Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু: বুলবুল ও ক্ষতিপূরণ

বিএলআরও অফিসে ঠেলায় পড়ে বহু চাষি মিউটেশন করার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য, অর্থ দাখিল করেছেন, তা সত্ত্বেও বছরের পর বছর চলে যাচ্ছে, মিউটেশন সার্টিফিকেট হাতে আসেনি।

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯ ০০:০০
Share: Save:

রাজ্য সরকার থেকে বুলবুলের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। বিভিন্ন দফতর থেকে ফর্ম দেওয়া হচ্ছে। দুঃখের বিষয়, সব ক্ষতিগ্রস্ত চাষি কিন্তু এই ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন না। তার কারণ অনেকের জমি এখনও তাঁর নিজের নামে পরচাভুক্ত হয়নি। হয়তো জমি আছে বাবার নামে— সদ্য ওয়ারিশন শংসাপত্র দাখিল করেও ক্ষতিপূরণের ফর্ম পাওয়া যায়নি। জমি তাঁদের নিজেদের নামেই থাকতে হবে।

এ দিকে বিএলআরও অফিসে ঠেলায় পড়ে বহু চাষি মিউটেশন করার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য, অর্থ দাখিল করেছেন, তা সত্ত্বেও বছরের পর বছর চলে যাচ্ছে, মিউটেশন সার্টিফিকেট হাতে আসেনি। অথচ যাঁরা এ বছর জলের অভাবে চাষই করেননি, তাঁদের জমি নিজেদের নামে থাকায় তাঁরা তা দেখিয়ে ফর্ম তুলে জমা দিচ্ছেন। যে চাষিরা সদ্য ওয়ারিশন সার্টিফিকেট দাখিল করেছেন, তাঁরা ক্ষতিপূরণের টাকা কি কোনও মতেই পাবেন না?

অরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়

ধনিয়াখালি, হুগলি

এই জন্য সংরক্ষণ

‘সংরক্ষণ’ (৮-১২) শীর্ষক চিঠিটির প্রেক্ষিতে এই চিঠি। প্রথমত, ভারতে শিক্ষা-চাকরি-আইনসভায় সংরক্ষণ ড. অম্বেডকর চাননি, তিনি চেয়েছিলেন তথাকথিত অস্পৃশ্য মানুষের জন্য separate electorate বা পৃথক ভোটাধিকার, অর্থাৎ, দলিত শ্রেণির মানুষের জনপ্রতিনিধি কেবলমাত্র দলিতদের দ্বারাই নির্বাচিত হবেন, যাতে এই জনপ্রতিনিধিরা তাঁদের সম্প্রদায়ের কাছে দায়বদ্ধ থাকতে পারেন। কিন্তু গাঁধীজি পৃথক ভোটাধিকারের বদলে সংরক্ষণের প্রস্তাব দিয়ে ড. অম্বেডকরকে পুণা চুক্তি (১৯৩২) করতে বাধ্য করেছিলেন। কারণ তা না করলে, গাঁধীজির প্রাণসংশয়ের বদলা হিসেবে দলিতদের উপর বর্ণহিন্দুদের হিংস্র আক্রমণ নেমে আসতে পারত।

দ্বিতীয়ত, সংরক্ষণ ‘নিচু বর্গ’-এর জন্য নয়, ‘নিচু বর্ণ’-এর মানুষের সমাজের সার্বিক ক্ষেত্রে প্রতিনিধিত্বের সুনিশ্চিতকরণের উদ্দেশ্যে চালু করা হয়েছিল। ‘বর্গ’ বলতে অর্থনৈতিক শ্রেণি বোঝায়; ‘বর্ণ’ বলতে এখানে জাতকে বোঝানো হচ্ছে, যা ভারতীয় তথা সংখ্যাগুরু হিন্দু সমাজব্যবস্থার অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। বর্গের ভিত্তিতে সংরক্ষণ হলে সেটি দারিদ্র দূরীকরণ কর্মসূচির নামান্তর হত, যদিও সংরক্ষণের মূল উদ্দেশ্যই হল সমাজের বিভিন্ন অংশের মানুষের প্রতিনিধিত্বের সুনিশ্চিতকরণ।

তৃতীয়ত, ‘‘সংরক্ষণ ব্যবস্থা চালু করেছিলেন শুধুমাত্র ১০ বছরের জন্য’’— এটি ভুল। সমাজের সার্বিক স্তরে সর্বজনীন প্রতিনিধিত্বের সুনিশ্চিতকরণের উদ্দেশ্যে তিন ধরনের সংরক্ষণের ব্যবস্থা সংবিধানে রাখা হয়েছে। ১) শিক্ষাক্ষেত্রে, ২) চাকরিতে, ৩) আইনসভায়। সংবিধানের পার্ট ৩, আর্টিকেল ১৫(৪) ও ১৫(৫)-এ, সামাজিক ও শিক্ষাগত ভাবে পিছিয়ে থাকা সম্প্রদায়ের জন্য, বিশেষত তফসিলি জাতি ও জনজাতিদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করতে সরকারকে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। সংবিধানের পার্ট ৩, আর্টিকেল ১৬(৪), ১৬(৪এ) এবং ১৬(৪বি)-তে চাকরিক্ষেত্রে নিয়োগ, পদোন্নতি ইত্যাদি সংক্রান্ত বিষয়ে সমাজের পিছিয়ে থাকা শ্রেণির, বিশেষত তফসিলি জাতি ও জনজাতিদের অংশগ্রহণকে সুনিশ্চিতকরণের উদ্দেশ্যে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। এবং ১০ বছরের জন্য যে সংরক্ষণের কথা পত্রলেখক বলেছেন, তা সংবিধানের পার্ট ১৬-র আর্টিকেল ৩৩০, ৩৩২-এর নিরিখে আর্টিকেল ৩৩৪-এ বলা হয়েছে। স্পষ্টতই, ১০ বছরের জন্য সংরক্ষণের সংস্থানের সঙ্গে আর্টিকেল ৩৩৪ সম্পর্কিত, যার সঙ্গে শিক্ষা, চাকরিতে সংরক্ষণের কোনও সম্পর্ক নেই।

এ ছাড়া, তফসিলি জাতি, জনজাতি ও অন্যান্য পিছড়ে-বর্গের (ওবিসি সংরক্ষণের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক মাপকাঠি বিবেচিত হয়, তাই ‘বর্গ’) জন্য যে সংরক্ষণের সংস্থান করা হয়েছে, তা নির্ভর করে কয়েকটি শর্তের উপর:

১। তফসিলি জাতিভুক্ত হওয়ার জন্য তিনটি শর্ত: ক) শিক্ষাগত অনগ্রসরতা; খ) সামাজিক অনগ্রসরতা; এবং গ) অস্পৃশ্য হিসেবে পরিগণিত হওয়া।

২। তফসিলি উপজাতিভুক্ত হওয়ার জন্য তিনটি শর্ত: ক) শিক্ষাগত অনগ্রসরতা; খ) সামাজিক অনগ্রসরতা; এবং গ) আদিম জীবনযাত্রার বৈশিষ্ট্য-সংযুক্ত হিসেবে পরিগণিত হওয়া।

৩। অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি বা ওবিসি-ভুক্ত হওয়ার জন্য তিনটি শর্ত:

ক) শিক্ষাগত অনগ্রসরতা; খ) সামাজিক অনগ্রসরতা; কিন্তু গ) উপরোক্ত তিনটি শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত নয়।

উপরোক্ত শর্তাবলির মধ্যে, ১(গ) ও ২(গ) মূলত তফসিলি জাতি ও জনজাতিভুক্ত মানুষদের প্রতি বৈষম্যের মূল কারণ, বিশেষত ১(গ) শর্তটি কোনও ভাবেই আর্থিক ভিত্তির সঙ্গে আদৌ সম্পর্কিত নয়। যাঁরা তফসিলি জাতি/জনজাতি শ্রেণিভুক্ত মানুষদের ক্ষেত্রেও আর্থিক নিরিখে সংরক্ষণের সংস্থানের কথা বলেন, তাঁরা কি মনে করেন যে ভারত থেকে অস্পৃশ্যতা লুপ্ত হয়ে গিয়েছে? আদিবাসীদের প্রতি আদিম-প্রবৃত্তি সংক্রান্ত যে ধারণা তাও শেষ হয়ে গিয়েছে?

তা-ই যদি হত, কেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দকে অবমাননার শিকার হতে হয়েছিল পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে ঢুকতে চাওয়ায়? কেরলের দলিত সিপিআই বিধায়ক গীতা গোপী তাঁর বিধানসভা কেন্দ্রে রাস্তার দুরবস্থার প্রতিবাদে পূর্ত ইঞ্জিনিয়ারদের অফিসের সামনে ধর্নায় বসার পর কেন ওই বিধায়কের ধর্নাস্থল গোবরজল দিয়ে ‘শুদ্ধ’ করা হয়েছিল? অমর্ত্য সেনের প্রতীচী ট্রাস্টের রিপোর্টে আদিবাসী ছাত্রছাত্রীদের স্কুলছুট হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে: সাধারণ বর্গের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের, আদিবাসী ছাত্রছাত্রীদের আদিম জীবনযাত্রা সম্পর্কিত অনাকাঙ্ক্ষিত দৃষ্টিভঙ্গি ও তার প্রকাশকেই। কয়েক মাস আগে ‘নিচু’ জাত তথা আদিবাসী সম্প্রদায়ভুক্ত ডাক্তার পায়েল তদভির মৃত্যু কি তাঁর আর্থিক অবস্থার কারণে হয়েছিল, না কি তাঁর জাতের জন্য হয়েছিল (‘‘নিচু’ জাত, তাই চরম দণ্ড”, অনিতা অগ্নিহোত্রী, ৩-৮)? এই একই প্রবন্ধে দেখানো হয়েছে, কী ভাবে অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস-এর মতো প্রথম সারির সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও ‘‘মূল্যায়নের সময় অন্তত ৮৪ শতাংশ দলিত ছাত্রছাত্রীকে জাত সম্বন্ধে জানতে চাওয়া হয়েছে।’’

তাই, এ কথাটি সর্বাগ্রে বিবেচনা করতে হবে, তফসিলি জাতি/জনজাতির জন্য সংরক্ষণের যে সংস্থান, তার কারণ কিন্তু অর্থনীতি ব্যতীত অন্য কিছু। এবং, সংরক্ষণের ফলে আর্থিক সমৃদ্ধির ফলভোগ করলেও, কেবলমাত্র তফসিলি জাতি/জনজাতিভুক্ত হওয়ার জন্য সমাজের সর্ব ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার যাতে না হতে হয়, তার জন্যই সংরক্ষণ এখনও চালিয়ে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা আছে বলেই মনে হয়। সংবিধানেও সে কথাই বলতে চাওয়া হয়েছে, ব্যতিক্রম রাজনৈতিক সংরক্ষণ, যার সম্পর্কে সংরক্ষিত শ্রেণির মানুষের আদৌ কোনও মাথাব্যথা বা আন্দোলন আজ পর্যন্ত দেখা যায়নি, কেননা বর্ণহিন্দু পরিচালিত দলগুলি থেকে সংরক্ষিত শ্রেণির নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিবৃন্দকে, সংরক্ষিত শ্রেণির মানুষেরা নিজেদের জনপ্রতিনিধি হিসেবে ভাবেন না। কারণ এই জনপ্রতিনিধিগণ আইনসভায় কী বলবেন বা করবেন, তা তাঁদের বর্ণবাদী নেতানেত্রীদের দ্বারাই স্থিরীকৃত।

সুধাকর সর্দার

অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর, আচার্য জগদীশচন্দ্র বোস কলেজ, কলকাতা

সাঁকো হোক

এক পাড়ে ‘হবিবপুর-মাজদিয়া’ গ্রাম পঞ্চায়েতের জনবসতি। অন্য পাড়ে ‘আনুলিয়া’ পঞ্চায়েতের লোকালয়। মাঝখান দিয়ে বয়ে চলেছে চূর্ণী। পারাপারের একমাত্র মাধ্যম সেই আদ্যিকালের খেয়ানৌকা। তাতেই রোজ যাতায়াত করছেন শত শত মানুষ। কিন্তু অনেক সময়েই নৌকাগুলি যাত্রীদের পীড়াপীড়িতে অনেক বেশি যাত্রী নেয়। তা ছাড়া ঝড়বৃষ্টিতে মাঝিরা নৌকা চলাচল বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন। আর যাত্রিবাহী বাস, মোটরগাড়ি, লরি ইত্যাদি খেয়া নৌকার মাধ্যমে নদী পার হতে পারে না। তাই অনেক বেশি সময় ও অর্থ ব্যয় করে ঘুরপথে গন্তব্যে পৌঁছয়। তাই নদীর উপর সাঁকো তৈরি হোক। এক যুগ আগে শিলান্যাস হয়েছে, এ বার কাজ হোক।

হারান ভৌমিক

বীরনগর, নদিয়া

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

অন্য বিষয়গুলি:

Cyclone Bulbul Farmer
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy