Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Religion Discrimination

সম্পাদক সমীপেষু: বিভেদের বিরুদ্ধে

বর্তমানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলো মুখে ধর্মনিরপেক্ষতার বুলি আওড়ায়, কার্যক্ষেত্রে তার ধারে কাছেও থাকে না।

crowd of people at busy marketplace

ধর্মনিরপেক্ষতার সঠিক ব্যাখ্যা সংবাদে প্রচার হলে সমাজ সচেতন হয়। ফাইল ছবি।

শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০২৩ ০৪:৪৬
Share: Save:

শাশ্বত ঘোষ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় তুলে ধরেছেন, যা আজকের দিনে সমাজের কিছু মানুষের বিভ্রান্তি দূর করতে সাহায্য করবে (‘সত্য তথ্য বনাম অন্ধ বিশ্বাস’, ১১-১)। কিছু মানুষ বলে বেড়ান, দেশে মুসলমানদের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। ফলে হিন্দুদের পিছনে ফেলে মুসলমানরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে যাবে। এই প্রবন্ধ এমন ধারণা বদলাতে সাহায্য করবে। তথ্যসমৃদ্ধ এ ধরনের লেখা শুধুমাত্র এই বিষয়েই নয়, বহু ক্ষেত্রেই প্রয়োজন। সমাজ সচেতনতা এর ফলে বাড়ে। ধর্মনিরপেক্ষতার সঠিক ব্যাখ্যা সংবাদে প্রচার হলে সমাজ সচেতন হয়। বর্তমানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলো মুখে ধর্মনিরপেক্ষতার বুলি আওড়ায়, কার্যক্ষেত্রে তার ধারে কাছেও থাকে না। যে যার মতো করে ধর্মনিরপেক্ষতার ব্যাখ্যা দিয়ে চলেছে। ভোট রাজনীতির ক্ষুদ্র দলীয় স্বার্থকে কাজে লাগাতে রাজনৈতিক দলগুলি বদ্ধপরিকর। লেখক বলেছেন, ভারত তথা পশ্চিমবঙ্গের প্রগতিশীল ও ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলির মধ্যে এই বৈজ্ঞানিক উপায়ে সংগৃহীত তথ্যকে জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কোনও প্রচেষ্টা চোখে পড়ে না। হয় নেতারা এই তথ্যগুলো জানেন না, বা জানলেও ভোটব্যাঙ্ক রাজনীতিতে সুবিধা পাওয়ার উদ্দেশ্যে চুপ করে থাকেন। এ ক্ষেত্রে উদারপন্থী ও শুভবুদ্ধিসম্পন্ন সামাজিক সংগঠনগুলোকে দায়িত্ব নিতে হবে, যাতে এই তথ্য-পরিসংখ্যান জনগণের কাছে পৌঁছয়। যাতে এই ধর্মনিরপেক্ষ দেশে ধর্মীয় লাইনে জনগোষ্ঠীর মধ্যে অপ্রয়োজনীয় বিভাজন রোখা যায়। লেখকের এই আবেদনে সাড়া দেওয়া সকলেরই উচিত। রাষ্ট্র কোনও ধর্মকে উৎসাহিত করবে না, নিরুৎসাহিতও করবে না, ধর্ম একান্ত ব্যক্তিগত— এমনই হওয়া উচিত রাষ্ট্রের অবস্থান। শিক্ষাকে হতে হবে সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক, গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ছিলেন ধর্মনিরপেক্ষতার একনিষ্ঠ প্রতীক। বিবেকানন্দও জাতপাত নিয়ে বিচার করা সমর্থন করেননি। তিনি মনে করতেন, সত্যের জন্য সব কিছু ত্যাগ করা যায়, কিন্তু কোনও কিছুর বিনিময়ে সত্যকে ত্যাগ করা যায় না। অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কার, কাল্পনিক চরিত্রের জন্য গোঁড়ামি, যুক্তিহীন ও অসত্য ধারণা সমাজের ক্ষতিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। রাজনীতি ও ধর্ম মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিতেই তার উপযুক্ত প্রমাণ মেলে।

শাসকদের কাজ হল বিভেদ সৃষ্টির দ্বারা শাসন করা। তাই তাদের সেবক যাঁরাই হবেন, তাঁরাই এ কাজ করবেন। নইলে যে গদি চলে যাবে। যাঁরা প্রকৃত মানবতাবাদী, শুভবুদ্ধিসম্পন্ন ও গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষ, তাঁরা ধর্মনিরপেক্ষতার সঠিক ব্যাখ্যা বোঝেন, ও মানুষের কল্যাণে ব্রতী হন। সংবাদমাধ্যমগুলোও এই আদর্শ অনুসরণ করলে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পারে অনেক বেশি।

বিদ্যুৎ সীট, জগদল্লা, বাঁকুড়া

মেয়েদের সংখ্যা

শাশ্বত ঘোষের প্রবন্ধটির জন্য ধন্যবাদ। জনসংখ্যা বৃদ্ধির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জনমানসে ভুল ধারণার ফলে জাতিবিদ্বেষ বাড়লে তা সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। তিনি সুন্দর ভাবে যুক্তিনির্ভর পরিসংখ্যানের সাহায্যে ভ্রান্ত ধারণা খণ্ডন করে সত্য উন্মোচন করেছেন। তবে একটি বিষয় উল্লেখ না থাকায় প্রতিবেদনটি অসম্পূর্ণ আছে বলে মনে করি। আগামী একটি নির্দিষ্ট সময়ে, ধরা যাক আগামী দশ, কুড়ি বা তিরিশ বছরে, কোনও জনগোষ্ঠীর জনসংখ্যা কত বাড়বে, সেটা নির্ধারণ করার জন্য শুধু ওই গোষ্ঠীর মোট জনসংখ্যা এবং জন্মহার (ফার্টিলিটি রেট) জানাই যথেষ্ট নয়। ওই জনগোষ্ঠীর বয়সভিত্তিক জনবিন্যাস, যেমন শূন্য থেকে দশ, দশ থেকে কুড়ি, কুড়ি থেকে তিরিশ— এই ভাবে বয়সভিত্তিক জনসংখ্যার পরিমাণ জানাও জরুরি। আগামী দশ বছরের হিসাবের জন্য কুড়ি থেকে তিরিশ বছর বয়সের নারীর সংখ্যা দিয়ে জন্মহারকে গুণ করতে হবে। কারণ, এই বয়সের নারীদের সন্তানধারণের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। দু’টি জনগোষ্ঠীর ফার্টিলিটি রেট এক হলেও যদি একটি জনগোষ্ঠীর কুড়ি থেকে তিরিশ বছর বয়সি নারীর সংখ্যা বেশি হয়, তা হলে সেই জনগোষ্ঠীর মোট জনসংখ্যা আগামী দশ বছরে অন্য গোষ্ঠীর জনসংখ্যার তুলনায় বেশি বৃদ্ধি পাবে। এই দিকটি প্রতিবেদনে অনুপস্থিত আছে।

অনিন্দ্য পাল, কলকাতা-৯৬

মিথ্যা বিশ্বাস

পরিবার, সমাজ থেকে নানা ধরনের ভুল ধারণা তৈরি হয় আমাদের মধ্যে। যেমন, আগেকার মানুষ অনেক দিন বাঁচতেন। অথচ, তথ্য বলছে যে, অতীতে গড় আয়ু কম ছিল, এখন অধিকাংশ মানুষ তার তুলনায় অনেক দীর্ঘ জীবন লাভ করেছে। ভিন্ন লিঙ্গ বা ভিন্ন ধর্ম নিয়েও এমন ভুল ধারণা কাজ করে। এক দল মানুষ বিশ্বাস করে নিয়েছে, ভারতীয় মুসলিমরা একাধিক বিয়ে করেন, তাঁদের সন্তানের সংখ্যা বেশি। অথচ, সরকারি পরিসংখ্যান বলছে অন্য কথা। কে কাকে বোঝাবে? ভ্রান্ত ধারণার কারবারিরা যুক্তি-তর্কে যখন ঠিক পেরে উঠছে না তখন বলছে, মুসলিমদের ‘চাপে রাখা’র প্রয়োজন আছে, ওদের বড্ড বাড় বেড়েছে। এমন নানা বাক্যবাণ ছুটে আসছে। রাজনৈতিক কারবারিরা এগুলো সচেতন ভাবে চালু রেখেছেন। অনেক নেতা মুসলিমদের ‘ভিনদেশি’ বলে দাগিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন, মুসলিমরা ‘দেশবিরোধী’— বলে অপপ্রচার করছেন। আবার অন্য দিকে, মুসলিম সমাজের কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে চলেছেন দিনের পর দিন। মূল কথা হল, মুসলিম সমাজকে তাঁরা গ্রহণ করতেও পারছেন না, উপেক্ষাও করতে পারছেন না। ভোট বড় বালাই। অথচ, রাজনৈতিক দলগুলো এই তথ্যগুলি নিয়ে প্রচার চালাতে পারত। তাতে সচেতনতা বাড়ত। ভারতীয় মুসলিমদের নিয়ে অপপ্রচার থেকে বার হয়ে আসতে হবে। মিথ্যা বিশ্বাস নিয়ে সত্যের মুখোমুখি হওয়া অসম্ভব।

সৈয়দ সাদিক ইকবাল, সিমলা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা

অবৈজ্ঞানিক

শিবপুর আইআইইএসটি-র মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বেদ-পুরাণ বিষয়ক কুইজ় প্রতিযোগিতার আয়োজন অবশেষে সুসম্পন্ন হয়েছে (শিবপুর বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠানে সঙ্ঘ-নেতার ছবি, ৮-১)। উক্ত অনুষ্ঠানে নৈবেদ্যর মতো শোভা বর্ধন করেছে আরএসএস-এর মতাদর্শগত গুরু গোলওয়ালকরের ছবি-সম্বলিত বই। ক্ষমতায় আসীন হয়ে মোদী সরকার সঙ্ঘ পরিবারের যে সব কর্মসূচিকে অগ্রাধিকার দিয়েছে, শিক্ষায় গৈরিকীকরণ তার অন্যতম। ২০০১ সালে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী পদার্থ বিজ্ঞানের ডক্টরেট মুরলী মনোহর জোশী প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্যোতিষ পাঠ চালু করতে চেয়েছিলেন। সংবিধানের অন্যতম ভিত্তি বিজ্ঞান ও বিজ্ঞান চেতনা বিকাশে ৫১এ (এইচ) ধারায় বলা হয়েছে, বৈজ্ঞানিক মনোভাব তৈরি প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক দায়িত্ব। তার উপর পরিকল্পিত আঘাত হানতে দেখে দিকে দিকে প্রতিবাদ উঠেছিল, তাই সে সঙ্কল্প বাস্তবায়িত হয়নি। আজ গুজরাত ও মধ্যপ্রদেশের শিশুরা শিখছে, টেলিভিশন ও মোটরগাড়ির জন্ম প্রাচীন ভারতে। মুম্বইতে চিকিৎসকদের সম্মেলনে গণেশের মুখ প্লাস্টিক সার্জারির নিদর্শন, বা টেস্ট-টিউব বেবির জন্ম মহাভারতের কালে বলে ঘোষণা করেছিলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

রাজস্থানের শিক্ষামন্ত্রী বাসুদেব দেবনানী গরুর নিঃশ্বাসে অক্সিজেন বর্জন খুঁজে পান। বিজেপির শাসনে গরুর দুধে সোনা পাওয়া যায়। শতাব্দীপ্রাচীন বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে সাইকোথেরাপির অংশ হিসাবে ‘ভূতবিদ্যা’ নামক ডিপ্লোমা কোর্সটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যে সমস্ত মানসিক রোগের কারণ জানা যায় না, সেই সব ক্ষেত্রে ভূতবিদ্যায় সমাধান সম্ভব বলে জানিয়েছেন আয়ুর্বেদ বিভাগের ডিন। অর্থাৎ, পরিকল্পিত ভাবে অজ্ঞতা, কুসংস্কার ও অবৈজ্ঞানিক ধ্যান ধারণার প্রসারের পর্ব চলছে এই দেশে।

সরিৎশেখর দাস, ব্যারাকপুর, উত্তর ২৪ পরগনা

অন্য বিষয়গুলি:

Religion Discrimination Secular Country India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy