করোনা পরিস্থিতিকে প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে নবান্ন থেকে প্রকাশিত নির্দেশিকা অনুসরণ করে রাজ্য এখন বেশ কিছু বিধিনিষেধের মধ্যে দিয়ে চলছে। রাজ্য সরকারের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাতে হয়। কিন্তু কিছু প্রশ্নও উঠছে, যেগুলির সদুত্তর মিলছে না। যেমন— এক, গণপরিবহণ বন্ধ। অথচ, সরকারি ও বেসরকারি কার্যালয়গুলিকে ২৫ শতাংশ কর্মী নিয়ে চালু করার নির্দেশ দেওয়া হল। কর্তৃপক্ষকে কর্মীদের যাতায়াতের ব্যবস্থা করার কথা বলা হল।
কিন্তু বাস্তবে কি তা সম্ভব হচ্ছে? উল্টে বহু অর্থ ব্যয় করে, অ্যাপ-ক্যাবগুলোকে তিন গুণ অর্থ দিয়ে কেবলমাত্র পেট চালানো ও চাকরি বাঁচানোর দায়ে নিত্য যাতায়াত করতে বাধ্য হচ্ছেন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার কর্মীরা। সরকার কি এঁদের মানুষ বলে গণ্য করেন না?
দুই, প্রশ্ন উঠছে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও। প্রাইভেট গাড়ি, ট্যাক্সি ও অটোর চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে একমাত্র জরুরিভিত্তিক অবস্থা, যেমন— হাসপাতাল, বিমানবন্দর, টিকাকরণ কেন্দ্র ইত্যাদিতে যাতায়াত ছাড়া। অথচ, খুচরো দোকানপাট, শপিং মল, রেস্তরাঁ, বার, হোটেল ইত্যাদি সারা দিনের একটা সিংহভাগ সময় ধরে খোলা থাকছে। তা হলে পথে প্রাইভেট গাড়ি, ট্যাক্সিকে পুলিশ কেন অযথা হেনস্থা করছে? গণপরিবহণের অচলাবস্থায় মানুষ প্রয়োজনে তা হলে কী ভাবে ওই জায়গায় যাতায়াত করবেন?
প্রশাসনের কাছে তাই আমার বিনীত অনুরোধ, এই রকম পরস্পর-বিরোধী নির্দেশিকা প্রকাশ করে জনগণকে আরও বেশি বিভ্রান্তি ও অস্বস্তির পথে ঠেলে না দিয়ে, এই দুর্দিনে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারেন।
শান্তনু ঘোষ
শিবপুর, হাওড়া
বর্ষার রাস্তা
বর্ষা শুরু হতে না হতেই কলকাতা-সহ রাজ্যের প্রায় সব রাস্তাই ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে। কোথাও গর্ত, কোথাও ডোবা, কোথাও বা তাপ্পিমারা ঝামা-ইট বেরিয়ে গিয়েছে। এমন খারাপ রাস্তায় টোটো, অটো, বাইক বা সাইকেল রিকশা যখন-তখন উল্টে যাওয়ার মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। প্রায়শই ঘটে ছোট-বড় দুর্ঘটনাও। প্রতি বর্ষায় রাজ্যের প্রায় সব জেলায় এই একই চিত্র। তবুও প্রশাসন রাস্তা মেরামতির জন্য পাকাপাকি কোনও বন্দোবস্ত করে না। কলকাতার ক্ষেত্রে শুধু পুরসভা বা পুর দফতরের রাস্তাই নয়, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বন্দরের অধীন রাস্তাগুলির অবস্থাও খারাপ। তবে তা অন্যদের তুলনায় কম খারাপ। শহরের যেখানে-সেখানে, যখন-তখন বিভিন্ন কাজের জন্য রাস্তা ও ফুটপাত খোঁড়া হয়। কিন্তু কাজ হয়ে যাওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো মেরামত করা হয় না। বিটুমিনের তৈরি রাস্তা খারাপ হয় মূলত জল জমার জন্য। সেটা আটকানো যায় রাস্তার দু’ধারে ড্রেন বা নিকাশিব্যবস্থার ঠিক ভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হলে। তাতে রাস্তার উপরের জল খুব দ্রুত নালা-নর্দমার মাধ্যমে গঙ্গায় গিয়ে পড়বে। রাস্তায় জল দাঁড়াতে পারবে না। কিন্তু দুর্ভাগ্য, রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় নিকাশিব্যবস্থার অবস্থাও খুব খারাপ।
রাস্তার উপরের অংশে যদি সাধারণ বিটুমিনের বদলে ম্যাস্টিক ব্যবহার করা যায়, তবে রাস্তা অনেক মজবুত হয়। এ ক্ষেত্রে খরচ কিছুটা বেশি পড়লেও লম্বা দৌড়ে এটা অনেক বেশি সাশ্রয়ী। তবে বিটুমিন বা ম্যাস্টিকের বদলে কংক্রিট, পাথরের ইট বা স্টোন সেট পেভমেন্ট করলে তা আরও অনেক বেশি টেকসই ও মজবুত হবে। উদাহরণ, স্ট্র্যান্ড রোড, যার অর্ধেকটা কংক্রিটের, বাকিটা বিটুমিনের। কংক্রিটের রাস্তার অংশটুকু বহু বছর ধরে অক্ষত আছে, রক্ষণাবেক্ষণ প্রায় করতেই হয়নি।
সুতরাং, রাস্তার বেহাল দশা আটকানোর জন্য পুরসভা, পুর দফতর, অন্যান্য সংস্থা তথা কলকাতা বন্দরের মধ্যে পারস্পরিক সমন্বয় রাখা খুব জরুরি। বিনা নোটিসে কোনও সংস্থা বা দফতর অযথা রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করলে শাস্তি হিসেবে বড়সড় জরিমানা করা উচিত। তা ছাড়া, পুরসভা বা পুর-দফতরের অনুমতি নিয়ে কাজ করার পর যদি তা সঙ্গে সঙ্গে মেরামত না করা হয়, তা হলেও সংশ্লিষ্ট বিভাগ বা সংস্থার কড়া শাস্তি কিংবা জরিমানার ব্যবস্থা করতে হবে। রাজ্য সরকারের উচিত পূর্ত দফতর, পুরসভা এবং অন্য সব সংস্থাকে এই মর্মে নির্দেশ দেওয়া, যাতে কলকাতা-সহ রাজ্যের সব রাস্তার মেরামতির কাজ প্রতি বছর জানুয়ারি থেকে মে মাসের মধ্যে করে নেওয়া হয়। তা হলে বর্ষায় পিচ বা বিটুমিনের রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। একই সঙ্গে বিভিন্ন জায়গার নিকাশিব্যবস্থাকে সচল রাখতে হবে এবং নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। তবেই মিটবে জল জমা ও রাস্তা খারাপ হওয়ার সঙ্কট।
পঙ্কজ সেনগুপ্ত
কোন্নগর, হুগলি
ভুল সিদ্ধান্ত
২২০ বছরের ঐতিহাসিক অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ড (ওএফবি)-কে টুকরো করা হল সাত খণ্ডে। গত ১৬ জুন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে পাশ হয়ে গেল এই ঐতিহাসিক ‘ভুল’ সিদ্ধান্ত। ৪১টি কারখানা সমন্বিত কেন্দ্রীয় অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ডকে দুর্বল করার উদ্দেশ্যে সাতটা কর্পোরেশনে পরিণত করা হল।
২০০ বছরের অভিজ্ঞতা-সম্পন্ন অর্ডন্যান্স কারখানা দেশের সৈন্যবাহিনীকে অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহ করে। কেন্দ্রীভূত ও একীকৃত যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল, তা অবলুপ্ত হতে চলেছে। আশি হাজার কর্মী সমন্বিত প্রতিরক্ষা দফতরের ভবিষ্যৎ এখন এক অনিশ্চয়তার সম্মুখীন। এর সঙ্গে যুক্ত অনুসারী শিল্পও এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ভারতের বহু শহরে এর কারখানা রয়েছে— কলকাতা, নাগপুর, কানপুর, জবলপুর, তিরুচিরাপল্লি ইত্যাদি।
আমাদের রাজ্যে কলকাতার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের উল্টো দিকে অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরির প্রধান দফতর— অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ড। এ ছাড়া, অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি দমদম, কাশীপুর গান অ্যান্ড শেল ফ্যাক্টরি, ইছাপুর রাইফেল ফ্যাক্টরি, ইছাপুর মেটাল অ্যান্ড স্টিল ফ্যাক্টরি— সবই এর অন্তর্গত। সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে দেশব্যাপী বিক্ষোভ ঘনীভূত হতে চলেছে। প্রতিরক্ষা শিল্পের বেসরকারিকরণ হলে ভারতের সুরক্ষাব্যবস্থাও বিঘ্নিত হবে। সেই কারণেই উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছে বিনীত অনুরোধ, দেশের ও সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের ভবিষ্যতের কথা একটু গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করুন এবং প্রতিরক্ষা শিল্পকে অনাগত সমূহ বিপদের হাত থেকে রক্ষা করুন।
সিদ্ধার্থ ভৌমিক
ইছাপুর, উত্তর ২৪ পরগনা
মৃতের পরিচয়পত্র
মৃত ব্যক্তির পরিচয়পত্র নিয়ে বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের অপরাধের খবর সংবাদমাধ্যমে লক্ষ করছি। এই পরিচয়পত্র নিয়ে কেউ রেশন তোলেন, কেউ ভুয়ো রেসিডেনশিয়াল সার্টিফিকেট বার করেন, কেউ আবার বেআইনি ভাবে পেনশনও তুলে থাকেন। বর্তমানে এই সব পরিচয়পত্র নিয়ে হরেক আর্থিক অপরাধের ঘটনাও ঘটছে।
‘দ্য রেজিস্ট্রেশন অব বার্থস অ্যান্ড ডেথস অ্যাক্ট, ১৯৬৯’ অনুসারে মানুষের জন্ম ও মৃত্যু নথিভুক্ত করা হয়। দু’টির যে কোনওটাই ২১ দিনের মধ্যে নথিভুক্ত করা বাধ্যতামূলক। এখন কোনও ব্যক্তির মৃত্যুর পরে তাঁর প্যান কার্ড, আধার কার্ড ও ভোটার কার্ড পরিবারের কাছেই থেকে যায়। আর তাতেই ঘটছে বিপত্তি। তাই, এমন নিয়ম চালু করা হোক, যাতে কোনও ব্যক্তির মৃত্যুর পরে তাঁর মৃত্যু নিবদ্ধীকরণের সময়েই যাবতীয় সরকারি পরিচয়পত্র সরকারের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে। এবং এর জন্য প্রয়োজন হলে ‘দ্য রেজিস্ট্রেশন অব বার্থস অ্যান্ড ডেথস অ্যাক্ট, ১৯৬৯’ সংশোধন করার কথা ভাবা যেতে পারে। এই ধরনের নিয়ম চালু করা হলে এক দিকে আর্থিক অপরাধ আটকানো যাবে, আবার সরকারের বিভিন্ন পরিসংখ্যানগত তথ্য আরও নিখুঁত ভাবে সংগ্রহ করার কাজেও সুবিধে হবে।
সৌগত মাইতি
তমলুক, পূর্ব মেদিনীপুর
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy