Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Satyajit Ray

সম্পাদক সমীপেষু: আত্মবিস্মৃত বাঙালি

বিশ্বের কাছে তিনি চিত্রপরিচালক বলে সমাদৃত।

শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০২১ ০৭:০২
Share: Save:

বাংলার ‘ঘরের মেয়ে’, ‘ঘরের ছেলে’ এবং আরও সব নেতা ‘বাঙালি অস্মিতা’ নিয়ে হইচই বাধিয়েছেন, বাংলার মনীষীদের ছবি ও বাণীকে অস্ত্র করে ভোটবাজার দখলের চেষ্টা চলছে। অথচ, নির্বাচন কমিশন যখন পশ্চিমবঙ্গের ভোটের নির্ঘণ্ট প্রকাশ করল এবং ২ মে ফল ঘোষণার দিন নির্ধারণ করল, তখন কেউ থমকালেন না। দিনটা যে সত্যজিৎ রায়ের জন্মদিন, এটা কারও মাথায় নেই। তাও আবার সেটা এই বিরল প্রতিভার শতবর্ষ পূর্তির দিন।

বিশ্বের কাছে তিনি চিত্রপরিচালক বলে সমাদৃত। কিন্তু বাঙালির কাছে তিনি অত্যন্ত সমাদৃত লেখক। তাঁর সৃষ্ট চরিত্র— ফেলুদা, লালমোহনবাবু, প্রফেসর শঙ্কু, হীরকরাজা— কয়েক প্রজন্ম পেরিয়ে বঙ্গজীবনের অঙ্গ হয়ে উঠেছে। গত বছর কোভিড-লকডাউন আবহে আমরা সত্যজিৎ রায়ের শতবর্ষ উদ্‌যাপন উপলক্ষে কোনও সভা-সমিতি, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, বইমেলা— কিছুই করতে পারিনি। আশায় ছিলাম, এ বার সপ্তাহ জুড়ে তাঁর প্রতি বাংলার মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালবাসা কতটা, তা প্রদর্শনের সুযোগ পাব। নিশ্চয়ই অনেক সংস্থা অনেক কিছু করার পরিকল্পনা করেছে। এখন তাঁর জন্মদিনেই যদি ভোট গণনা হয়, তবে শুধু সেই দিনে কেন, সেই সপ্তাহ জুড়েই কিছু করা সম্ভব হবে না। সাধারণ মানুষ ভোটের ফলাফল শোনার উত্তেজনায় সত্যজিৎ-শতবর্ষ বিস্মৃত হবেন।

আমরা ২ মে নির্বাচনী ফল ঘোষণা শুনতে চাই না। তাঁর জন্মদিনের সঙ্গে আমাদের জড়িয়ে থাকা আবেগের মর্যাদা দিতে অনুরোধ করি। বাঙালি সংস্কৃতির মূল্য যদি নেতাদের দিতেই হয়, তা হলে এই তার সুযোগ।

শুভাশিস চক্রবর্তী, অশোকনগর, উত্তর ২৪ পরগনা

দর্শক সত্যজিৎ

সত্যজিৎ রায়ের ডায়েরি সম্পর্কে (‘ডায়েরিতে শিল্পী মনের উন্মেষ’, কলকাতার কড়চা, ২২-২) লেখাটি পড়ে আরও কিছু তথ্য মনে এল। কৈশোরে সত্যজিৎ রায়ের দেখা প্রথম বাংলা ছবিটি ছিল কাল পরিণয়। গ্লোবে প্রথম সবাক টারজ়ান-এর ছবি দেখাতে নিয়ে গিয়ে টিকিট না পেয়ে সত্যজিতের মামা বালক সত্যজিতের শুকনো মুখ দেখে অলবিয়ন সিনেমায় (এখন ‘রিগ্যাল’) তাঁকে কাল পরিণয় দেখাতে নিয়ে যান (সত্যজিৎ রায় প্রবন্ধ সংগ্রহ, আনন্দ, পৃ ১৭২)। কাল পরিণয় ছবিটি প্রথমে নির্বাক (১৯৩০) এবং পরে সবাক (১৯৩৬) নির্মিত হয়েছিল। তবে সত্যজিতের দেখা ছবিটি ছিল নির্বাক। প্রথম ছবিটি দেখেই সম্ভবত বাংলা ছবির প্রতি সত্যজিতের মনে এক বিরাগ জন্মেছিল। কিশোর সত্যজিতের ডায়েরিতে দেখা ছবির তালিকায় একটিও বাংলা বা হিন্দি ছবির নাম না থাকলেও, বাংলা ছবি কিন্তু তিনি সেই সময়ে দেখেছেন। একই প্রবন্ধে তার উল্লেখ পাই— “...সবাক যুগে নিউ থিয়েটার্সের হাতি-মার্কা ছবির যখন বেশ নাম-ডাক, আমার দুই কাকা নীতিন ও মুকুল বোস যখন পরিচালক, ক্যামেরাম্যান এবং শব্দযন্ত্রী হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত, তখন থেকে মাঝে মধ্যে আমার বাংলা ছবি দেখার শুরু।” সময়টা (১৯৩৫) এবং তার আশেপাশে বলে মনে হয়।

সত্যজিতের ডায়েরিতে ১৯৩৫ সালের ৯ মার্চ বিজলী সিনেমা হলের ‘ওপেন’ হওয়ার কথা উল্লিখিত হলেও হলটির উদ্বোধন হয়েছিল ৮ মার্চ, সং অব সংস ছবিটি দিয়ে। বিজলীতে প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত নতুন বাংলা ছবি বোধ হয় হরিশচন্দ্র। ১৩৪২ সালের ২৭ পৌষ আনন্দবাজার পত্রিকা-য় প্রকাশিত বিজ্ঞাপন দেখে তাই মনে হয়। ওই দিন ‘শ্রী’ সিনেমা হলটিরও উদ্বোধন হয়, যার বিজ্ঞাপনও ওই কাগজে ছিল।

বিজলী ও সত্যজিৎ রায়ের আর একটি ঘটনার কথা বলি। বিজলীতে অশনি সংকেত ছবির এক বিশেষ প্রদর্শনীতে উপস্থিত সত্যজিৎ রায়। ছবি চলার মাঝপথে তিনি হঠাৎ প্রজেকশন রুমে ঢুকে অপারেটর মনোরঞ্জনবাবুকে (আচার্য) বলেন যে, প্রজেক্টরের লেন্সে কোনও গন্ডগোল আছে। মনোরঞ্জনবাবু কিছু বুঝতে না পারায় সত্যজিৎবাবু লেন্সটি খুলে ছাদে নিয়ে গিয়ে সূর্যের আলোয় মনোরঞ্জনবাবুকে দেখান, লেন্সের গায়ে একটা খুব ছোট কালো বিন্দু মতো দাগ, যেটা ছবি চলাকালীন কোনও একটা দৃশ্যে চরিত্রের মুখের উপর তিল চিহ্নের মতো দেখিয়েছে (কলকাতার সিনেমাহল, সুজয় ঘোষ, পৃ ১৬১)।

সত্যজিৎ রায়ের শতবর্ষে তাঁর পূর্ববর্তী, সমসাময়িক এবং পরবর্তী কালের বাংলা তথা ভারতীয় চলচ্চিত্রকে তাঁর সৃষ্টির পরিপ্রেক্ষিতে পর্যালোচনার সুযোগ মিলত। আক্ষেপ, নির্বাচন কমিশন পশ্চিমবঙ্গ-সহ আরও কয়েকটি রাজ্যের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার তারিখ ২ মে স্থির করেছে। নির্বাচন কমিশনের কাছে বিনীত অনুরোধ, ফল ঘোষণার জন্য পরবর্তী কোনও তারিখ নির্দিষ্ট করা হোক।

সোমনাথ রায়, কলকাতা-১৫

সুরের দিগন্ত

‘রবীন্দ্রময়’ (কলকাতার কড়চা, ২২-২) সুধীর চন্দকে সুন্দর ভাবে তুলে ধরেছে। শুনেছিলাম, শান্তিনিকেতনের আশ্রমিক এই মানুষটি দিল্লিতে রবীন্দ্রগান নিয়ে এক নীরব বিপ্লব ঘটিয়ে দিয়েছেন। ২০০৩ সালে তাঁকে দেখলাম কলকাতায় রবীন্দ্র সদনে, ‘শ্যামা’ নৃত্যনাট্যে কোটাল বেশে। সে বার তাঁর নেতৃত্বে দিল্লির ‘রবিগীতিকা’ সঙ্গীত সংস্থা অপেরা আঙ্গিকে সেটি মঞ্চায়িত করেছিল। তবে সবাইকে ছাপিয়ে গিয়েছিলেন বছর চুয়াত্তরের ওই মানুষটি।

পরে দিল্লি ও কলকাতায় একাধিক বার তাঁর খোলা গলায় গাওয়া গান শোনার সুযোগ হয়েছিল। সেই স্মৃতি এখনও উজ্জ্বল হয়ে আছে। ২০১৭-তে তিনি পাকাপাকি ভাবে কলকাতার মুর অ্যাভিনিউ-এর বাড়িতে চলে আসেন। গিয়েছিলাম সেই বাড়িতেও।

তিনি শুধুমাত্র রবীন্দ্রসঙ্গীতে আকণ্ঠ নিমগ্ন এক শিক্ষকই ছিলেন না, ছিলেন বড় মাপের এক জন তাত্ত্বিকও। তাঁর লেখা রবীন্দ্রসঙ্গীত: রাগ-সুর-নির্দেশিকা, রবীন্দ্রসুরের দিগন্ত এবং রবীন্দ্রসুরের নির্মাণ প্রভৃতি গ্রন্থে ছড়িয়ে আছে তাঁর প্রজ্ঞা, চিন্তা-চেতনা।

এখনকার দিনের অনেক গায়কই যে রবীন্দ্রগানের অন্তঃস্থ ভাবটিকে আত্মস্থ না করে গানের কঙ্কালটিকে নিয়েই নানা রকম সুরবিহারে মগ্ন থাকেন, সে সম্পর্কে তিনি লিখেছেন— “তবে এই যে হাজার হাজার ছাত্রী ও কিছু ছাত্র রবীন্দ্রসংগীত শেখেন— তাঁদের মধ্যে কিছু ভাল গাইয়েও বেরোয়— তাঁরা প্রায় কেউই কিন্তু এই বিশ্লেষণ-আলোচনা-কল্পনার মধ্যে যান না, তাঁদের কাছে এই রবীন্দ্রভাবনা হল আকর্ষণহীন তত্ত্বকথা বা কচকচি, তার ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকাই ভাল। কেননা অধিকাংশ গাইয়ের কারবার কেবল সুরটি নিয়ে, সুরের বাহন হিসাবে কথাগুলো পাখি পড়ার মতো তাঁরা উচ্চারণ করে যান, যেমন তারানা গানের অর্থহীন শব্দধ্বনি। সুরের পাখায় ভর করে রবীন্দ্রনাথের শব্দধ্বনিরূপ যে অনির্বচনীয় অপরূপ লোকের আভাস সঞ্চার করে দেয়, তার সন্ধান তাঁরা রাখেন না।”

সুশীল সাহা, হৃদয়পুর, উত্তর ২৪ পরগনা

শুধুই ক্রিকেট

২ মার্চ আনন্দবাজার পত্রিকার তিনটি পাতা জুড়ে রয়েছে খেলার খবর। ‘খেলা’ বিভাগের প্রথম পাতায় রয়েছে প্রধানত ক্রিকেটের, দ্বিতীয় পাতা জুড়ে শুধুই বিদেশের ফুটবলের খবর। আর শেষ পাতায় রয়েছে দেশ-বিদেশের অপরাপর খেলার টুকিটাকি।

কিন্তু খেলার খবরের মধ্যে কোথাও খুঁজে পেলাম না বিদেশে ভারতীয়দের দুর্দান্ত দু’টি জয়ের সংবাদ— একটি, জার্মানির মাটিতে বিশ্ব হকিতে জার্মানিকে ভারতীয় পুরুষ হকি দল পরাস্ত করল ৬-১ গোলে, এবং অন্যটি, ইউক্রেনে এক আন্তর্জাতিক কুস্তি প্রতিযোগিতায় ভারতীয় মহিলা কুস্তিগীর ভিনেশ ফোগতের স্বর্ণজয়। প্রতিপক্ষ ছিলেন প্রাক্তন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন, কাজ়াখস্তানের প্রতিযোগী। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভারতীয় খেলোয়াড়দের এত বড় দু’টি সাফল্য কাগজের পাতায় একটুও
স্থান পেল না কেন? এই কি খেলার প্রতি নজর?

তাপস সাহা, শেওড়াফুলি, হুগলি

অন্য বিষয়গুলি:

Satyajit Ray Election Result birth anniversary
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy