ছবি: সংগৃহীত
ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় পালামৌ যাওয়ার পথে হাজারিবাগে এক জনের আতিথ্য গ্রহণ করেছিলেন। সেখানে অন্যান্য আহার্যের সঙ্গে ছাগমাংসের একটি পদ ছিল, সেই পদে পেঁয়াজের আধিক্য ছিল। অতিথি সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় ‘পালামৌ’ (১৮৮৩) গ্রন্থে সে কথা বর্ণনা করতে গিয়ে ‘পেঁয়াজের’ স্থলে ‘পলাণ্ডু’ উল্লেখ করেছিলেন, কারণ পেঁয়াজ কথাটিকে তখনকার দিনে যবনের বিষয় বলে মনে করা হত। সেই পেঁয়াজ এখন কিন্তু জাতে উঠেছে। কারণ মাস ছয়েক আগে পর্যন্ত পেঁয়াজের অবস্থান ছিল আদা-রসুনেরও নীচে। তখন পেঁয়াজ চল্লিশ টাকা, আদা একশো টাকা ও রসুন ১৫০ টাকা কিলো প্রতি বিক্রি হয়েছে। ২০১৯-এর শেষ লগ্নে পেঁয়াজের ব্যাটে এক ও অর্ধশতক অর্থাৎ ১৫০ রান, আদা এক ও অর্ধশতক অর্থাৎ ১৫০। অর্থাৎ পেঁয়াজ ও আদার অবস্থান একস্থানে। রসুন পূর্বের দেড় শতকের স্থলে আরও অর্ধশতক যুক্ত করে দু’শো রান বা দু’শো টাকা কিলো প্রতি বিক্রি হচ্ছে। তবুও রবিবারের মাংসে আদা-রসুনের থেকে পেঁয়াজের পরিমাণ বেশি লাগে বলে বাঙালিকে কঠিন চিন্তার মধ্যে ফেলে দিয়েছে।
নিখিল কুমার মণ্ডল
খাগড়া, মুর্শিদাবাদ
কী চান এঁরা
মোদীজি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে ভারতবাসীকে নানা রঙিন স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর, সেই স্বপ্ন ফিকে হতে শুরু করল।
আস্তে আস্তে ভারতের অর্থনীতি দুর্বল থেকে দুর্বলতর হতে শুরু করেছে মোদীজির শাসনকালে। দেশ জুড়ে শুধুই হাহাকার। দেশবাসীর হাহাকারে কর্ণপাত না করে মোদী-শাহ জুটি মেতে উঠেছেন ধ্বংসের খেলায়। প্রথমে এনআরসি, এ বারে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন।
এই কালা আইনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন দেশবাসী। অশান্তির আগুন প্রথমে গ্রাস করে উত্তর-পূর্ব ভারতকে। তার পর তা ছড়িয়ে পড়েছে পশ্চিমবঙ্গে। এখন এই অশান্তির আগুন গোটা দেশকে গ্রাস করতে চাইছে। মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই কালা আইন প্রাণ থাকতে এই রাজ্যে চালু হতে দেবেন না বলে ঘোষণা করেছেন। পঞ্জাব, মধ্যপ্রদেশ প্রভৃতি রাজ্যও মমতার পাশে দাঁড়িয়েছে।
এই কালা আইনে ধর্মীয় বৈষম্য হয়েছে বলে এর বিরুদ্ধে সরব হয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। এর বিরোধিতা করেছে ভারতের মিত্র দেশ আমেরিকা। এর জন্য হয়তো ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কড়া মূল্য দিতে হবে ভারতকে। এই আইন গোটা পৃথিবীর কাছে ভারতের মর্যাদাকে কলঙ্কিত করেছে। কী চাইছেন মোদী ও শাহ? তাঁরা কেন একের পর এক এমন বিতর্কিত পদক্ষেপ করছেন? এর পিছনে তাঁদের প্রকৃত অভিসন্ধি কী? এই কালা আইন দেশের অখণ্ডতা ও সংহতির পক্ষে বিপজ্জনক।
শিবব্রত গুহ
কলকাতা-৭৮
এনআরসি-চ্যুত
অসমের নগাঁও জেলার দীপঙ্কর বিশ্বাসের পরিবার ১৯৭১ সালের আগে থেকে এ দেশে থাকার বৈধ প্রমাণপত্র থাকা সত্ত্বেও এনআরসি থেকে বাদ পড়েন। ঠাঁই হয় ডিটেনশন ক্যাম্পে। সেখানে থাকাকালীন দীপঙ্করবাবু মারা যান অনাগরিক পরিচয় নিয়ে। একই রকম ভাবে তেজপুরের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা রিনা ভট্টাচার্য প্রয়োজনীয় প্রমাণপত্র থাকা সত্ত্বেও এনআরসি থেকে বাদ পড়েন। দীপঙ্করবাবুর পরিবার ও রিনা ভট্টাচার্য— এঁদের কেউই চাননি বৈধ নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও ভুল অভিবাসী পরিচয় দিয়ে নাগরিকত্ব পেতে। এঁরা দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকের মতো সমাজে চরম অসম্মানিত হয়ে বাঁচতে চান না। এঁরা প্রমাণপত্রের ভিত্তিতে, দরকারে, বিদেশি ট্রাইবুনালের বিচারে সঠিক ভাবে নাগরিক হতে চান।
অসাংবিধানিক ধর্মনির্ভর সিএ বাঙালিদের মধ্যেও এ বার বিভাজন সৃষ্টি করতে চায়।
পঙ্কজ কুমার চট্টোপাধ্যায়
খড়দহ, উত্তর ২৪ পরগনা
উদারতা!
নাগরিকত্ব (সংশোধিত) আইন কেন? বিদেশি সংখ্যালঘুদের ‘দুর্দশা’ দেখে সরকার খুব বিচলিত বোধ করায়? ওঁরা যাতে খুব সহজেই নাগরিকত্ব পেয়ে যান, তার ব্যবস্থা করার জন্য? সত্যিই এত উদার় মানসিকতা নিয়ে দেশ চালনা করতে ক’জন পারেন! কিন্তু মুশকিল হল, এক দিকে উদার মানসিকতা, আর এক দিকে যে অত্যন্ত ভয়ঙ্কর রকম সঙ্কীর্ণ! এ দেশে বহু দিন থেকে বসবাস করে আসছেন এমন সংখ্যালঘুদের মানবিক অধিকার যে এই একই সরকার কেড়ে নিচ্ছে! তা ছাড়া শ্রীলঙ্কা থেকে নির্যাতনের কারণে আগত তামিল হিন্দুধর্মাবলম্বীদেরও কোনও সুরাহা হয়নি এই আইনে। সদিচ্ছা থাকলে আগে থেকেই যে আইন ছিল তার মাধ্যমে বিদেশি সংখ্যালঘুদের নাগরিকত্ব দেওয়া যেত। মূল উদ্দেশ্য স্পষ্ট: মূলত পশ্চিমবঙ্গের ভোটের রাজনীতিতে ধর্মকে ব্যবহার করে সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা। একটি নির্বাচিত সরকার সমাজ কল্যাণ ছেড়ে সমাজ বিভাজনের খেলায় মেতেছে। দেশের কী হবে?
বাবলা চট্টোপাধ্যায়
কোচবিহার
ট্রেন ধ্বংস কেন
‘নাগরিকত্ব বিক্ষোভের মুখে ট্রেন’ (১৪-১২) পড়লাম। (সংশোধিত) নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদের কারণেই কেন্দ্রীয় সরকারের সম্পত্তি ট্রেন ও স্টেশনের উপর ধ্বংসাত্মক আক্রমণ, যেখানে ট্রেনের উপর পাথর ছোড়া, টিকিট ঘর কেবিনে অগ্নিসংযোগ, লাইনের উপর কংক্রিটের স্ল্যাব ফেলে দেওয়া হয়েছে। ট্রেনের চালক সাধারণ যাত্রীরা পাথরের আঘাতের শিকার হচ্ছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, এঁরা সবাই কি সংশোধিত আইনের বিপক্ষে, বা বিরোধী পক্ষে? বরং এই স্বতঃস্ফূর্ত হিংসাত্মক প্রতিবাদের ভাষা দেখে মনে হচ্ছিল ট্রেন হটাও, দেশ বাঁচাও। সরকারের পক্ষে বারংবার শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক উপায়ে আন্দোলনের কথা প্রচার করা সত্ত্বেও কোনও ফল হয়নি। ট্রেন কোনও বিশেষ সরকারের নিজস্ব সম্পত্তি হতে পারে না। এটা রাজ্যের তো বটেই সারা দেশের ‘লাইফ লাইন’। ট্রেনে তো বটেই, স্টেশনে স্টেশনে অসংখ্য মানুষ সঠিক সময়ে বাড়ি বা গন্তব্যস্থল পৌঁছনোর জন্য আতঙ্কে সময় গুনতে থাকেন। মনে রাখা দরকার, সবার বাড়ি স্টেশন থেকে হাঁটা দূরত্বের মধ্যে হয় না। বৃদ্ধ বা শিশু ছাড়াও মহিলা যাত্রী থাকেন। লোকাল ট্রেনে টয়লেটের ব্যবস্থা থাকে না। মাঝরাতে অপেক্ষাকৃত ছোট নির্জন স্টেশনে নেমে দিশেহারা হয়ে পড়তে হয়। রাতে কিছু স্টেশন দুষ্কৃতীদের চারণভূমি হয়ে ওঠে। এ ছাড়া ও নিত্যযাত্রীদের অনেকে আট-দশ কিমি সাইকেলে যেতে হয়। প্রতিবাদ করা অবশ্যই গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু তা বলে এই?
অঞ্জন কুমার শেঠ
কলকাতা-১৩৬
চরম দুর্ভোগ
নাগরিকত্ব আইন সারা রাজ্য জুড়ে হিংসাত্মক ঘটনা বইয়ে দিল। তার পরেই শোনা গেল, মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর শান্তি বজায় রাখার বার্তা ও আবেদন। বলতেই হবে, তা রীতিমতো অভিপ্রেত, আশানুরূপ এবং প্রশংসনীয়।
তিন দিনব্যাপী বিভিন্ন জায়গায় তাঁরই নেতৃত্বে প্রতিবাদস্বরূপ মহামিছিল আয়োজন হয়েছে। কিন্তু একটা ব্যাপার বড় বিভ্রান্তিকর ঠেকছে। মাননীয়ার প্রচারিত বার্তায় তিনি নিজেই সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে পথ অবরোধ করা থেকে বিরত থাকতে বলছেন। সেখানে তাঁরই নেতৃত্বে মহামিছিল কী আমজনতার দুর্দশা ও দুর্ভোগ তৈরি করছে না?
কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার রাস্তাঘাট স্বাভাবিক ভাবেই পদযাত্রা ও মিছিলে বিপর্যস্ত। সত্যিই কি আমজনতার দুর্গতি না বাড়িয়ে প্রতিবাদ করা যায় না?
শঙ্খদীপ কর্মকার
ব্যারাকপুর
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy