সম্প্রতি কেরলের রাজ্যপাল আরিফ মহম্মদ খানের পণপ্রথা বিষয়ে বিতর্কিত প্রস্তাবের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে লেখা ‘পণের বলি’ শীর্ষক সম্পাদকীয়টি (২৬-৭) পড়ে কিছু কথা বলার প্রয়োজন বোধ করছি। ১৯৬১-এর আইন অনুযায়ী, পণপ্রথা সামাজিক অপরাধ হলেও তা বহাল তবিয়তে চলছে এখনও। সে ক্ষেত্রে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের পণ দেওয়া এবং নেওয়া থেকে বিরত থাকার মুচলেকা নিয়ে রাজ্যপালের প্রস্তাবে অসঙ্গতি থাকলেও সম্পাদকীয়তে তাঁর উদ্দেশ্যকে সাধুবাদযোগ্য মনে হয়েছে।
আইন করে সুফল মেলে, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। ধূমপান আইন করে অনেকটাই কমেছে। আবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রিগিং-এর বিরুদ্ধে আইনও সফল হয়েছে। কিন্তু পণপ্রথা শুধু আইনেই নেই, আছে সংস্কার আর পুরুষের শ্রেষ্ঠত্ববোধে। পণ তো শুধু টাকাপয়সা, ধনদৌলত নয়, অন্ধ আনুগত্যও। এ জন্য পণ না পেয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘দেনাপাওনা’-র নিরুপমার করুণ পরিণতি, পণ পেয়েও তাঁর ‘হৈমন্তী’ গল্পের দুর্বিষহ জীবন।
পুরুষশাসিত সমাজে নারীর প্রতি হেয় মানসিকতাই তাকে অবমূল্যায়নের শিকার করে তোলে। সেই মূল্য উসুলে শুধু পণ নয়, দাসত্বের প্রত্যাশাও জেগে থাকে। শুধু তা-ই নয়, বিধবা বিবাহেও আমাদের মন ওঠে না। অথচ, বিপত্নীকের বিবাহে আমাদের অধীর আগ্রহ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে সেই বৈষম্যমূলক মূল্যবোধের সংস্কারমুখী শিক্ষার শুভ সূচনা অত্যন্ত জরুরি মনে হয়। তাতে সমস্যা নির্মূল না হলেও, কাণ্ডজ্ঞান জেগে উঠবে। প্রাত্যহিক জীবনে জ্ঞানের চেয়ে কাণ্ডজ্ঞান বেশি জরুরি।
স্বপনকুমার মণ্ডল
সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়, পুরুলিয়া
যথেষ্ট নয়
‘পণের বলি’ শীর্ষক সম্পাদকীয়তে হতাশা প্রকাশ করে লেখা হয়েছে, কেরল দেশের মধ্যে শিক্ষার হারে শীর্ষে থাকার পরেও কেন এত পণের বলি সে রাজ্যে? আসলে কেরলের মানুষ পুঁথিগত শিক্ষায় দেশের মধ্যে শীর্ষে, কিন্তু মননে যদি সে শিক্ষিত না হয়, তা হলে পণপ্রথার মতো মধ্যযুগীয় ধারণা থেকে মুক্তি ঘটবে কী করে? কেরলের রাজ্যপাল উপাচার্যদের পরামর্শ দিয়েছেন, ভর্তির সময়ে এবং শংসাপত্র প্রদানের সময় মুচলেকা লিখিয়ে নিতে যে, ছাত্ররা পণের জন্য নির্যাতন বা হত্যা করলে তাঁদের শংসাপত্র কেড়ে নেওয়া হবে। কিন্তু প্রশ্ন, যাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণ্ডি পেরোবেন না, তাঁদের কী শাস্তি হবে? আর পণের জন্য কাউকে খুন হতে হলে খুনির শংসাপত্র কেড়ে নেওয়াই কি যথেষ্ট শাস্তি?
সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, যাঁরা সমাজে ভয়ঙ্কর অপরাধ করে থাকেন, তাঁদেরও শংসাপত্র কেড়ে নেওয়া হয় না। এ ক্ষেত্রে পণের মতো অপরাধে কেন শংসাপত্র কেড়ে নেওয়া হবে? পণের কারণে কাউকে হত্যা করা কি গুরুতর অপরাধ নয়?
অতীশচন্দ্র ভাওয়াল
কোন্নগর, হুগলি
পণের শাস্তি
পাত্র এবং পাত্রী উভয়ই চাকরি করেন, তবুও পাত্রপক্ষের বাড়ি থেকে আবদার এটা-ওটা-সেটা। আবার, পাত্র যদি সরকারি চাকরি করেন, তা হলে তো কথাই নেই। ঘটক আগেভাগেই বলে বসে থাকেন, পাত্রের চাহিদামতো কী কী দাবিদাওয়া রয়েছে। আজও প্রত্যেক পিতাকে তাই কন্যার বিবাহের জন্য টাকা সঞ্চয় করে রাখতে হবে। পণের জন্য টাকা ধার কিংবা জমি বিক্রি করে পাত্রপক্ষের দাবি মেটাতে হয়।
১৯৬১ সালে পণ নিবারণী আইন পাশ হয়েছে। কিন্তু কে আইনের দ্বারস্থ হতে চায়? এ ক্ষেত্রে এক জন মহিলার স্বাধীন মতামত কতটা পরিবারে প্রাধান্য পায়, তা সহজেই অনুমেয়। আমরা জানি যে, বহু মনীষীর অবদানে সমাজসংস্কার আন্দোলনে সমাজের হিত সাধিত হয়েছে। তাই এমন একটা সুস্থ সমাজ গড়ে উঠুক, যেখানে পণপ্রথা থাকবে না! আমাদের দেশে কি এই আইন করা যায় না, পণ নিলে সরকারি কর্মচারীর চাকরি যাবে? বিতর্ক হওয়া দরকার।
মুস্তাক আলি মণ্ডল
আমতা, হাওড়া
প্রতিবন্ধক সমাজ
স্বাতী ভট্টাচার্যের ‘তফাত এখন আড়াই কোটির’ (২৭-৭) প্রবন্ধে পুরুষশাসিত সমাজের চেহারাটা আরও এক বার বেআব্রু হয়ে পড়ল। করোনার টিকাকরণের ক্ষেত্রেও মহিলারা লিঙ্গবৈষম্যের আদিম মানসিকতার শিকার, এ ক্ষেত্রেও সেই সামাজিক প্রতিবন্ধকতা কাজ করছে। সঙ্গে মহিলাদের প্রতি পুরুষদের অবহেলার দিকটিও প্রকট হয়ে ফুটে উঠেছে।
অথচ, স্বাস্থ্যব্যবস্থার একেবারে নিচুস্তরে আশাকর্মী থেকে শুরু করে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে নার্স, সহকারী নার্স-ধাত্রী (এএনএম), এমনকি রোগীর দেখভাল করার জন্য আয়া— সর্বক্ষেত্রেই মহিলারা জীবনপণ লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। শুধুমাত্র পরিবার ও সমাজের বেড়াজালে আটকে থেকে ‘পুরুষরা আগে বাঁচবে, তার পর মহিলা’— এই ধারণা টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে মাপকাঠি হচ্ছে, যেটা আমাদের সভ্য সমাজের বড় লজ্জা। মা-শিশুর স্বাস্থ্যের সুরক্ষা ব্যতিরেকে সমাজ-সংসার চলতে পারে না। গ্রামের চিত্র আরও ভয়াবহ। এ ব্যাপারে পরিবারের পুরুষ সদস্যদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। এই ভেদাভেদ দূরীকরণে সরকারি স্তরে প্রচার চালাতে হবে। প্রয়োজনে স্বাস্থ্যকর্মীদের দিয়ে বাড়ি-বাড়ি তথ্য যাচাই করে আরও বেশি করে মহিলাদের টিকাকরণে শামিল করতে হবে। এ দায় আমাদের সকলের। না হলে করোনা মোকাবিলার সমগ্র ব্যবস্থায় বড় ফাঁক থেকে যাবে।
মৃণাল কান্তি ভট্টাচার্য
কেতুগ্রাম, পূর্ব বর্ধমান
চাই দুয়ারে টিকা
কোভিড টিকা পাওয়ার দৌড়ে অনেক পিছনে মেয়েরা, এ বিষয়ে সহমত। কিন্তু ‘আগে পুরুষ পাবে, তবে তো মেয়েরা’— এই ধরনের লিঙ্গবৈষম্যমূলক ধারণা কাজ করছে, স্বাতী ভট্টাচার্যের এই বক্তব্যের সঙ্গে সহমত পোষণ করতে পারলাম না। ১০০ পুরুষে নাকি ৮১ জন মহিলা। এ ব্যাপারে আমার মনে হয় শতকরা ৮১ জন মহিলার মধ্যে ৭০ জন মহিলা শহর ও শহরতলির এবং বাকি ১১ জন গ্রামের। কারণ, গ্রামবাংলার পুরুষ বা মহিলারা সে রকম সচেতন নন। অনেকেই মনে করেন, রোদ-বৃষ্টিতে ঘুরে কাজ করার জন্য তাঁদের তো সর্দিজ্বর লেগেই আছে, আবার কেন ছুঁচ ফোটাবেন? সরকার তাঁদের অবহিত করতে ব্যর্থ। সেই সঙ্গে, এক-একটা টিকাকেন্দ্র গ্রাম থেকে ২ কিলোমিটার থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে। তাই গ্রামের পুরুষরা কেবল সাইকেলে চড়ে, হেঁটে বা কোনও রকমে টিকাকেন্দ্রে গিয়ে ভোর থেকে লাইন দিয়ে টিকা নিয়ে সন্ধেয় বাড়ি ফিরলেও, মহিলাদের পক্ষে বাড়ির কাজ ছেড়ে ভোরে অত দূর রাস্তা হেঁটে গিয়ে টিকা নেওয়া সম্ভব নয়। ফলে, গ্রামবাংলার অধিকাংশ মহিলা এই ভাবে কষ্ট করে টিকা নেওয়া থেকে বিরত। সরকার যে দিন ‘দুয়ারে টিকাকরণ’ চালু করবে, সেই দিন বাড়বে এ রাজ্যে মহিলাদের টিকাকরণের হার।
তপনকুমার বিদ
বেগুনকোদর, পুরুলিয়া
বিস্মৃত কাদম্বিনী
রবীন্দ্র-সমবয়সি কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্মদিন (১৮ জুলাই, ১৮৬১) স্মরণ করা দূরে থাক, কোথাও তাঁর নামে একটা রাস্তা নেই, কোনও প্রতিষ্ঠান তাঁর নামে নামাঙ্কিত হয়নি। এই কলকাতা মহানগরী তাঁর শিক্ষা ও কর্মভূমি। এখানে এতগুলি মেট্রো স্টেশনের নামকরণ হল কলকাতার বিখ্যাত বাঙালিদের স্মরণ করতে, সেখানেও কাদম্বিনী স্থান পেলেন না। এমন এক জন নারীকে বিস্মৃত হওয়া প্রকৃতপক্ষে নিজেদের খাটো করা।
আনন্দময়ী মুখোপাধ্যায়
কলকাতা-৭৪
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy