Advertisement
২৭ ডিসেম্বর ২০২৪
Black

সম্পাদক সমীপেষু: কালোই আদি রং

চামড়ার এই রঙের পরিবর্তনের বয়স বেশি নয়, হওয়ার কথাও নয়, কারণ মানুষ তো তার দ্বিতীয় বারের প্রচেষ্টায় সফল হয়েছে বিশ্বপরিক্রমায় মাত্র পঞ্চাশ হাজার বছর আগে।

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০২০ ০০:০১
Share: Save:

মেলানিন নামে এক ধরনের রঞ্জক পদার্থ মানুষের গায়ে চামড়ার রঙের জন্যে দায়ী। হালকা রঙের রঞ্জক সাদা বর্ণ তৈরি করে, আর গাঢ় রঞ্জক বাদামি থেকে কালো বর্ণ। দু’লক্ষ বছর আগে আফ্রিকায় মানুষের উদ্ভব গায়ে কালো চামড়া নিয়ে, এটাই মানুষের আদি ও অকৃত্রিম গায়ের রং।

এর পর যখন মানুষ আফ্রিকা থেকে বেরিয়ে ইউরোপে এল, তখন থেকে গায়ের রং ফিকে হতে শুরু করে। এর প্রধান কারণ সূর্য থেকে আগত অতিবেগুনি রশ্মি। নিরক্ষরেখা ধরে যত মেরুর দিকে যাওয়া যায়, অতিবেগুনি রশ্মির প্রকোপ কমতে থাকে, হাল্কা থেকে সাদা হয় ত্বকের রং। মাঝখানে অক্ষরেখা ধরে চামড়ার রং বদলাতে থাকে বাদামি থেকে গম থেকে শ্বেত বর্ণে।

চামড়ার এই রঙের পরিবর্তনের বয়স বেশি নয়, হওয়ার কথাও নয়, কারণ মানুষ তো তার দ্বিতীয় বারের প্রচেষ্টায় সফল হয়েছে বিশ্বপরিক্রমায় মাত্র পঞ্চাশ হাজার বছর আগে। তার কিছু পরেই সারা পৃথিবী প্রচণ্ড শৈত্যের কবলে পড়ে। তারই মাঝে মানুষ পৌঁছে যায় ইউরোপ ও এশিয়ায়। কিন্তু শৈত্যপ্রবাহের জন্যে তাদের গতিপথ ছিল মূলত নিরক্ষরেখা থেকে তিরিশ থেকে পঁয়ত্রিশ ডিগ্রি উত্তর এবং দক্ষিণ অক্ষাংশ অবধি। পৃথিবী গরম হতে শুরু করে বারো হাজার বছর আগে থেকে। ঠান্ডার প্রকোপ বজায় থাকায় এরও অনেক পরে মানুষ আরও উচ্চতর অক্ষের দিকে এগোতে সক্ষম হয়। ক্রমাগত এবং প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে কম অতিবেগুনি রশ্মি প্রকোপিত এলাকায় থাকতে থাকতে, গায়ের চামড়ার রং ফিকে হতে থাকে। রঞ্জকের প্রভাবে কিছু মানুষের চামড়ার স্বাভাবিক রঙে বাছাই পরিবর্তনশীল প্রক্রিয়া (সিলেক্টিভ মিউটেশন) কাজ করে এবং স্থায়ী হয়ে জিনবাহিত হয়ে যায়।

সম্পূর্ণ সাদা রঙের মানুষের বয়স মাত্র একশো প্রজন্ম বা আড়াই হাজার বছর। তখনও প্রাচীন মিশর, গ্রিস অথবা রোমের সমাজে গাত্রবর্ণ নিয়ে মানুষ মাথা ঘামাত না। এ দিকে আফ্রিকার মাসাই গোষ্ঠীর লোকেরা বিশ্বাস করত, অশুভ আত্মার প্রভাবে কিছু মানুষ শ্বেত বর্ণ ধারণ করে। অন্য দিকে শ্বেতাঙ্গ মহিলারা সমাজে বিশেষ সম্মান ও সমাদর পেতে শুরু করে এশিয়া ও ইউরোপে। অষ্টাদশ শতকে ইওরোপে শিল্প বিপ্লব শুরু হওয়ার অনেক আগেই শ্বেতাঙ্গরা নিজেদের সমাজের উচ্চস্তরের মানুষ বলে ভাবতে লাগল এবং সেই ভাবনা এমন চরম পর্যায়ে চলে গেল যে, কৃষ্ণাঙ্গদের ক্রীতদাস করে রাখা অভ্যেসে পরিণত করল। শুরু হল বর্ণবিদ্বেষ, সংক্রমিত করল বিশ্বব্যাপী শ্বেতাঙ্গদের, বিনা কারণে অত্যাচারিত হতে লাগল আদিমতম কালো মানুষ। এই সংক্রমণের প্রকাশ মাঝেমধ্যেই হয়, সাম্প্রতিক শিকার জর্জ ফ্লয়েড।

অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা-১০৪

জাত ও রেশন

‘জাতের নামে রেশন বিলি বন্ধ বাগদায়’ (৬-৫) শীর্ষক প্রতিবেদন সম্পর্কে খাদ্য দফতরের পক্ষ থেকে জানানো যাচ্ছে যে, যদিও খাদ্য দফতরের রেশন বিলি করার জন্য সংশ্লিষ্ট রেশন ডিলার এ রকম ব্যবস্থা করেন বলে অভিযোগ, কিন্তু দফতরের পক্ষ থেকে এমন কোনও নির্দেশিকা জারি করা হয়নি। খাদ্য দফতরের পক্ষ থেকে মানুষের সুবিধার্থে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য পাড়া বা গ্রামভিত্তিক ভাবে রেশন সামগ্রী বিলি করার ব্যবস্থার জন্য জেলা প্রশাসনকে অনুরোধ করা হয়। কিন্তু কোনও অবস্থাতেই তা জাতপাতভিত্তিক নয়।

উক্ত ডিলারের এমন ব্যবস্থা সম্পূর্ণ তাঁর নিজস্ব, যা দফতর কোনও ভাবেই অনুমোদন করে না। জেলা খাদ্য নিয়ামককে এ ব্যাপারে অনুসন্ধানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অনুসন্ধানের উপর ভিত্তি করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পূর্ণেন্দু শেখর নস্কর

উপসচিব, খাদ্য ও সরবরাহ দফতর, পশ্চিমবঙ্গ সরকার

প্রতিবেদকের উত্তর: ওই প্রতিবেদনে কোথাও প্রশাসনের নীতিকে দায়ী করা হয়নি। বরং স্পষ্ট লেখা হয়েছে, ঘটনাটি সংশ্লিষ্ট ডিলার ঘটিয়েছেন। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ যে বিষয়টি জেনে ঘটনাস্থলে যান এবং এ ভাবে রেশন বিলি বন্ধ করান, তা লেখা হয়েছে। বনগাঁর মহকুমা শাসক এবং স্বয়ং খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বক্তব্য স্পষ্ট করে প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। যা থেকে স্পষ্ট, প্রশাসন ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে এবং যা ঘটেছে তার সঙ্গে সরকারি নীতির কোনও যোগ নেই।

ধর্মের ভূমিকা

নিকোলাস কোপার্নিকাস বলেছিলেন গ্রহ, উপগ্রহ ও তাদের আবর্তনের কথা। ধর্মভীরু, ধর্মব্যবসায়ীরা সে দিন তাঁর সিদ্ধান্তকে অস্বীকার করেছিলেন। গ্যালিলেয়োকে আট বছর জেলে কাটাতে হয়। কথিত আছে, ব্রুনোকে রাখা হয়েছিল খুব কম উচ্চতার এক নির্বাসন কক্ষে, যার ছাদটি ছিল সিসা দিয়ে মোড়া। গ্রীষ্মের প্রচণ্ড তাপে ও শীতের ভয়ানক ঠান্ডায় তিনি যাতে মানসিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন, তা-ই ছিল উদ্দেশ্য। কিন্তু এই বিজ্ঞানী নতি স্বীকার করেননি। শেষ অবধি তাঁকে পুড়িয়ে মারা হয়। অ্যানাক্সাগোরাস বলেছিলেন চাঁদের কোনও নিজস্ব আলো নেই। চন্দ্রগ্রহণের বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন। তাঁকে দেশ থেকে নির্বাসিত করা হয়।

আজ বিশ্বে অতিমারির আবহে শুনতে পাই, করোনা হল মানুষের পাপের ফল। কোরান, পুরাণ থেকে নানা উদ্ধৃতি তুলে ধরছেন অনেকে। প্রমাণ করতে চাইছেন, এই সব অতিমারির কথা সবই আছে ধর্মগ্রন্থে। এঁদের অনেকেই ধর্মগ্রন্থগুলো পড়েননি। সোশ্যাল মিডিয়ায় কল্যাণে এখন তো কপি পেস্ট ফরওয়ার্ড— এটুকু জানা থাকলেই বোদ্ধা হওয়া যায়। তাই ‘করোনা দেবী’কে (দেবতাও হতে পারেন) তুষ্ট করতে কিশোরীর জিহ্বা কেটে পূজা দেওয়া হয়। মানুষ কবে বুঝবে, ধর্মগ্রন্থের অধিকাংশ আপ্তবাক্য রচিত হয়েছিল সে কালের প্রেক্ষাপটে, অনেক সমসাময়িক সমস্যার নিরিখে? আমাদের দুর্ভাগ্য, এই ‘বিজ্ঞাননির্ভর ধর্মশাস্ত্র’গুলোতে মহামারির নিরাময়ের কোনও উপায় বলা নেই।

মহঃ লতিফুল ইসলাম রবিন

সালার, মুর্শিদাবাদ

যোগ্য জবাব

ক্রীড়া জগতেও কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি অবহেলা ও অপমান বহু দিন ধরে চলছে। একটি ফুটবল ম্যাচে, ব্রাজিলিয়ান ড্যানি আলভেস বার্সেলোনার হয়ে খেলছিলেন। গ্যালারি থেকে তাঁর প্রতি কটূক্তি উড়ে আসে কৃষ্ণাঙ্গ হওয়ার জন্য। সঙ্গে উড়ে আসে একটি পাকা কলা। তিনি শান্ত হয়ে কলা খেয়ে পুনরায় ম্যাচ খেলেছিলেন। সেটাই ছিল অসভ্যদের প্রতি তাঁর যোগ্য জবাব।

লোপামুদ্রা সামন্ত

কোলাঘাট, পশ্চিম মেদিনীপুর

শ্রীকান্ত

‘প্লেগ এল, পুনর্জন্ম হল ইংরেজির’ (রবিবাসরীয়, ৩১-৫) নিবন্ধে আবাহন দত্ত লিখেছেন, ‘‘একমাত্র টিনটিনের কমিকসে পড়ে আসা ‘কোয়রান্টিন’ শব্দটা এখন ধনী-দরিদ্র সকলের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।’’ কিন্তু ‘কোয়রান্টিন’ শব্দটির সঙ্গে বাঙালি পাঠকের পরিচয় ঘটেছে ‘টিনটিন’-এর বহু আগেই। টিনটিনের আত্মপ্রকাশ ১৯২৯ সালে। ১৯১৮ সালে, গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস ‘শ্রীকান্ত’র দ্বিতীয় পর্ব। গ্রন্থাকারে প্রকাশের পূর্বে সেটি ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হয় ‘ভারতবর্ষ’-তে।

ওই উপন্যাসের চতুর্থ পরিচ্ছেদে আছে: ‘‘চারিদিক হইতে একটা অস্ফুট শব্দ কানে আসিতে লাগিল, কেরেন্টিন। খবর লইয়া জানিলাম, কথাটা quarantine : তখন প্লেগের ভয়ে বর্মা গভর্ণমেন্ট অত্যন্ত সাবধান। শহর হইতে আট-দশ মাইল দূরে একটা চড়ায় কাঁটাতারের বেড়া দিয়া খানিকটা স্থান ঘিরিয়া লইয়া অনেকগুলি কুঁড়েঘর তৈয়ারী করা হইয়াছে; ইহারই মধ্যে সমস্ত ডেকের যাত্রীদের নির্বিচারে নামাইয়া দেওয়া হয়। দশদিন বাস করার পর, তবে ইহারা শহরে প্রবেশ করিতে পায়।’’

চন্দ্রপ্রকাশ সরকার

বহরমপুর, মুর্শিদাবাদ

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

অন্য বিষয়গুলি:

Black Melanin George Floyd
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy