অগ্নিরূপ সরকারের ‘ঋণ কি কখনও অনুদান হয়’ (২০-৭) প্রসঙ্গে কিছু আরও তথ্য সংযোজন করতে চাই। সরকার কেন্দ্রের হোক বা রাজ্যের, ঋণের প্রসঙ্গে দুই পক্ষই সমান। রাজনীতির ময়দানে জনতাকে নিজের দিকে টানতে এর চেয়ে ভাল বিকল্প কোথাও নেই। দেশ স্বাধীন হওয়ার সময়ে ব্যাঙ্ক ছিল বেসরকারি মালিকানাধীন, ফলে ব্যাঙ্কের আমানত প্রায় সবটাই চলে যেত বড় শিল্পপতিদের হাতে। ইন্দিরা গাঁধীর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার ১৯ জুলাই ১৯৬৯, চোদ্দোটি ব্যাঙ্কের জাতীয়করণ করে, যেগুলি দেশের প্রায় ৭০ শতাংশ আমানত নিয়ন্ত্রণ করত। ১৯৮০ সালে আরও ছ’টি ব্যাঙ্কের জাতীয়করণ হয়।
ব্যাঙ্ক জাতীয়করণের ফলে দেশের বহুসংখ্যক মানুষের আমানত সুরক্ষিত হয়েছিল। কারণ, মাঝেমধ্যেই সেই সব ব্যাঙ্কে তালা পড়ত, সঞ্চিত টাকা খুইয়ে পথে বসতেন গ্রাহকরা। ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থায় সামাজিক নিয়ন্ত্রণ থেকে জাতীয়করণের এটাও ছিল একটা বিবর্তনের পথ। ব্যাঙ্কের আমানত থেকে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক ক্ষেত্রে ঋণের জোগান দিতে সেই ১৯৮০ সালে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী জনার্দন পূজারি দেশে চালু করলেন ‘লোন মেলা’। কংগ্রেস-শাসিত রাজ্যগুলির চাষিদের এই মেলা দেখার সৌভাগ্য হল। সেই সঙ্গে সূত্রপাত হল আরও একটি প্রবণতার— সরকারি ব্যাঙ্কের টাকা শোধ না করার। শোনা যায় যে, চাষিদের কংগ্রেসিরাই বলে দিয়েছিলেন, ব্যাঙ্কের টাকা শোধ করার দরকার নেই। পরে ব্যাঙ্কের কর্তারা বেঁকে দাঁড়ালে সরকারের পক্ষ থেকে শুরু হল ঋণ মকুবের ঘোষণা। ব্যাঙ্ক তার দেওয়া যে সব ঋণের সুদ বা আসল আর ফিরে পাবে না, তার গালভরা নাম ‘নন পারফর্মিং অ্যাসেটস’ (এনপিএ)। বলতে দ্বিধা নেই যে, ২৮ জুন বর্তমান কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন অতিমারিক্লিষ্ট দেশবাসীর সাহায্যার্থে যে একগুচ্ছ আর্থিক দাওয়াই হিসেবে ‘ক্রেডিট গ্যারান্টি প্রকল্প’ ঘোষণা করেছেন, সেটিও অচিরেই পূর্বতন সরকারের কর্মসূচির মতো ‘এনপিএ’-তে পরিণত হবে।
অভিজিৎ রায়
জামশেদপুর
দক্ষ কর্মী কই?
সুগত মারজিৎ ‘চিন পারে, আমরা পারি না’ (১৯-৭) প্রবন্ধে বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গে অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল দু’টি ধারা। আয় বৃদ্ধি এবং বৈষম্য দূরীকরণ, দারিদ্র ও অসম বণ্টন প্রক্রিয়া হ্রাস করা। সে জন্য এখানে প্রচুর বিনিয়োগ প্রয়োজন এবং স্বল্প দক্ষ কর্মীর জন্য শিল্প প্রয়োজন। দীর্ঘ কুড়ি বছর ধরে তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে, কলকাতায় বসে বিশ্ববাজারে ব্যবসা করার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, ৩০-৫০ জন থেকে ১০০ জন কর্মী নিয়ে যাঁরা ব্যবসা চালান, এখানে তাঁদের প্রধান সমস্যা হল দক্ষ কর্মীর। শারীরিক শ্রম নয়, বুদ্ধিদীপ্ত শ্রমের জোগান কেবলমাত্র স্বল্প দক্ষ কর্মী দিয়ে হওয়ার নয়। বিশ্বমানের কাজ করতে হলে যেখানে দক্ষ কর্মীর অভাব থাকে, সেখানে বুদ্ধিমান অদক্ষকে দক্ষ হিসেবে তৈরি করে নিতে হয়, সে ক্ষেত্রে সংস্থাগুলির কাছে সময় ও অর্থ থাকতে হবে। কম পুঁজির সংস্থার পক্ষে তা প্রতিনিয়ত জোগান দেওয়া মুশকিল। বুদ্ধির দিক থেকে তুখোড় ছেলেমেয়েরা পাশ করে, কলকাতার বাইরে চলে যান কাজের জন্য। তাঁরা মনে করেন, যোগ্যতার পূর্ণ বিকাশ এখানে হবে না। সে জন্য বাঙালিরা ভারতের অন্য প্রদেশে বা দেশের বাইরে তথ্যপ্রযুক্তি-সহ নানা শিল্পে যথেষ্ট ভাল কাজ করেন। অথচ, কলকাতার ছোট ছোট সংস্থাগুলি ক্রমাগত যে অদক্ষ কর্মীদের দক্ষ হিসেবে তৈরি করে নিচ্ছে, বহুজাতিক সংস্থাগুলি তাদের অনেক গুণ বেশি মাইনে দিয়ে নিয়ে নিচ্ছে। ছোট-মাঝারি শিল্পগুলি টিকে থাকার এটি একটা বড় অন্তরায়। এই প্রজন্মের বাঙালি উচ্চশিক্ষিত ছেলেমেয়েদের ব্যবসার প্রতি উন্নাসিকতা নেই। নিজস্ব সংস্থা তৈরি করার প্রবল ইচ্ছা থাকলেও তাঁরা নতুন স্টার্ট-আপ শুরু করতে পারেন না, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দক্ষ কর্মীর জোগান কম থাকার জন্য। স্বাস্থ্য পরিষেবার মতো অল্প কিছু ক্ষেত্রে অন্য রাজ্যের দক্ষ কর্মী (যেমন— কেরল, মণিপুরের নার্স) এখানে কাজ করতে আসছেন।
আবার যেখানে কেবল কায়িক শ্রমের দরকার, সেই ক্ষেত্রগুলিতে বাঙালিরা বছরে বেশ কয়েকটা মাস রাজ্যের বাইরে চলে যাচ্ছেন। ঘরের ছেলেমেয়েদের ঘরে রাখতে হলে সরকারকে আরও ভাবনাচিন্তা করতে হবে। মানুষ সুবিধা পেলে দূরে যাবেন কেন? বাংলার সন্তানরা কর্মসূত্রে বাংলায় না থাকলে দক্ষ কর্মীর অভাব যাওয়ার নয়। দক্ষ কর্মী নেই বলে ব্যবসা শুরু হচ্ছে না। আবার ব্যবসা শুরু হচ্ছে না বলে দক্ষ কর্মী নেই, এই চক্রটা না ভাঙলে সুদিন ফিরবে না।
চম্পা খাতুন
কলকাতা-৯৯
ব্রাত্য বৃদ্ধেরা
‘অন্তরায়’ (১৭-৭) সম্পাদকীয়ের বক্তব্যের সঙ্গে আমি সহমত। নিজ পরিবার, না কি বৃদ্ধাশ্রম— এই অনিশ্চয়তায় দুলতে থাকে অসহায় বৃদ্ধবৃদ্ধাদের নিয়তি। জীবনের প্রান্তবেলায় এঁদের প্রতি সার্বিক অনাদরের চিত্রটি প্রতিনিয়ত বেআব্রু হচ্ছে ঘর এবং বাইরেও। মাসকয়েক আগে এই নগ্ন সত্যটি উঠে এসেছিল ইনদওরে, যখন শহর পরিচ্ছন্ন রাখার অজুহাতে ফুটপাতবাসী প্রবীণদের গাড়িতে তুলে বাইরে পাঠানোর উদ্যোগ চলছিল পরিকল্পিত ভাবে (‘রাস্তায় ফেলা হল গৃহহীন বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের!’, ৩১-১)। প্রবীণ নাগরিকদের সঞ্চয়ে সুদের হার কমিয়ে দেওয়া, আধার সংযুক্তির নামে অযথা অপেক্ষা ও হয়রানি, গণপরিসরে পৃথক শৌচালয় না থাকা, জীবিত থেকেও সরকারি নথিতে মৃতব্যক্তির তকমা পেয়ে পুনরায় ‘বেঁচে আছি’ প্রমাণ দাখিলের ঝক্কি, অবহেলার এমন নানা করুণ উদাহরণ মাঝেমধ্যে উঠে আসে।
সাংসারিক জীবনে কতটা হৃদয়হীন হলে পৌষ সংক্রান্তির পুণ্যস্নান শেষে বৃদ্ধ পিতামাতাকে একলা ফেলে চলে যাওয়া যায়, অথবা অশীতিপর ব্যক্তিকে কোভিড আতঙ্কে একা রেখে সরে যাওয়া যায় (‘করোনা সংক্রমিত বৃদ্ধা মা, বাড়ি ছাড়লেন ছেলেমেয়েরা’, ৮-৫) তা ভাবলে শিউরে উঠি। এক কালে বটবৃক্ষের মতো যাঁরা আগলে ছিলেন সন্তানদের, জীবনসায়াহ্নে তাঁদের প্রতি পরিবার ও রাষ্ট্র উভয়েরই অধিক যত্নবান হওয়ার দরকার আছে।
সুপ্রতিম প্রামাণিক
আমোদপুর, বীরভূম
অন্তরের মিল
ইদের উৎসব কিসের? মিলন বললেই কি বাস্তবে মিলন হয়? প্রতিবেশীর ধর্ম-সংস্কৃতিকে বুঝতে চাওয়া, বা তার প্রতি ন্যূনতম শ্রদ্ধা প্রদর্শন যে মিলনের অন্যতম পূর্বশর্ত, তা আমরা যেন অস্বীকার করতে ভালবাসি! রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, “আমরা বহু শত বৎসর পাশে পাশে থাকিয়া, এক খেতের ফল, এক নদীর জল, এক সূর্যের আলোক ভোগ করিয়া আসিতেছি, আমরা এক ভাষায় কথা কই, আমরা একই সুখ-দুঃখে মানুষ, তবুও প্রতিবেশীর সঙ্গে প্রতিবেশীর যে সম্পর্ক মনুষ্যচিত, যাহা ধর্মবিহিত, তাহা আমাদের মধ্যে হয় নাই।” কবির খেদ কি আজও প্রাসঙ্গিক নয়? অন্য ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে আমরা অনায়াস সম্বন্ধ তৈরি করতে পারিনি! চাই আত্মসমীক্ষা। মিলনের বার্তা কেন সীমাবদ্ধ থাকবে নেতাদের রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতায়! ওই ভোট-ভিক্ষুকরাই জাত, ধর্ম-সংস্কৃতি, আবেগ নিয়ে খেলায় মেতে উঠতে পারে! পবিত্র ইদ উপলক্ষে সকলে সচেতন ও দায়বদ্ধ হওয়ার ব্রত নিলে তবেই সকলে হয়ে উঠতে পারি যথার্থ মানবপ্রেমিক!
কাজি মাসুম আখতার
কলকাতা-১০৭
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy