মোদী সরকারের শেষ পূর্ণ বাজেট মধ্যবিত্তের মৌলিক সমস্যাগুলোর সমাধান করতে ব্যর্থ হয়েছে। প্রতীকী ছবি।
ভারতের বেতনভোগী করদাতারা সব সময়ই প্রতিটি বাজেট থেকে কিছু ছাড়ের প্রত্যাশা করেন, কিন্তু তাঁরা সব সময়ই হতাশ হন। এমনকি অমৃতকালের বাজেটও সেই প্রত্যাশিত লাইন থেকে কোনও বিচ্যুতি দেখায়নি। স্বভাবতই বেতনভোগী শ্রেণির সবাই যা চেয়েছিলেন, তা এ বারের বাজেটেও পাননি। যদিও আয়করের সীমা বাড়ানো হয়েছে, তাও সবার জন্য নয়। দুই লক্ষ টাকা ছাড়ের সুবিধা শুধুমাত্র তাঁরাই পাবেন, যাঁরা নতুন করব্যবস্থা বেছে নেবেন। অতএব, এইচআরএ বা সঞ্চয় এবং বিনিয়োগের উপর কর ছাড়ের আর কোনও দাবি অনুমোদিত হবে না। অথচ, গৃহঋণের ইএমআই বা শিশুদের টিউশন ফি-তে কোনও অতিরিক্ত ছাড় নেই। এমনকি পুরনো করব্যবস্থার অনুসারীদের জন্য, আয়করের ধারা ৮০সি-এর অধীনে ছাড়ের সীমাও বাড়ানো হয়নি। তাই গৃহঋণের উপর কর ছাড়ের ‘থ্রেশহোল্ড’ সীমা বৃদ্ধি হল না। যা-ই হোক, ন’বছর পরে, সরকার পুরনো করব্যবস্থার জন্য আয়কর মাত্রার মৌলিক ছাড়ের সীমায় ৫০,০০০ টাকার সামান্য বৃদ্ধি করেছে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের দ্বারা উপস্থাপিত সাধারণ বাজেটের পিছনের দর্শনটি মধ্যবিত্ত করদাতাদের জন্য তুলনামূলক ভাবে সহজ: উপার্জন এবং ব্যয়। সঞ্চয়ের দিন চলে গিয়েছে অনেক আগেই। বাজেট প্রস্তাবে জনগণকে উৎসাহিত করতে সরকার নতুন কোনও কর ছাড়ের প্রস্তাব দেয়নি। ভারত ঐতিহ্যগত ভাবে একটি সঞ্চয়কারী দেশ। যার কারণে ভারতীয় অর্থনীতি প্রতিটি অর্থনৈতিক সঙ্কট এড়াতে সক্ষম হয়েছে। ২০০৮ এবং ২০১০ সালের মধ্যে যে মন্দা এসেছিল, তাতে যখন আমেরিকা-সহ বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিগুলি ঝলসে গিয়েছিল, তখন ভারতের কোনও উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়নি।
তবে বেতনভোগীদের, বিশেষ করে বেসরকারি কর্মক্ষেত্রে কর্মরতদের জীবন অতিমারির পর থেকে খুবই চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠেছে। কোভিডের কারণে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে যে ধাক্কা লেগেছে, তা বিপুল সংখ্যক লোককে কর্মহীন করে দিয়েছে। এক দিকে যেমন কিছু লোক চাকরি হারিয়েছেন, তেমন অনেকেরই বেতন উল্লেখযোগ্য ভাবে হ্রাস পেয়েছে। তার উপর মুদ্রাস্ফীতির হার অনেকেরই আর্থিক শিরদাঁড়া প্রায় ভেঙে দিয়েছে। যার কারণে জনগণের নিষ্পত্তিযোগ্য আয় কমে গিয়েছে। মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আরবিআই ক্রমাগত সুদের হার বাড়িয়ে চলেছে, ফলে মানুষের প্রদেয় ইএমআই অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। দুর্ভাগ্যবশত, মোদী সরকারের শেষ পূর্ণ বাজেট মধ্যবিত্তের মৌলিক সমস্যাগুলোর সমাধান করতে ব্যর্থ হয়েছে।
অভিজিৎ রায়, জামশেদপুর
পুরনো বাস
পনেরো বছরের পুরনো গাড়ি অবিলম্বে বাতিল করার নির্দেশ জারি করেছে কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রক। এমনিতে পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি রাজ্য কিংবা কেন্দ্রের রাজনৈতিক দলের ইস্তাহারে অগ্রাধিকার পায় না। গালভরা প্রতিশ্রুতি দেওয়ার শেষে বুড়ি ছোঁয়ার মতো পরিবেশ নিয়ে ভাবনা সারা হয়। কলকারখানার চিমনি থেকে নির্গত ধোঁয়ার পাশাপাশি যানবাহন জ্বালানির ধোঁয়া শহরের বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ। সেই জন্যই পনেরো বছরের পুরনো ‘ভারত স্টেজ-২’ গাড়ি বাতিল করে উচ্চ প্রযুক্তির ‘বি এস-৬’ প্রযুক্তির গাড়ি পথে নামানোর তৎপরতা দেখা যাচ্ছে। ডিজ়েলের পরিবর্তে সিএনজি বা ব্যাটারিচালিত যান পথে নামানোর সরকারি উদ্যোগ আমজনতার মনে আশা জাগায়। একই সঙ্গে কালো ধোঁয়া উদ্গিরণকারী বাহনের থেকে নজরানা না পাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয় সংশ্লিষ্ট নজরদারদের মনে। তবে, অ-সরকারি মালিকপক্ষ এই বিষয়ে স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে এগিয়ে আসবেন— এমনটা অতি বড় সরল ব্যক্তিও আজ ভাবতে পারবেন না। ফলে, বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ করতেই হয়। বাম আমলে তৎকালীন পরিবহণ মন্ত্রী তাঁর জীবদ্দশায় ‘কাটা তেল’-এ অটো চালানো সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে পারেননি। পক্ষান্তরে পরিবর্তনকামী সরকার আবার এক দশকেও সুসংহত পরিবহণ নীতি গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে। কাগজে-কলমে বাস ভাড়া না বাড়িয়ে অসরকারি মালিক পক্ষকে যথেচ্ছ ভাড়া আদায়ের সুযোগ করে দিয়েছে এই সরকার। ফুটনোটে কেউ বেশি ভাড়া আদায় করলে থানায় যাওয়ার সুপরামর্শ দিয়ে রেখেছে। সরকারি বাস পরিবহণ নিগমগুলি কোভিড-পরবর্তী কালে এই অসম প্রতিযোগিতায় (ডিজ়েলের দাম ৬২ থেকে বেড়ে ৯২ টাকা, অথচ ভাড়া অপরিবর্তিত রাখা) ক্রমশ পিছু হটে খাদের কিনারায় এসে দাঁড়িয়েছে। দশ মাস ‘প্ল্যানড ফান্ড’-এর টাকা না পেয়ে যখন পুঞ্জীভূত ঋণের বোঝায় নাভিশ্বাস ওঠার জোগাড়, তেলের টাকা বাকি, যন্ত্রাংশ কেনার অভাবে বাস রক্ষণাবেক্ষণ একপ্রকার লাটে উঠেছে, সেই সময় এক কিস্তি টাকা পেয়ে স্বস্তির শ্বাস ফেলছে দক্ষিণবঙ্গ পরিবহণ নিগম। পুরনো বাস বাতিল করে নতুন বাস কেনা জীবনচক্রের মতো এক স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কিন্তু ভাঁড়ে মা ভবানী পরিস্থিতিতে নতুন বাস আদৌ জুটবে কি না, সেই সংশয়ে ভুগছেন পরিবহণ কর্মীরা। অন্য দিকে, উক্ত নিগমের কলকাতা ডিভিশনের ৩০১টি বাসের মধ্যে ৫৪টি বাস এ বছর পনেরো বছরের সময়সীমা অতিক্রম করে ফেলবে। এর মধ্যে এখনও পর্যন্ত ‘কনডেমড’ ঘোষণা করা হয়েছে মাত্র ১১টি বাসকে। সেই নীতি, সিদ্ধান্ত ও রূপায়ণের মধ্যে টানাপড়েন। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন বাস অন্তর্ভুক্ত না হওয়ার অজানা আশঙ্কা। এর পর ‘যা খুশি হোক পরিবেশের’ বলে কোনও পরিবহণ কর্মী যদি ক্ষোভ প্রকাশ করেন, তবে তাঁকে দোষ দেওয়ার আগে এক বার ভেবে দেখা প্রয়োজন!
জি রাজশেখর, কাজিপাড়া, হাওড়া
পোস্তর চাষ
সুদূর অতীত থেকে বিশ্বের বহু জায়গায় পোস্ত ব্যবহারের চল আছে। তবে বাঙালি মাত্রেই পোস্তর কতখানি ভক্ত, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আর শুধু বড়া নয়, পোস্ত সহযোগে তৈরি বহু পদেরও চল আছে। আলুপোস্ত, পেঁয়াজপোস্ত, পটলপোস্ত, ঝিঙেপোস্ত, বাটিপোস্ত, চিংড়িপোস্ত— এমনই বহু মুখরোচক খাবার আছে যা আমিষভোজী থেকে নিরামিষাশী, ছোট থেকে বড়, পুরুষ থেকে মহিলা সবাইকেই সন্তুষ্ট করে। পোস্তর ফোড়ন দিয়েও অনেক রান্না হয়— আলু ভাজা, কুমড়ো ভাজা-সহ আরও কত কী। বিভিন্ন রকমের মিষ্টিতেও পোস্তর কমবেশি চল আছে। সব ঋতুতেই সমাদৃত এই বস্তুটি অতীত থেকে অতিসার-আমাশয় রোগে অনেকেই ব্যবহার করে থাকেন। আর, গরমের দিনে জলে ধোয়া ভাতের সঙ্গে এর ব্যবহার অতুলনীয়।
কিন্তু কয়েক বছর হল পোস্ত দামের দিক থেকে নাগালের বাইরে চলে গিয়েছে। ২০১৯-এ চলে যায় প্রায় বারোশো টাকায়। আফগানিস্তানের ডামাডোলে চলে যায় দু’হাজার টাকার বৃত্তে। সবচেয়ে সমস্যা হল স্বল্প আয়ের মানুষদের। ক্ষুদ্র প্রান্তিক চাষি, ঠিকা শ্রমিক, বিভিন্ন ভাবে অনুদান-নির্ভর মানুষদের অনেকের মাসে এক দিন পোস্ত খাওয়ার ইচ্ছা হলেও অনেক ভাবতে হয়। আর ছোটরা আবদার করলে অভিভাবকরাও সমস্যায় পড়েন।
তুরস্ক, চেক প্রজাতন্ত্র, স্পেন, ফ্রান্স-সহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি ছাড়াও আমাদের দেশের উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান প্রভৃতি রাজ্যেও সরকারি ভাবে পোস্ত চাষের কথা শোনা যায়। অনেক আগে লুকিয়ে-চুরিয়ে ভাগীরথী-অজয় অববাহিকা অঞ্চল-সহ কোথাও কোথাও পোস্ত চাষের কথা শোনা যেত। গ্রামে-গ্রামে ঘুরে সেই সব পোস্ত বিক্রি হত। শোনা যেত, আমাদের মাটি পোস্ত চাষের অনুকূল। তাই রাজ্য সরকার কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদন আদায় করে রাজ্যে সরকারি ভাবে পোস্ত চাষের উদ্যোগ গ্রহণ করলে খুবই সদর্থক হয়। তাতে উপভোক্তারা কেবল সুলভে পোস্ত পাবেন তা-ই নয়, সেই সঙ্গে বাইরে চলে যাওয়া বিপুল অর্থও রাজ্যবাসীর অন্য কাজে ব্যবহৃতহতে পারবে।
অমল চন্দ্র চৌধুরী, ক্ষীরগ্রাম, পূর্ব বর্ধমান
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy