কুমার রাণার ‘সর্বশক্তিমানের বিপদ’ (৬-৫) প্রবন্ধে উঠে এসেছে সর্বশক্তিমান মোদী কী পারেন না; কিন্তু তাঁর বিপদের কথা উঠে আসেনি। শাসকের বিপদ হল, তাঁরা অতিমানব হলেও সব পারেন না; ইতিহাস তার প্রমাণ রেখেছে। দেশের বড় সংখ্যক মানুষের সব পারার এই ধারণা আসলে কূপমণ্ডূকের স্বর্গে বাস। বর্ষে বর্ষে দলে দলে লিখতে-পড়তে আসা প্রান্তিক কচিকাঁচা পড়ুয়াদের বিশ্বাস— মোদীকে বললে, আলু-সয়াবিনের পরিবর্তে যদি এক টুকরো ডিম পাতে পড়ে। হায় স্বদেশ! এই ভারত নাকি অর্থনৈতিক দিক থেকে আগামী দিনে বিশ্বের পঞ্চম স্থান অধিকার করতে চলেছে। কোন নিরিখে এর বিচার হয়, তা আমজনতার জানা নেই। আমরা স্বাধীনতার ৭৭ বছরে পা রেখেও ভাবতে শিখলাম না সমৃদ্ধ অঙ্গরাজ্য বা দেশ মানেই মমতা বা মোদী নন। ‘মোদী কি গারন্টী’ বা ‘দিদিকে বলো’ প্রকল্প শুরু হওয়া মানেই ‘সব পেয়েছির দেশ’ তৈরি হওয়া নয়। আজ ভোট মানেই নির্ভেজাল অসত্য ঘোষণা, আর পূর্বের দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলি নতুন মোড়কে পরিবেশন করে জনসমুদ্রে ঝড় তোলা। লোকহিতের নামে লোক ঠকানো। ধর্ম আর জাতপাত দিয়ে আর যা-ই হোক না কেন, জঠরের জ্বালা মেটানো যায় না। খালি পেটে ধর্ম হয় না।
শিক্ষাহীন কোটি কোটি মানুষকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। কারণ গণতন্ত্রের প্রহরী হতে গেলে জনগণকে সক্ষমতা অর্জন করতে হয়। আর সেই সক্ষমতার প্রথম মূলমন্ত্রটি হল সার্বিক শিক্ষা। রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘লোকহিত’ প্রবন্ধে যথার্থই বলেছেন, “আমি কিন্তু সবচেয়ে কম করিয়াই বলিতেছি, কেবলমাত্র লিখিতে পড়িতে শেখা। তাহা কিছু লাভ নহে, তাহা কেবলমাত্র রাস্তা— সেও পাড়াগাঁয়ের মেটে রাস্তা। আপাতত এই যথেষ্ট; কেননা এই রাস্তাটা না হইলেই মানুষ আপনার কোণে আপনি বদ্ধ হইয়া থাকে।” সেই কারণেই বিদ্যালয়-শিক্ষা হল গণতন্ত্রের প্রবেশের প্রথম এবং একমাত্র পথ।
আজ চার দিকে মূর্তিমান দুর্দিন আমাদের প্রত্যেকের দরজায় কড়া নাড়ছে। একমেবাদ্বিতীয়ম্ ধারণাটাই মানবকল্যাণের সবচেয়ে বড় শত্রু।
সূর্যকান্ত মণ্ডল, কলকাতা-৮৪
শুধু স্লোগান
‘সর্বশক্তিমানের বিপদ’ একটি সুচিন্তিত প্রবন্ধ। গণতন্ত্র সমগ্র মানুষকে নিয়ে। সেই সমগ্রতা সরিয়ে এক বা একাংশের উন্নয়নে গণতন্ত্র সবল আর সফল হয়ে উঠবে না। তার উদাহরণ আমাদের দেশ। স্বাধীনতার পর অনেকগুলো দশক গেল। রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় বিজ্ঞান প্রযুক্তির উন্নতি সার্বিক উন্নয়নে কাঙ্ক্ষিত ফল দিচ্ছে কই? জনশিক্ষা স্বাস্থ্য কর্মসংস্থান— এ সব তো আজও সমস্যা হিসাবেই রয়ে গেল। এলেন একের পর এক নেতা। কেউ চালালেন বিলিতি পাণ্ডিত্য নিয়ে, কেউ কঠিন, বিচ্ছিন্ন ব্যক্তিত্ব হয়ে, কেউ ব্যক্তিত্বহীনতায়, কেউ বা ভয়ঙ্কর অস্মিতা নিয়ে। কাশ্মীরে সেনা তৎপরতা যতটা বৃদ্ধি পেয়েছে, শিক্ষার অঙ্গনে ততটাই হ্রাস পেয়েছে রাষ্ট্রীয় ভূমিকা। এই সে দিন এক ছোট্ট মেয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছে, তাদের ইস্কুল নদীতে তলিয়ে যাচ্ছে। দয়া করে বাঁচান। মৃত সন্তানকে ব্যাগে মুড়ে বাবা ফেরেন বাসে চেপে চুপিচুপি। অ্যাম্বুল্যান্স মেলেনি বলে। স্ত্রীর মৃতদেহ কাঁধে নিয়ে স্বামী হাঁটেন সতীর দেহত্যাগের সময়ের মতো। ভ্যানচালক বাবার সারা দিন সওয়ার জোটেনি বলে খাবার জোটেনি। তাই ছেলে ইস্কুলে আসেনি।
চিকিৎসা-ব্যয় জোগাতে না পেরে সপরিবারে মানুষ আত্মহত্যা করেন। প্রসূতি মৃত্যুতে এ দেশের বিভিন্ন জায়গা আফ্রিকার গরিব দেশগুলোর সমান। দেশের ১ শতাংশ মানুষের হাতে দেশের ৪০ শতাংশ সম্পদ। আমূল ভূমিসংস্কার এখনও করা গেল না। ‘পি এম কেয়ার্স’ কাদের জন্য? সেন্ট্রাল ভিস্টাই বা কী? কার কাজে লাগল? আমরা তো ভোটের সময় ভোট দিই। স্বচ্ছন্দে কথা বলতে পারি? ন্যায়বিচার ও ন্যায্যতা কি গণতন্ত্রের শর্ত নয়? ধর্মীয় স্বাধীনতাই বা এত বিঘ্নিত কেন? ধর্মনিরপেক্ষ দেশে এত বিভাজন, বিদ্বেষ। কোনও মানুষ অসীম শক্তিধর হলেই কি দেশের মানুষের উন্নতি হয়? পৃথিবীর বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ এখনও সাফল্যের অপেক্ষায়। পরমাণু বোমা আর চন্দ্রযান সূর্যযান কি দেশকে টেনে তুলতে পারবে? পারবে কি স্লোগান-সর্বস্ব মোমবাতি জ্বালানোর আহ্বান দেশকে আগামী দিনের আলো দেখাতে?
শান্তি প্রামাণিক, উলুবেড়িয়া, হাওড়া
জনহিত কী?
কুমার রাণা বলতে চেয়েছেন, কোনও ব্যক্তিকে ভোটের পূর্বে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা করে ভোটে যাওয়াটা জনগণের পক্ষে নাকি চূড়ান্ত অহিতকর। অথচ, ভারতীয় জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের (১৯৫১) কোনও ধারাতেই এই বিষয়ে কোনও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়নি। আমার প্রশ্ন, নির্বাচন কমিশন স্বীকৃত কোনও আইনকে এই ভাবে জন-অহিতকর বলে ঘোষণা করা যায় কি? মোদী-বিরোধিতার নামে দেশের সংবিধান স্বীকৃত আইনকেও কি প্রশ্নের সম্মুখে দাঁড় করানো যায়?
‘জনহিত’ শব্দটিই চূড়ান্ত আপেক্ষিক। সরকার গৃহীত কোনও একটি নীতি বা কৌশল সমস্ত জনগণের পক্ষে হিতকর হতে পারে না। একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি ভাল ভাবে বোঝা যাবে— গমের এমএসপি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত গমচাষির পক্ষে হিতকর বলে মনে হলেও তার ফলে আটা ও ময়দাজাত খাদ্যদ্রব্যের যে মূল্যবৃদ্ধি হবে, তা কিন্তু কোটি কোটি সাধারণ ক্রেতার পক্ষে হিতকর নয়। তাই জনগণের ‘সামূহিক হিত’ বলে কিছু হয় না। বেশির ভাগ জনগণের পক্ষে যা হিতকর, সেই রকম নীতি বা কৌশলই একটি নির্বাচিত সরকার নিয়ে থাকে।
‘মোদী হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়’— দলীয় প্রচার কৌশল হিসাবে প্রচারিত এই স্লোগান শুনে প্রবন্ধকারের মনে হয়েছে, এটি যেন রাজতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠার পূর্বাভাস। অথচ, একটি দলের বকলমে প্রায় চল্লিশ বছর ধরে একটি পরিবার বংশানুক্রমিক ভাবে ভারতের শাসনব্যবস্থায় অধিষ্ঠিত রইল, তাকে তাঁর মনে হয়নি ‘রাজতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা’। তিনি লিখেছেন, কোটি কোটি জনগণ শিক্ষা স্বাস্থ্য কর্মসংস্থান ও নারী-পুরুষের সমানাধিকার থেকে বঞ্চিত। যার মধ্যে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পুরোপুরি রাজ্যের বিষয়। রাজ্যের এক্তিয়ারভুক্ত বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে দায়ী করা অযৌক্তিক নয় কি? অন্ধ মোদী-বিরোধিতা ছেড়ে আসুন জনগণের রায়কে মান্যতা দিই, এবং গঠনমূলক সমালোচনার মধ্য দিয়ে সরকারকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করি।
প্রণব কুমার সরকার, বোলপুর, বীরভূম
ঠিকাদার রাজ
সুমনা রায়ের ‘ঠিকাদারতন্ত্র’ (৮-৫) শীর্ষক চিঠির সাপেক্ষে কিছু কথা। প্রায় সমস্ত প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে সরকারি সংস্থায় চুক্তিভিত্তিক কর্মী নিয়োগে ঠিকাতন্ত্রের কারণে জেরবার কর্মীরা। ঠিকাদাররা শ্রমনীতিকে বুড়ো আঙুল দেখাতে অভ্যস্ত। টেন্ডারে ঠিকা কাজ পাওয়ার সময়ে শ্রমিক আইন মেনে চলার অঙ্গীকার করলেও, বাস্তবে কিছুই মানে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ঠিকা শ্রমিকদের নামমাত্র টাকা দিয়ে বেশির ভাগ টাকাতে নিজেরাই ছোবল বসায়। বহু দিন ধরেই এই অনিয়ম চলে আসছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ এদের নজরে রাখতে পারছেন না। এরা শুধু শ্রমিকদেরই শোষণ করছে না, সরকারি আইনও লঙ্ঘন করছে।
রেলের মতো বিশাল সংস্থায় এটা বেশি করে দেখা দরকার। বিপুল সংখ্যায় কর্মচারী অবসরে চলে যাওয়ার পরেও কর্মী নিয়োগ ত্বরান্বিত করতে দেখা যায়নি রেল কর্তৃপক্ষকে। অন্য দিকে, চুপিসারে ঠিকাদার ঢুকে পড়েছে। ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে কেন্দ্রীয় সরকার বড় সংখ্যায় কর্মী নিয়োগ করেনি। তাই ঠিকাদার ব্যবসা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। শ্রমিকদের অবাধে শোষণ করে চলেছে।
সমীর চক্রবর্তী, রামরাজাতলা, হাওড়া
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy