Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
CPIM

সম্পাদক সমীপেষু: বামশূন্য সভা

কিন্তু উদার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বাম দলে পুনর্মূল্যায়ন হয়নি। আলিমুদ্দিনের কর্তাদের কাছে কয়েকটি সুচিন্তিত প্রস্তাব তুলে ধরছি।

শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০২১ ০৫:১৪
Share: Save:

বামপন্থী কোনও দলের প্রতিনিধি বিধানসভায় থাকবেন না এই প্রথম। ২০১৯-এ লোকসভা নির্বাচনে বামের ভোট রামে চলে যাওয়ায় বামেদের ভোটপ্রাপ্তি ৭ শতাংশে নেমে এসেছিল। এ বার সেই পক্বকেশ কমরেডদের গোঁয়ারতুমির ফলস্বরূপ ভোট ৫ শতাংশের নীচে নেমে এল। উল্লেখ্য, সিপিআই (এমএল) লিবারেশন-এর সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য কয়েক মাস আগে বাম দলগুলিকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন, পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল নয়, বিজেপিকে প্রধান শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করে ভোটে লড়াই হোক। সুজন চক্রবর্তী ও বিমান বসুরা তা উড়িয়ে দিয়েছিলেন। শুধু তা-ই নয়, তাঁরা আব্বাসকে জোটে শামিল করে ‘মাস্টারস্ট্রোক’ সিদ্ধান্ত হিসেবে মমতার বিরুদ্ধে চাপ তৈরি করে গেলেন। সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে হাত মেলানোর পরিণাম বুমেরাং হয়ে গেল! সেই দীপঙ্করবাবুই নির্বাচনের ফল ঘোষণার পরে বাম কর্মী-সমর্থকদের কাছে আবেদন জানিয়ে বললেন যে, ভোটের রায়কে গণতন্ত্রের জয় ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে বাংলার মানুষের বলিষ্ঠ প্রতিবাদ হিসেবেই দেখুন।

কিন্তু উদার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বাম দলে পুনর্মূল্যায়ন হয়নি। আলিমুদ্দিনের কর্তাদের কাছে কয়েকটি সুচিন্তিত প্রস্তাব তুলে ধরছি। ১) কয়েক বছরের জন্য পরিষদীয় রাজনীতি থেকে দূরে সরে জনগণের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা ফিরিয়ে আনা জরুরি। ২) অনেক বেশি করে তরুণ প্রজন্মকে রাজনীতির অঙ্গনে সুযোগ করে দিতে হবে। ৩) কর্মী-সমর্থকদের চোখে ঠুলি পরিয়ে, মৌলিক ভাবনা থেকে তাঁদের দূরে সরিয়ে দেওয়ার ধ্বংসাত্মক রীতি দূর করা দরকার। ৪) কংগ্রেসের সঙ্গ পরিত্যাগ করা উচিত। ৫) ভোট এলেই এক ছাতার তলায় দাঁড়িয়ে স্লোগান যথেষ্ট নয়, প্রতিটি কর্মসূচির নিরিখে বছরভর নিষ্ঠাভরে আন্দোলন করতে হবে।

শক্তিশঙ্কর সামন্ত, ধাড়সা, হাওড়া

সুরক্ষা

শিবাজীপ্রতিম বসুর সঙ্গে সহমত পোষণ করি (‘এই জয়ের মুখ একা মমতাই’, ৩-৫)। ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল পেয়েছিল ৪৫.৭১% ভোট, ২০২১ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৭.৯৪%। বিজেপি যে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি, ধর্মীয় মেরুকরণের বীজ এ রাজ্যে বপন করতে চেয়েছিল, তা সমূলে উৎপাটিত হয়েছে। আসলে দলীয় নির্বাচনের ঊর্ধ্বে উঠে এই নির্বাচন কোথাও যেন বাংলার সংস্কৃতি সুরক্ষিত রাখার নির্বাচন হয়ে দাঁড়িয়েছিল। বাংলার সাহিত্য, সংস্কৃতির প্রতি বিজেপির ঔদাসীন্য, বুদ্ধিজীবীদের নিরন্তর আক্রমণ, ভাষার অবমাননা বাঙালি মেনে নেয়নি। তৃণমূলের উপরে যাঁরা বীতশ্রদ্ধ ছিলেন, তাঁরাও বাংলাকে বিভেদের রাজনীতি থেকে বাঁচাতে তৃণমূলকে ভোট দিয়েছেন। বামেরা তো প্রায় নিশ্চিহ্ন। বাম সমর্থকদের ভোটের অধিকাংশই যে তৃণমূলের পক্ষে গিয়েছে,তা ফলাফলেই স্পষ্ট।

সায়ন তালুকদার, কলকাতা-৯০

একা মমতা

শিবাজীপ্রতিম বসুর নিবন্ধটি সঠিক। একা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনেক কিছু প্রমাণ করে দিয়েছেন। তিনি প্রমাণ করলেন, ভাড়াটে সৈন্য দিয়ে যুদ্ধ জেতা যায় না। বরং লড়াকু সৈন্যদের মনোবলে চিড় ধরে। দলবদলুদের এই বাংলা ভাল চোখে দেখে না। বাংলার মানুষ মানলেন, সব দোষ ত্রুটি নিয়েও মমতা আর সবার থেকে কয়েক যোজন এগিয়ে।

তা হলে কি মমতার সব কাজ শেষ হয়ে গেল? বাংলার মানুষ আশা করবেন অতীতের সব ভুল-ভ্রান্তি-সমালোচনাকে তিনিই শুধরে নেবেন, যাতে বাংলার মানুষ দলমত নির্বিশেষে নতুন এই সরকারের একটি মানবিক এবং গণতান্ত্রিক মুখ দেখতে পায়। আরও দুই সাম্প্রদায়িকতা-বিরোধী শক্তি— বাম এবং কংগ্রেস এই বিধানসভায় রইল না। ফলে সাম্প্রদায়িকতার বিরোধিতা মমতাকেই করতে হবে।

সুদীপ মাইতি, কাঁথি, পূর্ব মেদিনীপুর

একই ওষুধ

আমার পিতৃতুল্য দিল্লির এক ডাক্তার কলকাতায় ডাক্তারি পড়ার সময় একটি বিচিত্র অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছিলেন। তখন সরকারি হাসপাতালগুলিতে ওষুধের জোগান অপ্রতুল ছিল। কোনও একটি হাসপাতালের মেডিক্যাল স্টোরে শুধুমাত্র ‘সালফাগুনাইডিন’-ই সরবরাহ করা হত, যা পেটের সমস্যায় ব্যবহার করার ওষুধ। কিন্তু ওই একটি ওষুধই পাওয়া যেত বলে ডাক্তাররা সব অসুখে সেটাই লিখতেন। আমাদের দেশেও বিজেপি তেমনই একটি নির্দিষ্ট ওষুধ সমস্ত রাজ্যেই প্রয়োগ করতে চাইছে, যা অবাস্তব। প্রতিটি রাজ্যের বা প্রদেশের নিজস্ব ভাবধারা রয়েছে, লোকসাহিত্য বা লোকশিল্প গড়ে উঠেছে। তার পরিবর্তন করার চেষ্টা করলে সেই প্রদেশ বা রাজ্যের অস্তিত্ব-সঙ্কট তৈরি হয়। কিন্তু বিজেপি সেটাই করতে চাইছে, সমস্ত দেশকে একটি মাত্র সংস্কৃতি, দৃষ্টিভঙ্গি, একটিই ধর্মের আবেগে বেঁধে ফেলার চেষ্টা করছে। বিজেপি কেন্দ্রে ক্ষমতায় রয়েছে সাত বছর। অর্থনীতির দিকে তাকিয়ে তাকে সমর্থনের কোনও যুক্তি পাওয়া যাচ্ছে না। বাংলার যুবক-যুবতীরা বেকারত্ব এবং শিল্পের দুরবস্থার কথা নিয়ে ভাবলেও বোধ হয় সামাজিক সুরক্ষা এবং স্বাধীন জীবনশৈলীর দিকটিকেই বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন।

পিনাকী রুদ্র, কলকাতা-১২৪

সুজনেষু

এ বার বিধানসভায় দেখা যাবে না সুজন চক্রবর্তী, আব্দুল মান্নান, শমীক ভট্টাচার্যের মতো সুবক্তাদের। যুক্তি-তথ্য সহকারে বলিষ্ঠ কণ্ঠের বক্তব্যে আর বিধানসভা আলোড়িত হবে না। আমরাও বঞ্চিত হব তাঁদের তথ্যপূর্ণ বক্তৃতা থেকে। সংসদীয় গণতন্ত্রে বিরোধী দল এবং নেতার আলাদা গুরুত্ব আছে। সরকারের ত্রুটি ধরিয়ে ভুল সংশোধন করতে পথ দেখায় বিরোধীরা। নতুন মুখগুলি কি পারবে এ সব সুবক্তাদের অভাব পূরণ করতে? এক সময়ে বিধান রায় বলতেন, “জ্যোতিশূন্য বিধানসভা জ্যোতিহীন মনে হয়।” জ্যোতি বসুর বলিষ্ঠ ও তথ্যপূর্ণ বক্তব্যের জন্য বিধান রায় তাঁকে খুব স্নেহ করতেন। এখন এই ঔদার্য কল্পনা করা যায় না।

শান্তনু সিংহ রায়, মিঠিপুর, মুর্শিদাবাদ

সাতাত্তরে

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফের সরকার গঠন করবেন। আবার প্রমাণিত হল কুঁড়ে বাঙালি চটকদার সরকারি প্রকল্পের ভরসাতেই থাকতে চায় এবং তাদের কাছে দুর্নীতি কোনও বিষয় নয়। কিন্তু মনে রাখতে হবে, বিজেপি পাঁচ বছরেই ৩ থেকে ৭৭টি আসনে পৌঁছে গিয়েছে। তৃণমূলের বহু বছর লেগেছিল। গত লোকসভার সঙ্গে কত পার্থক্য হল, কেবল তা ধরলে চলবে না।

সৌগত বাগচি, কলকাতা-১৫৭

এই বাংলা

এই বাংলা রবীন্দ্রনাথ-নজরুলের, সম্প্রীতির, ঐক্যের। এখানে পিরের দরগায় যেমন হিন্দু ধর্মাবলম্বী চাদর পাঠান, তেমনই শ্মশানে মৃতদেহ সৎকারের জন্য মুসলমানরা কাঠের চিতা সাজান। বিবেকানন্দ বাংলারই ছেলে। অথচ, তাঁর বাণীকে মর্যাদা না দিয়ে একটি বিশেষ ধর্মের প্রচারক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। অনগ্রসর, নিম্নবর্ণ, সংখ্যালঘু সবাইকে নিয়ে এই বাংলা। জাতপাত, ধর্ম, বর্ণ দিয়ে বিচার করে এখানে ভোটে জেতা যায় না।

শেখ কামাল উদ্দীন, বারাসত, উত্তর ২৪ পরগনা

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy