কেটারিং-এর কাজে পারিশ্রমিক খুবই সামান্য, ১৮০ টাকা বা ২০০ টাকা পেয়েই তাঁদের সন্তুষ্ট থাকতে হয়। ফাইল চিত্র।
বিয়ে হোক বা জন্মদিন, যে কোনও অনুষ্ঠানের অঙ্গ হয়ে গিয়েছে কেটারিং। খাবার পরিবেশন করার জন্য পরিপাটি, সদাহাস্য বিনম্র যুবক-যুবতী ‘ভাড়া’ করে নিয়ে না-আসা হলে অনুষ্ঠান পূর্ণতা পায় না।
বেকারত্বের জ্বালায় তরুণ-তরুণীরা কেউ পকেটমানির জন্য, কেউ পারিবারিক আর্থিক অনটন মেটাতে বাধ্য হচ্ছেন কাজ খুঁজতে। অনেককেই দেখেছি, চাকরির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তবে পারিবারিক চাপে তাঁদেরকেও কাজে নামতে হচ্ছে। রাতের দিকের কাজ পাওয়া এই সমস্ত ছেলেমেয়ের জন্য একটি পাওনা বটে। তাই অনেকেই কেটারিং-এর কাজে যাচ্ছেন। পারিশ্রমিক খুবই সামান্য— ১৮০ টাকা বা ২০০ টাকা পেয়েই তাঁদের সন্তুষ্ট থাকতে হয়।
তবে পদে-পদে অপমানিত হওয়াও এঁদের কাজের একটি অংশ হয়ে গিয়েছে। পরিবেশনের সময় সামান্য ভুল কিংবা দেরি হলে কথা শুনতে হয় গৃহস্বামী, কিংবা কেটারিং সংস্থার মালিক, দু’জনের কাছ থেকেই। এর সঙ্গে করতে হয় আর একটি কাজ— বিভিন্ন জায়গায় অতিথিদের রেখে যাওয়া দামি পাত্র খুঁজে নিয়ে তা পরিষ্কার করা। আমন্ত্রিতরা খেয়ালমাফিক সেগুলো হয়তো নির্দিষ্ট স্থানে রাখেন, বা ময়লা ফেলার ডাস্টবিনে! ডাস্টবিন হাতড়েই বার করতে হয় সেই পাত্রগুলো। আধ-খাওয়া মোমো কিংবা জিলিপি সরিয়ে খুঁজতে হয়, গলে যাওয়া ফুচকার নীচে ফেলে দেওয়া আইসক্রিমের বাটি সরিয়ে তবে হয়তো গেলাসটার দেখা মেলে। চিকেন পকোড়াতে কামড় দিয়ে টমেটো সস ভাল না লাগায় সেটি হয়তো কেউ হাতের উপর ফেলে চলে যাবেন। তখনও সদাহাস্য তরুণ, ঠোঁটের গোড়ায় রাখা ‘সরি’ বলে সেখান থেকে চলে যাবেন। এই অপমান কি তাঁদের প্রাপ্য? এঁদের মধ্যেই কেউ হয়তো শিক্ষক হবেন, কেউ ইঞ্জিনিয়ার, কেউ সেনায় চাকরি করবেন, বর্ডারে শহিদ হবেন। এঁদের এতটুকু সম্মান কি আমরা করতে পারি না?
দুর্জয় বাড়ৈ,শিক্ষার্থী, রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়
বেহাল স্বাস্থ্য
‘নিম হাকিম মৌত বরাবর’ প্রবাদবাক্যটি সঠিক ভাবেই প্রতিফলিত হয়েছে ‘চিকিৎসার দ্রুতপাঠ’ (১৭-৫) সম্পাদকীয়তে। ‘প্রায় চিকিৎসক’ বলে কিছু হয় না, এবং রাজনৈতিক প্রচারে ডিপ্লোমা ডাক্তারের ধারণা যত আকর্ষণীয়, কার্যক্ষেত্রে ততই অসঙ্গত। বাম আমলে তিন বছরের ডিপ্লোমা কোর্স সম্পূর্ণ ব্যর্থ হওয়া সত্ত্বেও কেন আবার প্রচলনের প্রয়োজন পড়ল? তৎকালীন বিরোধী নেতা-নেত্রীরা হয়তো বিস্মৃত হয়েছেন সে-দিন তাঁদের ভূমিকা। এক জন বিরোধী নেতা বিচারকের অভাব মেটাতে সংক্ষিপ্ত আইনের কোর্স, অথবা মুহুরিদের পদোন্নতি ঘটিয়ে বিচারপতি করার উপমা দিয়েছিলেন। সেই নেতা-নেত্রীরাই এখন ক্ষমতায়। পশ্চিমবঙ্গে ডাক্তারের ঘাটতি নেই বরং ডাক্তারের চাকরির অভাব আছে। বামেদের ছেড়ে যাওয়া বেহাল স্বাস্থ্য নিজের হাতে নিয়ে যে হালে পানি পাওয়া যাচ্ছে না, মুখ্যমন্ত্রী ভালই টের পাচ্ছেন। প্রশাসন সক্রিয় হলে অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব।
বাসুদেব দত্ত, শান্তিপুর, নদিয়া
মাধ্যমিকের ফল
এ বারের মাধ্যমিকের ফল নিয়ে চিন্তার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। এমনিতেই গত বারের থেকে এ বারের মাধ্যমিক পরীক্ষায় চার লক্ষ পরীক্ষার্থী কম ছিল, তার উপর অকৃতকার্যের সংখ্যা ১ লক্ষ ১৪ হাজার! এর মধ্যে ৩৫ হাজার ছাত্র এবং ৭৯ হাজার ছাত্রী, অর্থাৎ অকৃতকার্য ছাত্রীর সংখ্যা তুলনায় অনেক বেশি। শিক্ষার ছন্নছাড়া বাতাবরণে এমন ফলাফল হয়তো অপ্রত্যাশিত নয়, কিন্তু আগামী দিনের পক্ষে আদৌ স্বস্তিদায়ক নয়!
বিশ্বজিৎ কর, গড়িয়া, কলকাতা
বিজ্ঞানী
সায়ন্তনী ভট্টাচার্যকে ধন্যবাদ, বিজ্ঞানী দীপক ধরের মতো এক প্রতিথযশা বিজ্ঞানীকে নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ খবর পরিবেশনের জন্য (আফগানিস্তানের শিক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তুলি, নিজেদের নয়, ২০-৫)। দীপক ধর আমাদের দেশের বরেণ্য বিজ্ঞানী। সম্প্রতি সত্যেন্দ্রনাথ বসু স্মারক বক্তৃতা দিতে কলকাতায় এসেছিলেন। তিনি জানান, এ দেশে সম্ভাবনা প্রচুর, কিন্তু শিক্ষাব্যবস্থার গোড়াতেই গলদ রয়েছে। এর জন্য সরকারের পাশাপাশি সমাজকেও দায়ী করেছেন। এই সব দেশপ্রাণ বিজ্ঞানীর কথায় সরকার ও শিক্ষা প্রশাসনের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিরা গুরুত্ব দিক এবং এমন ব্যবস্থার প্রবর্তন করুক যাতে শিক্ষার্থীদের প্রতিভার যেমন বিকাশ ঘটে, তেমনই শিক্ষার্থীরা উপযুক্ত মানুষ হতে পারে।
অভিজিৎ দত্ত, জিয়াগঞ্জ, মুর্শিদাবাদ
ট্রাম নেই
আমার ভাইপো-ভাইঝিকে ওদের পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর কলকাতা দেখাতে নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু এ কোন কলকাতা! শ্যামবাজারে নেমে দেখি, বেলগাছিয়ার দিকে ট্রাম লাইনের উপর পিচ ঢেলে দেওয়া হয়েছে। ভাইপোর বহু দিনের ইচ্ছা, কলকাতায় গিয়ে ট্রামে চড়বে। শ্যামবাজার ট্রাম ডিপোয় গিয়ে খবর পেলাম লাইনে নাকি সারা দিনে দু’-একটির বেশি ট্রাম চলছে না। আপাতত কোনও ট্রাম নেই। কারণ জিজ্ঞাসা করতে ট্রাম কর্মচারীটি বললেন, ডিপো ছিল বেলগাছিয়া। বেলগাছিয়া লাইন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ডিপোতেই অনেক ট্রাম থেকে গিয়েছে। আপাতত ট্রাম আসছে গড়িয়াহাট ডিপো থেকে। সারা দিনে ওই দু’-একটাই আসছে। আবার সেগুলো গড়িয়াহাটে ফিরে যায়। মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। কলকাতাকে যে ট্রাম ছাড়া ভাবাই যায় না!
বিকেলে ওদের নিয়ে বেরোলাম। ভাবছিলাম, এত বড় একটা কাণ্ড ঘটে গেল, অথচ এর কেউ কোনও প্রতিবাদ করল না! হঠাৎ কানে এল কেউ যেন মাইকে ট্রাম চালানোর কথা বলছে। দেখলাম, এক দল লোক ট্রাম চালানোর দাবি জানিয়ে সই করতে বলছেন। তাঁরা জানালেন, কলকাতার ৫০টি রুটের মধ্যে মাত্র তিনটি রুটে কয়েকটি মাত্র ট্রাম চলছে। কেন সরকার ট্রাম তুলে দিচ্ছে? বললেন, সরকার নাকি আর দায় নিতে চায় না। কিসের দায়? এ তো আমাদের দায়িত্ব। দূষণে বিশ্ব আজ পঙ্গু হতে বসেছে। মহানগরীর অবস্থাও ভয়াবহ। বিশ্বের প্রায় ৪০০ শহরের ট্রাম চলছে। নতুন নতুন শহরে ট্রাম চালু হচ্ছে। এই দায় কি অস্বীকার করা চলে?
শিলাই মণ্ডল, গড়বেতা, পশ্চিম মেদিনীপুর
ফেরিওয়ালা
সময়ের প্রভাব পড়ে বিভিন্ন পেশায়। তেমন অনেক পেশায় লাগত না বিশেষ পুঁজি। সামান্য শিখে নিয়ে ছোট দু’-একটা যন্ত্রপাতি নিয়ে দিব্যি চালিয়ে নেওয়া যেত। তার পর কাজ করতে করতে পেশাদার হয়ে সংসার চালাতেন অনেকে। তেমনই এক পেশা— চাবি-তালা সারাইওয়ালা, যাঁর মাথায় ছোট্ট কাঠের বাক্স। তাতে মরচে-পড়া হাজার চাবি ও পুরনো তালা। অনেকে সারাই করতেন হারিকেন, কেরোসিনের বাতি। আর সেটা বোঝাতে কাঠের বাক্স ঘিরে ঝুলত সেই সব হারিকেন, দেওয়ালগিরি, লম্ফ। আজ বাড়িতে শিল-নোড়ার ব্যবহার নেই বললেই হয়। তাই হারিয়ে গেছে শিল কাটানোওয়ালা। হেঁটে যাওয়া মানুষটার ব্যাগের মধ্যে ছোট্ট ছেনি ও হাতুড়ি। হেঁকে যেত ‘শিল কাটাবে-এ-এ’।
এ ছাড়া জুতো সেলাই ও মেরামত করার জন্য অনেকে আসতেন পাড়ায়। হারিয়ে গিয়েছে সেই সব ফেরিওয়ালা, শোনা যায় না তাঁদের সুরেলা ডাক। সোনা-রুপো ইত্যাদি মূল্যবান জিনিস পুকুরঘাটে পড়ে গেলে খুঁজে দিতেন ডুবুরি। বিলুপ্তপ্রায় সেই পেশাও।
সনৎ ঘোষ, বাগনান, হাওড়া
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy