‘এটা বালিয়াড়ি আর ম্যানগ্রোভ নষ্টের খেসারত’(২৮-৫) প্রতিবেদনে কুন্তক চট্টোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের উপকূলে ভঙ্গুর তটরেখার ক্ষয় ও বিনাশের কারণের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। যে সুন্দরী গাছ সুন্দরবনের নামের উৎস, তা আজ সর্বত্র দেখা যায় না। গরান, হিজল, গেওয়া ইত্যাদি জলের গাছও ধীরে ধীরে নিশ্চিহ্ন হতে চলেছে ‘বন কেটে বসত’-এর নামে। সকলেই জানেন, ওড়িশার ভিতরকণিকায় এখনও চর জমিতে বসবাসের অনুমতি নেই। অথচ, সুন্দরবন ধ্বংসের প্রক্রিয়া এক শতাব্দী ধরে চলছে। ম্যানগ্রোভ নষ্ট হয়ে গিয়েছে চিংড়ি চাষে, আর তার আগে জবরদখলে। দিঘার ঝাউবন আজ বৃদ্ধরাই একমাত্র স্মরণ করতে পারেন। বালিয়াড়ি ধ্বংস করা হচ্ছে বহু দিন ধরে। এই বালিয়াড়ি হলদি নদীর মোহনা থেকে পশ্চিমবঙ্গ-ওড়িশার সীমান্ত পর্যন্ত ছিল। তটরেখা যতটা দীর্ঘ তার সঠিক হিসেব করে, অন্তত এক কিলোমিটার সমুদ্রতীর ছেড়ে, সেই এলাকা থেকে সমস্ত বাসিন্দাদের সরাতে হবে। তাঁদের পুনর্বাসনের খরচ সামান্য হবে না। আর নদীতট ও সাগরদ্বীপের তটবর্তী এলাকা, ঘোড়ামারা দ্বীপ ও অন্যান্য নিচু দ্বীপের পুনর্বাসন খরচ ধরলে তা হয়তো লক্ষ কোটি টাকা ছাড়াবে। তা-ও এই কর্তব্য থেকে সরে আসা উচিত নয়। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করে, আন্তর্জাতিক বিত্তশালী সংস্থাগুলির সহায়তায় এই কাজ করা সম্ভব। রাজ্য ও কেন্দ্রের সরকার এই ব্যাপারে প্রাথমিক সমীক্ষা ও মূল্যায়নের জন্য দল গঠন করে সদিচ্ছার পরিচয় দেখালে এই এলাকার মানুষগুলির প্রতি প্রকৃত সহানুভূতি দেখানো হবে।
তুষারকান্তি চৌধুরী
উত্তরপাড়া, হুগলি
বিপন্ন দিঘা
কুন্তক চট্টোপাধ্যায় ‘ইয়াস’-এর তাণ্ডবে সৈকতশহর দিঘা-সহ তাজপুর, মন্দারমণির বিপুল ক্ষয়ক্ষতির যে কারণ দেখিয়েছেন, তা সত্য। শুধু বালিয়াড়ি ধ্বংস নয়, উন্নয়নের জোয়ারে দিঘা, তাজপুর, মন্দারমণি-সংলগ্ন গ্রামগুলি-সহ কাঁথি মহকুমার দক্ষিণ অংশ খুব দ্রুত বিলুপ্তির পথে এগোবে। ম্যানগ্রোভ অঞ্চল কমে যাওয়াতে সুন্দরবন এলাকা প্রতি বছর সাগর ও নদীজলের তোড়ে ভেসে যায়। সযত্নে লালিত যে ঝাউবন দিঘা মোহনা থেকে ওড়িশা সীমান্তের দত্তপুর গ্রাম, উদয়পুর সমুদ্রতট অবধি ভাঙন থেকে সুরক্ষা দিত, সেই ঝাউবীথিই বা এখন কোথায়! উঁচু বালিয়াড়ি, ঝাউগাছ, কেয়াগাছের জঙ্গলঘেরা পরিবেশে শৈশব-কৈশোর কাটিয়েছি ষাট-সত্তরের দশকে, যৌবনে পা দিয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য কলকাতা এসেছি, ছুটিতে গিয়ে দাপিয়েছি সমুদ্রসৈকতে, আশির দশকেও।
সত্তরের দশকেই কয়েক হাজার লরি বালি এনে, তার উপর বোল্ডার পেতে বাঁধ দেওয়া হল মূল দিঘা শহরটিতে। তার পর নিউ দিঘার দিকে বোল্ডার বাঁধ এগিয়েছে, তারও পরে পূর্বে দিঘা মোহনার দিকে। উন্নয়নের নামে বাঁধের মাথায় চার-পাঁচ ফুট মাটি চেঁচে তুলে পিচের রাস্তা হয়েছে। এক সময়ে গোটা কুড়ি হোটেল ছিল ওল্ড দিঘায়। তার পর ঢালাও নির্মাণ কাজ চলেছে রাজবাড়ির মধ্যে, আর বড় রাস্তার দু’পাশে। বালিয়াড়ি যেখানে যেটুকু ছিল, তা কেটে, চেঁচে সমান করে দেওয়া হয়েছে। নিউ দিঘাতেও শুরু হয়েছে কর্মকাণ্ড। আর এই সব নির্মাণ কাজ হয়েছে সমুদ্রতট থেকে একশো মিটারের মধ্যে, এবং প্রশাসনের নাকের ডগায়। বছর দশেকের মধ্যে দিঘার এমন রূপ পরিবর্তন হয়েছে যে, অচেনা লাগে। এ সবের চাপ সমুদ্রতটের সুরক্ষা বিঘ্নিত করে না?
সৌম্যেন্দ্র নাথ জানা
কলকাতা-১৫৪
শুধু হাহাকার
বাড়ির উঠোনে এসে ভিড়েছে নৌকাখানা। গৃহস্থালির যেটুকু মালপত্র ওই স্বল্প সময়ে বেঁধে নেওয়া যায়, তা বস্তাবন্দি করে মানুষজন তুলে দিচ্ছেন নৌকায়। হাঁড়িকুড়ি, বাসনপত্র, মুরগি, গবাদিপশু, যা কিছু হাতের কাছে পাওয়া যাচ্ছে, সবটুকু নেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন দ্বীপের বাসিন্দারা। সময় যে বড় কম। ফেলে আসতে হচ্ছে এর চেয়ে আরও বেশি। জোয়ারের জল ঢুকছে। আর দেরি নয়। নৌকা ছাড়তে হবে এখনই। মানুষে-পশুতে এক নৌকার সহযাত্রী হয়ে ওঁরা পাড়ি দেন অজানার উজানে। পিছনে ফেলে-আসা ঘরদোর ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে ওঁদের দিকে। মুখটা ঘুরিয়ে ভিজে গামছায় চোখের জল মুছে নেয় ঘোড়ামারা দ্বীপের বাসিন্দারা।
ঘোড়ামারা দ্বীপের দৃশ্যগুলি এমনই। কয়েক মাস আগে নয়াচরের দ্বীপে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করেছিল একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। তার হাজার তিনেক পড়ুয়ার বই-খাতা-পেনসিল সব গিয়েছে ভেসে। খাওয়ার জল হয়েছে লবণাক্ত। গোসাবা ব্লকের প্রতিটি দ্বীপ প্লাবিত। রাঙাবেলিয়া, পাখিরালয় ও উত্তরডাঙার অবস্থা শোচনীয়। সাগরের এক বন্ধু ফোনের ও-পারে হাউমাউ করে কেঁদেই ফেললেন। বললেন, কপিলমুনির আশ্রম থেকে পাঁচ কিলোমিটার ও কচুবেড়িয়া থেকে পাঁচ কিলোমিটার সম্পূর্ণ জলের তলায়। পাকা রাস্তার ধারে মুড়িগঙ্গার স্রোত এসে উঁকি দিচ্ছে। পানীয় জলের হাহাকার দেখা দিয়েছে। ওঁর বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন প্রায় চল্লিশ জন। দলিলপত্র আর ব্যাঙ্কের পাসবুক কোনও ক্রমে একটা পলিব্যাগে মুড়ে ছুড়ে দিয়েছেন দোতলায়। খণ্ডচিত্রগুলো পর পর জুড়লে উপকূলবর্তী এলাকায় এমনই ছবি ভেসে উঠবে। দোষারোপ বন্ধ করে সুন্দরবনকে কি বাঁচানো যায় না?
নিখিলকুমার সামন্ত
রায়দিঘি, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
বাঁধ রক্ষায়
সাহসিকতার সব উপাখ্যানকে ছাপিয়ে গিয়েছে সুন্দরবনের মানুষের ‘ইয়াস’ তাণ্ডবের মুখে নদীবাঁধ রক্ষার দুঃসাহসিক লড়াই। কোথাও গ্রামবাসীরা খড়ের তাড়ি, ছেঁড়া ত্রিপল, গাছের গুঁড়ি জাপ্টে ধরে শুয়ে পড়েছেন নদীবাঁধের উপর। কোথাও শয়ে শয়ে মানুষ উত্তাল ঢেউয়ের সামনে বুক পেতে আগলেছেন দুর্বল নদীবাঁধ। প্রতিটি ক্ষেত্রেই নদীবাঁধ ভেঙে জলোচ্ছ্বাসে বা উন্মত্ত নদী, সমুদ্রে তলিয়ে গিয়ে প্রাণহানির যথেষ্ট আশঙ্কা ছিল। তবুও, গোবর্ধনপুর থেকে গোসাবা, এল প্লট থেকে কে প্লট, কুমিরমারি থেকে ধবলাট, বিভিন্ন জায়গায় অকুতোভয় সুন্দরবনবাসী অভিনব ‘মানব বাঁধ’ নির্মাণ করে নদীবাঁধ রক্ষার অসম লড়াই লড়ে গিয়েছেন। এ থেকেই বোঝা যায়, কেন নদীবাঁধ সুন্দরবনের ‘লাইফ লাইন’। সুন্দরবনের নদীবাঁধের দুর্দশা কেন ঘোচে না? কেন আমরা প্রতি বছর ডুবি? দেশি-বিদেশি প্রযুক্তি আমদানি করে, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে, নদীবাঁধ যে ভাবে হোক মজবুত করুক সরকার। নদীবাঁধের সামনে ম্যানগ্রোভের রোপণ ও বিস্তার না করলে কোনও নদীবাঁধ টিকবে না। পরিসংখ্যান চাই না, বাস্তবে ম্যানগ্রোভের বৃদ্ধি দেখতে চাই। নদীবাঁধ ও ম্যানগ্রোভ নষ্টকারী মানুষ, মাছের ভেড়ি, ও দোকান, হোটেলের অবৈধ নির্মাণের বিরুদ্ধে কেন দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ করা হবে না? সুন্দরবনের মানুষকে দায়িত্ব নিতে হবে শুধু ঝড়, বন্যার সময় নয়, বছরভর নদীবাঁধ ও ম্যানগ্রোভ রক্ষার। বুঝতে হবে, বন ও বাঁধ না বাঁচলে, আমরা বাঁচব না।
প্রণব মাটিয়া
পাথরপ্রতিমা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
কাঁচা বাড়ি
রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে অনুরোধ, যাঁদের বসতবাড়ি সমুদ্র থেকে ৩০ কিলোমিটারের মধ্যে, তাঁদের সব বাড়ি পাকা করে দিন। আমপান এল, ইয়াস এল, সব কাঁচা বাড়ি তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ল। জামাকাপড়, মজুত খাদ্যশস্য, থালাবাসন— সব সাগরের জল ভাসিয়ে নিয়ে চলে গেল। বাড়ি পাকা হলে গৃহস্থ এত নিঃস্ব হতেন না। এ সব অঞ্চলে টিন, খড়, অ্যাসবেস্টসের বাড়ি টিকবে না। সাইক্লোন এলে ধ্বংস হবেই। দীর্ঘস্থায়ী সুরাহা পেতে হলে পাকাবাড়ি একমাত্র পথ।
সঞ্জয় চৌধুরী
খড়্গপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy