— ফাইল চিত্র।
সন্দেশখালির ঘটনা স্পষ্ট করে দিয়েছে, এ রাজ্যে ফের বাম আমলের মতোই গুন্ডারাজ শুরু হয়েছে। আর সন্দেশখালি তো কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, এমন ঘটনা ছোট-বড় আকারে রাজ্যের সর্বত্র দেখা যাচ্ছে। এত দিন পর্যন্ত আমরা পশ্চিমবঙ্গে দুর্নীতির মাধ্যমে ‘নৈরাজ্য’, অর্থাৎ অরাজকতা দেখতে দেখতে প্রায় অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম। এখন নৈরাজ্যের একটি অন্য অর্থ বা ব্যাখ্যা দেখতে পাচ্ছি। রাজ্য সরকার এবং পুলিশবাহিনীর প্রত্যক্ষ মদতে আইনশৃঙ্খলা ভেঙে দিয়ে যথেচ্ছাচারের সুযোগ করে দেওয়া। গুন্ডা, মস্তানরা যদি প্রশাসনকে উপেক্ষা করে অবাধে রাজ্যের মানুষের প্রাকৃতিক সম্পদ লুট করার, সরকারি তহবিল তছরুপ করার, নারীজাতির সম্মানহানি করার অধিকার বা সুযোগ পায়, তা হলে স্বীকার করতেই হবে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা সত্যিই ভেঙে পড়েছে। ক্ষমতা থাকলে যা খুশি করা যায়। তাই বোধ হয় বহু বছর আগে সুকুমার রায় ‘একুশে আইন’ কবিতায় লিখেছিলেন, “শিবঠাকুরের আপন দেশে, আইন কানুন সর্বনেশে।”
বাম আমলের শেষের দিকে বাম দলগুলির ক্যাডারদের আচরণ এ রকমই হয়েছিল। প্রশাসনের শীর্ষ নেতা-নেত্রীরা ‘ছোট ছেলেদের ছোট ভুল’ কিংবা ‘এমনটা যদি ঘটেও থাকে তবে তা নিতান্ত বিক্ষিপ্ত ঘটনা’ বলে সস্নেহ মমতা ও মদত জুগিয়ে চলেন। প্রশাসনকে খেয়াল রাখতে হবে, ক্ষমতা মানুষকে যখন অন্ধ করে দেয় তখন পতনের বীজ যে কখন কোন ছিদ্র দিয়ে শিকড় গাড়বে, এবং এক দিন মহীরুহতে পরিণত হবে, বুঝতেও পারা যাবে না। যেমন বামফ্রন্টও বুঝতে পারেনি ৩৪ বছর শাসন করার পর। ২০১১ সালে রাজ্যবাসী বর্তমান সরকারকে এনেছিলেন, বাম জমানা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য। কিন্তু তার জন্য ৩৪ বছর লেগে গিয়েছিল। রাজনৈতিক পালাবদলের পর ওই বছরই প্রকাশিত হাসিখুশি মুখে সর্বনাশ কাব্যগ্রন্থে শঙ্খ ঘোষ লেখেন, সাবধান বাণী হিসাবে, “নিজেরই জয়ের কাছে পরাভূত হোয়ো না কখনো।” এখন সেই পথেই হাঁটছে বর্তমান রাজ্য সরকার। বামফ্রন্ট যে ভুল করেছিল, যার সদ্ব্যবহার বর্তমান সরকার করেছিল, সেটাই গণতন্ত্রের ধর্ম। আজ এই জনরোষকে যে বিরোধী পক্ষ তাদের হাতিয়ার বানাবে, সেটাই স্বাভাবিক।
রাজ্য মহিলা কমিশন এলাকা ঘুরে একটিও শ্লীলতাহানির ঘটনা খুঁজে পায়নি, অথচ কয়েক দিন ধরে সংবাদমাধ্যমের সামনে মহিলারা তাঁদের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন, এমনকি কেউ কেউ টিভির পর্দায়। সরকার কি কেবল দলীয় স্বার্থেই পরিচালনা করা হয়! সন্দেশখালির উত্তম সর্দার ও বিকাশ সিংহ জামিন পাওয়ার পর পুলিশ আবার তাঁদের গ্রেফতার করেছে। অথচ, জামিনের আবেদনের সময় বিরোধিতা করেনি পুলিশ। বাস্তবে এ রাজ্যে চার দিকেই ক্ষমতার অপব্যবহার আর আস্ফালন।
সুপ্রিয় দেবরায়, বরোদা, গুজরাত
অ-পরিবর্তন
সন্দেশখালিতে মহিলাদের উপর যে অকথ্য অত্যাচার হয়েছে দিনের পর দিন, ‘বারণাবত’ (১৪-২) শীর্ষক সম্পাদকীয়টিতে তার উল্লেখ থাকলে ভাল হত। সন্দেশখালির ঘটনা ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর, পশ্চিমবঙ্গের পার্টি অফিসগুলোতে রাতে মহিলারা যেতে দ্বিধাগ্রস্ত হবেন। অনেকে বলছেন, শেখ শাহজাহান তো বাম আমলেই তৈরি। কথাটা একেবারে মিথ্যা নয়। এ কথা ভাবার কোনও কারণ নেই যে, বাম আমলে শাহজাহানরা ভদ্রতার দৌড়ে প্রথম সারিতে অবস্থান করতেন। এই আমলের মতো অবশ্য ‘স্বাধীনতা সংগ্রামী’-র তকমা পাননি।
বাম আমলে শাহজাহানরা শাসকশ্রেণির যন্ত্র ছিলেন, এখন এঁরাই যন্ত্রী। দলের ও সরকারের বিভিন্ন পদে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন, আর ইচ্ছেমতো অপকর্ম করে যাচ্ছেন। সরকারকেই এই শ্রেণির মাফিয়া ডনেরা নিয়ন্ত্রণ করছে। তাই দলের ছোট-বড় মুখ এঁদের সম্পর্কে ভাল ভাল কথা বলতে বাধ্য হচ্ছেন। না হলে দলের অভ্যন্তরের কথা এঁরা সব ফাঁস করে দেবেন। লোক-দেখানো কিছু ধরপাকড় হবে। তবে আসল ডনদের নাগাল পাওয়া দুঃসাধ্য। এই ডনেরা যে-হেতু পশ্চিমবঙ্গের ভোট নিয়ন্ত্রণ করেন, নিয়মিত অর্থের জোগান দেন, তাই সরকার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে এঁদের সমর্থন করেই যাচ্ছে।
গত দশ বছর ধরে সন্দেশখালিতে যা কিছু ধারাবাহিক ভাবে ঘটেছে, সে কথা প্রশাসন কিছুই জানত না, তা হতে পারে না। কিন্তু সবাই দেখেও না দেখার ভান করতে বাধ্য হতেন। মাফিয়া ডনেদের মাথায় শাসক শ্রেণির হাত ছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে ডনেরা সর্বেসর্বা হয়ে গেলেন। পুলিশ, সরকারি কর্মচারী, আধিকারিক, ও অন্য সরকারি পদাধিকারীরা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়লেন। এটাই পশ্চিমবঙ্গের সামগ্রিক চিত্র।
অশোক বসু, বারুইপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
আশ্রয়দাতা
কামদুনি, হাথরস, হাঁসখালি আমাদের সভ্য সমাজের চরিত্রের চেহারাকে বেআব্রু করে থাকলে, সন্দেশখালির চেহারা সম্পর্কে বলতে গেলে ভাষা হারিয়ে যায়। সম্পাদকীয়ের ভাষায় ‘বারণাবত’, অর্থাৎ জতুগৃহ বলে চিহ্নিতকরণ সঠিক। তবে এই জতুগৃহ কাদের জন্য? মহাভারতে জতুগৃহ পাণ্ডবদের ধ্বংস করার জন্য হলেও, সন্দেশখালি-জতুগৃহের পাণ্ডব সাধারণ মানুষ। মানুষকে ধ্বংস করে উন্নয়নের ধ্বজা ধরার ছাড়পত্র দিয়ে যায় তথাকথিত গণতান্ত্রিক সরকারের মাথারা। কিন্তু এই মুহূর্তে এই জতুগৃহ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর দলের পক্ষে আত্মঘাতী হলেও, তাঁদের আশ্রয়দানের স্বার্থ চিরকাল বলবৎ থাকে। তাই শাহজাহানের মতো নেতারা সাময়িক ভাবে ঘরছাড়া হলেও, শাসকের সমর্থন হারান না। ক্ষমতার রঙের পরিবর্তন হয়, আশ্রিত-আশ্রয়দাতা সম্পর্কের পরিবর্তন হয় না। মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠলেও রাজনৈতিক ক্ষমতাসীনের চোখ অবলীলাক্রমে তা এড়িয়ে যায়। যার দৃষ্টান্ত সন্দেশখালি।
সন্দেশখালি শুধু কি সুন্দরবন অঞ্চলের এক বিক্ষিপ্ত ঘটনা, না কি সমগ্র সুন্দরবনের মানুষ এমন ঘটনার নীরব সাক্ষী? এ প্রশ্নের অনুরণন আজ শুধু সুন্দরবনে নয়, সারা বাংলা জুড়ে। তবে সন্দেশখালির এই ঘটনা বাংলার উন্নত সংস্কৃতির সকল গর্বকে ভূলুণ্ঠিত করেছে। যার কারণ কিন্তু নিম্নমানের রাজনৈতিক সংস্কৃতি, যা ক্রমশ অধোগতিতে পতিত হচ্ছে। সন্দেশখালির অত্যাচারিত মানুষজনের প্রতিবাদ বাংলার মানুষদের সাহস জোগাতে পারে কি না, সে প্রশ্নও উঠছে। সেই প্রশ্নে হয়তো ক্ষমতার রং বদলে যেতে পারে। কিন্তু শাহজাহান, শিবু হাজরা, উত্তম সর্দারের পুনর্জন্ম হবে না, তার নিশ্চয়তা নেই। রাজনীতির চলমান সংস্কৃতি সেই কথাই বলে।
নরেন্দ্রনাথ কুলে, কলকাতা-৩৪
সাজানো?
সন্দেশখালি আজ আন্দোলনের এক বহুচর্চিত নাম। বিশেষ করে মহিলারা মুখে কাপড় বেঁধে সেই আন্দোলনকে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু কেন এই অবস্থা? অনিতা অগ্নিহোত্রীর ‘অর্থনীতির বিষচক্রে’ (২০-২) প্রবন্ধটি ওই অবস্থারই সদর্থক প্রকাশ। সুন্দরবনের মানুষ প্রায় প্রতি বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগে সর্বস্বান্ত হন। সরকার পঞ্চায়েত তখন একমাত্র তাঁদের আশা। কিন্তু সেই আশা অপূর্ণ থেকে যায়। প্রশাসন উদাসীন হলে পঞ্চায়েতের মোড়লরা তো লুটপাট করবেনই, কারণ তাঁরাই তো বিরোধী-শূন্য পঞ্চায়েত তৈরির কারিগর। এই বাহুবলীরা দিনের পর দিন গরিব কৃষকের জমি লুট করেছেন, লুট করা জমিকে মাছের ভেড়ি বানিয়েছেন, অবৈধ ভাবে বাড়ি পোলট্রি করেছেন। মহিলাদের সম্ভ্রম পর্যন্ত লুট করেছেন। এত কিছুর পরেও প্রশাসনের শীর্ষ স্তরের এটাকে সাজানো ও বিরোধীদের চক্রান্ত বলা অত্যন্ত অনুচিত। সাজানো ঘটনাই যদি হবে, তা হলে তৃণমূল কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে মহিলাদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করছেন, লিজ়ের টাকা, মজুরির টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলছেন, পাট্টা জমি রেকর্ডের জন্য দফতর খুলে বসেছেন কেন?
সারনাথ হাজরা, হাওড়া, কদমতলা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy