—ফাইল চিত্র।
সন্দেহ নেই রাজ্যের শিক্ষার হাল খারাপ। সুকান্ত চৌধুরীর প্রবন্ধ ‘শিক্ষাক্ষেত্র কুরুক্ষেত্র’ (২৭-১২) তারই এক প্রতিচ্ছবি। কিছু দিন আগে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিংকাণ্ডে এক ছাত্রের মৃত্যুতে দারুণ হইচই পড়ে। রাজ্যপাল, ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবক— সকলের প্রতিবাদ এবং উদ্বেগের কারণে মনে হয়েছিল, এ বার শিক্ষাক্ষেত্রের হাল হয়তো কিছুটা ফিরবে। কিন্তু তা হল কই? আরও হল না সদিচ্ছার অভাবে। কর্তৃত্ববাদের বেড়াজালে এ রাজ্যে শিক্ষার আজ দমবন্ধ অবস্থা।
শিক্ষার অধিকার মানুষের মৌলিক অধিকার। রাজ্যপাল রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান, শিক্ষামন্ত্রী রাজ্যের নির্বাচিত প্রশাসনিক ব্যক্তি। প্রথা অনুযায়ী, রাজ্যপাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য। প্রশাসনিক কিছু বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন, সব কিছুতে নয়। অন্য দিকে, রাজ্যের শিক্ষা দফতর পরিচালনা করবে শিক্ষায়তন, ছাত্র, শিক্ষক, শিক্ষার পরিকাঠামো, সঠিক নিয়োগপ্রক্রিয়া বিজ্ঞানভিত্তিক প্রশিক্ষণ প্রদান ইত্যাদি। পরিবর্তে আমরা পাচ্ছি রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাত, যা চলে যাচ্ছে আইন-আদালত পর্যন্ত। উপাচার্য নেই, রাজ্যপাল ক্ষমতাবলে কয়েক জন অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করলেন, তাতে রাজ্য আদালতে চলে গেল। আদালত নির্দেশ দিল বটে, কিন্তু তাতেও জট খুলছে না। আবার সেই উপাচার্যদের এক জন, বুদ্ধদেব সাউ, নিয়োগ হয়েও রাজ্যপাল তাঁকেই বাতিল করে দিলেন। তিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। জটিলতার মধ্যে তিনি সমাবর্তন অনুষ্ঠান করলেন, ছাত্ররা তাঁর স্বাক্ষর সম্বলিত প্রশংসাপত্র গ্রহণ করলেন। কিন্তু রাজ্যপাল ওই সমাবর্তন অনুষ্ঠানকে অবৈধ বলছেন। তাই নতুন করে শংসাপত্র প্রদান হবে। প্রয়োজনে তিনি আদালতে যাবেন। আদালতে যে কেউ যেতেই পারেন, কিন্তু রাজ্যপালের মতো সম্মাননীয় ব্যক্তিরা কি এক বারও ভাববেন না, এতে রাজ্যে শিক্ষার অবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়াচ্ছে? আইন কি শুধুই কণ্ঠরোধ করার জন্য? শিক্ষার সার্বিক উন্নয়নে তার প্রয়োগ করা যায় না?
সারনাথ হাজরা, হাওড়া
অধঃপতন
রাজায় রাজায় যুদ্ধে প্রাণ যাচ্ছে ছাত্র-শিক্ষক নামের উলুখাগড়ার— খুবই প্রাসঙ্গিক কথা বলেছেন সুকান্ত চৌধুরী তাঁর উত্তর-সম্পাদকীয়তে। সত্যিই, রাজনীতির চাপে শিক্ষায় রত্নগর্ভা রাজ্যটির আজ গভীর দুর্দশা। মেধাবীরা সবাই বিদেশে পাড়ি দিচ্ছেন গাঁটের কড়ি খরচ করে। এ রাজ্যের শিক্ষায় যেন অন্ধকার নেমে এসেছে। প্রসঙ্গত, রবীন্দ্রনাথের শিক্ষা সংক্রান্ত লেখার একটি বাক্য মনে পড়ছে: “ছাত্র নামের আড়ালে একদল সুযোগসন্ধানী শিক্ষাঙ্গনে চিরকালই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে চলে।” কিন্তু এখন শিক্ষাঙ্গন বিপন্ন হয়ে পড়েছে সরকার নামক রাজনীতিদুষ্ট প্রশাসনিক তৎপরতায়। দেখা যাচ্ছে, ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলনের চেয়ে শিক্ষা উপদেষ্টাদের বিধ্বংসী রাজনীতি শিক্ষাক্ষেত্রকে কুরুক্ষেত্র করে তুলেছে। শিক্ষাক্ষেত্রে নিয়োগ প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনা— সব কিছুই বকলমে শাসক দলের হস্তক্ষেপে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। এ দিকে রাজ্য ও কেন্দ্রে বিরোধী দল থাকায়, কেন্দ্রীয় সরকারের অঙ্গুলিহেলনে রাজ্যপাল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছেন। কাজেই বিরোধ অবধারিত এবং যার যূপকাষ্ঠে বলি হচ্ছে শিক্ষার পরিবেশ ও ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ। সাম্প্রতিক কালে রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্য নিয়োগকে কেন্দ্র করে রাজ্য ও কেন্দ্রের সংঘাতের আবহ আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে! এটা ভাবতেই অবাক লাগে আদালতের বিচারাধীন বিষয় হল, শিক্ষাক্ষেত্রে আধিপত্য কার থাকবে? শিক্ষার উন্নতি কোনও বিবেচ্য বিষয় নয় সেখানে। বামপন্থীদের সময়েও আলিমুদ্দিনের অঙ্গুলিহেলনে পছন্দের ব্যক্তি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ-উপাচার্য নির্বাচিত হতেন। কিন্তু সেখানে স্বাভাবিক পঠনপাঠনে বা নির্দিষ্ট সময় অন্তর সমাবর্তন করতে সে ভাবে কোনও অসুবিধা হয়নি। সেই সময়ও কেন্দ্রে বিরোধী দলের সরকার ছিল। কিন্তু শিক্ষার পরিবেশ সে ভাবে বিঘ্নিত হয়নি।
যাদবপুর বা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বলিষ্ঠ পদক্ষেপ করে সমাবর্তন করা বা রাজ্য সরকারের নিষেধ সত্ত্বেও কর্মসমিতির বৈঠক ডেকে আগামী শিক্ষাবর্ষে ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়া অব্যাহত রাখার মতো সাহসী পদক্ষেপ যদি অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় গ্রহণ করত, তা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বশাসন বজায় থাকত। এখনও সময় আছে। নিরপেক্ষ শিক্ষকসমাজ ও শিক্ষার্থীরাই পারে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে। চাই শুধু বলিষ্ঠ সদিচ্ছা।
দেবাশ্রিত রায়, রানাঘাট, নদিয়া
সয়ে যাচ্ছে
আজকাল মানুষের একটি হাত প্রায় সারা ক্ষণ জোড়াই থাকে, স্মার্টফোনের কারণে। সমাজের উচ্চবিত্ত থেকে নিম্নবিত্ত, স্কুল-কলেজ পড়ুয়া, শিক্ষক-শিক্ষিকা, সরকারি আধিকারিক, এমনকি নেতা-মন্ত্রীরাও এই যন্ত্রটিকে কাছ ছাড়া করেন না। বক্তৃতা, সমাবেশ, আন্তর্জাতিক মঞ্চ, শিক্ষা সম্মেলন— সবেতেই একই চিত্র। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে উপাচার্যকে দেখা গেল সমাবর্তনের মুহূর্তেও স্মার্টফোন ব্যবহারে মগ্ন হয়ে রয়েছেন। সেই ছবি ধরা পড়ল অধ্যাপক সুকান্ত চৌধুরীর প্রবন্ধে সুদীপ্ত ভৌমিকের তোলা ছবিতে।
হাতের তালুতে ধরা এই যন্ত্রটি অনেক সময়েই কোনও শিষ্টাচার, স্থান-কাল-পাত্রের তোয়াক্কা করে না। তাই এখন কোনও অনুষ্ঠানের শুরুতেই সঞ্চালককে ঘোষণা করতে হয় দর্শক বা শ্রোতারা যেন তাঁদের ফোনটি সাইলেন্ট মোড-এ রাখেন। তৎসত্ত্বেও, শোকসভা থেকে থিয়েটার অথবা উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতানুষ্ঠান— এই স্মার্টফোন তার নিশ্চিত উপস্থিতির কথা সশব্দে জানান দিয়ে থাকে। কিন্তু এ সবই আমাদের সহ্য হয়ে গিয়েছে। চার পাশে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোকে এখন আমরা সুস্থ এবং আধুনিক সমাজের বেঞ্চমার্ক বলেই ধরে নিয়েছি।
পিনাকী রুদ্র, কলকাতা-১২৪
রক্তদান
নানা সময়ে বিভিন্ন জায়গায় রক্তদান শিবিরের আয়োজন হতে দেখা যায়। বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে রক্তদানকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য নানা আকর্ষণীয় ব্যবস্থা করা হয়, যা বেশ লোভনীয়। এতে রক্তদানের বিষয়ে এক শ্রেণির মানুষের মধ্যে বিশেষ আগ্রহ লক্ষ করা যায়। রক্তদান অবশ্যই হওয়া দরকার সম্পূর্ণ স্বেচ্ছায়, জনস্বার্থে। প্রলোভন দেখানো অনুচিত। আক্ষেপ এই যে, রক্তদান শিবিরগুলোর পিছনে অনেক সময়ে থাকে উদ্যোগকর্তার আত্মপ্রচারের এক অলিখিত উদ্দেশ্যও— সে পাড়ার ক্লাবই হোক, অথবা কোনও সংগঠন, বা কোনও রাজনৈতিক দল। অথচ, ঠিক সময়ে সঠিক গ্রুপের রক্ত পাওয়ায় তাদের সহায়তা না-ও মিলতে পারে।
রক্তদান শিবিরগুলোতে সাধারণত কতকগুলো রুটিন প্রশ্ন করার পর রক্ত সংগ্রহ করা হয়। যেমন, গত চব্বিশ ঘণ্টায় মদ্যপান করা হয়েছে কি না, রক্তদাতার শর্করাঘটিত কোনও রোগ আছে কি না, গত ছ’মাসের মধ্যে যকৃৎ সংক্রান্ত কোনও সংক্রমণ হয়েছে কি না ইত্যাদি। যত দূর জানি, ইচ্ছুক দাতার মুখের কথার উপর নির্ভর করেই তাঁর রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করে রক্ত সংগ্রহ করা হয়।
কিন্তু অনেকের মনে কতকগুলো প্রশ্ন থেকেই যায়। যেমন, যে সব রক্তদাতা রক্তদান করছেন, তাঁদের রক্ত নিরাপদ কি না। যদি কোনও দাতা তাঁর রক্তজনিত কোনও রোগ চেপে রক্তদান করেও থাকেন, তা হলেও ব্লাড ব্যাঙ্কে সব সময়ে রক্ত পরীক্ষা করে নেওয়া হয়। অযোগ্য রক্ত বাতিল হয়। এ বিষয়ে সকলকে আশ্বস্ত করা খুব জরুরি। না হলে রক্তদান ও ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে রক্ত গ্রহণ নিয়ে নানা সংশয় থেকে যাবে।
দেবাশিস চক্রবর্তী, মাহেশ, হুগলি
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy