চড়ার ব্যবস্থা করা দরকার। চাকরির ক্ষেত্রে তাঁর অক্ষমতা নয়, বরং তাঁর ক্ষমতা এবং ভাল দিকগুলোকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখা দরকার। লেখকের কথার সুর টেনে বলব, সুস্থতা আর প্রতিবন্ধকতার মাঝে ব্যবধান শুধু একটা দুর্ঘটনা বা অসুখের।

সুমন চক্রবর্তী, কলকাতা-৬৫

দু’টাকা

অভিজ্ঞান সরকারের ‘খুচরো ভাড়া ও হিংসার দুনিয়া’ (১-৪) সম্পর্কে বলতে চাই, দীর্ঘ লকডাউনের পর যখন বাস চলতে শুরু করল, তখন বাস কন্ডাক্টরদের মতোই হাসি ফুটেছিল মধ্যবিত্ত মানুষদের। আনলক পর্ব শুরু হতেই খুলতে শুরু করল অনেক প্রতিষ্ঠান, কারখানা, বেসরকারি অফিস, দোকান। কিন্তু তখনও ট্রেন চলেনি, একটা গাড়ি ভাড়া করে গেলে খরচ অনেক। তবু অনেকে মিলে গাড়ি ভাড়া করে শহরে পৌঁছেছেন কাজের জন্য। যেখানে বারুইপুর থেকে বড়বাজার পৌঁছতে ট্রেন-বাস মিলিয়ে খরচ হয় ১৫-২০ টাকা (ট্রেনের মান্থলির হিসেব ধরলে), সেখানে দু’পিঠের যাতায়াতে খরচ হয়ে যাচ্ছে কখনও ২০০ টাকা কিংবা তার বেশি। এখন কন্ডাক্টর যদি ২ টাকা বেশি চান, তাতে আমাদের গায়ে লাগবে কেন? আমরা জানি, তাঁরা ভাড়া-বহির্ভূত টাকা চাইছেন, কিন্তু মানবিকতার প্রশ্নে কি আমরা সেটা দিতে পারি না? শ্রম দফতরের ওয়েবসাইটে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট কর্মীদের যে মাসিক বেতনের তালিকা দেওয়া আছে, তা কি মানা হয়? হলে কি কন্ডাক্টর এই ভাবে ২ টাকা হাত পেতে নিতেন, না কি যাত্রী তোলার জন্য এত প্রতিযোগিতা হত? ২ টাকার জন্য অবিশ্বাস, হিংসা সহ্য করতে হচ্ছে এই কন্ডাক্টর ভাইদের, এটা মেনে নেওয়া যায় না।

কিছু দিন আগেই গিয়েছিলাম ফলতায়। দেখলাম, এক বয়স্ক মহিলা উঠলেন বাসে, কন্ডাক্টর হাত ধরে তাঁকে বসালেন। কিন্তু ভাড়া ১৫ টাকা শুনে কাপড়ের আঁচলের গিঁট খুলে ১০ টাকার নোট বার করে কন্ডাক্টরের হাতে দিয়ে বৃদ্ধা বললেন, “বাবা এটা রাখো। আর নেই।” “উফ, কেন যে তোমরা বাসে ওঠো তা কে জানে।” গজগজ করলেও কন্ডাক্টর কিন্তু ১০ টাকাটাও নিলেন না। এই মানুষগুলি বাড়তি ২ টাকা চাইতে পারেন, কিন্তু মানবিকতার দিক থেকে পিছিয়ে নেই। তাই যাঁদের সামর্থ্য আছে, তাঁরা বাজারের দিকে তাকিয়ে দু’টাকা বাড়তি বাস ভাড়া দিতেই পারেন।

প্রদীপ , কলকাতা-১৪৪

কমিশন

‘খুচরো ভাড়া ও হিংসার দুনিয়া’ নিয়ে একটি ছোট্ট বক্তব্য। কমিশন প্রথার জন্য বেসরকারি বাস-মিনিবাস ইত্যাদিতে সমস্যা দীর্ঘ দিনের। এর শিকার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে সেই যাত্রীরাই। তাই এর অবসান করতে প্রাক্তন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র কমিশনের বদলে মাসিক বেতনের প্রস্তাব করেন। কিন্তু মালিকপক্ষ ও শ্রমিক সংগঠনগুলো একযোগে এর বিরোধিতা করে। পরিকল্পনাটির জন্মের আগেই মৃত্যু ঘটে। তাই অবস্থা দাঁড়িয়েছে, কোনটা মঙ্গলদায়ক, কোনটা জনসাধারণ চায়, সেটা বিবেচনার বিষয় নয়। নেতারা কিসে সন্তুষ্ট, সেটাই শেষ কথা।

শুভাশিস সেনগুপ্ত, কলকাতা-২৫

বিশ্বাস

‘আমরা পারব, এই বিশ্বাস’ (২-৪) শ্যামল চক্রবর্তীর নিবন্ধের পরিপ্রেক্ষিতে বলি, লকডাউনের দিনগুলিতে দিনের পর দিন সরকারি স্বাস্থ্যকর্মী, চিকিৎসক ও প্রশাসকরা জীবনকে তুচ্ছ করে যে ভাবে করোনা মোকাবিলায় মানুষের জীবনরক্ষায় নিজেদের নিয়োজিত করেছেন, তা প্রশংসনীয়। অতিমারির মোকাবিলার লড়াইয়ে শামিল হয়ে অনেক সতীর্থকে হারাতে হয়েছে তাঁদের, যা অত্যন্ত দুঃখের। কিন্তু এই যোদ্ধারা হার মানেননি শত্রুর চোখরাঙানিতে। সরকারি হাসপাতালে দাঁতে দাঁত চেপে সাহসিকতার সঙ্গে প্রতিনিয়ত অদৃশ্য দানবীয় শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়েছেন। কোভিড-আক্রান্তদের পরিচর্যায় তাঁদের ত্রুটি ছিল না।

পরিতাপের বিষয়, সেই দিনগুলিতে জনরোষের মুখে পড়তে হয়েছিল তাঁদের। নিজেদের বসতবাড়ি থেকেও তাঁদের উৎখাত হতে হয়েছিল। সে দিন এঁদের পাশে কম মানুষই এগিয়ে এসেছিলেন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে। অনেক জায়গায় জনরোষে ক্ষত-বিক্ষতও হয়েছেন অনেকে। এক বারও কেউ ভাবেননি এঁদের নিরলস প্রচেষ্টা ও আত্মত্যাগের কথা। কোনও ছুটি ছাড়া, প্রতি দিন সকাল থেকে বিশাল কর্মযজ্ঞকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কঠিন কর্তব্যের কথা। এটা সত্যি, সরকারি চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা জান কবুল করে যদি না করোনা মোকাবিলায় ঝাঁপ দিতেন, তা হলে অতিমারির দাপটে আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা আরও অনেক বাড়তে পারত।

উৎপল মুখোপাধ্যায়, চন্দননগর, হুগলি

সেই স্লোগান

বিধান রায়ের ‘রং-বেরঙের স্লোগান’ (রবিবাসরীয়, ৪-৪) প্রবন্ধের পরিপ্রেক্ষিতে ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ সম্বন্ধে কিছু তথ্য সংযোজন করতে চাই। ৮ এপ্রিল, ১৯২৯ সালে ভগৎ সিংহ ও বটুকেশ্বর দত্ত কেন্দ্রীয় আইনসভার কক্ষে বোমা নিক্ষেপ করে প্রথম ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ (বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক) স্লোগান দেন। রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত মডার্ন রিভিউ পত্রিকার এক সম্পাদকীয় মন্তব্যে ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ স্লোগানটিকে হিংসা ও অরাজকতার প্রতীকরূপে বর্ণনা করা হয়েছিল। এর জবাবে ভগৎ সিংহ একটি রচনা ২৩ ডিসেম্বর, ১৯২৯ সালে সহযোদ্ধা বটুকেশ্বর দত্তের মাধ্যমে প্রেরণ করেন। তিনি সেই রচনাটিতে জানান, রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের মতো যশস্বী সম্পাদকের ত্রুটি অনুসন্ধান তাঁর পক্ষে ধৃষ্টতার নামান্তর। তবুও উত্তর দেওয়া কর্তব্য মনে করে তিনি লেখেন, “এই স্লোগান আমি সৃষ্টি করিনি। রাশিয়ার বিপ্লবী আন্দোলনে এই স্লোগান উঠেছিল। বিখ্যাত সমাজবাদী লেখক আপটন সিনক্লেয়ার তাঁর বস্টন এবং অয়েল উপন্যাসে সন্ত্রাসবাদী বিপ্লবীদের মুখে এই স্লোগান দিয়েছেন। এই স্লোগানের অর্থ এই নয় যে সশস্ত্র সংগ্রাম চিরকাল চলতেই থাকবে, এবং দেশ ও সমাজের বুকে অরাজকতা চিরস্থায়ী হয়ে থাকবে।” তথ্যটির সূত্র— পশ্চিমবঙ্গ পত্রিকা। ভগৎ সিংহের স্মরণে বিশেষ সংখ্যা। সেপ্টেম্বর-অক্টোবর, ২০০৭।

রঞ্জিত কুমার দাস, বালি, হাওড়া

অন্য বিষয়গুলি:

handicap Letters to the editor physically challenged
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy