Advertisement
১১ জানুয়ারি ২০২৫
Mamata Banerjee

সম্পাদক সমীপেষু: কেন এই দুর্ঘটনা

তাঁর সঙ্গে থাকা বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নিরাপত্তা বাহিনী ও পুলিশ আধিকারিকরা এই নিয়মটুকু কি জানতেন না?

শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০২১ ০৫:৩২
Share: Save:

নন্দীগ্রামে নির্বাচনী প্রচার করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার খবরে আমরা উদ্বিগ্ন ও মর্মাহত। তবে মুখ্যমন্ত্রী চলন্ত গাড়ির দরজা আংশিক খোলা রেখে পাদানিতে দাঁড়িয়ে হাত জোড় করে যে ভাবে নমস্কার করছিলেন, উন্নত ট্র্যাফিকের নিয়মানুযায়ী তা করা যায় না। তাঁর সঙ্গে থাকা বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নিরাপত্তা বাহিনী ও পুলিশ আধিকারিকরা এই নিয়মটুকু কি জানতেন না? মুখ্যমন্ত্রীর গাড়ির চালকই বা কী করছিলেন? তিনিও কি জানতেন না যে, চলন্ত অবস্থায় গাড়ির দরজা খুলে রাখা যায় না? চালক মুখ্যমন্ত্রীকে সতর্ক করলেন না কেন? শুধু তা-ই নয়, চলন্ত গাড়ির ভিতর থেকে শরীরের কোনও অঙ্গ বাইরে বার করাও ট্র্যাফিকব্যবস্থার পরিপন্থী। প্রশ্ন, যদি এ ভাবে নমস্কার করতেই হয়, তা হলে কর্মকর্তারা হুডখোলা গাড়ি নিলেন না কেন? আন্দাজ হয়, মুখ্যমন্ত্রী নিজেও আধুনিক ট্র্যাফিকব্যবস্থার নিয়মাবলি সম্পর্কে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল নন। অথচ, তাঁরই মস্তিষ্কপ্রসূত ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইভ’ প্রচুর প্রচার পেয়েছে।

গোড়ায় গলদ রেখে নন্দীগ্রামে গাড়ি দুর্ঘটনার পর প্রথমেই মুখ্যমন্ত্রী চক্রান্তের অভিযোগ আনলেন, এবং বললেন চার-পাঁচ জন গাড়ির দরজায় জোরে ধাক্কা দিয়ে চেপে দিয়েছেন। তাতেই তিনি মারাত্মক ভাবে আহত হয়েছেন। এতে রাজ্য জুড়ে তড়িৎগতিতে ক্ষমতাসীন দলের কিছু কর্মী-সমর্থক বিক্ষোভে ফেটে পড়লেন। কিছু পরেই প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ানে উঠে এল ভিন্ন একটি বিষয়। তা হল, রাস্তার পাশে পুঁতে রাখা রেল লাইনের টুকরোর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর গাড়ির খুলে-রাখা দরজার ধাক্কাতেই এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা। এই মুহূর্ত পর্যন্ত বিভিন্ন উৎস থেকে পাওয়া খবর অনুযায়ী, প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ানই সত্য বলে মান্যতা পেতে শুরু করেছে। ঘটনা যা-ই হোক, নিয়ম-বহির্ভূত ভাবে মুখ্যমন্ত্রীর গাড়ির দরজা খুলে রাখাই যে এই দুর্ঘটনার কারণ, তা প্রশাসন থেকে মিডিয়া বা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, কারও মুখ থেকেই শোনা যায়নি। আসল কথায় না গিয়ে অবাঞ্ছিত সব বক্তব্যকে ঘিরে সবাই শোরগোল ফেলে দিয়েছেন।

বিভূতিভূষণ রায়, হাবড়া, উত্তর ২৪ পরগনা

বিধিভঙ্গ

‘সুরক্ষা-প্রশ্ন, রিপোর্ট চাইল কমিশন’ (১১-৩) সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে এই পত্র। নন্দীগ্রামে বিরুলিয়া বাজারের কাছে মুখ্যমন্ত্রীর উপর যা ঘটেছে, তার জন্য দায়ী মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তারক্ষী বাহিনী। অত্যধিক ভিড়ের চাপেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুর্ঘটনার কবলে পড়েন। ভিড় নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব তো মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তারক্ষী বাহিনীর। তাঁরা তখন কোথায় ছিলেন? জ়েড ক্যাটেগরি নিরাপত্তা বলয়ে তো একটা মাছি গলার কথা নয়। তা হলে এত লোক এল কোথা থেকে?

এই দুর্ঘটনার জন্য মুখ্যমন্ত্রী নিজেও খানিকটা দায়ী নন কি? জ়েড ক্যাটেগরি নিরাপত্তার অধিকারী ব্যক্তির গাড়ির সামনে ড্রাইভারের বাঁ দিকের আসনে বসার কথা নয়। অথচ, আমরা দীর্ঘ দিন যাবৎ দেখে আসছি, মমতা সব সময়ই গাড়ির সামনে ড্রাইভারের বাঁ দিকের আসনে বসে যাত্রা করেন, যা নিরাপত্তা বিঘ্নিত করতে পারে। ১০ মার্চ মুখ্যমন্ত্রী যদি গাড়ির পিছনের আসনে বসতেন, তা হলে এমন দুর্ঘটনার শিকার হতেন না। মুখ্যমন্ত্রীর নিজেরও কি নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিধিনিষেধ কঠোর ভাবে মেনে চলা উচিত নয়?

অতীশচন্দ্র ভাওয়াল, কোন্নগর, হুগলি

নিন্দনীয়

নন্দীগ্রামের বিরুলিয়ায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ১০ মার্চ সন্ধ্যায় আহত হওয়ার পরে যে ভাবে বিরোধী দলগুলি তীর্যক কটাক্ষ করছে, তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। বিশেষত, আব্দুল মান্নান এবং অধীর চৌধুরীর বক্তব্য অমানবিক ও রুচিহীন। বিন্দুমাত্র যদি মনুষ্যত্ব বা বিবেক থাকে, এই বিবৃতির জন্য ক্ষমা চাওয়া দরকার।

সৈয়দ আনসার উল আলাম, খেপুত, পশ্চিম মেদিনীপুর

নীরবতা

‘নিগ্রহে চুপ... নারী দিবসে সরব’ (৯-৩) খবরটির প্রেক্ষিতে কিছু কথা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ৮ মার্চ সকাল সকাল টুইটে নারী দিবসের শুভেচ্ছা, নারীশক্তিকে কুর্নিশ জানালেন। যেন উনি একাই দেশের নারীদের নিরাপত্তা দিচ্ছেন। নারীদের অসহায়তার প্রশ্নে তিনি কতটা নীরব থেকেছেন, আমরা ভুলিনি। মনে আছে, ২০১৮ সালে জম্মুর কাঠুয়ায় এক বালিকা গণধর্ষণের শিকার এবং খুন হয়। তখন প্রধানমন্ত্রী একটি কথাও খরচ করেননি। ২০১৯ সালে হায়দরাবাদের এক তরুণীকে গণধর্ষণ ও খুন করা হয়েছিল। তখনও তিনি চুপ ছিলেন। বিজেপি-শাসিত উত্তরপ্রদেশে ২০১৭ সালে উন্নাওয়ের ঘটনা, ২০২০ সালে হাথরসের ঘটনা দেখেও নীরব ছিলেন।

ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস বুরো-র রিপোর্ট কিছু ভয়ঙ্কর তথ্য তুলে ধরে— ভারতে প্রতি ১৬ মিনিটে অন্তত এক জন ধর্ষিতা হচ্ছেন। প্রতি ঘণ্টায় একটি মেয়েকে পণের জন্য খুন হতে হয়। প্রতি চার মিনিটে একটি মেয়েকে শ্বশুরবাড়ি, অথবা স্বামীর হাতে নির্যাতিত ও লাঞ্ছিত হতে হয়। প্রতি দু’দিনে এক জন মেয়ের উপর অ্যাসিড আক্রমণ হয়। প্রতি ৩০ ঘণ্টায় অন্তত এক জন গণধর্ষণের শিকার হন। আর প্রতি চার ঘণ্টায় অন্তত একটি মেয়ে পাচার হয়ে যান।

সুতরাং, গোটা দেশে নারীসুরক্ষার বিষয়টি এখন প্রশ্নের মুখে। অথচ, প্রধানমন্ত্রী চুপ। বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিতে খুন, লাভ জেহাদের নামে অত্যাচার, ধর্ষণের মতো অপরাধেও তিনি নীরব। এর ফলে বিশ্বের দরবারে ভারতের যে উজ্জ্বল ভাবমূর্তি ছিল, তা নষ্ট হচ্ছে।

মৌসুমী দেবনাথ, নবদ্বীপ, নদিয়া

শ্রমজীবী নারী

প্রতি বছর ৮ মার্চ মহাসমারোহে উদ্‌যাপিত হয় আন্তর্জাতিক নারী দিবস। আর ঠিক প্রতি বছরই অবধারিত ভাবে সেখান থেকে ‘শ্রমজীবী’ শব্দটি উধাও হয়ে যায়। সংবাদপত্র থেকে সমাজমাধ্যম, শাড়ি-গয়নার বিজ্ঞাপন থেকে নেতা-মন্ত্রীদের ভাষণ, সর্বত্র অনুচ্চারিত থেকে যায় ‘শ্রমজীবী’ শব্দটি। অথচ, একে মুছে দেওয়ার অর্থ, মানবসভ্যতার চাকায় মেয়েদের যে রক্ত-ঘাম লেগে রয়েছে, তাকে অস্বীকার করা। মেয়েদের শ্রমের একটি বৃহৎ অংশ জুড়ে রয়েছে গৃহশ্রম, যার অর্থকরী দিকটি আজও এই উপমহাদেশে উপেক্ষিত। একটি দিনের তাৎপর্য যেন কেবল বিপণন সংস্থার ছাড়ের ঘোষণা-সম্বলিত বিজ্ঞাপন, বা মেয়েদের ‘গিফট’ প্রদানে সীমিত হয়ে না থাকে। বিনামূল্যে পেয়ে-যাওয়া গার্হস্থ শ্রমকে ‘শ্রম’ হিসেবে গণ্য করার মন তৈরি হোক। নারীত্বের অমূলক গরিমার কীর্তন নয়, আন্তর্জাতিক শ্রমজীবী নারী দিবস হয়ে উঠুক নারীর ধারাবাহিক সংগ্রামের মাইলফলক।

ঋভুলগ্না ঘোষ, কলকাতা-৬৫

দীপ্তিময়ী

৮ মার্চ, ২০২১ আমার এক তুতো ভাইয়ের বিয়ের জন্য পাত্রী নির্বাচনের চার সদস্যের দলের মধ্যে আমি ছিলাম। সোদপুরে পাত্রীর বাড়ি। এ কথা সে কথার মধ্যে পাত্রের ঠোঁটকাটা ছোটকাকা হঠাৎ ঘটক ভদ্রলোকের উদ্দেশে বলে উঠলেন, “আপনি তো বলেছিলেন পাত্রী ফর্সা। কিন্তু এ তো দেখছি রীতিমতো কালো গায়ের রং।” আমরা স্তম্ভিত।

কয়েক মুহূর্তের স্তব্ধতা ভেঙে মেয়েটি উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “কাকাবাবু, আপনার চুলগুলো দেখেই বোঝা যাচ্ছে রং করা। সাদা চুল কালো করতে আপনার লজ্জা লাগেনি, আর মেয়েরা কালো হলে ভ্রু কুঁচকে যায়!” বলেই মেয়েটি সটান উঠে চলে গেল। আমি সে দিন ভীষণ আনন্দ অনুভব করছিলাম, একটি মেয়েকে এমন একটি দিনে আত্মমর্যাদাবোধ প্রকাশ ও প্রতিষ্ঠা করতে দেখে।

অরিন্দম দাস, হরিপুর, উত্তর ২৪ পরগনা

অন্য বিষয়গুলি:

Mamata Banerjee Nandigram
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy